1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শেখ হাসিনার চীন সফরে ভূরাজনীতি বনাম জাতীয় স্বার্থ

৭ জুলাই ২০২৪

জুন মাসেই দুইবার ভারত সফরের পর জুলাইয়ে চীনে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছর পর শেখ হাসিনার এই সফরে বাংলাদেশের চাওয়া কী? চীনই বা কেন বাংলাদেশের ব্যাপারে এতটা আগ্রহী?

https://p.dw.com/p/4hxuJ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালে সবশেষ চীন সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাছবি: picture-alliance/dpa/W. Zhao/Pool

বাণিজ্য এবং অর্থনীতিকে সামনে রেখেই মূলত এই সফরকে সাজানো হয়েছে। সফরে সই হতে পারে ১০টি সমঝোতা স্মারক। দুই হাজার কোটি ডলারের ঋণ, বিভিন্ন মহাপ্রকল্পে বিনিয়োগ, বাণিজ্যে সমতা আনতে নানা উদ্যোগ, রপ্তানি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনসহ নানা বিষয়ে হতে পারে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা।

তবে শেখ হাসিনার চীন সফরের দিকে সজাগ দৃষ্টি থাকবে ভারতেরও।

পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো আরো বেশি মাত্রায় সামরিক ও অর্থনৈতিক পর্যায়ে ‘চীন ঠেকানোর' নানা পদ্ধতি নিয়ে পরিকল্পনায় ব্যস্ত। ভারত-চীনের দ্বিপাক্ষিক দ্বন্দ্ব নিজেদের সীমান্ত ছাড়িয়ে প্রভাব রাখছে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও।

এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক নানা চাপে থাকা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বজায় রেখে বিবাদমান রাষ্ট্রগুলোর প্রভাবে ভারসাম্য বজায় রাখাটাই মূল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

চিকেনস নেক-এ তিস্তার কাঁটা

বছরের পর বছর ধরে আলোচনার পরও তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে কোনো আশার কথা শোনাতে পারেনি ভারত। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তিতে রাজি থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তির মুখে এখনও আটকে রয়েছে এই চুক্তি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে তিস্তা নদী সমন্বিত ব্যবস্থাপনা মহাপ্রকল্পের প্রস্তাব তৈরি করে বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।  চীন ৮ হাজার ২শ কোটি টাকা ঋণ দিতেও রাজি হয়।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় কৃত্রিম জলাধার তৈরি করে পানি ধরে রেখে সারাবছর সেচ কাজে ব্যবহার করা হবে। ১১৫ কিলোমিটার নদীর পুরো অববাহিকা গভীর খনন ও দুই পাড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। নদীর দুই পাড়ে মেরিন ড্রাইভ তৈরি করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সড়ক যোগাযোগের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এর ফলে প্রায় পৌনে ২০০ বর্গ কিলোমিটার জমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে, যেখানে একাধিক শিল্প এলাকা ও স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলা হবে।

কিন্তু এখানেই বাধে বিপত্তি।

তিস্তা নদীর যে স্থানে এই মহাপ্রকল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, এর অদূরেই অবস্থিত ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর। ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর সঙ্গে দক্ষিণের সড়কপথে যোগাযোগের মাধ্যম এই করিডোর। আর এই করিডোর মাত্র ২০-২২ কিলোমিটার প্রশস্ত। এই করিডোরটিকে ‘চিকেনস নেক' বলেও আখ্যা দেয়া হয়। ফলে এই অংশটিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললে ভারতের পূর্ব থেকে পশ্চিমকে আলাদা করে ফেলা সম্ভব।

বাংলাদেশ জেনেশুনে দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে, এটা উদ্বেগজনক বিষয়: প্রফেসর ড.আলী রীয়াজ

এ কারণেই করিডোরটির এত কাছে বাংলাদেশে চীনা উপস্থিতি ভারতের জন্য এত অস্বস্তির।  এ নিয়ে উদ্বেগ জানালেও এতদিন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ভারত। তবে শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে এই মহাপ্রকল্পে যুক্ত হতে প্রস্তাব দিয়েছে ভারতও। একটি কারিগরি দল এজন্য শিগগিরই ঢাকা সফরেও আসবে।

ভারত নাকি চীন, তিস্তা প্রকল্পে কাকে যুক্ত করা হবে, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ভারত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ নিজের জন্য যেটা ভালো মনে করে, সে অনুযায়ীই এগোবে।

চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ মনে করেন, চীন এবং ভারত কোনো পক্ষই যাতে চিন্তিত না হয়, সেভাবেই বাংলাদেশের এগোনো উচিত। এমনকি প্রয়োজনে এই প্রকল্পে দুই দেশকেই যুক্ত করা যায় কিনা, সেটিও ভেবে দেখার পক্ষে মত তার।

মুন্সি ফয়েজ আহমেদ মনে করেন, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় বাংলাদেশের এমন অবস্থানই ঠিক আছে। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকম আবদার থাকে, সেগুলো আমাদের মেটাতে হয়। তিস্তা অনেক বড় প্রকল্প। ফলে আমরা যদি কিছু উপাদানে ভারতকে যুক্ত করি, কিছু উপাদানে চীনকে যুক্ত করি, তাতে অসুবিধার তো কিছু নেই।''

তিনি বলেন, ‘'আমাদের সঙ্গে চীন এবং ভারতের যে সম্পর্ক, তাতে অন্য দেশের ক্ষতি হয় এমন আশঙ্কার কারণ নেই। তিস্তা নিয়ে আলোনা হলে আমরা চীনকে বোঝাতে চেষ্টা করবো যে আমাদের ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক আছে। ফলে ভারত যাতে চিন্তিত না হয়, সে নিশ্চয়তাও আমাদের দিতে হবে। আবার ভারতকেও আমাদের বোঝাতে হবে যে তোমরা যদি মনে করো ওখানে বসে ওরা তোমাদের ওপর নজরদারি করবে, সেটার জন্য কি ওদের নীলফামারি বসা জরুরি? তোমাদের ওপর যথেষ্ট নজরদারি তো ওরা অন্যভাবে করছেই।‘'

এ বিষয়ে চীনের প্রতিক্রিয়ায় অবশ্য স্পষ্ট হয়ে গেছে যে সমান চাপ সৃষ্টি করে তারাও বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে চায় না। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর কূটনীতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাবের এক আয়োজনে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, ‘'বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে, এমন সবকিছুর জন্যই আমরা প্রস্তুত। বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত চীন খোলা মন নিয়েই বিবেচনা করবে।‘'

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড.আলী রীয়াজ মনে করেন, এই দ্বন্দ্ব বাংলাদেশ যেভাবে মোকাবিলা করছে, সেটা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে যাচ্ছে না।

তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘তিস্তা প্রকল্পে বাংলাদেশের মূল বক্তব্য হওয়া দরকার, তিস্তার পানির ভাগ নিশ্চিত করা। শুধু তিস্তা নয়, অন্যান্য (অভিন্ন) নদীগুলোর ক্ষেত্রেও সংশয় থেকে গেছে।''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, ভারতকে অনেকরকম সুবিধা দিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই সুবিধাগুলোর বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছু পাচ্ছে, এমন উদাহরণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না।''

বন্দর নিয়ে ভারত-চীন লড়াই

২০০৬ সালে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দরে চীনা বিনিয়োগের প্রস্তাবও ভারতের পরোক্ষ আপত্তির কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে সোনাদিয়া প্রকল্প বাতিল করে তার পরিবর্তে ২০১৮ সালে মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ।

২০২৭ সালে চালুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলা মাতারবাড়িতে মূল বিনিয়োগ জাপানের সংস্থা জাইকার। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভারতও। বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে চীনা আধিপত্য ঠেকাতে মাতারবাড়িকে দেখা হচ্ছে ভারত-জাপানের অন্যতম বিজয় হিসাবে।

অন্য দেশের নানা প্রকল্পেও পরবর্তীতে ভারতের কর্মকর্তাকে যুক্ত করার উদাহরণ রয়েছে বাংলাদেশের। ২০১১ সালে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির পর থেকেই ভারত তৎপর হয় এ প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার জন্য। কয়েক দফা আলোচনার পর ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি সই হয়। তার ওপর ভিত্তি করে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়।

সম্প্রতি ইরানের চাবাহার এবং মিয়ানমারের সিত্তোয়ে বন্দর পরিচালনার চুক্তি করেছে ভারত। অন্যদিকে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দর নির্মাণ ও পরিচালনা করছে চীন। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও পরিচালনাতেও যুক্ত রয়েছে চীন। মিয়ানমারের কিয়াউকপিউ গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণেও গত বছর চুক্তি সই হয়েছে চীনের সঙ্গে।

এবার বাংলাদেশের মোংলা বন্দর নিয়েও চীন-ভারত দ্বন্দ্ব শুরুর আভাস মিলছে। এইসব দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পরিস্থিতির জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে মনে করেন ড.আলী রীয়াজ।

কোনো শর্ত ছাড়া চীন এত টাকা ঋণ দিয়ে দিবে, এটা বিশ্বাস করা কঠিন: অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন

তিনি বলেন, ‘‘দুই পক্ষই আসলে তাদের জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনা করেই, তাদের ভূরাজনৈতিক এবং কৌশলগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য়ই বাংলাদেশকে এ ধরনের প্রস্তাবগুলো দিচ্ছে। এই দ্বন্দ্ব কেবল অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বে সীমাবদ্ধ থাকবে তা নয়, অতীতেও ছিল না। এটা ক্রমাগত রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে পরিণত হবে। বাংলাদেশ জেনেশুনে এই দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে, এটা উদ্বেগজনক বিষয়।''

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ অবশ্য মনে করেন, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রেখেই বাংলাদেশ নানা ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘একদিক থেকে কোনো দেশের ক্ষতি হলে, অন্য দিক দিয়ে তাদের সেটা পুষিয়ে দেয়া হয়। বন্ধুদের সঙ্গে এমনটা করতে হয়। তবে এটা সত্য যে নানা দেশের নানা আবদার থাকলেও মূল কথা হচ্ছে, জাতীয় স্বার্থে আমাদের যেটা প্রয়োজন সেটাই আমরা করবো।

দুই হাজার কোটি ডলারের ঋণ, টাকা-ইউয়ানে লেনদেন

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত সাত অর্থবছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ৪৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ ২০২৩-২৪ সালে এসে ছাড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার।

এই বেশিরভাগই ব্যয় হচ্ছে বড় অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য। আগের ঋণ পরিশোধ করতেও আবার ঋণ নিচ্ছে সরকার।

এমন প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে বাংলাদেশের দুই হাজার কোটি ডলারের ঋণ নেয়া নিয়ে চলছে আলোচনা। ডলারের পরিবর্তে নিজেদের মধ্যে টাকা এবং ইউয়ানে লেনদেনের বিষয়েও হতে পারে একটি সমঝোতা স্মারক।

বাংলাদেশের জিডিপি এর অনুপাতে বৈদেশিক ঋণ এখনও সহনীয় পর্যায়ে আছে বলেই মনে করেন অনেক অর্থনীতিবিদ। কিন্তু রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স বাড়াতে না পারলে অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাবের বিষয়েও সতর্ক করে দিয়েছেন তারা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন চীনের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা হিসাবে যে বড় অংকের অর্থ চাওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশের সেটা প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘সম্প্রতি আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সম্প্রতি মোটা অংকের অর্থ পাওয়া গেছে। তারপরেও এখন (বাংলাদেশের) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি একেবারে ন্যূনতম পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের অর্থনীতি এখন যে আকারে রয়েছে, আমাদের আমদানির ওপর যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো কাটাতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে হবে। চীন থেকে ডলার না পেলেও চীনা মুদ্রা (ইউয়ান) যেহেতু রিজার্ভ মুদ্রা হিসাবে স্বীকৃত, এটা অন্যান্য দেশ থেকে বেচাকেনাতেও ব্যবহার করা যাবে।''

ম্যাক্রো অর্থনীতিতে বাংলাদেশের যে চাপ চলছে, চীনের সহায়তা পেলে সেটা বেশ খানিকটা দূর করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা বিভিন্ন খাতে সংস্কারের শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে। চীনের কাছে যে বিশাল ঋণ নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলছে, সেটা কোন শর্তে নেয়া হবে সে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকার কথাও বলেছেন ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘‘কোনো শর্ত ছাড়া এত টাকা দিয়ে দিবে, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। ফলে সেটা এখন জানার বিষয় যে সরকারকে বিনিময়ে কী করতে হবে! এখানে কি এমন কোনো শর্ত থাকবে যে খরচ বাংলাদেশ সরকার করলেও জিনিস কিনতে হবে চীনের কোম্পানি থেকে? চীন সাধারণত ঋণ দেয়ার সময়ই বলে দেয় কোন কোম্পানি থেকে জিনিস কিনতে হবে। এসব ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডারের আর কোনো সুযোগ থাকে না। ফলে এমন শর্ত থাকলে সবচেয়ে কম মূল্যে সবচেয়ে ভালো জিনিস পাওয়ার সুযোগ থাকবে না।''

কোন দেশ থেকে ঋণ নিলে ঝুঁকির আশঙ্কা নাই?:সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ

ঋণের বিনিময়ে বিভিন্ন দেশকে আটকে ফেলার পদ্ধতিকে অনেকেই ‘চীনা ঋণের ফাঁদ' বলে অভিহিত করেন। হাম্বানটোটা বন্দর উন্নয়নে চীনের কাছ থেকে ঋণ নেয়ার পর অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এরপর এই ঋণ ফাঁদের বিষয়টি আরো বড় হয়ে আলোচনায় আসে।

তবে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ মনে করেন, শ্রীলঙ্কা নিজেদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি না বুঝেই মোটা অংকের ঋণ নেয়ার বিপদে পড়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতির কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন তিনি।

মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘‘তারা (শ্রীলঙ্কা) চীনের কাছ থেকে নিয়েছে বাণিজ্যিক ঋণ। নিজেদের হোমওয়ার্ক আগে থেকে না করেই ঋণ নিয়ে বিপদে পড়েছে। এরপর চীনকে দোষ দেয়াটা তো সঠিক না।''

তিনি বলেন, ‘‘কোন দেশ থেকে ঋণ নিলে ঝুঁকির আশঙ্কা নাই? চীন থেকে অনেক ঋণ আমরা নিয়েছি। একবারে এত বড় ঋণ না নিলেও বছরে বছরে আমরা প্রায়ই ছোটখাট ঋণ নেই। সেগুলো সহজ শর্তে ঋণ হয়। সেখানেও প্রায়ই দেখা গেছে দুই-তৃতীয়াংশ শোধ হয়ে গেলে তারা বাকিটা মাফ করে দিচ্ছে। এইগুলা তো আমরা কাগজে লিখি না।''

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা নানা দেশই এখন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে পশ্চিমাদের দিক থেকে নতুন কোনো চাপের আশঙ্কা সহসাই দেখছেন না অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ যদি অতীতের মতো ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখেই চলে, তাতে নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নতুন করে ঝুঁকির কোনো কারণ দেখছি না।''

তবে বাংলাদেশের সময় থাকতেই সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করেন ড. আলী রীয়াজ। নানা শর্তে বাঁধা পড়ে বাংলাদেশ নিজের ভবিষ্যতকে অন্য দেশের কাছে বন্ধক দিয়ে দিচ্ছে কীনা, এ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ‘‘শুধু চীনের ঋণ ফাঁদের কথা বললেই হবে না। ঋণ ফেরত দিতে গিয়ে বাংলাদেশকে কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, এ নিয়েও আলোচনা করতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেভাবে ধারদেনা করা হচ্ছে, সেটাও পরবর্তীতে দুর্নীতি এবং অপচয়ের মুখে পড়ছে। এর দায় কে নিবে? ''

অর্থনীতি বা ভূরাজনীতির সংকট মোকাবিলায় নেয়া যেকোনো সিদ্ধান্তেই বাংলাদেশ সরকারের জনগণের কাছে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য