1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীন সফরের আগে ভারত থেকে কী পেলেন হাসিনা

২৪ জুন ২০২৪

সপ্তাহান্তে দিল্লি সফরে এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। গঙ্গা জল-চুক্তির পুনর্নবিকরণ হয়েছে সেখানে।

https://p.dw.com/p/4hPrd
দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনা
হাসিনা-মোদী বৈঠকছবি: Manish Swarup/AP/picture alliance

জুলাইয়ের শুরুতেই চীন সফরে যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ঠিক আগে হাসিনার ঝটিতি দিল্লি সফর ভারতের জন্য় অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ চীন মুখাপেক্ষী হলে তা ভারতের জন্য় বড়সড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ফলে চীন সফরের আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে একাধিক নতুন প্রকল্পের আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। 

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ এবং ভারতের সেনা বাহিনীর সাবেক লেফটন্য়ান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''গত দশকের মধ্যবর্তী সময়ে চীন বাংলাদেশে একাধিক বিনিয়োগ করেছিল। সে সময়েও ভারত তা নিয়ে চিন্তিত হয়েছিল। গত বেশ কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ানোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। কারণ, বাংলাদেশ চীনমুখী হলে তা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির জন্য় মোটেই ভালো হবে না।'' উৎপল মনে করেন, হাসিনার সরকার ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চায়। কিন্তু চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এনিয়ে চীনের সঙ্গে দরাদরিও শুরু করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসিনার ভারত সফর গুরুত্বপূর্ণ। এবারের সফরে বাংলাদেশকে যথেষ্ট আশ্বাস দিয়েছে ভারত। বুঝিয়ে দিয়েছে, চীন নয়, ভারতই বাংলাদেশের প্রথম বন্ধু। এবং সে কারণে রাজ্যের সঙ্গে কথা না বলেই গঙ্গা জলচুক্তি পুনর্নবিকরণ করা হয়েছে।

মমতার খোঁচা

১৯৯৬ সালে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার জল চুক্তি হয়েছিল। ফারাক্কা বাঁধ থেকে গঙ্গার জল বাংলাদেশের দিকে পাঠানোর ব্য়বস্থা হয়েছিল। পরবর্তীকালে এই ফারাক্কা নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে। ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছিল, ফারাক্কার জন্য় মালদা-মুর্শিদাবাদ অঞ্চলে ভাঙন বেড়েছে। ফলে এই বাঁধ নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

শুধু মমতা নন, ফারাক্কা নিয়ে একাধিকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিহারও। কারণ, সেখানেও ভাঙনের সমস্য়া আছে। পাশাপাশি প্রতি বছর এই বাঁধ লাগোয়া অঞ্চলে বন্য়ার প্রকোপ শুরু হয়েছে। বিহারের বর্তমান মুখ্য়মন্ত্রী নিতীশ কুমারও এ নিয়ে কেন্দ্রের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতির মধ্যে ২০২৬ সালে শেষ হয়ে যাচ্ছিল গঙ্গা জলবন্টন চুক্তির মেয়াদ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার দিল্লি সফরে এসে সেই চুক্তির পুনর্নবিকরণ করেছেন। আর তাতেই ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। মমতার অভিযোগ, এই চুক্তির অন্য়তম শরিক পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু চুক্তিটির পুনর্নবিকরণের ক্ষেত্রে রাজ্যকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছে। এবিষয়ে কেন্দ্র রাজ্য়ের সঙ্গে কোনো কথাই বলেনি।

হাসিনা-মোদীর বৈঠকে কী পেল বাংলাদেশ?

এখানেই শেষ নয়, মমতা জানিয়েছেন, এই চুক্তির জন্য় পশ্চিমবঙ্গকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা কেন্দ্রের। সেই টাকাও বকেয়া পড়ে আছে। দ্রুত কেন্দ্রকে সেই টাকা দিতে হবে। পাশাপাশি ফারাক্কা বিষয়ক সমস্য়ার সুরাহা হবে কীভাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

তিস্তা অ্য়াকশন প্ল্য়ান

তিস্তা নিয়েও এবার একটি চুক্তি হয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে। মমতার অভিযোগ, এই চুক্তি নিয়েও রাজ্য়ের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেনি কেন্দ্র। তিস্তার জলবন্টন চুক্তি না হলেও, তিস্তা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবার নিয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশ। বলা হয়েছে, ভারতের একটি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে গিয়ে তিস্তা পরিদর্শন করবে। গরমের সময় কীভাবে বাংলাদেশে তিস্তার জলের ব্য়বহার বাড়ানো যায়, তা নিয়ে তারা পরামর্শ দেবে। ভারত এর জন্য বাংলাদেশকে অর্থ সাহায্যও করবে।

সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে তিস্তার জলের একটি রিজার্ভার তৈরির প্রকল্প হতে পারে। তবে নদী বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় তিস্তার জল আটকে দেওয়ার ফলে তার নীচের ৭০ কিলোমিটার ভারতের ভূখণ্ডেই গরমের সময় তিস্তার জল থাকে না। ৭২ এর চর দিয়ে এরপর তিস্তা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। গজলডোবায় জল আটকানোর ফলে বাংলাদেশের তিস্তায় গরমের সময় জল কমে যায়। কেন্দ্র রাজি থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার জলবন্টন চুক্তি করতে নারাজ।

মমতা বলেছেন, যেভাবে তিস্তা অ্য়াকশন প্ল্য়ানের চুক্তি করা হয়েছে, তা-ও ঠিক নয়। রাজ্য়কে এড়িয়ে এই ধরনের চুক্তি করা যায় না। এরই মধ্যে সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের অধিবেশন। নতুন সরকারের প্রথম অধিবেশনেই তৃণমূলের সাংসদেরা এনিয়ে সরব হতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। 

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো