1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সবসময় ক্ষমতাসীন দলের লোকরাই ফেডারেশন চালান’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ মে ২০২৩

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রায় সব আলোই কেড়ে নেয় ক্রিকেট৷ সবাই ক্রিকেটে মগ্ন থাকায় অন্য খেলাগুলোর ভালো-মন্দ খুব একটা প্রচারে আসে না৷

https://p.dw.com/p/4RZXf
ক্রীড়া সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি (বিএসপিএ)-র সভাপতি সনৎ বাবলা৷
ক্রীড়া সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি (বিএসপিএ)-র সভাপতি সনৎ বাবলাছবি: privat

সেই খেলাগুলোর সার্বিক অবস্থা নিয়েই কথা বলেছেন ক্রীড়া সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি (বিএসপিএ)-র সভাপতি সনৎ বাবলা৷

ডয়চে ভেলে:  বাংলাদেশে ৪৬ টির মতো ক্রীড়া ফেডারেশন আছে৷ ক্রিকেট বোর্ড, ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে নানা কথা আছে৷ সার্বিকভাবে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর অবস্থা কী?

সনৎ বাবলা: ক্রিকেট বলেন, ফুটবল বলেন সবগুলো খেলা অর্থনৈতিকভাবে একই অবস্থায় নেই৷ ক্রিকেট বোর্ড হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ফেডারেশন৷ ৯০০ কোটি বা তার চেয়েও বেশি টাকা আছে তাদের৷ অনেক টাকা থাকলে প্রশ্ন ওঠে টাকার অপব্যবহার হচ্ছে কিনা বা ঠিকমত ব্যবহার হচ্ছে কিনা৷ মাঠের খেলাটা যখন ভালো হয়৷ ক্রিকেট ভালো করছে৷ তখন ক্রিকেট বোর্ডের আর্থিক বিষয়গুলো চাপা পড়ে যায়৷ আমরা দূর থেকে দেখি৷

এখানে নির্বাচন নিয়ে তো প্রশ্ন আছে৷ একই ব্যক্তি বার বার শীর্ষ পদে থাকেন৷ এমন কেন হয়?

বাংলাদেশের পরিস্থিতি হলো যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের লোকজনই ক্রিকেট বোর্ড বলেন অন্যান্য ফেডারেশন বলেন, তার প্রধান বা নিয়ন্ত্রক থাকেন৷ নির্বাচন হয়, কিন্তু সেই নির্বাচন নিয়েও নানা প্রশ্ন থাকে৷ তবে ভিন্ন ধারার পেশাদার কিছু লোকজনও থাকেন৷ বিএনপির আমলে যারা ছিলেন তাদেরও পেশাদার কেউ কেউ আছেন৷ এখানে একটা ব্যালেন্স করা হয়৷

কিন্তু যিনি খেলা জানেন না, যিনি পেশাদার নন ,তাকে কেন বছরের পর বছর বোর্ডে থাকতে হবে? এতে কি ক্রিকেটের লাভ হয়, না তার ব্যক্তিগত লাভ?

তাদের ব্যক্তিগত লাভ তো আছেই৷ ক্রিকেট বোর্ডে থাকা আমাদের এখানে একটা স্ট্যাটাস সিম্বল৷ আবার বিদেশ সফর করতে পারেন বোর্ডের পয়সায়৷ বিভিন্ন সাব কমিটি আছে৷ সেখানে নানা ধরনের ক্রয় আছে৷ নিশ্চিতভাবে এখানে লাভ আছে৷ কিন্তু কত টাকা লাভ হয় তা আমি বলতে পারবো না৷

‘আসলে ফেডারেশনগুলো চলছে পরিকল্পনা আর লক্ষ্য ছাড়াই’

ফুটবল ফেডারেশন তো এখন আলোচনায়৷ তাদের কী অবস্থা?

ফুটবল ফেডারেশন বছরে ২৫ কোটি টাকা পায় ফিফার কাছ থেকে৷ এরপর স্পন্সরদের অর্থ আছে৷ ফিফার টাকা তাদের নিয়ম মেনে কোয়লিটি রক্ষা করে খরচ করতে হয়৷

দুর্নীতির অভিযোগে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদককে ফিফা ধরলো৷ কিন্তু তার আগে কি ফেডারেশন ধরতে পারতো না? আরো তো লোক আছে-

অবশ্যই তারা ধরতে পরতো৷ ধরা তাদের দায়িত্ব৷ কারণ, ফিফা তো কোনো ব্যক্তিকে নয়, ফেডারেনশনকে টাকা দেয়৷ এখানে নানা ছলচাতুরি আছে৷ কাজ পাওয়ার জন্য এদের ভেতরেই একই ব্যক্তি বা গ্রুপ ভিন্ন তিনটি নামে তিনটি দরপত্র দাখিল করে৷ তিনটি দরপত্রের লেখাও এক৷ ফিফা তিন বছর ধরে তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছে এখানে দুর্নীতি হয়, প্রতারণা হয়৷

এই দুর্নীতি কি সাধারণ সম্পাদক একা করেছেন? এটা তো একটা বোর্ড৷ আর কারো দায়দায়িত্ব নেই? এটা কি ফেডারেশন তদন্ত করবে না?

ফিফা যখন নির্বাহী প্রধানকে ব্যান করে তখন ফেডারেশনের প্রধান বা সভাপতির ওপরই দায়িত্ব বর্তায়৷ আর ফেডারেশন হলো সভাপতি-শাসিত৷

তাহলে সভাপতি এখনো তার পদে আছেন কীভাবে?

উনি স্টেপ ডাউন করতে পারতেন৷ তার পদত্যাগ করা উচিৎ ছিল৷ তিনি বাংলাদেশের কালচারের কারণে হয়তো করেননি৷ পুরো নির্বাহী কমিটিরই দায়িত্ব আছে৷ সবার অজান্তে এটা হতে পারে না৷

এখন যে তদন্ত কমিাট কাজ করছে তার মধ্যেও তো এই দুর্নীতিতে জড়িতদের কেউ থাকতে পারেন৷ তাহলে কী তদন্ত হবে? একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন হওয়ার কি প্রয়োজন আছে?

অবশ্যই একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি হওয়া দরকার৷ সাধারণ সম্পাদককে ব্যান করার আগে ফিফা চারজনকে শোকজ করেছিল৷ বাকি তিনজনকেও তদন্তের আওতায় আনা প্রয়োজন৷ এখানে আরেকটি বিষয় আছে৷ এর দায় ন্যাশনাল টিম কমিটির চেয়ারম্যানের ওপরও পড়ে৷ কারণ, ন্যাশনাল টিমের জন্য নানা কেনাকাটা, তাদের বিদেশ সফরের জন্য ব্যয় সবই তার অনুমোদন করতে হয়৷ ফিফার তদন্তে এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে৷ কিন্তু সেই ন্যাশনাল টিম কমিটির চেয়ারম্যানকেই আবার ফেডারেশনের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে৷

তাহলে আমাদের ফুটবলের কী হচ্ছে? সালাউদ্দিন সাহেব বিশ্বকাপ খেলার কথা বলেছিলেন৷ আবার নারী টিমের সদস্যরা টাকার অভাবে মিয়ানমারে যেতে পারেন না৷ তাহলে হচ্ছেটা কী?

ফুটবলে টাকার সমস্যা না৷ সমস্যা সুশাসন এবং সঠিক পরিকল্পনার৷ ঢাকা শহরের লোক কিন্তু ফুটবল খেলে না৷ ফুটবল খেলে ঢাকার বাইরের লোক৷ জেলা-উপজেলায়৷ কিন্তু সেখানে কোনো খেলা চালু করতে পারেনি ফেডরেশন৷ কিন্তু কাজী সালাহউদ্দিন বলেছিলেন তিনি নির্বাচিত হওয়ার পরের দিনই এটা করবেন৷

এইসব অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফেডারেশনের বাইরে কেউ নেই ব্যবস্থা নেয়ার?

ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আছে৷ তারা সরকারের উপর মহলকে জানায়৷ কিন্তু ফিফা চায় ফুটবল স্বাধীনভাবে চলবে, সরকার হস্তক্ষেপ করবে না৷ এই কারণে একবার ফেডারেশনকে ফিফা ব্যান করেছিল৷ তবে ফিফার টাকার বাইরেও টাকা আছে৷ স্পন্সরদের টাকা আছে ৷ সেটা মন্ত্রণালয় দেখতে পারে৷

হকি ফেডারেশন নিয়েও বিতর্ক হয়েছে৷ একজন পলাতক আসামি ফিরে এসে ফেডারেশনে যোগ দিয়েছেন৷

হ্যাঁ৷ তিনি পলাতক ছিলেন, তবে কনভিক্টেড নন৷ ফলে আইনগত বাধা না থকায় তিনি আবার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন৷ বিমান বাহিনি প্রধান এই ফেডারেশনের সভাপতি৷

বাংলাদেশে আরো অনেক ফেডারেশন আছে যেগুলোতে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদাধিকার বলে প্রধান হন৷ এটা কীভাবে হয়?

এই প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে৷ একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে৷ তবে আমি মনে করি যারা সংগঠক, যারা পেশাদার, তাদের এখানে থাকা উচিত৷

কিছু ছোট ছোট ফেডারেশন আছে যেখানে এমন অনেক লোক দেখা যায় যারা ওই সব খেলার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নন৷ তারা আবার বিদেশ সফরেও যান৷

এরকম হয়৷ বাংলাদেশে আসলে ফেডারেশনগুলো চলছে পরিকল্পনা আর লক্ষ্য ছাড়াই৷ আবার যারা ভালো করছে তাদের জন্য কিছু নাই৷ যেমন ভারোত্তোলন ফেডারেশন৷ তারা ভালো করছে৷ তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক পাচ্ছে৷ এরকম আরো কয়েকটি ফেডারেশন আছে৷ কিন্তু তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট ভেন্যু নেই৷ ভেন্যু পেতে তাদের রীতিমতো মারামারি করতে হয়৷ আমার মনে হয় সূচক নির্ধারণ করে দেয়া উচিত, সেই সূচকের ভিত্তিতে সুবিধা দেয়া উচিত৷

ফেডারেশনগুলোতে অনেক অপেশাদার লোক আছে৷ তারা কী করে আসলে?

বছরে কিছু বাজেট পায়, কিছু স্পন্সর জোগাড় করে, কিছু বিদেশ সফর হয়-এই যা৷ অধিকাংশ ফেডারেশনেই খেলার কিছু হয় না৷

সাংবাদিকদেরও অনেক ফেডারেশনের সদস্য হতে দেখা যায়? তারা কি সবাই পেশাদার?

পেশাদার আছেন কেউ কেউ৷ ভালো সংগঠকও আছেন৷ তবে কেউ কেউ আছেন নানা ধরনের সুসম্পর্ক থাকার কারণে ফেডারেশনের সদস্য হন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য