1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছবি নামানো নিয়ে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি'র কথা বললেন উপদেষ্টা

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৫ নভেম্বর ২০২৪

বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন হয়েছে৷ কিন্তু এই সরকার গত তিন মাসে বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় কতটা এগিয়েছে? কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বৈষম্য হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকে৷

https://p.dw.com/p/4n0vk
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান৷
গত তিন মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রগতি বেশ জোরেশোরেই হয়েছে বলে মনে করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান৷ছবি: DW

এসব বিষয় নিয়ে ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান৷

ডয়চে ভেলে: সরকারের বয়স তিন মাস হলো৷ সামগ্রিকভাবে বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রগতি কতটা?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: আমার মনে হয়, আমাদের অগ্রগতি বেশ জোরেশোরেই শুরু হয়েছে৷ এই সরকার যখন যাত্রা শুরু করেছিল তখন প্রশাসনিক বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বলেন, বিচারই বলেন সবক্ষেত্রে যে ধরনের পরিস্থিতি ছিল, সেই পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে সামাল দিয়ে তারপর কাজ শুরু করতে হয়েছে৷ আপনি যদি দেখেন সবক্ষেত্রে বৈষম্যের কথা বলে যে আন্দোলনগুলো হয়েছে, প্রত্যেকটা আন্দোলনের সঙ্গেই সরকার বসেছে৷ প্রত্যেকটা আন্দোলনের কথাই শুনেছে৷ তারপর একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছে৷ সরকার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটা যারা আন্দোলন করেছে তারা মেনে নিয়েছে৷ বৈষম্যহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে কতগুলো জায়গাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে৷ বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে, প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে হবে, দুদককে শক্তিশালী করতে হবে, গণমাধ্যমকে শক্তিশালী করতে হবে, সবচেয়ে বড় কথা হলো জনগণকে ক্ষমতায়িত করতে হবে৷ আমাদের দেশে যে একটা ভিভিআইপি কালচার গড়ে উঠেছিল সেটাকে ভাঙতে হবে৷ এর প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সরকার তার কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে৷ কোথায় কোথায় সংস্কার করলে আমরা বৈষম্যমুক্ত সমাজ পাবো, ভিভিআইপি সংস্কৃতি ভাঙতে পারবো সেই কাজগুলো হচ্ছে৷ প্রশ্নের শেষ উত্তরে আমি বলব, কদিন আগেই যদি আপনি দেখেন আমাদের যিনি সরকারপ্রধান তিনি এয়ারপোর্টে প্রবাসী শ্রমিক ভাই-বোনদের জন্য আলাদা একটা লাউঞ্জ করেছেন৷ এ যাবৎকাল আমরা ভিআইপি ও ভিভিআইপি কাউন্টার দেখেছি৷ এখন থেকে সেখানে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য আলাদা কাউন্টার দেখা যাবে৷ ফলে যাত্রাটা শুরু হয়েছে৷

‘সরকার সংবিধান বাতিল করেনি, অস্বীকার করেনি, স্থগিত করেনি’

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে হতাহতদের তালিকা তৈরি ও পুনর্বাসন কতদূর? অনেকেরই ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে না, এমন অভিযোগ নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে৷ তাদের রক্তের উপরই তো এই সরকার প্রতিষ্ঠিত৷ তাদের ব্যাপারে সরকার কি শৈথিল্য দেখাচ্ছে?

তাদের রক্তের উপরতো এই সরকার প্রতিষ্ঠিত বললেন, যারা আন্দোলন করেছেন তাদের সঙ্গে যারা আন্দোলনে ছিলেন তারাও এই সরকারের অংশ৷ তারাও প্রতিনিয়ত বিক্ষোভ, দাবি সামাল দিচ্ছেন৷ আমরাও কিন্তু এই আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম৷ ফলে আমাদের এটা অন্য কারও কাছ থেকে জানতে হবে না যে, কতটা রক্ত মানুষ ঝরিয়েছে৷ ওইটা সম্পূর্ণ সম্মান আমরা করি৷ আর সেটাকে ধারণ করি বলেই প্রথম থেকে আমরা বলে আসছি আমরা আসলে ক্ষমতা না, দায়িত্ব গ্রহণ করেছি৷ অনেকেরই চিকিৎসা হচ্ছে না, এই কথাটা বলা ঠিক না৷ কোনো কোনো জায়গা থেকে এখনওছবি নামানো প্রসঙ্গে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি'র কথা বললেন উপদেষ্টা অভিযোগ আসছে যে, চিকিৎসা হচ্ছে না৷ কারণ হচ্ছে, অনেকে যোগাযোগটা করতে পারেনি৷ অনেকে ঠিক আন্দোলনের সঙ্গে ছিল বলে আহত হয়েছে তা না৷ হয়ত ওই দিক দিয়ে যাচ্ছিল বলে আহত হয়েছে৷ ওই যোগাযোগটা স্থাপন করতে সময় লেগেছে৷ যখনই আমরা খবর পাচ্ছি বা কোনো সূত্র থেকে জানতে পারছি কেউ আহত হয়েছিল এই আন্দোলনে তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি এমন একটাও দৃষ্টান্ত দেখাতে পারবেন না৷ তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ আবার প্রথমদিকে যারা মারা গেছেন তাদের লাশ পোস্টমর্টেম না করেই পরিবার নিয়ে চলে গেছেন৷ ফলে সেখানে সরকারি সিস্টেমে ভেরিফিকেশনে সময় লেগেছে৷ তবে সেটাও চূড়ান্ত হয়ে গেছে৷ আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঢাকায়ও এন্ট্রি হয়েছে ঢাকার বাইরেও এন্ট্রি হয়েছে৷ সেগুলো ভেরিফিকেশনে সময় লাগছে৷ কিন্তু আমাদের নজরে আনা হয়েছে কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নেইনি, এমন দৃষ্টান্ত আমার জানা নেই৷

নানা ইস্যুতে ছাত্ররা রাজপথে নেমে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে৷ এই আলোচনা তো টেবিলে হতে পারত৷ আপনাদের উপর চাপ তৈরি করতেই কি ছাত্ররা এমন করছে?

রাজপথে যারা দাবি করছেন তারা আলোচনায় বসবেন না, এমন কথা তো বলেন নাই৷ সরকারের সকল সিদ্ধান্তে সকলে একমত হবেন এমন কথা নেই৷ সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কারও যদি আপত্তি থাকে, আমরা আহ্বান করি আমাদের আলোচনার দুয়ার সব সময়ই খোলা৷ রাজপথে যখন কোনো আন্দোলন হয়, তখন সেটা আমরা শুনি এবং ধর্তব্যে নেই, বিবেচনা করি৷ আপনি যদি খেলাল করেন সরকারি চাকরিতে বয়সের যে বিষয়টা, সেখানে বয়স ৩৫ এবং তাদের দাবি ছিল অনেকবার পরীক্ষা দেওয়ার৷ আমরা বললাম, বয়স ৩২ এবং পরীক্ষা দেওয়া যাবে তিনবার৷ এরপর তারা আবার দাবি করল, তিনবার না, চারবার সুযোগ দিতে হবে৷ আমরা কিন্তু তাদের সেই দাবি শুনেছি৷ অনেকেই অনেক রকম দাবি তুলতে পারে, সরকার সবটাই শুনবে এবং সরকারের আলোচনার দুয়ার সবার জন্য খোলা৷ 

শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন৷
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার৷ছবি: Rubel Karmaker/ZUMAPRESS/picture alliance

ছাত্রলীগ তো নিষিদ্ধ করেছে সরকার৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ তো নিষিদ্ধ না৷ তাদের মাঠের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে৷ আসলে তাদের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত কী?

শুরুতে যে প্রশ্নটা করেছিলেন অনেক মানুষের রক্তের বিনিময়ে এই সরকার গঠিত হয়েছে, সেই প্রেক্ষিতটা যদি মাথায় রাখেন তাহলে এই প্রশ্নের উত্তরটা খুঁজে পাওয়া আপনার জন্যও সহজ হবে৷ যারা রক্ত ঝরিয়েছে তাদের পক্ষ থেকে এই অবস্থানটা বারবার পরিষ্কার করা হয়েছে যে, ফ্যাসিজমের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, যারা এই নৃশংস হত্যকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজনীতি হবে না৷ এটা তো তারা স্পষ্ট করেছে৷ রাজনীতির অধিকার কারওটাই নিষিদ্ধ করা হয়নি৷ কিন্তু যারা ফ্যাসিজমের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের প্রশ্নটা আগে মীমাংসিত হতে হবে৷ তারপর বাকি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে৷

জাতীয় পার্টিকেও কিন্তু সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি৷ তাদের সঙ্গে তো শুরুতে প্রধান উপদেষ্টাকে বৈঠক করতে দেখেছি৷ এখন তাদের সঙ্গে কি বৈষম্য করা হচ্ছে না?

যারা রক্ত ঝরিয়েছে তারাও বলছে, তাছাড়া দেশের অনেকেই তো দেখেছে জাতীয় পার্টির সমর্থনের কারণে বিনা ভোটের নির্বাচনগুলো বৈধতার সুযোগ পেয়েছে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল৷ কাজেই যারা রাস্তায় আন্দোলন করেছে তাদের স্পষ্ট দাবি হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট, ফ্যাসিজমের দোসর যারা তাদের বিচার হতে হবে৷

বঙ্গভবনসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানো নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে৷ এই সরকার তো সংবিধানের আলোকেই চলছে৷ সেখানে সংবিধান সংশোধন না করেই বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

এই সরকার সংবিধানটাকে বাতিল করেনি, অস্বীকার করেনি, স্থগিত করেনি৷ কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের ফলে আসা একটা সরকারকে সংবিধানের প্রত্যেকটা অক্ষর যদি মেনেই চলতে হতো তাহলে তো গণঅভ্যুত্থানটা হতো না, এই সরকারটাও হতো না৷ এখন ডকট্রিন অব নেসেসিটির একটা বিষয় আছে৷ গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খার একটা বিষয় আছে৷ গণঅভ্যুত্থানের মূল্যবোধের একটা বিষয় আছে৷ এখানে ছবি নামানোটা মুখ্য নয়৷ এখানে হচ্ছে, যে জিনিসগুলোকে পুঁজি করে ফ্যাসিজমটা চলেছে সেই জিনিসের বিরুদ্ধে, সেই প্র্যাকটিসের বিরুদ্ধে একটা অবস্থান নেওয়া৷ এটাকে সাংবিধানিক আলোকে দেখার সুযোগ আছে বলে মনে করছি না৷

৪ নভেম্বর ও ৭ মার্চ তো বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ৷ এই দু'টি দিবস বাতিল করে কি সরকার বিতর্ক উসকে দিলো না?

সরকারের অনেক কাজেই বিতর্ক হবে৷ বিতর্ক উসকানোর তো বিষয় না৷ মুক্ত আবহে যে-কোনো বিষয়ে তর্কবিতর্ক করার সুযোগ আছে৷ কারও যদি মনে হয়, সরকারের এই সিদ্ধান্তটা ভুল তারা বলবে এটা ভুল৷

ছাত্র রাজনীতি নিয়ে নানা ধরনের কথা হচ্ছে৷ সরকার কি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে? নাকি সংস্কারের পক্ষে?

এই সরকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করবে এই ধরনের আলোচনা কোথাও কখনও হয়নি৷ এটা বরং ছাত্ররাই কথা বলে ঠিক করুক৷ সেখানে যদি সরকার মনে করে কোনো বক্তব্য দেওয়া দরকার সেটা দেবে৷ কারণ ছাত্ররাই তো এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে৷ ছাত্রদের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রেক্ষিত আছে৷ বুয়েটে ছাত্রদের প্রেক্ষিত একরকম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষিত এক রকম৷ এই দুইটা প্রতিষ্ঠানের কথা মনে এল তাই বললাম৷ ফলে এটা আমি ছাত্রদের উপরই ছেড়ে দিচ্ছি৷ ওরা মতামত দিক, তারপর বৃহত্তর সমাজের মতামত নেওয়া হবে তারপর সরকার এটা নিয়ে কথা বলবে৷ এখন আগ বাড়িয়ে সরকার ছাত্র রাজনীতি বন্ধ বা বন্ধ না এই আলোচনা করছে না৷

আপনারা কি আন্তর্জাতিক কোনো চাপ অনুভব করছেন?

আন্তর্জাতিক কোনো চাপ সেই অর্থে অনুভব করছি না৷ বরং আন্তর্জাতিক বড় ক্ষেত্র আমাদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা দেখি, কোনো কোনো উত্তেজনা এখানে হয়ত সৃষ্টিই করা হয়, কোনো ঘটনা সেই অর্থে সাম্প্রদায়িক নয় সেগুলো বিদেশে নানাভাবে প্রচার করা হয়৷ সেক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে হচ্ছে৷ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সমাজ আগেও ছিল না, এখনও নেই, ভবিষ্যতেও হবে না৷ আমার জন্মই তো এদেশে, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশ ছেড়ে চলে যাইনি৷ এদেশেই আছি৷ ফলে মাঝেমধ্যে মনে হয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এই সরকারের যে গ্রহণযোগ্যতা সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটা সুসংগঠিত প্রচার চালানো হচ্ছে৷ যেটা অপপ্রচারেই সামিল৷ সেখানে আমাদের বাড়তি সময় দিতে হচ্ছে৷ ওই সময়টা যদি আমরা ওদিকে না দিয়ে দেশ গঠনের কাজে, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের কাজে, প্রশাসনের সংস্কারের কাজে, বিচার বিভাগের সংস্কারের কাজে দিতে পারতাম সেটা আমাদের জন্য ভালো হতো৷

মতৈক্যে পৌঁছালেই নির্বাচন: ড. ইউনূস

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান