1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘চোকার্স’ প্রোটিয়াদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত

রাহেনুর ইসলাম
৩০ জুন ২০২৪

বার্বাডোজের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতল ভারত।

https://p.dw.com/p/4hfvn
ভারতীয় দলের উচ্ছ্বাস। ২০২৪ সালে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাজ জয়ী ভারত
১৭ বছর পর এটা ভারতের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়।ছবি: Ash Allen/REUTERS

ভারতের ৭ উইকেটে ১৭৬ রানের চ্যালেঞ্জ তাড়া করতে নেমে প্রোটিয়ারা থামে ৮ উইকেটে ১৬৯। ১৭ বছর পর এটা ভারতের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়।

সাত মাসের ব্যবধানে দুটি বিশ্বকাপ ফাইনাল।আহমেদাবাদে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে হৃদয় ভেঙেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে। সাত সমুদ্র পেরিয়ে সাত মাস পর বার্বাডোজের আরেক ফাইনালে হারলে কী হবে? ভারতীয় সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি বলেছিলেন, ‘‘সাত মাসের ব্যবধানে দুটি বিশ্বকাপ ফাইনালে হারলে বার্বাডোজের সমুদ্রে ঝাঁপ দিবে রোহিত!''

সৌরভের কথা মেনে ফেরার আগে সমুদ্রস্নান করতেই পারেন রোহিত। তাঁর যে শাপমোচন হলো। দক্ষিণ আফ্রিকাকে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ৭ রানে হারিয়ে হলো চক্রপূরণও।

২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ আর ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ে পর থেকে যে শুধু হতাশা গ্রাস করে চলেছে ভারতকে। হারতে হয়েছে দুটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আর একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল। সেই হতাশাটা দূর হলো বার্বাডোজের সাগর পারে। দুটি দলই বিশ্বকাপজুড়ে ছিল অপরাজিত। দক্ষিণ আফ্রিকার হারটা তাই স্বপ্নভঙ্গের। আর জয়ী ভারত যথার্থই চ্যাম্পিয়ন, যারা গর্ব করবে প্রথম দল হিসেবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার।

২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিলেন রোহিত শর্মা আর ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ বিরাট কোহলি। একসঙ্গে কখনো বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভাসা হয়নি তাদের। রো-কো জুটির মুকুটে যোগ হলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রত্নটা। ম্যাচ সেরাও হয়েছেন কোহলি। আর ম্যাচ শেষে কোহলি ঘোষণাও দিলেন, ‘‘ এটাই আমার শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ভারতের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টিও। এখন সময় নতুনদের।''

সেই ২০০৭ সাল থেকে কেবল রোহিত শর্মা আর সাকিব আল হাসানই খেলেছেন সবগুলো বিশ্বকাপ। ১৭ বছর আগের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নাটকীয় ফাইনালে ১৬ বলে ৩০ করেছিলেন রোহিত। এতদিনে পরিণত হওয়া রোহিত এখন উইকেটের মায়া ছেড়ে নিঃস্বার্থভাবে খেলেন শুধু দলের জন্য। তাই এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১ বলে শৈল্পিক বিস্ফোরণে ৯২ করেও চেষ্টা করেননি সেঞ্চুরির। তবে মানুষ বলে আবেগী রোহিতও। এজন্যই সেমিফাইনালে দাপুটে জয়েরে পর আরেকটি ফাইনালের আনন্দে কেঁদেছিলেন গায়ানায়। আহমেদাবাদে বিশ্বকাপ জিততে না পারার যন্ত্রণাটা যে বয়ে বেড়ান এখনও। বার্বাডোজে যার শাপমুক্তি ঘটাতে চাইছেন তিনি। করতে চাইছিলেন চক্রপূরণও। সেটা হওয়ার পর আর ড্রেসিংরুমে নয় মাঠেই কাঁদলেন রোহিত।

ব্রডকাস্টার চ‌্যানেলে আবার অনবরত প্রোমো চলেছে -‘ডু ইট ফর দ্রাবিড়'। কারণ এমন সময় তিনি বিশ্বকাপ জয়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যার পরই ছাড়বেন কোচের দায়িত্ব। খেলোয়াড় হিসেবে ২০০৩ সালে আর কোচের দায়িত্বে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরেছেন দ্রাবিড়। গুরুকে বিদায়ী উপহারই দিল ভারত। ২০০৭ বিশ্বকাপ সাফল্যের পর শুরু হয়েছিল আইপিএল। অথচ আইপিএল যুগে একটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা হয়নি ভারতের! দূর হলো সেই আক্ষেপও।

টি ২০ জয়ের পর ভারতের উচ্ছ্বাস
খেলোয়াড় হিসেবে ২০০৩ সালে আর কোচের দায়িত্বে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরেছেন দ্রাবিড়। গুরুকে বিদায়ী উপহারই দিল ভারত।ছবি: Chandan Khanna/AFP/Getty Images

এই অসাধারণ চিত্রনাট্যটা ভেস্তেও যেতে পারত। কারণ জয়ের জন্য শেষ ৩০ বলে মাত্র ৩০ রান দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু তারা যে চিরকালের চোকার্স! চাপে ভেঙে পড়ে সবসময়। এবার ভেঙে পড়ল ফাইনালের মতো মঞ্চে।

বিশ্বকাপ ফাইনালের সর্বোচ্চ রান তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালো হয়নি। টুর্নামেন্ট জুড়ে হাড়কিপ্টে বোলিং করা যশপ্রীত বুমরাহর বলে বোল্ড হন রিজা হেনড্রিকস (৪)। পরের ওভারে অর্ষদীপ ৪ রান করা অধিনায়ক এইডেন মারক্রামকে ফেরান উইকেটের পেছনে পন্থের ক্যাচ বানিয়ে। ভারত শুরুর ২ উইকেট হারিয়েছিল তিন বলের ব্যবধানে, আর প্রোটিয়ারার ৬ বলের ব্যবধানে।

ফাইনালে ব্রিজটাউন হয়ে উঠেছিল উইন্ডটাউন! বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। বাতাসের গতিমুখ বাঁহাতিদের জন্য ফাইন লেগে, যা মাঠের সবচেয়ে ছোট বাউন্ডারি এলাকা (৫৬ মিটার)। কুইন্টন ডি ককও সেই অঞ্চল লক্ষ্য করে সচল রেখেছিলেন রানের চাকা। ট্রিস্টান স্টাবসের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়ে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন প্রোটিয়াদের। ২১ বলে ৩১ করা স্টাবসেকে বোল্ড করে জুটিটা ভাঙেন অক্ষর প্যাটেল। অর্ষদীপের ফাঁদে পা দিয়ে ডিপ ফাইন লেগে কুলদীপকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন কুইন্টন ডি কক। ৩১ বলে চার বাউন্ডারি এক ছক্কায় ৩৯ করেছিলেন তিনি।

পাওয়ার প্লেতে ভারতের স্কোর ছিল ৪৫/৩, ১০ ওভার শেষে ৭৫/৩ আর ১৫ ওভারে ১১৮/৪। সেখানে পাওয়ার প্লেতে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪২/২, ১০ ওভারে ৮১/৩ আর ১৫ ওভারে ৪ উইকেটে ১৪৭।

হারার পর মন খারাপ সাউথ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের
দক্ষিণ আফ্রিকার হারটা তাই স্বপ্নভঙ্গের। আর জয়ী ভারত যথার্থই চ্যাম্পিয়ন, যারা গর্ব করবে প্রথম দল হিসেবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার।ছবি: Gareth Copley/Getty Images

শেষ ৫ ওভারে ভারত করেছিল ৫৮। ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে রান তাড়ায় যা সহজ নয়। বিশেষ করে চাপের মুখে বারবার ভেঙে পড়া ‘চোকার্স'খ্যাত প্রোটিয়াদের জন্য তো আরও নয়। তবে নিয়মিত আইপিএলে খেলে ভারতীয় বোলারদের নাড়ি-নক্ষত্র জানা হাইনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার বুঝিয়েছেন তারা অন্য ধাতুতে গড়া। স্পিনে সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ক্লাসেন দুই ছয় দুই চারসহ ২৪ রান নেন অক্ষর প্যাটেলের করা ১৫তম ওভারে (দুটি ওয়াইড ছিল)। ৩৬ বলে ৫৪ থেকে সেই ওভার শেষে লক্ষ্যটা কমে আসে ৩০ বলে ৩০-এ!

ভারতের হাত থেকে ম্যাচ তখন প্রায় ছিটকে গিয়েছে, তখনই ২৭ বলে ২ বাউন্ডারি ৫ ছক্কায় ৫২ করা ক্লাসেনকে উইকেটরক্ষক পন্থের ক্যাচ বানিয়ে ম্যাচে প্রাণ ফেরান হার্দিক পাণ্ডিয়া। ব্যাটে ঝড় তুলে মাত্র ২৩ বলে ফিফটি করেছিলেন তিনি।

রানের গতি থামাতে বাধ্য হয়ে বুমরাহকে শেষ দুই ওভারের জন্য রাখতে পারেননি রোহিত। আস্থার প্রতিদান দিয়ে নিজের তৃতীয় ওভারে চার রান আর শেষ ওভারে অসাধারণ বলে ইয়ানসেনকে (২) বোল্ড করাসহ দেন কেবল দুই রান। চার ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে নিজের কোটা শেষ করেন বুমরা। শেষ ১২ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার তখন দরকার ২০ রান, হাতে চার উইকেট।

অর্ষদীপ ১৯তম ওভারে দেন ৪ রান। শেষ ওভারে দরকার ১৬, ক্রিজে ডেভিড মিলার ও কেশব মহারাজ। হার্দিক পাণ্ডিয়ার প্রথম বলে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে সূর্যকুমার যাদবের অবিশ্বাস্য ক্যাচে আউট ডেভিড মিলার (১৭ বলে ২১)। দ্বিতীয় বলটা রাবাদার ব্যাটের কাণায় লেগে উইকেটের পেছন দিয়ে বাউন্ডারি। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে একটা করে সিঙ্গল। পরেরটা ওয়াইড। পঞ্চম বলে রাবাদাকে ফিরিয়ে ম্যাচ জয় নিশ্চিত করে ফেলেন হার্দিক। শেষ পর্যন্ত তাদের জয় ৭ রানে। এরপরই মাঠে নেমে ভারতের পতাকাই পুঁতে দেন রোহিত!

অর্ষদীপ
অর্ষদীপ চার রান করা অধিনায়ক এইডেন মারক্রামকে ফেরান উইকেটের পেছনে পন্থের ক্যাচ বানিয়েছবি: Ricardo Mazalan/AP Photo/picture alliance

ব্রিজটাউনের বার্বাডোজে কেনসিংটন ওভালের পিচে এবারের বিশ্বকাপে ফাইনালের আগে পেসাররা নিয়েছিলেন ৫৯ উইকেট, স্পিনাররা কেবল ৩২টি। রান খরার বিশ্বকাপে এই মাঠে সুপার এইটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভারত করেছিল ১৮১ আর ইংল্যান্ডের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া গড়েছিল ২০১ রানের পাহাড়। সেখানেই বিশ্বকাপ ফাইনাল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১৭৬ রানের রেকর্ড গড়েছিল ভারত।

এমন পিচে স্পিনারের ঘূর্ণি জাদুতে বাজিমাত করা কঠিন জেনেও একাদশে তিন স্পিনারই রাখে ভারত। বদলায়নি সেমিফাইনালের একাদশ। সেই স্পিনাররা গায়ানায় সফল হলেও ব্যর্থ বার্বাডোজে। অক্ষর প্যাটেল ও কুলদীপ যাদব ৮ ওভারে ৯৪ রান, উইকেট কেবল একটি। এই দুজন অকাতরে রান দেওয়ায় রবীন্দ্র জাদেজাকে দিয়ে ১ ওভারের বেশি করাননি রেহিত শর্মা। শেষ পর্যন্ত ফাস্ট বোলাররই রুদ্ধশ্বাস জয়ে শিরোপা এনে দিল ভারতকে।

 দক্ষিণ আফ্রিকা যেমন রংধনুর দেশ তেমনি ক্রিকেটে তারা সেমিফাইনালের দল! প্রোটিয়ারা ক্রিকেটে সব পারে কিন্তু সেমিফাইনাল জিততে পারে না। এর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৫ বার আর টি-টোয়েন্টিতে শেষ চার থেকে বিদায় নিয়েছে দুই বার।

চোকার্স বদনামটা ‘অলঙ্কার' হয়ে যায় নামের সঙ্গে। হানসি ক্রোনিয়ে, অ্যাালান ডোনাল্ড, জন্টি রোডস,  গ্যারি কারস্টেন, জ্যাক ক্যালিস, শন পোলক, এবি ডি ভিলিয়ার্সের মত কিংবদন্তিরা পারেননি ভাগ্যটা বদলাতে। সেই দুর্লঙ্ঘ দেওয়ালটা ধাক্কা মেরে গুঁড়িয়েছে এবারের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম না পারলেও ২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে ভাগ্য বদলোনোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার যুবারা। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন এইডেন মারক্রাম, খেলেছিলেন কাগিসো রাবাদাও। এই দুজনের হাত ধরেই প্রথমবার কোনও বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে তারা। দুঃখগাথার শেষে প্রোটিয়ারা ফাইনালে ছিল নতুন সূর্যোদয়ের আশায়। সেটা আর হলো কোথায়। ফাইনালে সেই চোকার্সই রয়ে গেল তারা।

আইসিসি ফাইনালে কোনও কমতি রাখেনি। ক্লাইভ লয়েড, গ‌্যারি সোবার্স, ভিভ রিচার্ডস থেকে শুরু করে ব্রায়ান চার্লস লারা–ওয়েস্ট ইন্ডিজের সব কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের কাছে আমন্ত্রণ পৌঁছে দিয়েছিল তারা।  বিশ্বকাপের দূত হওয়ায় ম্যাচ শুরুর আগে ট্রফি নিয়ে এসেছিলেন ক্রিস গেইল। 

টস জিতে ব্যাট করতে নামা ভারতের দুই ওপেনার মার্কো ইয়ানসেনের প্রথম ওভারেই নেন ১৫ রান। দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসে রানের লাগাম টানার পাশাপশি ফর্মে থাকা দুই ভারতীয় রোহিত শর্মা ও ঋষভ পন্থকে ফেরান কেশব মহারাজ। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে সুইপ করতে গিয়ে স্কোয়ার লেগে থাকা হাইনরিখ ক্লাসেনের নিচু ক্যাচে আউট রোহিত (৯ রান)। ভারতের ওপেনিং জুটি ভাঙে ২৩ রানে।

মহারাজের সেই ওভারের শেষ বলে সুইপ করেই কুইন্টন ডি কককে ক্যাচ দেন পন্থ (০)। তিন বলের ব্যবধানে দুই উইকেট নিয়ে স্বপ্নের শুরু এন দেন মহারাজ। এ নিয়ে মহারাজের বিপক্ষে তিন ইনিংসে ১০ বলে ছয় রান করে তিনবারই আউট হলেন পন্থ। কাগিসো রাবাদার বলে ৩ রান করা সূর্যকুমারের ক্যাচ ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে ছুটে নেন ক্লাসেন। 

টপ অর্ডার ব্যর্থ হলেও অপর প্রান্তে বিরাট কোহলি ছিলেন ভারতের ভরসা হয়ে। আসলে শচীন তেণ্ডুলকর, ব্রায়ান লারা, বিরাট কোহলিরা শুধু ব্যাটসম্যান নন প্রতিষ্ঠান। জ্বলে উঠলে জ্বালিয়ে দেন বিপক্ষকে। তাই টানা ব্যর্থতাতেও কোহলির কাঁধে ভরসার হাত রেখেছিলেন রোহিত। সেই আস্থার প্রতিদান দিয়ে কোহালি বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা খেললেন ফাইনালে। সেমিফাইনালের আগে যেখানে করেছিলেন সবমিলিয়ে ৭৫, সেখানে ফাইনালে খেললেন ৫৯ বলে ৬ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ৭৬ রানের ইনিংস।

অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৫৪ বলে ৭২ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কাটা কাটান কোহলিই। ইনিংসের প্রথম দুটি ছক্কা মারেন অক্ষর প্যাটেল।  মহারাজের পর এইডেন মার্কারমকে দ্বিতীয় ছক্কা মারার পর কোহলি বুড়ো আঙুলটা উঁচিয়ে বোঝান ‘এভাবেই ব্যাট করতে থাকো'।

বিরাট কোহলি
অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৫৪ বলে ৭২ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কাটা কাটান কোহলিই। ছবি: Ramon Espinosa/AP Photo/picture alliance

সেমিফাইনালে বল হাতে তিন উইকেট নিয়ে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা অক্ষর প্যাটেলের দৃষ্টিনন্দন ৩১ বলে একটা বাউন্ডারি চারটি ছক্কায় ৪৭ রানের ইনিংসটির সমাপ্তি হয় দৃষ্টিকটু রানআউট হয়ে।

কোহলি ফিফটি করেন ৪৮ বলে। পরে গতি বাড়িয়ে করেন ৫৯ বলে ৭৬। ইয়ানসেনের স্লোয়ারে পুল করতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন কাগিসো রাবাদাকে। ২০১৪ সালের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ৫৮ বলে ৭৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন কোহলি। এজন্যই তো তিনি কিং কোহলি, যিনি সেরাটা জমিয়ে রাখেন বড় মঞ্চের জন্য। কোহলির ইনিংসটি এগিয়েছে এভাবে, ১-১৫ বলে ২১ রান, ১৬-৩০ বলে ১৬ রান, ৩১-৪৫ বলে ১১ রান আর ৪৬ থেকে ৫৯ বলে ২৮ রান।

১৫ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ছিল চার উইকেটে ১১৮। শেষ ৫ ওভারে তারা নেয় ৫৮ রান। শিবম দুবে ১৬ বলে করেছিলেন ২৭। ভারত থামে সাত উইকেটে ১৭৬ রানে। বিশ্বকাপ ফাইনালে এটাই সর্বোচ্চ স্কোর। আগের সেরা ছিল ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার দুই উইকেটে ১৭৩।  কেশব মহারাজ ২৩ রানে দুইটি আর আনরিখ নর্কিয়া নেন ২৬ রানে দুই উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : ভারত ২০ ওভারে ১৭৬/৭ (কোহলি ৭৬, প্যাটেল ৪৭, দুবে ২৭ ; মহারাজ ২/২৩, নর্কিয়া ২/২৬, রাবাদা ১/৩৬)।

দক্ষিণ আফ্রিকা : ২০ ওভারে ১৬৯/৮ (ক্লাসেন ৫২, ডি কক ৩৯, স্টাবস ৩১; পাণ্ডিয়া ৩/২০, বুমরাহ ২/১৮)।

ফল : ভারত ৭ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ : বিরাট কোহলি।

ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট : যশপ্রীত বুমরাহ

রাহেনুর ইসলাম সাংবাদিক