1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অস্ট্রেলিয়াকে অপেক্ষায় রেখে সেমিফাইনালে ভারত

২৪ জুন ২০২৪

সেমিফাইনালে উঠতে অস্ট্রেলিয়ার চাই জয়, ভারতেরও শেষ চারের টিকিট পুরোপুরি নিশ্চিত করতে জয়ই চাই-এমন পরিস্থিতিতে সেন্ট লুসিয়ায় রানপ্রসবা এক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ২৪ রানে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়েই সেই টিকিট পেলো ভারত।

https://p.dw.com/p/4hS0N
 St. Lucia Gros Islet |  ICC T20 World Cup | Indien vs Australien
ছবি: Ramon Espinosa/AP/picture alliance

 সেমি ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।

বোলারদের জন্য মৃগয়ার এই বিশ্বকাপে ব্যাটারদের রান উৎসব হয়নি বললেই চলে। সেন্ট লুসিয়ার ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচটা তাই ব্যাটারদের জন্য হয়ে এলো অনেকদিন পর এক পশলা বৃষ্টির মতো। বৃষ্টির মতোই ছয়-চার হলো, এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ২৪টি ছয়ও দেখলো এই ম্যাচ। শেষের ক্লাইম্যাক্স ঠিক না জমলেও টানটান উত্তেজনা ছিল ম্যাচের অনেকটা সময় পর্যন্ত। ১৩ হাজার দর্শকের ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামের দর্শকদের পয়সা উসুলও হলো।

অনেক কিছুই হলো, তবে মিললো না অস্ট্রেলিয়ার হিসেব। আফগানিস্তানের কাছে হেরে ধাক্কা খাওয়া দলটা ভারতের বিপক্ষেও মলিন। অস্ট্রেলিয়ার মূল হন্তারক ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তার ব্যাটের ঝড়ে ম্যাচের প্রথম ভাগেই খেই হারিয়ে ফেলে মিচেল মার্শের দল!

সেন্ট লুসিয়ায় টসে জিতে মার্শ ঠিক করলেন, তিনি বল করবেন। রোহিত শর্মাও তাই করতে চেয়েছিলেন৷

 ভারতের শুরুটা ছিল অবশ্য দুঃস্বপ্নের মতো। ব্যাটারদের জন্য এই বিশ্বকাপের রানওয়ে বেশ কঠিন, সেখানে কোহলির প্লেন আরও একবার টেক অফ করতে ব্যর্থ৷ দ্বিতীয় ওভারেই  কোহলি জশ হ্যাজলউডকে পুল করতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে, বেশ কিছুটা দৌড়ে ভালো এক ক্যাচ নেন টিম ডেভিড। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ‘ডাক' কোহলির, ভারতের আকাশে কি তখন একটু মেঘের আনাগোনা?

আর্শদীপ সিং এবং কুলদীপ যাদব
ভারতের দুই সফল বোলার আর্শদীপ সিং এবং কুলদীপ যাদবছবি: Ramon Espinosa/AP/picture alliance

সেই আশঙ্কার মেঘ এরপর এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এরপর ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে অজি বোলারদের ওপর যেন আঘাত হেনেছেন অদূরের ক্যারিবিয়ান সাগর থেকে উঠে আসা হারিকেনের মতো। শুরুটা হয় মিচেল স্টার্কের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভার দিয়ে। প্রথম দুই বল কাভারের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলার পরের বলটা চার, চতুর্থ বলটা আবার ছয় । এক বল বিরতি দিয়ে শেষ বলে আরেকটি ওভার বাউন্ডারি, সেই এক ওভার থেকেই রোহিত তুলে নেন ২৯ রান।

ঝড় চলতে থাকে কামিন্স বোলিংয়ে আসার পরেও। তার প্রথম বলটাই মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন রোহিত, এরপর হঠাৎ করেই মাঠে এক পশলা বৃষ্টি। তবে কিছুক্ষণ পর আবার খেলা শুরু হয়, আর রোহিত শুরু করেন বোলারদের তুলোধুনা করা। সেই ওভারেই পেয়ে যান ফিফটি মাত্র ১৯ বলের ফিফটিটা রোহিতের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেরই সবচেয়ে দ্রুত। ভারতের রান তখন ৫২, যার মধ্যে ৫০ই রোহিতের! 

স্টার্ক-কামিন্স বেধড়ক পিটুনি খাওয়ার পর এই টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা বোলার অ্যাডাম জাম্পা বা অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিসও নিস্তার পাননি রোহিতের তাণ্ডব থেকে। ওদিকে ঋশভ পান্তকে ফিরিয়ে দেন স্টয়নিস, তবে রোহিত ঝড় চলছিলই। যখন মনে হচ্ছিল এই বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরিটা পেয়ে যাবেন, তখনই স্টার্কের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ৪১ বলে ৯২ রান করে- যার মধ্যে ৭৬ রানই এসেছে চার-ছয় থেকে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম

ট্রাভিস হেড
ট্রাভিস হেডছবি: Ramon Espinosa/AP/picture alliance

ব্যাটার হিসেবে ২০০ ছয় হয়ে গেছে রোহিতের, হয়ে গেছে এই বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানও।

রোহিত আউট হওয়ার আগে অবশ্য সূর্যকুমার যাদবও তাকে সঙ্গত দিতে শুরু করেছিলেন। তবে তার ঝড়টা বেশিক্ষণ চললো না, ১৬ বলে ৩১ রান করে স্টার্কের বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। দুঃস্বপ্নের শুরুর পর স্টার্কের জোড়া আঘাতেই ম্যাচে ফিরে আসে অস্ট্রেলিয়া। এরপর শিবম দুবে আর হার্দিক পান্ডিয়ারা রোহিতের রেখে যাওয়া ব্যাটনটা নিয়ে এগিয়েছেন বটে, তবে তাদের দৌড়টা আরেকটু জোরে হয়তো হতে পারতো। শেষ ৫ ওভারে ৪৩ রান তুলেছে ভারত, তবে তাদের রান আরও না বাড়ার মূল কারণ হ্যাজলউড। বোলারদের এমন নাকাল হওয়ার দিনে লাইন ও লেংথের দুর্দান্ত বৈচিত্র্যে হ্যাজলউড ছিলেন রীতমতো দুর্বোধ্য, তার ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিচ্ছে সেই সাক্ষ্যই।

ভারতের মতো অস্ট্রেলিয়ার শুরুটাও হয়েছিল একই রকম। ডেভিড ওয়ার্নার হতে পারতেন এমন বড় রান তাড়ার অন্যতম কুশীলব, কিন্তু আর্শদীপ সিংয়ের প্রথম ওভারেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন।

তবে ট্রাভিস হেড আর অধিনায়ক মিচেল মার্শ ঠিক করলেন, দুজন পালটা আক্রমণ শুরু করবেন। আর্শদীপকে টার্গেট করলেন মার্শ, ওদিকে জাসপ্রিত বুমরার বলে তিনটি চার মেরে হেড জানান দিলেন, তারা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। পাওয়ার প্লেতে ভারতের চোখে চোখ রেখে উত্তর দিলোঅস্ট্রেলিয়া, ৬৫ রান তুলে ফেললেন মার্শ আর হেড। ভারতকে ম্যাচে ফেরানোর জন্য দরকার ছিল অসাধারণ কিছুর৷ এরপরে তাই ম্যাচের সম্ভবত সেরা মুহূর্তটির জন্ম দিলেন অক্ষর প্যাটেল। কুলদীপ যাদবের হাফ ট্র্যাকারটা পুল করে প্রায় সীমানার ওপারেই আছড়ে ফেলেছিলেন মার্শ, কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে দারুণ এক লাফে বলটা তালুবন্দি করে অক্ষর নিলেন অসাধারণ এক ক্যাচ। ২৮ বলে ৩৭ রানের ইনিংসটা আরও বড় করতে না পারার জন্য অজি অধিনায়কের আক্ষেপ থাকবে নিশ্চিত।

তবে হেড আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল রান রেটের চাকাটা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন। দুর্দান্ত রিভার্স সুইপে জাদেজার ওভার থেকে ১৭ রান নিলেন ম্যাক্সওয়েল। কিন্তু এরপরেই কুলদীপের বলটা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে এসে হয়ে গেলেন বোল্ড। ১২ বলে ২০ রান করে ম্যাক্সওয়েলের আউটে আবার ঘুরে গেল ম্যাচের মোড়ও।

অবশ্য হেড ছিলেন তখন। কিন্তু ক্রমশ নিঃসঙ্গ সেনাপতির মতো একে একে দেখছিলেন সতীর্থদের চলে যাওয়া। স্টয়নিস আউট হয়ে গেলেন দ্রুতই, ম্যাথু ওয়েডও টিকলেন না বেশিক্ষণ। নেট রান রেট ১০ থেকে বেড়ে চলে গেল ১৩ ছাড়িয়ে ১৪র কাছাকাছি। শেষ পর্যন্ত বুমরার স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে ক্যাচ দিয়ে শেষ হলো হেডের একাকী লড়াই, ৪৩ বলে ৭৬ রানের ইনিংসটা পরে শুধু আক্ষেপই বাড়িয়েছে। এরপর শেষদিকে টিম ডেভিডরা চেষ্টা করেও পাল্লা দিতে পারেননি রান রেটের সাথে। ২০ ওভার খেলেও তাই ১৮১ রানে থামতে হয়েছে অজিদের, ২৪ রানে জয় পেয়েছে ভারত। যাতে সামনে থেকে পথ দেখিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত।

স্কোর

ভারত:  ২০ ওভারে ২০৫-৫ (রোহিত ৯২, সূর্যকুমার ৩১; স্টার্ক ২/৪৫, স্টয়নিস ২/৫৬)

অস্ট্রেলিয়া : ২০ ওভারে ১৮১-৭ (হেড ৭৬, মার্শ ৩৭; আর্শদীপ ৩/৩৭, কুলদীপ ৩/২৪)

ফলঃ ভারত ২৪ রানে জয়ী