1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রূপপুর, সোনাদিয়া কি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অসাম্যের প্রতীক?

২৯ জুন ২০২৪

‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশোর এবারের পর্বের আলোচনায় দুই প্রতিবেশি রাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কে ক্ষমতার টানাপোড়েনের প্রসঙ্গে উত্থাপিত হয় এই তিনটি উদাহরণ৷

https://p.dw.com/p/4heWp
‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশো-তে অতিথি হিসেবে আছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মমতাজ হোসেন এবং নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. জাহেদ উর রহমান৷
‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশোয়ের একটি দৃশ্যছবি: DW

ইউটিউবে ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়' টকশো-তে অতিথি হিসেবে এবারের পর্বে উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মমতাজ হোসেন এবং নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. জাহেদ উর রহমান৷ শেখ হাসিনা সরকার কি ভারতের দিকে বেশি ঝুঁকে আছে, এই প্রশ্নকে সামনে রেখে শুরু হয় এই পর্ব৷

অনুষ্ঠানের নানা অংশে ওঠে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনসহ ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের বেশ কয়েকটি সংবেদনশীল দিকের প্রসঙ্গ৷

এক পর্যায়ে সঞ্চালক প্রশ্ন তোলেন যে বাংলাদেশকে কি ভারতের প্রসঙ্গে ক্রমশ এক ধরনের ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতির' দিকে এগোচ্ছে? এমন প্রবণতার পক্ষে যায়, তেমন কয়েকটি উদাহরণ অতিথিদের কাছে জানতে চান তিনি৷ 

জবাবে ডা. জাহেদ উর রহমান তিনটি দিক উত্থাপন করেন৷ প্রথমত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেটি রাশিয়ান সহযোগিতায় নির্মিত হলেও সেখানে দক্ষতা ও বিশেষ প্রশিক্ষণবিহীন ভারতীয় নাগরিকরা এসে কাজ করবেন বলে অভিযোগ৷ দ্বিতীয়ত, ডা. রহমান জানান সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরের কথা৷

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দর সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক হতো সোনাদিয়াতে৷ অনেকগুলি গবেষণা আছে এবিষয়ে৷ প্রধানমন্ত্রী যখন চীনে গেছেন ২০১৫ বা ২০১৬ সালের দিকে, তখন সেই চুক্তি ভারতের সাথে হবার কথা ছিল৷ ভারতের সেই রেড লাইনের কারণে বাংলাদেশ তার সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থান থেকে সরে এসেছে৷ সরে এসে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর করছে৷ আমাদের সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গায় আমরা গভীর সমুদ্র বন্দর করতে পারিনি, ভারতের জন্য৷''

এরপর ডা. রহমান অভিযোগ করেন যে বাংলাদেশের সাগরতটের মধ্যেই ভারত কয়েকটি রাডার বসিয়েছে৷ এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেকেই জানিনা, বাংলাদেশের কোস্টে ভারতের রাডার আছে৷ ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ২০১৯ সালে এই চুক্তি করে আসা হয়েছিল৷ প্রত্যেকটি নির্বাচনের পর এই ধরনের ঘটনা ঘটবে৷''

সাবেক রাষ্ট্রদূত এই তিনটি প্রসঙ্গে তার বক্তব্য তুলে ধরেন৷

গভীর সমুদ্র বন্দর সোনাদিয়া থেকে মাতারবাড়িতে সরে আসা প্রসঙ্গে মমতাজ হোসেন বলেন, ‘‘জাপান তাদের মতো করে গবেষণা করেছে৷ আমি যতটুকু জানি, তাতে মনে হয় যে জাপান তার জায়গা থেকে এমনটা করেছে৷ তারা মনে করেছে যে এই জায়গার তুলনায় মাতারবাড়িতে অর্থায়ন তাদের জন্য ভালো হবে, অবকাঠামোগত সুবিধাও থাকবে৷ এটা প্রথম ভারতই করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু সে যখন দেখলো যে এখানে করা তার পক্ষে সম্ভব না, তখন জাপান এগিয়ে এসেছে৷''

বাংলাদেশের সাগরতটে ভারতের রাডার স্থাপনের অনুমতি বাংলাদেশ দিয়েছে কি না, সেই প্রশ্নে মমতাজ হোসেন বলেন, ‘‘আমার জানামতে বাংলাদেশে ভারতের কোনো রাডার স্থাপন করা হয়নি৷ বাংলাদেশের সাগরে বা বঙ্গোপসাগরে কী হচ্ছে, তা জানার জন্য ভারতের বাংলাদেশে রাডার বসানোর প্রয়োজন নাই৷ সে তার নিজের রাডার ভারতে বসালেও সে বাংলাদেশে দেখতে পারবে৷ বাংলাদেশের এত কাছে তার সমুদ্র সীমানা৷''

কিন্তু সঞ্চালক উত্থাপন করেন এমন স্থাপনার কথা ওঠার পেছনেও যে ক্ষমতার প্রতীকীকরণ থাকে, সেই প্রসঙ্গ৷ ‘‘আপনার সাথে আমি একমত, হ্যাঁ, স্বাভাবিকভাবেই আমি যখন দেখি যে আমার পাশেই একটি বড় রাষ্ট্র তার খুঁটি গাড়লো, তাতে একটা প্রতিক্রিয়া হয়৷''

রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেসব খাতে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় বাংলাদেশি কর্মীদের বদলে ভারতীয় কর্মীরা নিযুক্ত হবেন, সেই বিষয়ে মমতাজ হোসেন বলেন যে, এই প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ মূলত রাশিয়ান সংস্থাটির কাছে৷ তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়া ও বাংলাদেশ যদি যৌথভাবে মনে করে যে, ভারত যেহেতু এই বিষয়ে অনেকগুলি প্রকল্পে কাজ করছে বা এগিয়ে আছে, সেক্ষেত্রে আমরা কম খরচায় দক্ষ কর্মী পাব, যা আমার দেশে নাই, তা করতে পারি৷''

টকশোর এবারের পর্বের শুরুতেই প্রশ্ন করা হয় যে ভারত রাষ্ট্র হিসাবে যা বাংলাদেশের কাছে চায়, শেখ হাসিনা তেমনভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন কিনা৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ছাড়াও দেশের ভেতরের নির্বাচন, ক্ষমতার হাতবদল ও নাগরিকদের প্রতিবাদের ওপরেও ভারতের কতটুকু প্রভাব পড়ে, তা নিয়েও আলোচনা করেন অতিথিরা৷ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একদিকে বেশি হেলে পড়েছে, নাকি তুলনায় ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রের প্রতিবেশি হিসাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতির সামনে আর কোনো বিকল্প নেই, এই সম্ভাবনাগুলিও উঠে আসে এই পর্বে৷

এসএস/এআই