1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রুয়ান্ডায় মাছ ফিরিয়ে আনার কর্মসূচি

৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আফ্রিকার ডিআর কঙ্গো আর রুয়ান্ডা সীমান্তে লেক কিভু অবস্থিত৷ ২০১৮ সালে এই লেকের রুয়ান্ডা অংশে প্রায় ১৯ হাজার টন মাছ ধরা পড়েছিল, যা দেশটির মোট মাছ ধরার প্রায় ৭০ শতাংশ৷ 

https://p.dw.com/p/3ov1Q
লেক কিভু
ছবি: Getty Images/AFP/P. Tulizo

কিন্তু ইদানিং মাছ অনেক কমে গেছে৷ মাছ ফিরিয়ে আনতে সরকারি কর্মসূচি শুরু হয়েছে৷

লেক কিভুর পূর্ব পাশে রুয়ান্ডা৷ দেখতে শান্তির জায়গা মনে হলেও নিয়মইয়ুম্বার জেলেরা ভালো নেই৷ কারণ, রুয়ান্ডার দুই ডজন লেকের মতোই লেক কিভুতেও মাছের খুব অভাব দেখা দিয়েছে৷ মূলত সার্ডিন আর বিভিন্ন রকমের তেলাপিয়া মাছ পাওয়া যায় এই লেকে৷ ২০১৮ সালে প্রায় ১৯ হাজার টন মাছ ধরা হয়েছিল, যা রুয়ান্ডার মোট মাছ ধরার প্রায় ৭০ শতাংশ৷ 

কিন্তু মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে৷ জেলে পিয়েরে নিউজিনায়ো বলছেন, ‘‘আগে দিনে একজন জেলে তিন থেকে চার কেজি মাছ পেতেন৷ কিন্তু এখন সপ্তাহে দুই কেজি মাছও পাওয়া যায়না৷’’ 

নিয়মইয়ুম্বার মাছের বাজারে পূর্ণবয়স্ক মাছের অভাব থাকায় পোনা মাছও বিক্রি হচ্ছে, যা অবৈধ৷ সরবরাহ কম থাকায় দামও বেশি৷ বিক্রেতা ওলেট কিশাকা বলেন, ‘‘মাছের দাম অনেক বেড়ে গেছে৷ মাছ কম ধরা পড়লে কেজিপ্রতি দামও বেড়ে যায়৷ মাছ ধরা পড়ার সঙ্গে দামের সম্পর্ক থাকায় আমাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে৷’’

মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় লেক কিভুর ইকোসিস্টেমেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে৷ বিজ্ঞানীরা পানির গুণ আর জলজ উদ্ভিদের দিকে নজর রাখছেন৷ সাধারণত মাছ এসব জলজ উদ্ভিদ খায়৷ কিন্তু মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এখন সেসব উদ্ভিদের সংখ্যা বাড়ছে৷ 

লেকে মাছ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

কিভু মনিটরিং প্রোগ্রামের আঙ্গে মুগিশা বলেন, ‘‘জলজ উদ্ভিদের সংখ্যা বেড়ে গেলে পানির উপর একধরনের ছায়া তৈরি হবে৷ তখন অক্সিজেন পানির গভীরে যেতে পারবেনা৷ আর সে কারণে পানিতে থাকা প্রাণী অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে পারে৷’’

লেক কিভুর পুবের আরেক লেক মুহাজির ইকোসিস্টেমে ইতিমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে৷ পরিবারের দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এই লেক থেকে পানি সংগ্রহ করেন আডেলে মুকামানা৷ মাছ কম থাকায় শামুকের সংখ্যা বেড়ে গেছে৷ শামুক এমন জীবাণু ছড়াতে পারে, যা বিলহারজিয়া সংক্রমণের কারণ৷

গ্রামবাসী আডেলে মুকামানা বলেন, ‘‘পানিতে অনেক শামুক আছে, যা থেকে আমাদের নানান রোগ হয়৷ এই যে দেখুন, এগুলো আমাদের সন্তানদের মেরে ফেলবে৷ সন্ধ্যায় সবজায়গায় শামুক দেখা যায়৷ এখন তারা লুকিয়ে আছে৷’’

মাছের সংখ্যা বাড়াতে সরকার একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে৷ সরকারের কৃষি ও মৎস্য কর্মসূচির সেসিল ইউজেইমানা বলেন, ‘‘আমরা এখন রুয়ান্ডার লেকগুলোতে তেলাপিয়াসহ অন্যান্য জাতের মাছের সংখ্যা বাড়ানোর কাজ করছি৷ তেলাপিয়ারা লেকের পাড়ের কাছাকাছি জায়গায় বংশবৃদ্ধি করে৷ সে কারণে তারা বেশি হুমকির মুখে থাকে৷ কারণ জেলেদের জালে সব আকারের মাছ ধরা পড়ে৷’’

রুয়ান্ডায় বিপন্ন প্রজাতির গন্ডার

রুয়ান্ডার দক্ষিণে কিগেম্বের এক হ্যাচারিতে লেকে যেসব জাতের মাছ পাওয়া যায় সেগুলোর প্রজনন করা হয়৷ 

রুয়ান্ডা কৃষি বোর্ডের আলোয়সে মুসোনি বলেন, ‘‘লেক আর নদী থেকে ভালো মাছ বাছাই করে প্রজননের জন্য এসব পুকুরে এনে রাখা হয়৷ যখন প্রজননের সময় হয় তখন তাদের ডিম সংগ্রহ করা হয়৷’’

লেক কিভুতে ফেরা যাক৷ জেলেরা আশা করছেন, লেকে আবারও মাছ ফিরে আসবে৷ জেলেরা নিজেরাও যে সমস্যার একটা কারণ, তার প্রমাণ আছে৷

জেলে ও কোপিরাকি কোঅপারেটিভের সভাপতি মুসা সেমাজেরি বলেন, ‘‘সব জেলেরা আইন মেনে মাছ ধরছেন না৷ কিছু জেলে এমন জাল দিয়ে মাছ ধরেন যেগুলো মশারি হিসেবে ব্যবহারের যোগ্য৷ ফলে সেগুলোতে সব আকারের মাছ ধরা পড়ে৷ এটা একটা সমস্যা৷ তবে আমার মনে হয় কর্তৃপক্ষেরও একটা দায়িত্ব আছে৷ আইন অমান্যকারীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে৷’’

তবে শুধু জেলেদের জরিমানার ব্যবস্থা করে লেক কিভুর পরিস্থিতি ভালো করা যাবেনা৷ মাছের সংখ্যা ঠিক রাখতে জেলেদের আরও সচেতন হতে হবে৷

থেমিস্টোকল হাকিজিমানা/জেডএইচ