জেলেদের ভাগ্য ফেরাচ্ছে নতুন প্রযুক্তি
৭ মে ২০১৯লেক ভিক্টোরিয়ায় মাছের খাঁচায় তেলাপিয়া মাছ চাষ করা হয়৷ পাঁচ বছর আগে দুই ভাইবোন গিলবার্ট এবং মিশেল মাবেও এই মাছের খামার শুরু করেন৷ বর্তমানে বছরে দু'শ টন মাছ চাষ করেন তাঁরা, যা সরাসরি হিমায়িত করা হয়৷ গিলবার্ট মাবেও এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা চাষের পর মাছের অপচয় রোধ করার চেষ্টা করি৷ বর্তমানে মাছ হিমায়িত করার সঠিক পদ্ধতি না থাকায় ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ মাছ নষ্ট হয়৷ আমরা সেটা রুখতে মাছ হিমায়িত করার ব্যবস্থা পুনরায় তৈরি করছি৷''
মাছ ধরার নৌকা থেকে খদ্দের পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াতেই সমস্যা আছে৷ লেক ভিউ মৎস খামার সর্বাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যেমন এই বহণযোগ্য কুলার, যা ফিনল্যান্ডের এক স্টার্টআপ কোম্পানি তৈরি করেছে৷ মিশেল মাবেও বলেন, ‘‘এটার মধ্যে হিমায়িত করার এক পদ্ধতি রয়েছে যা পেটেন্ট করা৷ আমরা আমাদের প্রযুক্তি সহায়তাকারীদের ব্যবহার করছি৷ যা এই বাক্সকে সাতদিন পর্যন্ত ঠান্ডা রাখে৷ এতে থাকা সেন্সর কখন বাক্স খোলা হচ্ছে এবং বন্ধ করা হচ্ছে তা শনাক্ত করতে পারে এবং বক্সের তাপমাত্রা কত আছে তা সবসময় আমাদের জানায়৷ ফলে মাছে সজীবতা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি৷''
এমফাংগানো দ্বীপে তেলাপিয়ার পোনা উৎপাদন করা হয়৷ এরপর সেগুলো ভাসমান খাঁচায় স্থানান্তরের আগে পর্যন্ত পুকুরে রাখা হয়৷ মাবেও ভাইবোন এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন৷ মিশেল একজন ডেটা অ্যানালিস্ট এবং গিলবার্ট চিকিৎসক৷ এক কল্যাণকর উদ্দেশ্যে তাঁরা মাছের খামার তৈরি করেছেন৷ এই প্রসঙ্গে মিশেল মাবেও বলেন, ‘‘লেক ভিউ ফিশারিজশুধু আমার পরিবারের মাছের খামার নয়৷ এটা আমাদের কমিউনিটির খামার৷ আমরা সেখান থেকেই এসেছি৷ আমরা আমাদের প্রান্তিক কমিউনিটির মানুষদের দেখতে চাই৷ তাদের উন্নয়ন চাই৷ তাদের ক্ষমতায়ন হোক তা চাই৷ আমরা চাই তারা তাদের টেবিলে খাবার নিশ্চিত করতে সমর্থ হোক৷''
এমফাংগানো দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল৷ ১৯৮০-র দশকে লেক ভিক্টোরিয়া থেকে মাছ রপ্তানি তুঙ্গে উঠেছিল৷ কিন্তু তখন টেকসই মাছচাষের কথা কারো মাথায় আসেনি৷ ফলে সময়ের সাথে সাথে পুরো লেকের মাছ ধরে ফেলা হয়েছে৷
আর মাছের অভাবে একসময় উপকূলের মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের প্লান্টগুলো বন্ধ হয়ে গেছে৷ এমফাংগানো দ্বীপের অনেক বাসিন্দাও তখন দারিদ্র্যদশায় পতিত হন৷ এখনো সেখানে খাওয়ার বা বিক্রির জন্য পর্যাপ্ত মাছ নেই৷
মিশেল এবং গিলবার্ট মাবেও তাদের মাছের খামার লাভজনক করে এটির পরিধি বাড়াতে চাইছেন৷ জার্মানির জিআইজেড উন্নয়ন সংস্থার সহায়তায় তারা একটি নতুন, টেকসই মাছ হিমায়িতকরণের ওয়্যারহাউস গড়ে তুলছেন৷ গিলবার্ট মাবেও বলেন, ‘‘সূর্য এখানে প্রচুর আলো দেয়৷ ফলে কোল্ডরুম সচল রাখতে সূর্যকে ব্যবহার ভালো ব্যাপার৷ এতে করে লোডশেডিংয়ের সময়ও সমস্যা হবে না৷ আমার আসলে খুব ভালো লাগছে এটা জেনে যে কোল্ডস্টোরেজটিতে সৌরশক্তি ব্যবহার করা হবে, যা গ্রিড বিদ্যুতের উপর নির্ভরতা কমাবে৷''
মাবেওরা তাদের মাছের খামারটিকে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় খামারের রূপ দিতে চান৷ গিলবার্ট মাবেও বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি যে আমাদের জেলে সম্প্রদায় এটাকে লেক ব্যবহারের এক নতুন উপায় হিসেবে দেখবেন৷ লেক ভিক্টোরিয়া যে কতবড় সম্পদ – তাঁরা সেটা বুঝতে পারবেন৷''
তবে শুধুমাত্র তাঁরাই সুবিধাভোগী নন৷ এখন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতেও ডিনারে লেক ভিক্টোরিয়ার মাছ পাওয়া যাচ্ছে মাবেওদের কল্যাণে৷
গ্যোনা কেটেলস/এআই