1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনীতির নতুন অস্ত্র আইন

ডয়চে ভেলের অতিথি লেখক মাসুদ কামাল৷
মাসুদ কামাল
৩১ মার্চ ২০২৩

ভারতে লোকসভা থেকে রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ বাতিল হয়ে গেছে। গুজরাটের একটি নিম্ন আদালতের রায়ে পদটি গেছে তার। এনিয়ে আইনগত লড়াই শেষ হয়ে যায়নি, রাহুল গান্ধী উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন।

https://p.dw.com/p/4PWuv
বিরুদ্ধ মত দমন করতে আদালতকে ব্যবহার করার প্রবণতা ভারত এবং বাংলাদেশ দুই দেশেই কি বাড়ছে?
বিরুদ্ধ মত দমন করতে আদালতকে ব্যবহার করার প্রবণতা ভারত এবং বাংলাদেশ দুই দেশেই কি বাড়ছে?ছবি: fikmik/YAY Images/IMAGO

তিনি যে তা করবেন, এটা নিশ্চিতই বলা যায়। উচ্চ আদালতে যাওয়া, আইনগত এই লড়াই নিয়ে হয়তো আরও অনেক আলোচনা হবে, রাজনীতিও হবে। কেবল ভারতেরই নয়, হয়তো সারা দুনিয়ারই দৃষ্টি থাকবে এদিকে। বিষয়টি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানির মতো দেশ স্পষ্টও করেছে। জানিয়েছে-তারা আইনি লড়াইয়ের এই যাত্রাপথটির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে।

উচ্চ আদালত থেকে কী রায় আসবে-তা নিয়ে আগাম ধারণা করার কোনো সুযোগ নেই, সেটা শোভনও হবে না। তবে উচ্চ আদালত থেকে রায় যেটাই আসুক, তার সঙ্গে কিন্তু লোকসভার সদস্যপদ বাতিলের বিষয়টি তেমন একটা সম্পর্কিত নয়। কারণ আইন হচ্ছে, যে অভিযোগ রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে উঠেছিল তাতে যদি নিম্ন আদালত তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়, পদ যাবে তার লোকসভা থেকে। আদালতে যে মামলা হয়েছিল তাতে অভিযোগ ছিল রাহুল নাকি একটি গোত্র বা গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে অবমাননাকর বক্তব্য রেখেছেন।

ঘটনাটি ২০১৯ সালের। তখন লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণাকালে কর্ণাটকে এক সভায় রাহুল গান্ধী দেশে চলমান দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছিলেন। তখন বেশ আলোচনা চলছিল আইপিএল-এর কর্মকর্তা ললিত মোদী ও হিরক ব্যবসায়ী নীরব মোদীর অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারী নিয়ে। আর সারাদেশের নির্বাচনী প্রচারণায় কংগ্রেস তো ‘চৌকিদার চোর হ্যায়' শ্লোগানের মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদী প্রতিও দুর্নীতির ইঙ্গিত করছিল। এই সব মিলিয়ে রাহুল যে মন্তব্যটি করেছিল সেটা এরকম- সব চোররা কেন তাদের পদবী ‘মোদী' ব্যবহার করে? এমন মন্তব্যের পর গুজরাটের সাবেক এক মন্ত্রী, বিজেপি নেতা, পুর্ণেশ মোদী মানহানির মামলা করেন রাহুলের বিরুদ্ধে। তার অভিযোগ, এমন বক্তব্যের মাধ্যমে আসলে সমগ্র মোদী সম্পদায়ের মানহানি করা হয়েছে। গুজরাটের সুরাট আদালত এই ক্ষেত্রে যে সর্বোচ্চ সাজা, সেটাই দিয়েছে রাহুলকে, দুই বছরের কারাদণ্ড। আর ভারতের আইন বলছে, কোনো সংসদ সদস্যের দুই বছরের কারাদণ্ড হলে, সঙ্গে সঙ্গেই তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে।

রাহুল গান্ধীকে নিয়ে এসব ঘটনা এমন এক সময়ে হলো,যখন ভারতের নির্বাচনের মাত্র আর একবছর বাকি। যদিও পুরো বিষয়টি দৃশ্যত আইনগত, তারপরও এর পেছনের রাজনীতিটাই এখন সামনে চলে এসেছে। কেউ কেউ বলছেন গত কয়েকমাস ধরে ‘ভারত জোড়ো' কর্মসূচির মাধ্যমে রাহুল গান্ধী এরই মধ্যে সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। কংগ্রেসের মরা গাঙে যেন জোয়ারের ঢেউ লেগেছে। নরেন্দ্র মোদীর বিপরীতে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রাহুলের চেহারাটা এখন অনেকের কাছেই এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করেছে। এসব বিষয়কে বিজেপি কিংবা খোদ নরেন্দ্র মোদী ভালো চোখে দেখছে না। সে কারণেই তারা চাচ্ছে আসন্ন নির্বাচনে রাহুলকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে রাখতে। আর তাই দ্রুততার সঙ্গে এই রায় ও তার বাস্তবায়ন।

ভারতের বেশ কটি রাজনৈতিক দল এই ঘটনার পিছনে রাজনীতি দেখছে। তারা রাহুল গান্ধীর প্রতি তাদের সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে। এরই মধ্যে ১৪টি রাজনৈতিক দল সুপ্রিম কোর্টের কাছে একটা লিখিত অভিযোগ করেছে। তারা বলেছে, ফেডারেল সরকার বিজেপি-বিরোধীদের হয়রানি করার জন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলোর ক্ষমতাকে অপব্যবহার করছে। আর রাহুল গান্ধী নিজে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, সংসদে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জানতে চেয়েছেন, বিতর্কিত ব্যবসায়ী গৌতম আদানির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্কটা আসলে কী? প্রশ্ন করেছেন, আদানির শেল কোম্পানিতে যে ২০ হাজার কোটি রুপির বিনিয়োগ, সেটা আসলে কার অর্থ? রাহুলের এসব অভিযোগ বা বক্তব্যকে সংসদ ভালোভাবে নেয়নি। তার বক্তব্যকে এক্সপাঞ্জ করে দেওয়া হয়েছে। রাহুলের ভাষায়-সংসদে যখন তিনি এসব প্রশ্ন তোলেন, তখন তিনি নরেন্দ্র মোদীর চোখেমুখে একধরনের আতঙ্ক দেখেছেন। সেজন্যই তারা তার বক্তব্যকে এক্সপাঞ্জ করেছে। সংসদে আগামী অধিবেশনগুলোতে তিনি যাতে এই প্রশ্নগুলো আরও বিস্তারিতভাবে না তুলতে পারেন, সেজন্যই পুরানো একটা অজুহাত দাঁড় করিয়ে তাকে লোকসভার বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি একথাও বলেছেন, সংসদের বলতে না দিলেও তিনি এ প্রশ্নগুলো উচ্চারণ করতেই থাকবেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আদানি আর মোদী আসলে একই। যে বিমানে প্রধানমন্ত্রী যাতায়াত করেন, সেখানে তার সঙ্গে আদানিও ছিলেন। তিনি বলেন, এই দেশে গণতন্ত্র শেষ হয়ে গেছে। মানুষকে প্রশ্ন করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের মনে যা কিছু আছে- তা উচ্চারণ করা যাচ্ছে না। দেশের যে ইনস্টিটিউশনগুলো আছে, সেগুলোকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। আর সেই আক্রমণের মেকানিজমটা কী? সেই মেকানিজমটা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী আর আদানির পারস্পরিক সম্পর্ক। বিজেপি আদানিকে কেন প্রটেক্ট করছে? কারণ একটাই, আসলেই বিজেপিই আদানি।

ঠিক এই জায়গাটিতে এসেই আমার একটু তুলনা করতে ইচ্ছা করছে। বিরুদ্ধ মতকে দমন করতে আদালতকে ব্যবহার করার প্রবণতা কি আমাদের দেশেও দেখা যায় না? বিএনপির এমন নেতা কয়েক হাজার আছেন, যাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। কেবল জাতীয় পর্যায়েই নয়, এমনকি জেলা বা উপজেলা পর্যায়েও এমন নেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না যার নামে কোনো মামলা নেই। মামলা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানে বিরুদ্ধ মতকে থমকে দেওয়ার একটি হাতিয়ার। সেই সঙ্গে এই হাতিয়ারের যথেচ্ছ প্রয়োগও চলছে। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কারাদণ্ড, উচ্চ আদালতে সেই সাজা আরও বেড়ে যাওয়া, তার জেলে যাওয়া-এই সবই হয়তো বিচারবিভাগীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু আইনের বাইরেও ‘পাবলিক পারসেপশন' বলে একটা কথা থাকে। সেই পারসেপশনের হয়তো কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। কিন্তু তারপরও সেটাকে একেবারে উপেক্ষা করাও বোধকরি সুবিবেচনাপ্রসূত কাজ নয়। সেই পারসেপশনে রাহুল গান্ধী কিংবা খালেদা জিয়ার প্রতি বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্তকে কতটুকু আরামদায়ক হিসাবে বিবেচনা করা যায়-সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।

বলা হয়ে থাকে, গত কয়েক বছর ধরেই ফেডারেল রাষ্ট্র হিসাবে ভারত তার গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য হারাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ এই রাষ্ট্রের আচরণে সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িকতার ছায়াও দেখছেন অনেকে। এতো অধোগতির পরও তাদের পরিস্থিতি কি আমাদের চেয়ে অনেকটাই ভালো নয়? অতো ডিটেইলে না যেয়েও, কেবল রাহুল গান্ধীর এই সংবাদ সম্মেলনটির কথা ধরা যাক। রাহুল কিন্তু সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লক্ষ্য করে। তাদের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আমাদের দেশেও আমরা কিন্তু দেখি প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে অনেক ব্যবসায়ীই সফরসঙ্গী হন। এদের অনেকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অসততার অভিযোগও থাকে। তারপরও সেই সব সন্দেহ বা অভিযোগের স্পর্শ কি প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হয়?

ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম কিন্তু আমাদের দেশেও আছে। যখন নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে, তখন এ সংক্রান্ত সিন্ডিকেটের কথা প্রকাশ্যেই উচ্চারিত হয়। সেই সিন্ডিকেটে কারা আছে, সেটাও সকলের জানা। সাধারণ মানুষ বা অনেক সময় মিডিয়াতেও নামগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। এই জায়গাটাতে অবশ্য ওদের সঙ্গে আমাদের বেশকিছু মিল আছে। ওখানেও বিচার হয় না, এখানেও হয় না। উচ্চারিত অভিযোগ সমূহের বিরুদ্ধে শীর্ষ ধনীদের দুই দেশের সরকারই এক ধরনের প্রটেকশন দেয়। ফলে ব্যাবসায়ীদের দৌরাত্ম্য অনেকটাই বাধাহীন থাকে।

রাহুল গান্ধী আগে কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ২০১৯ এর নির্বাচনে দল হেরে গেলে পরাজয়ের দায় মাথায় নিয়ে তিনি সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এখন তিনি কেবলই রাজনীতিবিদ। এমনকি যখন তার সদস্যপদ খারিজ হয়নি, তখনও তিনি কিন্তু তার দলের সংসদীয় নেতা হওয়ার জন্য চেষ্টা করেননি। বরং এ পদটি ছেড়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের অধীর রঞ্জন চৌধুরীর হাতে। আমাদের দেশে এমন কিছু দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। বরং দেখেছি-সংসদীয় দলের নেতা বা উপনেতা হওয়া নিয়ে একধরনের টানা-হেচড়া, মনোমালিন্য। এই ইস্যুতে জাতীয় পার্টি তো একেবারে ভেঙে যাওয়ারও উপক্রম হয়েছিল। সেই ঝামেলা কিন্তু এখনো মেটেনি।

লোকসভায় দেওয়া রাহুল গান্ধী বা তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রের বক্তৃতাগুলো ইউটিউবের কল্যাণে আমরা সহজেই শুনতে পারি। শাণিত সেসব বক্তব্যে যেরকম যু্ক্তি অথবা তথ্য-উপাত্ত থাকে, বিস্মিত হতে হয়। ভারতে ভিন্ন অঙ্গনের সেলিব্রেটিদের রাজনীতিতে আসা বা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার একটা বিষয় রয়েছে। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে থেকেও অনেকে এমপি-মন্ত্রী হন। মৌসুমী সেসব রাজনীতিকও যখন কথা বলেন সংসদে, শুনতে ইচ্ছা করে। বিরোধী পক্ষকে তো বটেই, নিজ দলের নেতাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতেও ছাড়েন না তারা। এই জায়গাটিতে বড় বেশি পিছিয়ে আমরা। শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দলের কারো পক্ষে প্রশ্ন উত্থাপন-আমাদের কোনো রাজনীতিক সম্ভবত সেটা স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারেন না।

তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে হলেও এখন সেটা পাল্টাচ্ছে। বেদনার বিষয় হচ্ছে, পাল্টে নেতিবাচক দিকে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের সেই সৌন্দর্যহানির প্রবণতায় ভারত যেন ক্রমশ আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিকেই অল্প অল্প করে হলেও অগ্রসর হচ্ছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি যেন ক্রমশই শক্তিশালী হচ্ছে। এদেশে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি যেমন এক ব্যক্তি-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে, ভারতেও তেমনি প্রতিদিনই যেন বিজেপিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে এক ব্যক্তি- নরেন্দ্র মোদীর উচ্চতা।

ব্যতিক্রম সম্ভবত কেবল প্রধান বিরোধী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে। দণ্ডপ্রাপ্তির কারণে খালেদা জিয়ার পরিবর্তে বিরোধীদল বিএনপির নেতা এখন তারেক রহমান। কিন্তু তাকে কিছুতেই যেন রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মেলাতে পারছি না। ভারতে রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে না থেকেও অবলীলায় প্রতিবাদের প্রধান মুখে পরিণত হতে পেরেছেন। বরং বিগত নির্বাচনে পরাজয়ের সকল দায় নিজের কাঁধে নিয়ে অবলীলায় সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়েছেন। এই যে সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়া, এটা তাকে নেতৃত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করেনি, বরং আরও বড় আসনে তুলে নিয়ে গেছে। তিনিও আরো বেশি জনসম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়োজন অনুভব

করেছেন। ‘ভারত জোড়' কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি বিশাল দেশের মানুষের মধ্যে একটা যোগসূত্র গড়ে তোলার কঠিন কাজ হাতে নিয়েছেন। শারীরিকভাবেই তিনি হেঁটে বেড়িয়েছেন পুরো দেশজুড়ে। তুলনামূলক আলোচনায় এই জায়গাটিতেই অনেকটা পিছিয়ে পড়েছেন আমাদের প্রধান বিরোধীদলের নেতা তারেক রহমান। ২০১৮ বা ২০১৪ এর নির্বাচনকে যদি বাদও ধরি, তারপরও ২০০৮ এর নির্বাচনে পরাজয়ের দায় কিন্তু বিএনপির কোনো নেতাকেই আমরা এখন পর্যন্ত নিতে দেখিনি। এদেশের মাটিই যেন সেই মানসিকতাকে উৎসাহ দেয় না। সেই ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ কিংবা ২০০৮ এর নির্বাচনের কথা চিন্তা করুন, প্রতিবারই দেখবেন পরাজিত দল কিছুতেই হারকে মেনে নিতে পারেনি। বরং তারা এখানে কোনো না কোনো ষড়যন্ত্র খুঁজে পেতে ঘর্মাক্ত হয়েছে। যে ষড়যন্ত্র দেশের সাধারণ মানুষ দেখেনি, টের পায়নি, সেটা কেবল সেই পরাজিত দলই দেখতে পেয়েছে। এতে ক্ষতি যেটা হয়েছে, পরাজিত দল নিজেদের সংশোধন বা আত্মসমালোচনার প্রয়োজনটা আর অনুভব করেনি।

কেবল এই আত্মসমালোচনার বিষয়টিই নয়, জনসম্পৃক্ততার মানসিকতাও যেন দুই দেশের বিরোধী দলীয় নেতার মধ্যে দুই রকম। রাহুল গান্ধী কতটা সহজে সাধারণ মানুষের নিকটবর্তী হতে পেরেছেন, মিশতে পেরেছেন তার বিভিন্ন দৃশ্য আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রায়ই দেখি। কিন্তু এমন কোনো দৃশ্য তারেক রহমানের ক্ষেত্রে বর্তমানে অথবা অতীতে কখনো দেখা গেছে বলে মনে পড়ে না। অথচ রাহুল গান্ধী পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন, সেরকম পরিবেশে বেড়ে ওঠেছেন। তারপরও ভারতের অতি নিম্নবর্ণের সাধারণ মানুষের সঙ্গে যে অবলীলায় তিনি মিশতে পারছেন, সেসব দৃশ্য অনেককেই আশাবাদী করে তোলে। দুর্ভাগ্য আমাদের, তেমন আশাবাদের স্থান এখানে তৈরি হয়নি। বর্তমান সময়কে যদি আমরা দুঃসহ বিবেচনা করি, গণতন্ত্রহীনতায় যদি ক্লান্তি অনুভব করি, তারপরও আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো মুখ যেন আমরা দেখতে পাই না। ওদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা সম্ভবত এখানেই।