1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভয়ের সংস্কৃতিতে দুই সাধারণ ব্যতিক্রম!

ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম মূলত রাজনীতি, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, শরণার্থী এবং অভিবাসন সম্পর্কিত ইস্যু কভার করেন৷ পাশাপাশি জার্মানি ও ইউরোপে জীবনযাপনের নানা দিকও তুলে ধরেন তিনি৷
আরাফাতুল ইসলাম
৬ জানুয়ারি ২০২৪

বিএনপি কার্যালয়ের সামনে তালা ঝুলছে সেই ২৮ অক্টোবর থেকে৷ শনিবার সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখলাম কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক নারী৷ কিছুটা দূরে উৎসুক পুলিশ৷ আরও আছেন কয়েকজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর৷

https://p.dw.com/p/4avlI
বিএনপির কার্যালয়ের ফটকে তালা
দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ বিএনপির কার্যালয়ছবি: Arafatul Islam/DW

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার আদায়ের এক শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে দীর্ঘকাল ব্যবহৃত হয়েছে হরতাল৷ স্বাধীন বাংলাদেশে একটা লম্বা সময় হরতালের ব্যবহার দেখা গেছে৷ বর্তমানে যে দল ক্ষমতায় তারা এখন যে দাবি মানতে নারাজ সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ২১ বার হরতাল পালন করেছে৷আবার ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলে থাকাকালে আওয়ামী লীগ সব মিলিয়ে ১৩০ দিন হরতাল করেছে।

অতীতে বিএনপিও হরতাল করেছে৷ এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও হরতালের অনেক ব্যবহার হয়েছে৷ আর সব আমলেই হরতাল চলাকালে ভাঙ্চুর, অগ্নিসংযোগ, এমনকি প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটেছে৷

তবে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে হরতালের ব্যবহার দেখা যায়নি৷ কিন্তু ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর আবারও ফিরেছে হরতাল৷ তবে সেটি আগের মতো অধিকার আদায়ের শক্তিশালী অস্ত্র আর আছে কিনা সেটা এক বড় প্রশ্ন এখন৷

নির্বাচন কভার করতে ঢাকায় আসার পর শনিবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে হরতাল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি৷ হরতালের আগের রাতেই একটি ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত চারজন প্রাণ হারিয়েছেন৷ ইতোমধ্যে বড় দলগুলো এই ঘটনাকে ‘‘নাশকতা'' বলে একে অপরকে দূষতে শুরু করেছে৷ বিরোধী দল বিএনপি কারা ট্রেনে আগুন দিয়েছে তা জানতে জাতিসংঘের সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে৷ পুলিশ তদন্ত করছে, যদিও সেই তদন্তের উপর বিরোধী দলের আস্থা আছে বলে মনে হচ্ছে না৷

শনিবার ঢাকায় হরতালের সময় যানজট ছিল না৷ সড়কগুলোয় সিএনজি আর কিছু প্রাইভেট গাড়ির বাইরে বাস বা বড় যানবাহন তেমন একটা দেখিনি৷ মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখেছি শত শত বাস পার্ক করে রাখা হয়েছে৷ যাত্রী বলতে গেলে নেই, তাই বাস স্বাভাবিক সময়ের মতো ছাড়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাস চালকরা৷

তবে, হরতালের দিনে ঢাকা শহরে পিকেটিং করতে দেখিনি কোথাও৷ বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দল ছোট ছোট সংখ্যায় হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে৷ সেগুলো অবশ্য রাজপথের তুলনায় সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখা গেছে বেশি৷

দিনের শেষে মানবজমিন পত্রিকা একটি বার্তা দিয়েছে ফেসবুকে৷ বাংলাদেশ থেকে পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছে না৷ আমি নিজেও চেষ্টা করে দেখলাম ঘটনা সত্য৷ পত্রিকাটির দাবি, তাদের তরফ থেকে কোনো কারিগরি ত্রুটির কারণে এমনটা ঘটছে না৷

লেখার শুরুতে বলছিলাম বিএনপি অফিসের সামনের কথা৷ সেখানে দাঁড়িয়ে আপনমনে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন নাসরিন আক্তার বিথি৷ বিএনপির সমর্থক তিনি৷ কথা বলার সময় গলা কাঁপছে তার, জীর্নশীর্ন দশা৷ তার দাবি, বিএনপি অফিস খুলে দেয়া হোক, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক৷

বিথির ভয়ডর কিছু আছে বলে মনে হলো না৷ বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দলটির অধিকাংশ শীর্ষনেতা এখন কারাবন্দি৷ গত দুইমাসেই জেলে গেছে তাদের ২০ হাজারের বেশি কর্মী৷ এগুলো নতুন সংখ্যা৷ গত কয়েকবছর ধরেই অনেক বিএনপি নেতাকর্মীর দিন কাটে জেলে কিংবা কোর্টে৷ অনেকে আছেন আত্মগোপনে৷ এত দমনপীড়নের মুখে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা খুব একটা রাজপথে বের হতে পারছেন না এখন৷  

বিএনপির কার্যালয়ের সামনে নাসরিন আক্তার বিথি
বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ম্লোগান দিচ্ছেন নাসরিন আক্তার বিথিছবি: Arafatul Islam/DW

বিথিকে নিয়ে অবশ্য তেমন একটা ভাবিত নন কেউ৷ তার বক্তব্য, দাবি সবই সুস্পষ্ট৷ বিএনপি নেতাদের অনেকের নাম নিলেন তিনি, জানালেন তাদের সঙ্গে তার পরিচয়ের কথা৷ কিন্তু কেউ কেউ পাশ থেকে বললেন, বিথি মানসিকভাবে অসুস্থ!

ভোটের আগের সন্ধ্যায় ঢাকার প্রেসক্লাবের সামনে দেখলাম ছোট্ট একটা জটলা৷ কক্সবাজারের রামু থেকে আসা তরুণ মো. লুৎফুর রহমান একটা কম্বল আর ব্যাগ নিয়ে বসে আছেন একটা পোস্টারের নিচে৷ তাতে লেখা, ‘‘আমরণ অনশন''৷ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে দাবিতে অনশন শুরু করেছেন তিনি৷ শনিবার ভোর চারটা থেকে তার এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে৷

ফুটপাতে নামাজ পড়ছেন  মো. লুৎফুর রহমান
কক্সবাজারের রামু থেকে এসেছেন মো. লুৎফুর রহমানছবি: Arafatul Islam/DW

তিনি এই ব্যক্তিগত কর্মসূচি কতক্ষণ চালিয়ে যেতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷ ইতোমধ্যে পুলিশ তাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেছে৷

গত কয়েকদিন ঢাকা শহরে ঘুরে একটি বিষয় বেশ স্পষ্ট বুঝতে পারছি৷ সেটা হচ্ছে, ভয়ের সংস্কৃতি৷ অনেকের মধ্যে একটি প্রচ্ছন্ন ভয় দেখতে পাই৷ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চান না অনেকে৷ কেউ কেউ কথা বলতে বলতেই হঠাৎ উপলব্ধি করেন হয়ত বেশি বলছেন৷ বাকস্বাধীনতা চর্চার চেয়ে তখন পরিবারের সুরক্ষা তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে৷

আঠারো কোটি মানুষের দেশে ভয়ের সংস্কৃতি বেশ ভালোই ছড়িয়ে পড়েছে মনে হচ্ছে৷ এই ভয় তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখছে, বোবা করে রাখছে৷ ক্ষমতাসীনদের জন্য এটা এক বড় সাফল্যই বটে!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান