1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

'নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয় বলা যাবে না'

৬ জানুয়ারি ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয়' বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল৷

https://p.dw.com/p/4avft
নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা সব কর্মকর্তাকেও আইন মেনে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল৷
নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা সব কর্মকর্তাকেও আইন মেনে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল৷ছবি: PID/Bangladesh

ভোটের ১২ ঘণ্টা আগে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এই মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার৷

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে থাকা বিএনপিসহ সমমনা আরো ১৫টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে৷ ভোটের আগের ও ভোটের দিন হরতালও ডাকা হয়েছে৷ সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে৷ যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুনের ঘটনায় অন্তত চার জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে৷

ভোটের আগমুহূর্তে এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন সিইসি৷ এমন পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে আসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার৷ সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তিকে পরাভূত করে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান দেশবাসীকে

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ায় সবার সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমেই কেবল নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়ে থাকে৷ রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে কার্যকরভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, নির্বাচন অধিক পরিশুদ্ধ ও অর্থবহ হয়৷ তাতে জনমতেরও শুদ্ধতর প্রতিফলন ঘটে৷''

‘‘নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিগত প্রশ্নে মতবিরোধের কারণে এবারের নির্বাচনে কাঙ্খিত রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না'' বলে স্বীকার করে নিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল৷

সিইসি বলেন, ‘‘নির্বাচনি সার্বজনীনতা প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি৷ তারপরও ২৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে৷ সর্বমোট ১৯৭১ জন প্রার্থী ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন৷ ফলে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয় মর্মে আখ্যায়িত করা যাবে না৷''

প্রায় দুই বছর আগে নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন কাজী হাবিবুল আউয়াল ও তার কমিশনের অন্য সদস্যরা৷ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী সমাজ, শিক্ষাবিদ, নাগরিক সমাজ, সিনিয়র সাংবাদিক এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন অংশীজনের একাধিক সংলাপ করেছেন বলে জানান তিনি৷ সেই সংলাপও বর্জন করে বিএনপি৷

সিইসি বলেন, ‘‘নির্বাচনে অনাগ্রহী নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকেও সংলাপে একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি৷ আমন্ত্রণে তারা সাড়া দেননি৷ নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছি৷''

নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি

তবুও সংলাপে আস্থা সিইসির

অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য ‘অনুকূল' রাজনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন বলে মনে করেন সিইসি৷

কিন্তু নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক মতভেদ থেকে সংঘাত ও সহিংসতা কাম্য নয় বলে জানান তিনি৷ কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘‘পরিতাপের বিষয় নাশকতা ও সহিংসতা একেবারেই হচ্ছে না, তা বলা যাচ্ছে না৷ রাষ্ট্রীয় ধন-সম্পদের ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে৷ নির্দোষ, নিরীহ, নিষ্পাপ শিশু, নারী, পুরুষের মর্মান্তিক ও মর্মন্তুদ মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে৷''

এমন পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করেন সিইসি৷ আর সেজন্য সংলাপেই আস্থা রাখতে চান তিনি৷

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘‘রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে৷ আজকে না হলেও ভবিষ্যতের জন্য৷ আমরা সবসময় বিশ্বাস করি আলাপ-আলোচনা ও গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় উপনীত হয়ে যে কোনো রাজনৈতিক সংকটের নিরসন সম্ভব৷''

ট্রেন, যানবাহনে আগুন দেয়া ও মানুষের প্রাণহানির বিষয়টিও উঠে আসে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে৷ তিনি বলেন, ‘‘কারা দায়ী সেটি আমাদের বিবেচ্য নয়৷ তবে নাশকতা ও সহিংসতার কতিপয় সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘তারপরও অলংঘনীয় সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে জনগণকে অনুরোধ করছি আপনারা সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে এসে অবাধে মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করে মূল্যবান নাগরিক দায়িত্ব পালন করবেন৷''

নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি

নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা সব কর্মকর্তাকেও আইন মেনে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল৷

তিনি বলেন, ‘‘দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শৈথিল্য, অসততা ও ব্যত্যয় সহ্য করা হবে না৷''

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ভোটকেন্দ্রগুলোর শৃঙ্খলাসহ প্রার্থী, ভোটার, নির্বাচনি কর্মকর্তাসহ সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন৷''

অনিয়ম করলেই বাতিল হবে প্রার্থিতা

ভোটের দিন সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনি আচরণ মেনে চলার আহ্বান জানান সিইসি৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, অর্থের লেনদেন ও পেশিশক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে৷ তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রার্থিতা তাৎক্ষণিক বাতিল করা হবে৷ প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনি এলাকার ভোটগ্রহণ সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে৷''

জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ধরনের নির্বাচনি অনিয়ম-অনাচার ঠেকানোর আহ্বান জানান কাজী হাবিবুল আউয়াল৷

গণমাধ্যম পর্যবেক্ষকদের সহযোগিতা চাইলেন সিইসি

সিইসি বলেন, ‘‘দৃশ্যমানতার মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ফুটিয়ে তোলা গেলে নির্বাচনের বিশুদ্ধতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নে জনমনে আস্থা সৃষ্টিতে তা সহায়ক হয়৷''

এজন্য গণমাধ্যম ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল৷ তিনি বলেন, ‘‘তাই দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের সহযোগিতা আমরা একান্তভাবে কামনা করছি৷''

তিনি জানান, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে প্রায় ২৩ হাজার দেশি এবং প্রায় ২০০ বিদেশি পর্যবেক্ষক কাজ করবেন৷ পর্যাপ্ত সংখ্যক দেশি ও বিদেশি সংবাদকর্মীও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এবং সংবাদ সংগ্রহে মাঠে থাকবেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য