1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বকাপ সমাচার

১২ জুন ২০১৮

বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটিতে বসছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২১তম আসর৷ এই বিশ্বকাপ নিয়ে যেমন আগ্রহ রয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে, তেমনি রয়েছে ফুটবল ভক্তদের৷ দর্শকদের বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগে এই তথ্যগুলি জেনে রাখা ভালো৷

https://p.dw.com/p/2zCge
Russland Gruppenziehung FIFA 2018 Symbolbild
ছবি: Reuters/M. Shemetov

এক দেশ, দুই মহাদেশ

দেশ একটি হলেও এই প্রথম দুই মহাদেশে একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপ- ইউরোপ ও এশিয়ায়৷ আসলে রাশিয়া দেশটিই আছে দুই মহাদেশ জুড়ে৷ এখানে সময়অঞ্চল বা টাইমজোন আছে ১১টি! তবে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে চারটি টাইমজোনে৷ বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পূর্বে অর্থাৎ কালিনিনগ্রাদ ও সবচেয়ে পশ্চিমে ইয়েকাত্যারিমবুর্কের দূরত্ব, আর মস্কো থেকে লন্ডনের দূরত্ব সমান, প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার!

বিতর্কিত আয়োজক

রাশিয়ায় বিশ্বকাপ হবে তা নির্ধারিত হয়েছে বহু আগেই৷ কিন্তু গেলো এক বছর ধরে সেখানে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠান হওয়া নিয়ে নানা বিতর্ক চরমে পৌঁছেছিল৷ বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ এমন চরমে পৌঁছে যে, ব্রিটিশ কোনো কোনো রাজনীতিক তো দাবিই জানিয়ে ফেলেছিলেন যে, তাদের দলকে যেন রাশিয়ায় না পাঠানো হোক৷ তবে সব ছাপিয়ে বিশ্বকাপ ‘নির্বিঘ্নেই' অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাশিয়ায়৷ কিন্তু কোনো ইংলিশ রেফারি থাকছেন না এবারের বিশ্বকাপে৷

কুকুর মারা

স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বিশ্বকাপ আয়োজনের অংশ হিসেবে কোটি কোটি ডলার খরচ করে এগারটি আয়োজক শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মনিবহীন কুকুরদের মেরে ফেলেছে রাশিয়া৷ রেডিও ফ্রি ইউরোপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিটি কুকুরের মৃতদেহের জন্য প্রায় দশ থেকে বারো হাজার টাকা খরচ করেছে তারা৷ এখন অন্য কোনো শহরের কুকুর এসব শহরে না ঢুকে পড়লেই হয়!

কত টাকা খরচ হবে?

এবারের বিশ্বকাপ আয়োজনে রাশিয়ার খরচ হবে প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা৷ তবে গেলোবার ব্রাজিল এর চেয়েও বেশি খরচ করেছিল৷ কিন্তু বিশ্বকাপের খরচ প্রায়ই বাজেট অতিক্রম করে৷ তাই দেখা যাক, রাশিয়া তাদের হিসেবের মধ্যে খরচ রাখতে পারে কিনা৷ এদিকে, স্পন্সরদের কাছ থেকে ও স্বত্ত্ব বিক্রি করে খুব ব্যবসা হবে বলে মনে করছে না পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো৷

স্বেচ্ছাসেবী

এবারের বিশ্বকাপে প্রায় ১৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন৷ ব্রাজিলে ছিল ১৫ হাজার৷ প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার আবেদন থেকে এদের বাছাই করা হয়েছে, যার মধ্যে আবার ৬৪ ভাগ নারী৷ স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে তেলের ট্যাঙ্কারের ক্যাপ্টেন যেমন আছেন, তেমনি আছেন ড্রাগন বোট রেসের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন৷ এমনকি একজন নিউজিল্যান্ড থেকে ১৬ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিতে আসছেন৷

কত মানুষ আসবেন রাশিয়ায়?

ধারণা করা হচ্ছে, খেলা দেখতেই আসবেন প্রায় দশ লাখ ফুটবল ফ্যান৷ রাশিয়া এসব ভক্তদের জন্য ভিসা হিসেবে বিশেষ আইডি ইস্যু করেছে৷ এছাড়া, গত বিশ্বকাপ টিভিতে, অনলাইনে বা মাঠে দেখেছেন সারাবিশ্বের প্রায় ৩.২ বিলিয়ন মানুষ৷ অর্থাৎ এই গ্রহের প্রায় অর্ধেক মানুষ৷ এবারো তেমনটিই আশা করা হচ্ছে৷

রাশিয়ায় রাশিয়ার বিশ্বকাপ

বিশ্ব .ব্যাংকিংয়ে রাশিয়ার অবস্থান এখন ৬৬৷ এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন৷ ইউএসএসআর থেকে রাশিয়া হবার পর এ পর্যন্ত কোনো বিশ্বকাপেই তারা গ্রুপ পর্ব উৎরাতে পারেনি৷ এবার স্বাগতিকের সুযোগ নিয়ে যদি কিছুটা এগোতে পারে৷ এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটি হবে ইতিহাসের সবচেয়ে নিম্ন .ব্যাংকিংয়ের ম্যাচ৷ রাশিয়া খেলবে সৌদি আরবের (.ব্যাংকিং ৬৩) বিপক্ষে৷

প্রথম বিশ্বকাপ ও ইটালি

আইসল্যান্ড ও পানামার জন্য এটি প্রথম বিশ্বকাপ৷ এছাড়া পেরু ফিরছে ১৯৮২ সালের পর৷ এবারের দলগুলোর মধ্যে এতটা ব্যবধানে আর কেউ ফেরেনি৷ এদিকে, ইটালি ১৯৫৮ সালের পর এই প্রথম খেলছে না বিশ্বকাপ৷ আগের চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে তারাই একমাত্র বাদ পড়েছে৷ আইসল্যান্ড নিয়ে আরেকটি মজার তথ্য হলো, তারাই জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ, যারা বিশ্বকাপ খেলছে৷ জনসংখ্যা মাত্র ৩ লাখ ৩৪ হাজার৷

ব্রাজিল ও জার্মানির সম্ভাবনা

ব্রাজিলই একমাত্র দল যে সবগুলো বিশ্বকাপ খেলেছে৷ আর সর্বোচ্চ ৫টি শিরোপা জিতেছে৷ জার্মানির শিরোপা ৪টি৷ তাদের সামনে পরপর দু'বার বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ডের হাতছানি৷ এর আগে ইটালি ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ এবং ব্রাজিল ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে এই কীর্তি গড়েছিল৷ জার্মানি গত তিন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা দল (২০১৪ সালে ১৮টি, ২০১০ সালে ১৬টি ও ২০০৬ সালে ১৪টি)৷ তবে শেষ দুই বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল৷ তাই ‘সতর্ক হও জার্মানি'৷

গোল গোল গোল!

রাশিয়ার ওলেগ সালেঙ্কো ক্যামেরুনের বিপক্ষে ১৯৯৪ সালে ৫ গোল করে বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড করেছিলেন৷ সে রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতে পারেননি৷ এদিকে, জার্মানির টোমাস ম্যুলার এখনকার খেলোয়াড়দের মধ্যে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা৷ তাঁর গোল সংখ্যা ১০টি৷ অগ্রজ মিরোস্লাভ ক্লোসের ১৬ গোলের রেকর্ড ভাঙার সুযোগ এবার তাঁর সামনে৷

উদীয়মান এশিয়া

দক্ষিণ কোরিয়া এবার খেলবে তাদের দশম বিশ্বকাপ৷ আর কোনো এশিয়ান দল এতবার বিশ্বকাপ খেলেনি৷ ইরান এই প্রথম পরপর দু'বার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে৷

ইটস টাইম ফর আফ্রিকা

২০১৮ সালে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেবে নাইজেরিয়া৷ সুপার ঈগলরা ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ মিশন শুরুর পর মহাদেশটি থেকে তাদের মতো এতটা নিয়মিত আর কেউ হতে পারেনি৷

বিশ্বকাপের নতুন নিয়ম

ম্যাচে কোনো জাতিগত বৈষম্যমূলক আচরণ দেখলে তা বাতিল বা বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে রেফারিকে৷ এই প্রথম ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিজ বা ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে৷ বিতর্ক এড়াতে এই ব্যবস্থা৷ তবে বিতর্ক না থাকলে বিশ্বকাপ জমে? এছাড়া, চতুর্থ বদলি খেলোয়াড় নামতে পারবেন অতিরিক্ত সময়ে৷

প্রাইজমানি

বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলের প্রাইজমানি ৩.৮ কোটি মার্কিন ডলার৷ ফাইনালে হেরে গেলেও মন খারাপ করার কিছু নেই৷ তারা পাবে ২.৮ কোটি মার্কিন ডলার৷ গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারলেই মিলবে ৮০ লাখ মার্কিন ডলার৷ সবমিলিয়ে ২০১৪ সাল থেকে প্রাইজমানি বাড়ছে ১২ ভাগ৷

ওদের শেষ বিশ্বকাপ

৩০ বছর বয়সি লিওনেল মেসি ও ৩৩ বছর বয়সি ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর এটি সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ৷ এছাড়া সুয়ারেজ (৩১), ইনিয়েস্তা (৩৩), থিয়াগো সিলভা (৩৩), দানি আলভেস (৩৪)-সহ বেশ ক'জন নামি ফুটবলারেরও সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ৷ তাই যতটা সম্ভব উপভোগ করে নিন

কোচ সমাচার

উরুগুয়ের হেড কোচ অস্কার তাবারেজ এ নিয়ে চতুর্থবার বিশ্বকাপে দলের দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন, যা অংশ নেয়া যে কোনো দলের কোচের মধ্যে সর্বোচ্চ৷ আরেকটি খবর হলো, দেশি কোচের অধীনেই এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতেছে দলগুলো৷ তাই ‘ভরসা রাখুন দেশিদের ওপর'৷

কিম কার্দাশিয়ান বনাম বিশ্বকাপ

২০০৪ সাল থেকে গুগল ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যত মানুষের বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহ ঠিক তত মানুষের আগ্রহ কিম কার্দাশিয়ান সম্পর্কে! তার মানে কিম কার্দাশিয়ান কোনোভাবেই বিশ্বকাপের চেয়ে কম নন৷ অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, যারা বিশ্বকাপ দেখেন, তারা অত টুইট করার সময় পান না৷ তাই এমনটি মনে হচ্ছে৷

বিশ্বকাপ জনসংখ্যা বাড়ায়!

দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের নয় মাস পর সেখানকার জন্মহার বেড়ে গিয়েছিল৷ তেমনি ২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপের পরও দেশটির কোথাও কোথাও ৩০ ভাগ পর্যন্ত শিশু জন্মের হার বেড়ে যায়৷ তাই যেই জিতুক, ২০১৯ সালের এপ্রিল নাগাদ অনেক নতুন শিশুকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকুন৷ 

পাঠক, বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার আশা আকাঙ্খার কথা লিখুন নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য