1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে বিশ্বকাপ উন্মাদনা

নোমান মোহাম্মদ
২৯ মে ২০১৮

বিশ্বকাপ আসছে৷ তাই ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালডো, নেইমারদের প্রমাণসাইজের অবয়বে পড়ছে নতুন রঙের প্রলেপ৷ প্রলেপ পড়ছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, পর্তুগালের ভালোবাসার রঙে আঁকা পতাকায়৷

https://p.dw.com/p/2yUVw
ছবি: Noman Mohammad

তবে দেয়ালে এখনো ‘সুন্দর হাতের লেখা শেখার’ উত্‍কট, ‘ইঁদুর, তেলাপোকা, উইপোকা দমনের ওষুধের’ উদ্ভট বিজ্ঞাপনের পীড়াদায়ক উল্লাস চোখে পড়ে৷ মাঝে মরুদ্যানের প্রশান্তি নিয়ে এসেছিল ‘সুবোধ’৷ সেই ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা’ কিংবা ‘সুবোধ এখন জেলে’-র দেয়াললিখন সাড়া ফেলে ঢাকাবাসীর মানসে৷ তা-ও পুরাতন হলো বলে৷

ঢাকার আকাশটা এখনো নীল৷ পোয়াতি মেঘের ওড়াওড়িতে তা কালো হয়ে আসে প্রায়শ৷ ঝরঝরে বৃষ্টি ঝরিয়ে তা আবার হয়ে ওঠে রূপালি কাঁচপোকার মতো ঝকঝকে৷ সে আকাশেও এখন রঙের পালাবদল ঘটল বলে৷

সারা বছরে, কিংবা বলা ভালো মাঝের চার বছরে ওখানে বাংলাদেশের লাল-সবুজকে গরবিনি ভঙ্গিতে উড়তে দেখা যায় কদাচিৎ– বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবসে৷ এখন তাতে প্রজাপতির উচ্ছ্বলতায় ওড়া শুরু করেছে বিভিন্ন দেশের পতাকা৷ ব্রাজিলের সবুজ-হলুদ-নীল, আর্জেন্টিনার আকাশি-সাদায় দ্রুতই দখল হয়ে যাচ্ছে বাংলার আকাশ৷ মাঝে উঁকি দিচ্ছে, উঁকি দেবে জার্মানির কালো-লাল-হলুদ, ফ্রান্সের নীল-সাদা-লাল, স্পেনের লাল-হলুদ৷

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তো চলতি হাওয়ার নাগরদোলার চক্কর৷ বিষয় ওখানে ঘোরে দ্রুতবেগে; ওড়ে বিদ্যুতের চপলতায়৷ এই রাজনীতি, এই সমাজনীতি; এই অশ্লীলতার আস্ফালন, এই মানবিকতার আশ্চর্য আঁধার৷ সঙ্গে নিজেকে জাহির করার ব্যাপার তো রয়েছেই! সেই ফেসবুকেও বদলের ছোঁয়া লাগলো বলে৷

প্রোফাইল পিকচার পাল্টে যাচ্ছে৷ প্রিয় ফুটবলার কিংবা দলের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে ওখানে৷ স্ট্যাটাসের ধরনে আসছে পরিবর্তন৷ নিজ দলের শ্রেষ্ঠত্বের দাবির পাশাপাশি প্রতিপক্ষ নিয়েও চলছে অবিরাম খোঁচাখুঁচি৷ জবাব-পাল্টা জবাব৷ ট্রল-মিম৷ অস্থিরতার এ ভার্চুয়াল জগত আরো বেশি অস্থির হয়ে উঠছে ক্রমশ৷

এ সবের কারণ? চলতি বাংলার জনপ্রিয় গান ‘বসন্ত এসে গেছে’-র মতো করে বিশ্বকাপ ফুটবল যে এসে গেছে!

প্রতি চার বছর পর পর আসে বিশ্বকাপ ফুটবল৷ বাঙালিকে ভাসিয়ে নেয় তীব্র আবেগের জলপ্রপাতে৷ ফুটবলের প্রতি যে ভালোবাসা ঘাস হয়ে ছড়িয়ে থাকে চার বছর, তা মহীরুহের মতো মাটি ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শের স্পর্ধা দেখায় এই দেড়-দু'মাসে৷ বিভক্ত হয়ে যায় পুরো দেশ৷ মূলত ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনায়৷ যেন গোলার্ধের ওপারে থাকা দেশ দুটো আমার– আমাদের৷ তাদের সাফল্যে হেসে উঠি, ব্যর্থতায় মুখ লুকাই৷ আমি এবং আমরা৷

অথচ এই বিশ্বকাপ থেকে কত আলোকবর্ষ দূরেই না এখনো বাংলাদেশ!

ওসব নিয়ে ভাবতে আমাদের বয়েই গেছে! আমরা চাই প্রিয় দল বিশ্বকাপ জিতুক৷ তাদের পতাকা ওড়াই বাসার ছাদে৷ তাঁদের জার্সি চড়াই গায়ে৷ দেয়ালে দেয়ালে চিকা মারি৷ পোস্টার-ভিউকার্ড কিনি এই ডিজিটাল যুগেও৷ আর চায়ের আড্ডায়, ফেসবুকের আখড়ায় যুদ্ধ ঘোষণা করি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে৷

আমরা প্রতি বিশ্বকাপের সময় দেয়ালে ছবি আঁকাই: টুটুল

এই মাস দুয়েকে ৫৬ হাজার বর্গমাইল হয়ে পড়ে ফুটবলময়৷ ছোট্ট ওই চর্মগোলকের ভালোবাসার আবেশে বুঁদ হয়ে থাকি সব্বাই৷

পশ্চিম শ্যাওড়াপাড়ার দেয়ালে শোভা পাচ্ছে নেইমারের মুখচ্ছবি; ব্রাজিলের পতাকাও৷ আঁকিয়ে রনিকে পাওয়া যায়নি, তবে তাঁর কথা শোনা গেছে এ আয়োজনের এক উদ্যোক্তা টুটুলের কন্ঠে, ‘‘আমরা প্রতি বিশ্বকাপের সময় দেয়ালে ছবি আঁকাই৷ যিনি আঁকেন, উনি ব্রাজিলের সমর্থক৷ তবে সব দলেরই পতাকা আঁকেন৷ এবার এলাকায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মিলিয়ে ১৫-২০টি স্থানের দেয়ালে পতাকা, খেলোয়াড়দের ছবি আঁকা হবে৷ এতে খরচ হবে ৩-৪ হাজার টাকা৷ তা দুই দলের সমর্থকরা মিলেই দেবো৷’’ নিজেকে আর্জেন্টিনার সমর্থক ঘোষণা করে কাপ জয়ের আশা তাঁর, ‘‘আর্জেন্টিনাকে ভালো লাগার কারণ মেসি৷ এবার আমরা ফাইনাল খেলবো, কাপও নেবো৷ গতবারের চেয়ে আর্জেন্টিনা একটুখানি শক্তিশালী৷’’

পাশে দাঁড়ানো ব্রাজিলের সমর্থক বশিরও নিজের বিশ্বাসের কথা জানিয়ে দেন অকপট, ‘‘ব্রাজিলকে ভালো লাগে, কারণ, ওরা খেলে ভালো৷ ৭ বছর বয়স থেকে খেলা দেখি৷ প্রিয় খেলোয়াড় নেই, তবে ব্রাজিলের খেলা দেখি৷ আশা তো করি, এবার বিশ্বকাপ জিতবে৷’’ আর আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল খেলা হলে? ‘‘আশা করি ভালোই হবে৷ আর পতাকা তো সবাই আঁকায়, মারামারি হবে না’’-যোগ করেন এই তরুণ৷

মাদারীপুরের চটপটি বিক্রেতা গিয়াস ঢাকায় এসেছেন পতাকা বিক্রির জন্য

ঢাকায় অলিগলি, রাজপথে এখন মৌসুমী এক ধরনের পেশাজীবী-পতাকা বিক্রেতা৷ কাবুলিওয়ালার হাঁকে মিনির মন নেচে ওঠার মতো তাঁদের উপস্থিতিতে সমর্থকরাও হয়ে ওঠেন উচ্ছ্বসিত৷ এই যেমন গিয়াস উদ্দিন৷ আগে রিকশা চালাতেন, চার-পাঁচ বছর ধরে চটপটি বিক্রি করেন মাদারীপুরে৷ এখন পতাকা বিক্রির জন্য এসেছেন ঢাকায়৷ ইস্টার্ন প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রৌঢ় গিয়াস বলছিলেন সে কাহিনী, ‘‘১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখে পতাকা বিক্রি করি বাংলাদেশের৷ আর গত বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় পতাকা পাইনি৷ এবার একমাস আগে অর্ডার দিয়ে রেখেছি গাজীপুরে৷ ১৫ হাজার টাকার পতাকা কিনেছি৷ কাল প্রথম দিনে বিক্রি করেছি ২ হাজার টাকা৷ এর মধ্যে ৬-৭-৮শ' টাকা লাভ থাকে৷ ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করলে ৭-৮-১০ হাজার টাকা লাভ হতে পারে৷’’ তাঁর কাছে বেশি বিক্রি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা৷

গুলশান লেকের পাড়ে পতাকা বিক্রি করা আবুল কালামের কাছেও কাটতি বেশি ওই দুই দেশের পতাকার৷ আগে সবজি বিক্রি করতেন৷ বিশ্বকাপ উপলক্ষে সাময়িকভাবে বদলে ফেলেছেন পেশা৷ তাতে লাভের মুখ দেখার আশা কালামের, ‘‘আমরা ছয়জন মিলে ৬৬ হাজার টাকার পতাকা কিনেছি৷ একেকজনের পুঁজি ১১ হাজার টাকা৷ তাঁতিবাজারের মনির কারিগরের কাছ থেকে কিনেছি৷ প্রতি দিন ৮শ'- হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে৷ লাভ ৪-৫শ' টাকা৷ সবজি বিক্রির চেয়ে তা বেশি৷’’ তিনি বড় পতাকা বিক্রি করছেন ১২০ থেকে দেড়শ' টাকায়৷ আর কাঠির মাথার ছোট্ট পতাকা ১০-১৫ টাকায়৷ ব্রাজিলের সমর্থক কালাম জানতেন না বিশ্বকাপ শুরু হতে প্রায় তিন সপ্তাহ বাকি৷ শুনে সে কী উল্লাস খেলে যায় তাঁর চোখে-মুখে, ‘‘তাহলে তো ভালো ব্যবসা করতে পারবো সামনে৷’’

প্রতিদিন প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকার পতাকা বিক্রি করছি: শান্ত রায়

গুলিস্তানের হকি স্টেডিয়ামের উল্টো পাশের ফুটপাতে সারা বছরই পতাকা বিক্রি করেন শান্ত রায়৷ ধোলাইখালে নিজেদের ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয় ওসব পতাকা৷ বিশ্বকাপ উপলক্ষে ভালো লাভের প্রত্যাশা তাঁরও, ‘‘আমরা সারা বছরই পতাকার ব্যবসা করি৷ তখন বাংলাদেশের পতাকা বেশি চলে৷ এখন চলছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানির৷ প্রতি দিন প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকার পতাকা বিক্রি করছি৷ ব্রাজিলের পতাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে এবার৷ দ্বিতীয়তে আর্জেটিনা, তৃতীয়তে আছে জার্মানি৷ ফ্রান্স চলছে, পর্তুগালও চায় অনেকে৷'' তাঁর কাছে সর্বোচ্চ ২০ ফুট দীর্ঘ পতাকা রয়েছে, যার মূল্য দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকা৷ নিজে আর্জেন্টিনার সমর্থক হওয়ায় তাঁর আশা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ফাইনালের, ‘‘ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা যদি ফাইনালে যায়, তাহলে আমার ব্যবসা ভালো হবে৷’’

ফুটপাতের আরেক বিক্রেতা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিক্রি করছেন জার্সি৷ কেবলই ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার৷ কারণটা জানালেন তিনি এভাবে, ‘‘কারণ এ দুই দলের সমর্থন বেশি৷ প্রতি দিন ৪০-৫০ পিস করে বিক্রি হয়৷ আমি ১০০ টাকা করে বিক্রি করি৷ এর মধ্যে বেশি বিক্রি হয় আর্জেন্টিনার জার্সি৷’’

২০-২৫ শতাংশ লাভ রেখে বিক্রি করি: তারেক আজিজ

বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার তারেক আজিজ স্পোর্টস গুডসের ব্যবসা করেন অনেক দিন৷ ‘টি-কে স্পোর্টস’ নামে ব্র্যান্ডের চারটি শোরুম রয়েছে তাঁর– তিনটি ঢাকার মিরপুরে, অন্যটি ফরিদপুরে৷ বিশ্বকাপ উপলক্ষে তারেকের দোকানেরও রমরমা সাজ৷ বিভিন্ন দলের জার্সি, পতাকা, ফুটবল, চাবির রিং সাজানো থরে থরে৷ ‘‘এসবের বেশিরভাগ এনেছি চীন থেকে৷ কিছু এসেছে থাইল্যান্ড থেকে৷ বিশ্বকাপ উপলক্ষে পাইকারি পর্যায়ে এটি অনেক বড় ব্যবসা, তবে খুচরা পর্যায়ে তা নয়৷ আমরা যেহেতু শোরুমভিত্তিক ব্যবসা করি, একই মানদণ্ড মেনে চলতে হয়৷ ২০-২৫% লাভ রেখে বিক্রি করি,’’ বলছিলেন তারেক৷ বিভিন্ন পণ্যের মূল্যের ধারণাও দেন তিনি, ‘‘চীন থেকে আনা জার্সি বিক্রি করছি ৫৫০ টাকা; থাইল্যান্ড থেকে আনাগুলো ৬৫০ টাকায়৷ বিশ্বকাপের বল বিক্রি করছি ৯শ থেকে ১ হাজার টাকায়৷ চাবির রিং বিক্রি করছি ২শ টাকায়৷’’ তবে অনলাইন ব্যবসার কারণে শোরুমে বিক্রি প্রত্যাশার চেয়ে কম বলে আক্ষেপ তাঁর৷

ঢাকার পেপার স্ট্যান্ডে দেখা মেলে বিশ্বকাপের দলগুলোর পোস্টারও৷ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ১২০ টাকায়৷ ঢাকার নয়াবাজারের পেপার স্ট্যান্ডের কর্মচারী মোহাম্মদ সাকিব জানালেন তা, ‘‘পোস্টারগুলো তুলেছি এক সপ্তাহ আগে৷ মোটমুটি বিক্রি হচ্ছে৷ প্রতিদিন দুটো-তিনটি করে৷ বেশি বিক্রি হচ্ছে আর্জেন্টিনার পোস্টার৷’’

বিশ্বকাপের জ্বর ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বাংলাদেশে৷ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে৷ পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী জাকির হোসেন রনির কন্ঠেও আবেগের তিরতিরে কাঁপন, ‘‘আমার প্রথম প্রেম ফুটবল৷ পছন্দ করি আর্জেন্টিনাকে৷ ২০১৪ সালে শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও আমরা পারিনি৷ এবার আশা করি, বিশ্বকাপ জিততে পারবো৷’’ গতবারের স্মৃতি এখনো কষ্ট দেয় তাঁকে, ‘‘ফাইনালে যখন আর্জেন্টিনা হেরে যায়, মেসির হাতে কাপ ওঠেনি– তখন আমার এমন কষ্ট লেগেছে, যেমনটা আমার বাবা মারা যাবার সময় লেগেছিল৷ আগামী ১০০ বছরেও যদি আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ না জেতে, তবু এই দলকে সমর্থন করবো৷ তবে মেসির হাতে বিশ্বকাপ না উঠলে বেমানান হবে৷ মনে হয় বিধাতা তা করবেন না৷’’

মেসির হাতে বিশ্বকাপ না উঠলে বেমানান হবে: রনি

বিশ্বকাপ উপলক্ষে বিক্রি বেড়ে গেছে টিভির৷ শোরুমগুলোর উপচে পড়া ভিড় দেখলেই তা ঠাহর করা যায়৷ এ উপলক্ষে বিশেষ নাটকও তৈরি হচ্ছে৷ পলাশ মাহবুব যেমন সাত পর্বের নাটক লিখেছেন ‘ফেয়ার প্লে’৷ সে খবর জানিয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ছবি দিয়েছেন৷ তাতে নীচে একজনের কমেন্ট, ‘‘দেখমু না৷ ব্রাজিলের ফটো নীচে দিছেন ক্যান?’’

ফেসবুকে চলছে ওই ভার্চুয়াল যুদ্ধ৷ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার৷ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণার পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে নির্মম আক্রমণ, নিষ্ঠুরতা ওখানে৷ ‘আর্জেন্টিনার সমর্থক গাঁজাসহ গ্রেফতার’ কিংবা ‘মসজিদের জুতা চুরি করেছেন ব্রাজিল সমর্থক’– এমন ট্রল করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত৷ শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ছবি দিয়ে তৈরি হচ্ছে ব্যঙ্গচিত্র, ‘আ-তে আওয়ামী লীগ, আ-তে আর্জেন্টিনা’/ ‘ব-তে বিএনপি, ব-তে ব্রাজিল৷’ এক দল থেকে আরেক দলে যোগদানের হাওয়াই ফর্ম ছাড়া হচ্ছে৷ গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ১-৭ গোলের দুঃস্বপ্নের স্মৃতি ব্রাজিলিয়ানদের উসকে দিচ্ছেন আর্জেন্টাইন সমর্থকরা৷ ব্রাজিলের সমর্থকরা ৩২ বছর ধরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ খরার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন৷ এবং তা অনেক ক্ষেত্রেই ছাড়িয়ে যায় শালীনতার সীমা৷

বিশ্বকাপে না খেলেও তাই প্রবলভাবে বিশ্বকাপে থাকে বাংলাদেশ৷ চার বছর পরপর এই মাস দুয়েক সময়ে এ মানচিত্রের আকাশ-মাটি হয়ে যায় যেন এক খন্ড ব্রাজিল, এক টুকরো আর্জেন্টিনা৷ সঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট দ্বীপের মতো জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স৷ ভালোবাসার প্রকাশ নিয়ে আপত্তির সুযোগ নেই, তবে যেভাবে তা ক্রমশ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকদের উগ্রতায় রূপান্তরিত হচ্ছে সেটি আশঙ্কার৷ আতঙ্কের৷ সত্যি যদি এবার ১৫ জুলাই স্বপ্নের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, তাহলে? এই জনপদে হানাহানি, এমনকি রক্তারক্তিও হয়তো অনিবার্য!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই কবে লিখে গিয়েছেন, ‘‘তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি/তোমার সেবার মহান দুঃখ সহিবারে দাও ভকতি৷’’ পতাকা ওড়ানো, জার্সি গায়ে চড়ানো, চায়ের কাপে, ভার্চুয়াল জগতে লড়াইয়ে মত্ত আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের সমর্থকরা এর মর্মার্থটুকুন বুঝলেই রক্ষা!