1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্ব মোড়লের দেশে বিশ্বকাপ অভিযান

আলী সেকান্দার
২৪ মে ২০২৪

বিশ্বকাপ কাভার করা ক্রীড়া সাংবাদিকদের কাছে তীর্থ গমনের মতো। ক্রিকেটে তিনটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট- ওয়ানডে বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থাকায় খেলা লেগেই থাকে।

https://p.dw.com/p/4gFki
ক্রিস গেইলের সঙ্গে ক্যারিবিয়ান সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পীরা ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়েছেন
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সংবাদমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত হবেন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেছবি: Randy Brooks/AFP

প্রতি বছরই বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট কাভার করার সুযোগ আসে। এই যেমন ২০২১ সাল থেকে টানা বিশ্বকাপ হচ্ছে।

চার বছরে তিনটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এভাবে বছর বছর বিশ্বকাপ কাভার করার কঠিন চ্যালেঞ্জ ‘মোকাবেলা' করতে হয় মিডিয়া হাউসগুলোকে। কারণ, বিশ্বকাপ কাভার করার সঙ্গে অর্থের সম্পর্ক। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে বিশ্বকাপ হলে মোটা অংকের টাকা ব্যয় করে বিশ্বকাপ কাভার করা কঠিন হয়ে পড়ে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাজারে টিকে থাকতেই হয়ত অফিসগুলো চেষ্টা করে রিপোর্টার পাঠাতে। প্রতিষ্ঠিত এবং মূলধারার গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে বিশাল ব্যয় নির্বাহ করা হয়ত সম্ভব। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তো বিষয়টি কঠিন। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন চিত্র দেয়। অখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও বিশ্বকাপ কাভার করার হিড়িক পড়ে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাংবাদিকের বহর দেখলে আপনার কাছে কখনোই মনে হবে না টাকা কোনো ব্যাপার।

এই যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছয়টি দেশে যৌথভাবে টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করছে, সেখানে খেলা কাভার করতে বিশাল একটি সাংবাদিক বহর অ্যাক্রেডিটেশন নিয়েছেন। ১০০ জনের বেশি সাংবাদিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫৫ জনের অ্যাক্রেডিটেশন অনুমোদন করা হয়েছে। এত বেশি সাংবাদিক বিশ্বের আর কোনো দেশ থেকে বিশ্বকাপ কাভার করতে যায় বলে জানা নেই। তবে অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়া সবাইকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দিচ্ছে তা না। আমার জানা মতে ২১ মে পর্যন্ত ১০ জনের ভিসার আবেদন প্রত্যাক্ষান করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাক্ষতরা হতাশ। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রত্যাক্ষান হওয়ার অর্থ কারো কারো কাছে স্বপ্নের মৃত্যু ঘটার মতো ব্যাপার। আমরা যারা দুই দশক বা তারও বেশি সময় ধরে বৈশ্বিক ইভেন্ট কাভার করছি, তাদের জন্য ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ। তবে এবার দুই ধরনের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। ভিসা আবেদন করার পর ২০২৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিল সাক্ষাৎকার। আইসিসি থেকে ‘স্টেট ডিপার্টমেন্ট'কে জরুরি ভিসা প্রদানের জন্য ‘অ্যাক্রেডিটেড' সাংবাদিকদের তালিকা দেওয়ায় সাক্ষাৎকারের তারিখ পুর্ননির্ধারনের সুযোগ দেওয়া হয়। মজার ব্যাপার হলো, মে মাসের স্লট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা শেষ হয়ে যাচ্ছিল। কারণ, দেশের শত শত এজেন্সি ওঁৎ পেতে ছিল জরুরি তারিখ নেওয়ার জন্য। ফলে আমিসহ সাত জন সাংবাদিক মে মাসে তারিখ পাচ্ছিলাম না। শেষে বিসিবির সহায়তায় সাক্ষৎকারের তারিখ নেওয়া সম্ভব হয়। প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন এবং সাক্ষৎকার দিয়ে আমার মনে হয়েছে কাগজ-পত্র ঠিক থাকলে ভিসা পাওয়া কোনো সমস্যা না। বরং তাদের ব্যবহার খুব ভালো- ভিসা না দেওয়ার হলে সঙ্গে সঙ্গে বলে দেয়। আর ভিসা দেওয়ার হলেও জানিয়ে দেয় ‘‘আপনার ভিসা অনুমোদন করা হয়েছে।'' তেমনি আমার হাতে তুলে দেওয়া হয় ভিসা অনুমোদনের নীল খাম। কারো কারো সাক্ষাৎকার ৩ জুন রয়েছে। অর্থাৎ, বিশ্বকাপ শুরুর দুই দিন পর ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র ভিসা কাউন্সিলে সাক্ষাৎকার দেবেন কেউ কেউ। তারা ভিসা পেতে পেতে হয়ত যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপের বাংলাদেশ পর্ব শেষ হয়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার ম্যাচ দিয়ে ১ জুন পর্দা উঠবে টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপের। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে হবে নবম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচ। একই দিন গায়ানার প্রভিন্স স্টেডিয়ামে ‘সি' গ্রুপ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে পাপুয়া নিউ গিনি। এই প্রথম ২০টি দল নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হচ্ছে। পাঁচটি করে দল নিয়ে প্রতিটি গ্রুপ। বাংলাদেশ খেলছে ‘ডি' গ্রুপে- দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপালের সঙ্গে। ‘সি' গ্রুপে নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি, উগান্ডা। ‘বি' গ্রুপে ইংল্যান্ড, আস্ট্রেলিয়া, নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড, ওমান। ‘এ' গ্রুপে ভারত, পাকিস্তান, ক্যানাডা, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র। ‘এ' গ্রুপের বেশিরভাগ ম্যাচ রাখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বাণিজ্যিক দিক মাথায় রেখে ভেন্যু নির্বাচন করা হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ, ভারত পাকিস্তানের বিপুল সংখ্যক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী, তাই নিউ ইয়র্ক ও ডালাসে সমর্থক প্রিয় দলগুলোর ম্যাচ রাখা হয়েছে। বিশ্বকাপ বাণিজ্যভাবে সফল করতে ভারত-পাকিস্তানকে এক গ্রুপে রাখা আইসিসির কৌশল। কারণ, ক্রিকেট নিয়ে এ দুই দেশের মধ্যে অন্যরকম এক লড়াই চলে। একে অন্যের কাছে প্রিয় দলের হার মেনে নিতে পারেন না সমর্থকরা। নিজেদের দলকে সমর্থন দিতে উচ্চমূল্যে টিকিট কাটতে দ্বিধা করে না দেশ দুটির সমর্থকরা। এছাড়াও প্রথমবারের মতো টি২০ বিশ্বকাপ খেলা স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো ম্যাচ নিজেদের দেশেই হবে। এই ম্যাচগুলোর টিকিট বিক্রি থেকে বিশাল আয় হতে পারে আইসিসির।

২০ দলের বিশ্বকাপ হলেও টুর্নামেন্ট শেষ হবে ২৯ জুন। ভেন্যু বেশি হওয়ায় ২৫ জুন পর্যন্ত টানা চলবে। ২৭ জুন দুটি সেমিফাইনাল ও ২৯ জুন ফাইনাল ম্যাচটি হবে উইন্ডিজে। ১ জুন নবম বিশ্বকাপ মাঠে গড়ালেও বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শুরু ৭ জুন ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ১০ জুন নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রানাডিসের রাজধানী কিংসটাউনে পাড়ি জমাবে বাংলাদেশ। সেখানে ১৩ ও ১৭ জুন যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস ও নেপালের সঙ্গে হবে গ্রুপের শেষ দুটি ম্যাচ। দ্বিতীয় রাউন্ডে উন্নীত হলে ভেন্যুর বদল হবে। গ্রুপ পর্বে বিশ্বকাপ শেষ হলে সেন্ট ভিনসন্টে থেকেই দেশে ফেরার বিমান ধরবেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। এই বাস্তবতা মোকাবেলা করে বাংলাদেশ থেকে প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক বিশ্বকাপ কাভার করতে অ্যাক্রেডিটেশন নিয়েছেন, ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। দেশের ছোট্ট অর্থনীতির বাজারে এত বিশাল সংখ্যক সাংবাদিককে স্পন্সর দেওয়ার মতো প্রতিষ্ঠান নেই। অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে স্পন্সরের বাজার খুবই নিচে। ব্যক্তিগত স্পন্সর দেওয়ার মতো মানুষও সংখ্যায় বেশি নেই। দেশের অন্যতম শীর্ষ একটি দৈনিকে কাজ করেও স্পন্সর সংকটে ভুগতে হচ্ছে আমাকে। বিশাল ব্যয়ের কথা চিন্তা করে অফিস থেকে পরিকল্পনা করা হয়েছে আংশিক বিশ্বকাপ কাভার করার। অর্থাৎ, বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপ যেখানে শেষ করবে, আমারও বিশ্বকাপ শেষ সেখানে। সেটা হতে পারে গ্রুপ পর্বে, হতে পারে দ্বিতীয় রাউন্ডে। তবে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যে মানের ক্রিকেট খেলেছে, তাতে করে গ্রুপ পর্ব শেষে দেশে ফেরার বিমান ধরার আশঙ্কাই বেশি

একাধিক দেশে যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন হচ্ছে অনেক আগে থেকে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে বিশ্বকাপ হয়েছে। উপমহাদেশের তিন দেশ মিলে বিশ্বকাপ আয়োজন প্রথম দেখেছি ১৯৯৬ সালে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় হয়েছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সেবার শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ জিততে দেখেছিলাম টিভির দর্শক হিসেবে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলঙ্কা মিলে আয়োজন করেছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সাংবাদিক হিসিবে তিন দেশে বিশ্বকাপ কাভার করার প্রথম অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেই আসরে। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড যৌথভাবে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপও কাভার করেছিলাম প্রথম থেকে। দুটি উন্নত দেশে একসঙ্গে বিশ্বকাপ কাভার করার অভিজ্ঞতা সেবারই প্রথম। এ ধরনের বিশ্বকাপ কাভার করার চ্যালেঞ্জ অনেক। আর্থিক সক্ষমতার সঙ্গে শারীরিক সক্ষমতাও থাকতে হয়। কারণ, ম্যাচ শেষ করেই আরেকটি ভেন্যুতে ছুটতে হয়।

২০২১ সালের টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপ কাভার করি ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কাভার করতে যাচ্ছি উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। আমার দেশ ভ্রমণের প্রবল আগ্রহ এবং ইচ্ছা থাকলেও একসঙ্গে এত বিশাল এলাকার এতগুলো ভেন্যুতে বিশ্বকাপ কাভার করার আর্থিক সামর্থ্য নেই।

ক্রিকেটের সুবাদে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ওমানের মতো দারুণ সব দেশ ভ্রমণ করার সুযোগ হয়েছে। আরব আমিরাত, ওমান ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ না হলেও বিশ্বকাপ কাভার করায় আনন্দ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপ কাভার করার স্বাদটা ভিন্ন হতে পারে। তারা ক্রীড়াবান্ধব দেশ হলেও ক্রিকেটানুরাগী না। যদিও বৃটিশ কলোনির অংশ হিসেবে সতেরশ শতক থেকে দেশটিতে ক্রিকেট খেলার চল রয়েছে। ক্যানাডা-যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছে গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে। ১৯৩০ সালে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের ‘গুড উইল' সফর ছিল ক্যানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে। তিন মাসের সফরে দুই দেশেই ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন ব্র্যাডম্যান। সেগুলো অফিসিয়াল কোনো ম্যাচ না হওয়ায় ক্রিকেট সম্রাটের রেকর্ডে যুক্ত হয়নি। ক্যানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট ম্যাচও অফিসিয়াল বা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। তবে বৃটিশ অভিবাসীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের চর্চা ছিল। অ্যামেরিকার স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে ক্রিকেট থেকেও দেশটি দূরে সরে গিয়েছে। তাই নিপাট অ্যামেরিকানদের কাছে ক্রিকেট এখনো অপরিচিত খেলা। যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দলটা হলো অভিভাসীদের দল। অর্থাৎ, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, সাউথ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নেওয়া মানুষগুলো হয়ত ক্রিকেট বোঝেন এবং খেলা দেখেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপ হওয়ার অর্থ হলো উপমহাদেশের অভিবাসীদের কাছে উৎসবের উপলক্ষ্য, পুনর্মিলনীর মঞ্চ। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে অন্তত তাই মনে হচ্ছে। নিউ ইয়র্ক থেকে জাতীয় দলের সাবেক পেসার তাপস বৈশ্য ফোনে জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা বিভিন্ন রাজ্য থেকে নিউ ইয়র্কে খেলা দেখতে আসবেন। তাদের কারণে হোটেল-মোটেলে ভিড় লেগে গেছে। ব্যাক-প্যাকার্সেও বেশি ভাড়া দিয়ে বুকিং করতে হচ্ছে। নিউ ইয়র্কের মতো ডালাসেও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসীর বাস। তারা নিজেদের মধ্যে ক্রিকেট চর্চা করেন। খেলা দেখেন এবং খেলেনও। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার গোলাম নওশের প্রিন্স থাকেন ডালাসে৷ ক্রিকেট কোচিং তার পেশা। বোঝাই যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের প্রসার ঘটাতে বাংলাদেশের সাবেক খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করছেন। বাংলাদেশের অনেক সাবেক ক্রিকেটার এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। তারা বেশিরভাগই জাতীয় দলের খেলোয়াড়। তাপস বৈশ্য, আবুল হাসান রাজু, সোহরাওয়ার্দী শুভ, আফতাব আহমেদ, নাসির হোসেন, শরিফুল ইসলামদের মতো অনেক ক্রিকেটারের বসবাস। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড সাকিব আল হাসানের পরিবার থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। তার স্ত্রী এবং তিন সন্তান দেশটির নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টে তাদের পরিচিত। এই বিশ্বকাপ সাকিবের পরিবারের জন্যও উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দেবে। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যকার প্রতি ম্যাচ ও সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে বিশ্বকাপ ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকার কথা সাকিবের পরিবারের। আমার ভালো লাগছে এই বিশ্বকাপ কাভার করতে গিয়ে দেশের অনেক সাবেক খেলোয়াড় ও পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা হবে, যাদের সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ হতো৷ বিশ্বকাপ তাদেরকে সামনাসামনি দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।

এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কাছে সমর্থকদের অনেক প্রত্যাশা। দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে ১৬ মে গভীর রাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ধরেছিল বাংলাদেশ দল। সবার আগে বিশ্বকাপ দলের যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর কারণ কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। এজন্য স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলছে। ডালাসের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রথম ম্যাচ হেরে দেশের মানুষকে হতাশও করেছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। বিশ্বকাপ দল ঘোষণার পর বিভিন্ন টিভি সাক্ষাৎকার ও টক শো-তে জানতে চেয়েছিল কেমন হতে পারে বাংলাদেশ দলের এবারের বিশ্বকাপ। এটা কি সেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হতে পারে? সামগ্রিক পারফর্ম্যান্স, অতীত রেকর্ড এবং নেতৃত্ব বিবেচনায় বলেছিলাম- বাংলাদেশ সর্বোচ্চ দুটি ম্যাচ জিততে পারে- নেপাল ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। নেদারল্যান্ডস টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বেশি খেলার অভিজ্ঞতা থাকায় বাংলাদেশকে কঠিন সময় উপহার দেবে। অঘটনের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নেপালের সঙ্গেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিততে হবে। বাকি দুই দল হলো শ্রীলঙ্কা এবং সাউথ আফ্রিকা। এ দুটি ম্যাচই যুক্তরাষ্ট্রের মাঠে হবে। টাইগাররা ডালাস ও নিউ ইয়র্কের গ্যালারির সমর্থন পেলেও ম্যাচ দুটি ম্যাচে জয়ের মতো ক্রিকেট পারফর্ম করা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাটিং চিন্তার কারণ। দেশে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ টি২০ সিরিজ খেলে ৪-১ ব্যবধানে জিতলেও দলীয় পারফর্ম্যান্স সন্তুষ্ট হওয়ার মতো ছিল না। যদিও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তার দল নিয়ে গর্ব করেছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটা পুরোনো সংষ্কৃতি সামর্থ্যরে চেয়েও বড় করে দেখা। কারণ, হলো মিডিয়ার ব্যাপক প্রচার। এই দেশের ক্রিকেটের এত বেশি প্রচার যে খেলোয়াড়রা নিজেদের সামর্থ্য ভুলে বৈশ্বিক তারকাদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করতে থাকেন।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য