1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশস্পেন

বিরল প্রজাতির প্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যের প্রবেশপথ স্পেন

১৮ অক্টোবর ২০২৩

আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র শুনলেই মাদক ও অস্ত্র পাচারের কথা মনে হয়৷ অথচ বিরল বন্যপ্রাণীর চোরাচালানও বিশাল মাত্রা ধারণ করেছে৷ অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকি ও মোটা অংকের মুনাফার লোভে অসহায় প্রাণীগুলির জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠছে৷

https://p.dw.com/p/4XftL
আমস্টারডামের শিফোল বিমানবন্দরে নেদারল্যান্ডের কাস্টমস আটক করেছে এই প্রাণী
বিরল বন্যপ্রাণীর চোরাচালানছবি: picture-alliance/dpa/NVWA

মাত্র ১১ মাস বয়সের মাদি চিতার নাম কেনিয়া৷ তার মন জঙ্গলে পড়ে থাকলেও আপাতত স্পেনের আলিকান্তে শহরের কাছে এক পশু আশ্রয় কেন্দ্রে তার ঠাঁই হয়েছে৷ প্রাণীটি অনেক কষ্ট পেয়েছে৷ নার্স হিসেবে বেলি ডে শ্রুশুষা করে চিতাটিকে আবার চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন৷ তিনি জানান, ‘‘মালিক চিতাটিকে অবহেলা করায় প্রাণীটিকে বাজেয়াপ্ত করা হয়৷ মনে হয়, শুরু থেকেই ভালো করে খেতে দেওয়া হতো না৷ এখন অন্ধ হয়ে গেছে৷''

বিপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সনদ লঙ্ঘনের দায়ে সেই ‘প্রাইভেট ব্রিডার' এখন কর্তৃপক্ষের রোষের মুখে পড়েছেন৷ পূর্ব এশিয়ার ‘ক্লাউডেড লেপার্ড' প্রজাতির এই চিতা বিপন্ন হিসেবে স্বীকৃত৷

স্পেন বিরল প্রজাতির প্রাণীর বেআইনি বাণিজ্যের প্রবেশপথ হয়ে উঠেছে৷ কাছেই আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আলিকান্তে বন্দরে আসা জাহাজে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ প্রায়ই এমন প্রাণী উদ্ধার করে৷

মারিয়া পেলিসার পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধের বিশেষ ইউনিটে কাজ করেন৷ সমুদ্র বন্দর ও বিমানবন্দরে তিনি যাত্রীদের মালপত্রের মধ্যে পাখি, সাপ ও কচ্ছপ খুঁজে পেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা সত্যি দুঃখের বিষয়৷ প্রাণীগুলিকে তাদের বাসস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাদের খেলনার মতো ব্যবহার করতে এই নির্মম মানুষগুলির কোনো দ্বিধা হয় না৷''

২০২১ সালে পুলিশের তোলা একটি ভিডিওতে এক মাদি শিম্পাজির উদ্ধার অভিযান দেখা যায়৷ পাঁচ বছর ধরে সেটিকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় খাঁচায় বন্দি রাখা হয়েছিল৷ সংরক্ষিত প্রাণীর বেআইনি আমদানির ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ ২০২২ সালে তার আগের বছরের তুলনায় চোরাচালান প্রায় দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে৷ মারিয়া পেলিসার বলেন, ‘‘প্রায়ই এর পেছনে সংগঠিত অপরাধচক্রের হাত থাকে৷ প্রাণীগুলির সন্ধান পেতে সে সব দেশে লোক রাখতে হয়৷ আমদানির জন্য ইউরোপেও নেটওয়ার্কের প্রয়োজন৷ এটা খুবই লাভজনক ব্যবসা৷ আফ্রিকায় এক বানরের দাম বড়জোর পাঁচ বা ছয় ইউরো হলেও এখানে সেটির দাম দুই হাজার ইউরো বা তার বেশিও হতে পারে৷''

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের সূত্র অনুযায়ী এই ব্যবসায়ে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়৷ সিলভিয়া দিয়াসের মতে, টাকার বিচারে মাদক ও অস্ত্রের পরেই বেআইনি পশু ব্যবসার স্থান৷ কিন্তু সেই ব্যবসার পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা অনেক কম৷ ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের সিলভিয়া দিয়াস বলেন, ‘‘অস্ত্রশস্ত্র ও মাদকের চোরাচালানকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ সেই ব্যবসা থামাতে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ বেআইনি পশু পাচারও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ, অথচ সেই অপরাধ তেমন গুরুত্ব পায় না৷ প্রায়ই অপরাধের তদন্ত ও শাস্তি হয় না৷ সে কারণে এই অপরাধ আরো লাভজনক হয়ে উঠেছে৷''

বিরল প্রাণী পাচারের ব্যবসার বিরুদ্ধে সংগ্রামে কর্তৃপক্ষও প্রায়ই দিশাহারা হয়ে পড়ে৷ যেমন সম্ভবত মরক্কো থেকে স্পেনে একটি ম্যাকাকি বানর পাচার করা হয়েছে৷ চোরাচালানকারীরা নিজেদের গতিবিধি গোপন রাখতে সমর্থ হয়েছিল৷ মারিয়া পেলিসার মনে করেন, ‘‘ডিলাররা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রাণী বিক্রি করছে৷ নামহীন নেটওয়ার্কের আড়ালে তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে পারে৷ তারা এমনকি ডার্ক ওয়েবও ব্যবহার করে৷''

যথেষ্ট সংখ্যক বিশেষজ্ঞ না থাকায় কর্তৃপক্ষের পক্ষে ঠিকমতো তদন্ত করা সম্ভব হয় না৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাণীগুলিকে উদ্ধার করতেও দেরি হয়ে যায়৷ যেমনটা কেনিয়া নামের ক্লাউডেড লেপার্ডের ক্ষেত্রে ঘটেছে৷ বেআইনি এই ব্যবসার ফলে এমন অনেক প্রাণী চিরকালের মতো স্বাধীনতা হারিয়ে পণ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি হয়৷

নর্মান স্ট্রিগেল/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য