1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাহিনী মোতায়েন নিয়ে ধোঁয়াশা, রুষ্ট আদালত

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৯ জুন ২০২৩

কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় খুশি নয় কলকাতা হাইকোর্ট। ভোটের দিনদশেক আগেও আধাসামরিক সেনার এলাকা বণ্টনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিচারপতিরা।

https://p.dw.com/p/4TCvI
পঞ্চায়েত ভোট
ছবি: Payel Samanta/DW

পঞ্চায়েত ভোটের জন্য আধাসামরিক সেনা মোতায়েনের যে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্ট দিয়েছিল, তা নির্দিষ্ট সময়ে পালন করেনি রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এমন অভিযোগ তুলে আদালত অবমাননার মামলা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই মামলার শুনানিতে বুধবার কমিশন আদালতের কড়া মন্তব্যের মুখে পড়ে।

 প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলছে। এর আগের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশন এদিন বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত ১৫ পাতার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেয়। সেই রিপোর্ট দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতিরা।

আদালতের কঠোর মন্তব্য, "আপনাদের কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে না আপনারা হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে চান। আমরা তাহলে কী করব? নির্বাচন কমিশনের দপ্তর সরোজিনী নাইডু সরণি থেকে কি হাইকোর্টে নিয়ে চলে আসব?"

 বাহিনী মোতায়নে ধোঁয়াশা

বাহিনী মোতায়নের যে নির্দেশ হাইকোর্ট আগে দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকার। যদিও শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রাখে।

‘যে দেশে টাকা জাল হয়, সেখানে ব্যালট জাল হতেই পারে’

৮ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু এই এক দফায় আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ৮০০ কোম্পানি আধাসেনার ব্যবস্থা করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমে ২২ ও পরে ৩১৫ কোম্পানি বাহিনী রাজ্যে এলেও এখনো ৪৮৫ কোম্পানি আসা বাকি।

 বাকি বাহিনী নিয়ে ইতিমধ্যেই কমিশন ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মধ্যে একাধিকবার চিঠি আদান-প্রদান হয়েছে। কিন্তু ভোটের ১০ দিন আগেও ৮০০ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আসা ৩১৫ কোম্পানি মোতায়েনের প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি।

কেন্দ্র-কমিশনের বক্তব্য

 কমিশনের হলফনামায় সই করতে বুধবার হাইকোর্টে যান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। বাকি বাহিনী সম্পর্কে তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার তো বলেনি বাকি বাহিনী আসবে না। আমি কী করে সে কথা বলব।" যদিও এদিন মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের আইনজীবী অভিযোগ করেন, আধাসামরিক সেনা মোতায়নের ব্যাপারে কমিশনের যা করণীয়, তা তারা করছে না।

পঞ্চায়েত ভোট
ছবি: Payel Samanta/DW

 সব পক্ষের বক্তব্য শুনে ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, "কেন্দ্র চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে ঠিকভাবে লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে না। বাহিনীর জন্য নূন্যতম আয়োজন কমিশনকেই করতে হবে।" যদিও বিরোধীরা একাধিক দফায় ভোটের দাবি তুললেও সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেনি আদালত।

সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, "অঙ্কের নিয়মে জওয়ান কম থাকলে বেশি দফায় ভোট নিতে হবে। এটা সাধারণ যুক্তি। সেই অনুযায়ী কমিশন চলবে বলে মনে হয় না।"

 স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিতকরণ

গোটা রাজ্যে এখনো স্পর্শকাতর এবং উপদ্রুত এলাকা গুলি চিহ্নিত করা হয়নি। আবার বিভিন্ন জেলায় যেভাবে  কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়েছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে! ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে সবচেয়ে বেশি আসন দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। উপরন্ত ভাঙড়, ক্যানিং-সহ কিছু জায়গায় মনোনয়নের সময় অশান্তি, মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। সেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন্য বরাদ্দ মাত্র ১৮ কোম্পানি, অপর দিকে বাঁকুড়া পাবে ২৪ কোম্পানি। এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এত প্রশ্ন সত্ত্বেও ভোটের তারিখ পিছনোর সম্ভাবনাও দেখছেন না পর্যবেক্ষক অমল মুখোপাধ্যায়। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আদালত কমিশনকে একাধিক পর্যায়ে ভোট নিতে বাধ্য করতে পারে না। বড় জোর পরামর্শ দিতে পারে। কমিশন একদিনেই ভোট নেবে। তাই তারিখ পিছোবে বলে মনে হয় না।"

 ব্যালট বিতর্ক

পঞ্চায়েতের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বুধবার অধীর বলেন, "জোড়া ব্যালট ছাপানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। বুথ থেকে স্ট্রং রুমে যাওয়ার পথে আসল ব্যালট বদলে দেয়া হবে। এ কারণে পুলিশ সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছ থেকে কম্পিউটারের চাবি চাইছে। তাতে রাজি না হওয়ায় পুরুলিয়ার তিনজন আধিকারিককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।"

অভিযোগ খারিজ করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, "নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা! বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভোট পরিচালনা করেছে। অধীর চৌধুরীরা শূন্য পেয়েছেন। তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের সবচেয়ে ব্যর্থ সভাপতি।"

কংগ্রেসের বক্তব্যে সিলমোহর দিয়েছেনবিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তার মন্তব্য, "অনেক জায়গা থেকেই আমরা এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি।" সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহাম্মদ সেলিম বলেন, "আবাস যোজনা, নিয়োগ, ১০০ দিনের প্রকল্পে জালিয়াতি। ভোটেও জালিয়াতির চেষ্টা রুখে দেবে সাধারণ মানুষ।"

 ব্যালট নকল সম্ভব বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধরচৌধুরী। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যে দেশে টাকা জাল হয়, সেখানে ব্যালট জাল হতেই পারে। সাধারণ ছাপাখানাতেই ব্যালট ছাপানো হয়। স্ট্রং রুমে যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকে, তা হলে বাক্স বদলে ফেলা অসম্ভব, এ কথা বলা যাবে না।"