1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফিরে দেখা ২০২৩: বাংলাদেশের চাওয়া এবং পাওয়ার হিসাব

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
২৯ ডিসেম্বর ২০২৩

শেষের পথে আরো এক গ্রেগরিয়ান বছর। বারোটি মাসের আবর্তনে থাকে ভালো-মন্দ নানান ঘটনা। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর- কেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম আমরা? তা পেয়েছি কি?

https://p.dw.com/p/4ahB7
কর্ণফুলী টানেলের ভেতরে যানবাহনের চলাচল
এ বছরই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল' উদ্বোধন হয়ছবি: Salim/Xinhua/picture alliance

বিদায়ী বছরের প্রথম দিনের একটি খবর ছিল এমন- বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয় আসনের উপনির্বাচনের তিনটিতে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। তখন এর দুটি তারা ছেড়ে দেয় শরিকদের। আর একটিতে ছাড় দেয় বিএনপির পদত্যাগী এমপি উকিল আবদুস সাত্তার ভুঁইয়াকে। যিনি দল ছেড়ে এসে স্বতন্ত্র হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আবার জয়ী হন। বছরের শেষার্ধে মারা যান তিনি।

তবে সাত্তার ভুঁইয়া যে সরকারি দলের জন্য ভোটের ‘নতুন কৌশল' নিয়ে নিরীক্ষার কাজটি করে গিয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসে সেই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির দলছুট বা তার সমমনা দলের যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের কেউ সরাসরি নৌকার প্রার্থী হয়েছেন, কেউবা পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থন। তবে এবার নতুন বিষয় হচ্ছে- ভোটের মাঠে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও সক্রিয়। তাদের কেউ বর্তমান সরকারি দলের এমপি, কেউবা দলটির প্রভাবশালী নেতা।

ভোটে এমন কিছু সমীকরণ থাকলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে যেখানে বিএনপি ও তার অনুসারী সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, সেখানে এবার তারা আবার ফিরে গেছে দশম সংসদ নির্বাচনের সেই বর্জনের অবস্থানে। তবে ২০১৪ সালের মতো বিনা ভোটেই ১৫৩ জন এবার আর নির্বাচিত হতে পারেননি। তবু বিএনপি না থাকায় আওয়ামী লীগের বিজয় একরকম নিশ্চিত। শুধু সংসদে বিরোধীপক্ষের চেহারা কেমন হবে, সেটা জানা যাবে ভোটের শেষে। আর এবার কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি দেখাতেও আপাতত হন্যে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।

যেখানে ধানের শীষ নেই, সেখানে নৌকার জন্য ভোটারদের দিক থেকে সেভাবে চাপ তৈরি হবে না- এটা নিশ্চিত। নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি ও তাদের সমমনারা রাজপথে হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ আন্দোলনের মতো কর্মসূচি দিচ্ছে। এসব তাদের সুফল দেবে, এখনো সেই সম্ভাবনা দৃশ্যমান নয়। তারা বছরজুড়ে সভা-সমিতির দিকে থাকলেও ২৮ অক্টোবর সামনে রেখে প্রথম রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর যেভাবে সহিংস হয়েছিল রাজপথ, এবারও কিছুটা তেমন পরিস্থিতি ছিল। তবে ১৭ বছর আগে রাজপথ থেকে আওয়ামী লীগ যেভাবে সাফল্য পায়, এবার সেটা পায়নি বিএনপি। পরিস্থিতি এখনো প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে। তবে ২০১৩-২০১৪ সালে বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধের সময় বাসে অগ্নিসংযোগ বা পেট্রোল বোমা ছোঁড়ার যে সহিংসতার ঘটনা ছিল, এবার সেটা রেলগাড়িতে দেখা যাচ্ছে। এসবের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে দেশজুড়ে। সহিংস ঘটনাগুলোয় কারা জড়িত- এখনো তা প্রমাণিত নয়, তবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নতুন নতুন অভিযোগে কারাবন্দি করা হচ্ছে।

সবটা মিলে রাজপথের বিরোধীদল নয়, ২০২৩ সালজুড়ে শাসকদলের জন্য যেটা চাপ হিসেবে ছিল, সেটা মূলত এসেছে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও সহিংসতামুক্ত জাতীয় নির্বাচনের পক্ষেই একটি চাপ হিসেবে এখনো বহাল। তা সামলাতে কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকলেও তাতে খুব একটা সাফল্য আসেনি বলে মনে করেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির।

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বছর দুই আগে দেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এখনো রয়ে গেছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি বলেই হয়তো তারা এর সঙ্গে চলতি বছর নতুন ভিসানীতি দিয়েছে। এর প্রয়োগও শুরু করেছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা, মানবাধিকার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে পাশ্চাত্য জগতের সঙ্গে মতের বড় ধরনের অমিল রয়ে গেছে। এসব বিষয় নিষ্পত্তির দিকে গেলে ভালো ব্যবস্থাপনা হয়েছে বলা যেতো৷''

দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে বছরজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে দেশের ভেতরে যে সহমতের অভাব তারই প্রতিফলন এটি। তাই বিষয়টি আমাদের জন্য ইতিবাচক নয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীদার মিলে যে কোনো ধরনের সমাধানে যাওয়া যায়নি, এটি দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক৷’’

লাগামহীন বাজার এবং টালমাটাল অর্থনীতি

দেশের রাজনীতি শুধু নয়, অর্থনীতি ও বাজারেও বড় প্রতিবেশী ভারতের সিদ্ধান্তের বড় প্রভাব থাকে। সদ্যই তারা রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলে রাতারাতি বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। ক্রেতাদের কেনার হুজুগ আর বিক্রেতাদের মুনাফালোভে কেজি প্রতি দাম দ্বিগুণ হয়ে ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে অভিযানেও নামে প্রশাসন। এতে বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য তা এখনো সহনীয় নয়।

বছরজুড়েই ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে ভুগতে হয়েছে তাদের। কখনো আলু, কখনো ডিম, কখনো মুরগির দাম ছিল আকাশছোঁয়া। সবজির বাজারে দামের আগুন লেগেই ছিল। শীতকালের শুরুতে কমার প্রবণতা থাকলেও এগুলোর দাম আবার উর্ধ্বমুখী। সোয়া কেজি আলুর দাম হয়ে গেছে ১০০ টাকা, যাকে দামের নতুন রেকর্ড বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই।

বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল গরুর মাংসের দাম যা ৯০০ টাকা কেজি পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। শেষ ধাপে এসে আবার দাম কমে ৫০০-৬০০ টাকায় চলে আসে। প্রশাসনের উদ্যোগ নয়, এতে দু-একজন মাংস-বিক্রেতার উদ্যোগ কাজে দিয়েছে। ‘কম লাভ, বেশি বিক্রি'- ভাবনার প্রয়োগ করেছে তারা। তারপর যখন বাজার পড়তে শুরু করে, তখন ক্রেতার সুবিধার কথা না ভেবে মুনাফামুখী বিক্রেতাদের পক্ষ নিয়ে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ টাকায় বেঁধে দেয় প্রশাসন।

বিদায়ী বছরেই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু একটি দিনের জন্যও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। তবে দাম নির্ধারণ, বাজারে অভিযান- মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এসব কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নয় বলে মনে করেন কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সরকারি উদ্যোগে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি, টিসিবির ট্রাকসেল- এসব উদ্যোগে অল্প কিছু মানুষ উপকৃত হয়, কিন্তু সার্বিকভাবে বাজার স্থিতিশীল করতে পারে না।''

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান আরো বলেন, ‘‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মূল পদক্ষেপ আসতে হবে। এক্ষেত্রে ঘাটতি থাকায় ২০২৩ সালে গত এক দশকের মধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল৷''

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি গত এক দশকে সর্বোচ্চ: গোলাম রহমান

কাঁচাবাজার শুধু নয়, বছরজুড়ে দেশের ডলারের বাজারেও অস্থিরতা ছিল। এক ডলার ১২৯ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। এর পেছনে এসেছে কারসাজির অভিযোগ। তবে সরকার বরাবরই দাবি করছে, রাশিয়ার ইউক্রেন হানার কারণে বিশ্বজুড়ে যে পরিস্থিতি, তার জের টানতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

তবে গোলাম রহমান মনে করেন, পরিস্থিতির কারণ শুধু ইউক্রেন নয়। ডলারের বিনিময় হার, সরকারি ঋণগ্রহণ- ২০২৩ সালে এসব ক্ষেত্রে সরকার থেকে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

টানা তিন মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকার রিজার্ভ বৃদ্ধির রেকর্ড নিয়ে গৌরব করে আসছিল। কিন্তু সেটা ধরে রাখা যায়নি। চলতি বছর তা তলানিতে নেমে এসেছে। বৈদেশিক ঋণ এই প্রথম ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আর সরকারের হাতে ব্যবহার করার মতো রিজার্ভ মাত্র ১৫ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার।

টাকা ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টাও দেখা গেছে।

সার্বিক অবস্থা মোকাবিলায় সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছে। বছরের শুরুতে এ নিয়ে উত্তাপ ছিল রাজনীতিতে। বিরোধী পক্ষ বলে আসছিল, সরকার ঋণ পাবে না।

অন্যদিকে আইএমএফও বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিতে নানা শর্ত বেঁধে দেয়। তবে বছরের শুরুর ধাপে আসে ঋণের প্রথম কিস্তি, যার পরিমাণ ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার। বছরের শেষভাগে এসে বাংলাদেশ পেয়েছে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।

বছরজুড়ে ডেঙ্গু: শহর থেকে গ্রামে

ডেঙ্গু জ্বর শহরের সমস্যা ছিল দীর্ঘদিন। যা শুধু বর্ষা মৌসুমেই থাকতো। এবার ডেঙ্গু শহর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামেও। আর পরিণত হয়েছে সারা বছরের সমস্যায়। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশারের ভাষ্য, ‘‘দেশে ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগ। শুধু বর্ষাকালে সীমিত থাকবে এডিস মশা, সেই বাস্তবতা বদলে গেছে।'' তাই সারাবছর সচেতন থাকতে বলছেন তিনি।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু অতীতের যে কোনো বছরের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে এবার। এবছর ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত এই রোগে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা মোট ৩ লাখ ২০ হাজার ৮৩৫। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬৯৯ জনের।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা ঘিরে নাকাল হতে হয়েছে মানুষকে। স্যালাইনের দাম বৃদ্ধি শুধু নয়, কখনো কখনো এটি বাজারে পাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে। আবার ডেঙ্গু রোগীর কারণে ডাবের চাহিদা বাড়ায়, একটি ডাব ২০০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে। বছরের শেষদিকে এসে ডেঙ্গু রোগী তুলনামূলক কমে যাওয়ায় ডাব, স্যালাইন ও চিকিৎসা ঘিরে যে অস্থিরতা ছিল, তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসার চেয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ও নাগরিকদের সচেতনতায় তাগিদ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।

উন্নয়নে নতুন নতুন মাত্রা

বিদায়ী বছরে বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে যাত্রা করেছে বাংলাদেশ।রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান দেশে আসে সেপ্টেম্বরে। যার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় ৫ অক্টোবর। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভার্চুয়ালি হাজির ছিলেন।

এ বছরই টানেল যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। ২৮ অক্টোবর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল' উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের রেলযোগাযোগেও নবযাত্রা ছিল এবার। ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ চালু হয়েছে। রেলগাড়ির মাধ্যমে পদ্মাসেতুর দুই পাড়ের সংযোগ যোগাযোগের ইতিহাসে নতুন এক মাত্রা।

ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের পুরোটা সচল হয়েছে। যা শহরের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসছে। এবারই ঢাকা প্রথমবারের মতো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শহরে পরিণত হয়েছে। তবে নতুন যোগাযোগ অবকাঠামো যানজট কমাতে পারবে কিনা, তার জন্য আগামী বছরও দেখতে হবে। কারণ নগরবাসীকে আগের মতোই যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে।

রেলপথ, সড়কপথের পাশাপাশি আকাশপথের জন্য সুখবর ছিল এবার। কারণ ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ‘সফট ওপেনিং' করা হয়েছে অক্টোবর মাসে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর তথ্যমতে, তৃতীয় টার্মিনালের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। এর পুরো কার্যক্রম আগামী বছরের শেষদিকে শুরু হবে। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। এখন দুটি টার্মিনালে  প্রতিদিন ৩০-৩৫ হাজার যাত্রী সেবা পাচ্ছেন। এভাবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী সেবা পাচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বছরে আরো ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা পাবে।

বছরের শেষে এসে সমুদ্রবন্দর ঘিরেও আশা-জাগানিয়া ব্যাপার রয়েছে। পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় সৌদি আরবের একটি কোম্পানি যুক্ত হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, সৌদি আরব আসায়, বন্দরের প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল পরিচালনায় সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সিঙ্গাপুরও যুক্ত হতে পারে।

খেলা হবে’- হলো কেমন?

রাজনীতির ময়দানের যে বক্তব্য, সেখানে ‘খেলা হবে' কথাটি অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়েছে এবছর। কিন্তু মাঠের যে খেলা, সেখানে কেমন করেছে বাংলাদেশ?

সবকিছু ছাপিয়ে দর্শকপ্রিয়তায় এগিয়ে ছিল ক্রিকেটই। তবে তাদের আশা খুব বেশি পূর্ণ করতে পারেননি আমাদের ক্রিকেটাররা। এবছর সবটা মিলে ৩২টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। এটা এক বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যা ম্যাচ খেলা টাইগার বাহিনীর। তবে জয় এসেছে মাত্র ১১টিতে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে লক্ষ্যপূরণ করতে পারেনি সাকিবরা। ভালো করতে পারেনি এশিয়া কাপেও।

টি-টোয়েন্টিতেও ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে সবশেষ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো তাদের হারিয়েছে শান্তর বাহিনী। টেস্ট ক্রিকেট অর্জন বলতে গেলে একই দলকে কিছুদিন আগে ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো পরাজিত করা।

পরাশক্তিদের পাল্টাপাল্টি ইতিবাচক নয়: এম হুমায়ুন কবির

মাঠে ও মাঠের বাইরে নানাভাবে আলোচিত হয়েছে দেশের ক্রিকেটাররা। ওয়ানডে বিশ্বকাপ দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বাদ দেওয়ার ইঙ্গিত ছিলো বিসিবির। পরে দর্শকদের চাপের মুখে এবং বিকল্প ক্রিকেটারদের ব্যর্থতায় তাকে দলে নেওয়া হয়। দারুণ খেলে নিজেকে প্রমাণ করেন রিয়াদ। বিশ্বকাপেই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে টাইমড আউট করে ‘অখেলোড়োচিত' আচরণের অভিযোগে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বিতর্কিত হন। দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বল হাত দিয়ে ধরে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড আউট' হয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম আলোচনায় আসেন।

তবে আলোচনা-সমালোচনায় সবকিছু ছাপিয়ে গেছে সাকিব-তামিম সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন। বলা হয়ে থাকে, দুজনের দূরত্বের কারণেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান তামিম ইকবাল। এখন অবধি তিনি মাঠে ফিরে আসেননি। ঘটনাপ্রবাহে অবসর-ঘোষণা দেওয়া তামিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় সিদ্ধান্ত বদল করেন। তবে তিনি জাতীয় দলে ফিরে আসবেন কিনা, এখনো বিষয়টি ঘিরে অনিশ্চয়তা আছে।

আগের বছর নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়া সেরা হলেও এবছর ভালো যায়নি সাবিনাদের। অর্থাভাবে তাদের মিয়ানমারে পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। যেখানে অলিম্পিক বাছাইয়ে অংশ নেওয়ার কথা ছিলো তাদের।

এবছর পয়লা বৈশাখের দিন দেশের ফুটবলে লাগে আরেক দাগ। ফিফা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। সার্বিক পরিস্থিতিতে সমালোচনার মুখে পড়েন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও। তবে তিনি দেশের ফুটবলের প্রধান হিসেবে টিকে আছেন এখনো।

জামাল ভূঁইয়াদের কিছু অর্জন অবশ্য সামনে আনতে পারেন বাফুফে সভাপতি। কারণ, ১৪ বছর পর সাফের শেষ চারে যেতে পেরেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের মাটিতে লেবাননকে রুখে দিয়েছে লাল-সবুজের দল। আর বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আর্জেন্টিনার লিগ দলে সুযোগ পেয়েছেন। যা দেশের ফুটবলের জন্য নতুন ইতিহাস।

এদিকে বছরের শেষদিকে এসে খেলার মানুষদের চোখ পড়েছে জাতীয় নির্বাচনেও। কারণ, দেশের ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। নৌকা প্রতীকে জয়ী হতে তিনি এখন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। মাশরাফিকে অনুসরণ করে ক্রিকেট মাঠ থেকে জাতীয় সংসদে তার যাওয়া হবে কিনা, তা চূড়ান্ত হবে নতুন বছরের ৭ জানুয়ারি। রাজনীতির সাকিব এখন অবধি ক্রিকেটের মতোই আলোচনা-সমালোচনা সঙ্গী করে এগিয়ে চলেছেন।

তায়েব মিল্লাত হোসেন
তায়েব মিল্লাত হোসেন সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান