1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পেছনেই হাঁটছে বাংলাদেশের ক্রিকেট

আজাদ মজুমদার
২১ অক্টোবর ২০২২

অনেকটা নীরবেই সোমবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে ১০ বছর পূর্ণ করেছেন নাজমুল হাসান৷ কোথাও কোনো কেক কাটা হয়নি৷ অন্য কোনোভাবে কেউ দিনটি উদযাপন করেছেন সেরকম কোনো খবরও পাওয়া যায়নি৷

https://p.dw.com/p/4IVt1
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ
গত আগস্টে এশিয়া কাপের ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হেরে মাঠ ছাড়ছেন মুশফিকরাছবি: Surjeet Yadav/AFP

বিসিবি সভাপতি যদি চাইতেনও এদিন বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোনো কিছু উদযাপন একটু বেমানানই হতো হয়তো৷ একদিকে উৎসব, অন্যদিকে আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশ দলের কচুকাটা হওয়া সমালোচনার আগুনে ঘি ঢেলে দিতে পারতো৷

সমালোচনা অবশ্য এমনিতেও থেমে নেই৷ ১০ বছর আগে নাজমুল হাসান যখন বিসিবির দায়িত্ব পান, ক্রিকেটে আফগানিস্তানের বলতে গেলে সেরকম কোনো অস্তিত্বই ছিল না৷ অথচ এখন তারা বাংলাদেশকে হারিয়ে দিচ্ছে প্রায় বলে কয়ে এবং সেটা সব ফরমেটে৷ কারো কারো কাছে ক্রিকেটে বাংলাদেশের অনগ্রসরতার এটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে সবচেয়ে বড় দালিলিক প্রমাণ৷

বিসিবি সভাপতি হিসেবে এতে নাজমুল হাসানের দায় কতটুকু সেই আলোচনা তর্কসাপেক্ষ৷ জাতীয় দলের দিকে এক দশকে তিনি যথেষ্টই নজর দিয়েছেন৷ বলা চলে একটু বেশিই নজর দিয়েছেন৷ দলের একাদশ নির্বাচন থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের পারিবারিক সুবিধা-অসুবিধা সবকিছু নিয়ে মাথা তাকে ঘামাতে হয়েছে৷ দলের জন্য সম্ভাব্য সেরা কোচ নিয়োগ দিতেও সব রকম চেষ্টা করেছেন৷ টাকা পয়সাও খরচ করেছেন দুই হাতে৷

একটা উদাহরণ দেওয়া যাক৷ গত এক দশকে বাংলাদেশের বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন, কিংবা এখনো কাজ করছেন এমন পাঁচ জন সাবেক ক্রিকেটার হচ্ছেন হিথ স্ট্রিক, কোর্টনি ওয়ালশ, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, অ্যালান ডোনাল্ড ও রঙ্গনা হেরাথ৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই পাঁচ জনের সম্মিলিত উইকেট সংখ্যা তিন হাজার ২৯টি৷ এত এত অভিজ্ঞতার সম্মিলন ঘটিয়েও বাংলাদেশ এই সময়ে পাঁচজন বোলার পায়নি যারা একা কোনো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন৷ শুধু বোলিং কেন, ব্যাটিংয়েও এখনো কেবল সাকিব আল হাসান খেললেই বাংলাদেশ খেলে৷ নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় কাপই তো তার বড় প্রমাণ৷ শেষ দুই ম্যাচে তিনি দুটি ফিফটি করেছেন বলেই টানা চার হারেও কিছুটা মান রক্ষা৷

সমস্যাটা তাহলে কোথায়? নাজমুল হাসান একা নন৷ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সব কর্মকর্তারই উচিত এখন নিজেদের এই প্রশ্নটা করা৷ ক্রিকেটে দেদার টাকা খরচ করেই যারা তাদের দায় সেরেছেন৷ অনেকটা সেই সব গৃহকর্তার মতো, যারা সন্তানের জন্য সবচাইতে উচ্চশিক্ষিত গৃহশিক্ষক এনেই ভেবেছেন কাজ শেষ৷ এখন এই গৃহশিক্ষকের আলোয় আলোকিত হয়ে তার সন্তান হয়ে উঠবেন সমাজের সবচাইতে শিক্ষিত তরুণ৷ কিন্তু এই নিয়মে যে পৃথিবী চলে না, ধনগর্বে গর্বিত বাবারা অনেক সময় ঠিক বুঝে উঠতে পারেননা৷ কিংবা যখন বোঝেন সময় শেষ হয়ে যায়৷

বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্তারা চাইলে নিজেদের ভাগ্যবানও ভাবতে পারেন৷ গত এক দশকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অভাবিত কিছু সাফল্য এসেছে, যাতে তাদের অবদান থাকুক আর না থাকুক তার কৃতিত্ব তারা পুরোটাই নিতে পেরেছেন৷ বিপত্তিটা বেধেছে এখন, যখন দল সংকটে পড়েছে৷ টেস্ট আর টিটোয়েন্টিতে টানা ব্যর্থতায় গত এক দশকে তাদের চালু রাখা সিস্টেমের দুর্বলতা বেরিয়ে পড়েছে বড় দৃষ্টিকটু ভাবে৷

বিসিবি সভাপতি ও তার পরিচালকরা জাতীয় দলের দিকে অতি নজর দিতে গিয়ে আরো যেসব বিষয়ে তাদের নজর দেওয়াটা জরুরি ছিলো সেটাই দিতে পারেননি৷ প্রথম-প্রথম প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট নিয়ে অনেকেই অনেক গাল-গল্প দিয়েছেন৷ কিন্তু এটা নিয়ে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের আগ্রহ এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে৷ এক সময় বিসিবির কর্মকর্তারা বিপিএল নিয়েও অনেক বড়াই করেছেন৷ এটাকে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা লীগও কেউ কেউ বলেছেন৷ কিন্ত বাস্তবতা অন্য সাক্ষ্য দিচ্ছে৷ দেশে ১৭ কোটি ক্রিকেট ভোক্তা থাকার পরও এর একটা দৃঢ় কাঠামোই দাঁড় করানো যায়নি৷ একটা দলের নাম এক বছর টাইগার থাকেতো পরের বছর হয়ে যায় টাইটান৷ বিপিএলকে ফলো করাটাই ক্রিকেট সমর্থকদের জন্য কষ্ট সাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন
বিসিবি সভাপতি হিসেবে এক দশক পূর্ণ করেছেন নাজমুল হাসান পাপনছবি: bdnews24

ঘরোয়া অন্যান্য লীগের আম্পয়ারিংয়ের মান নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে৷ মান যে তাদের খারাপ না সেটা এশিয়া কাপে মাসুদুর রহমানের আম্পায়ারিং দেখে সবাই উপলদ্ধি করেছেন৷ কিন্তু দেশের দ্বিতীয়, তৃতীয়, প্রথম বিভাগে তাদের স্বাধীনতা কতটুকু আছে সেই উপলদ্ধিটা নেই বিসিবিতে প্রায় কারোই৷ এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটলে থানা পুলিশ প্রায়ই বলে থাকেন, আমাদের তো কেউ অভিযোগ করেনি, ব্যবস্থা কিভাবে নেব৷ আম্পায়ারিং নিয়ে কোনো অভিযোগ এলে বিসিবির কর্মকর্তারা কথা বলেছেন থানার ওসির ভাষায় - কোনো ক্লাবতো লিখিত অভিযোগ করেনি৷ ভাবখানা এমন, একখানা অভিযোগ কেউ করলেই তারা রাতারাতি সব সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন৷

ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রায় সব স্তরে এই দৈন্য দশা নতুন খেলোয়াড় তৈরির সমস্ত পথকে ক্রমান্বয়ে রুদ্ধ করেছে৷ ভবিষ্যতের তারকার সন্ধানে এখন বিসিবিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বয়স ভিত্তিক দলগুলোর দিকে৷ এখানেও গ্রহণ লেগেছে৷ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ীদের নাম আমরা সবাই জানি৷ কিন্তু তারপরে যে আরো একটা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ হয়েছে সেই খবর খুব বেশি লোক রাখেনি, কারণ সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অষ্টম হয়েছে৷

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ বয়স ভিত্তিক দলগুলোতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়েছে৷ ডেভেলপেমেন্ট কমিটি নামের যে কমিটি বয়স ভিত্তিক দলগুলো দেখাশুনা করে, বিসিবির সবচাইতে প্রভাবশালী কর্মকর্তারা সেই কমিটির দায়িত্বে থেকেছেন৷ নাজমুল হাসানের কমিটিতেও ব্যতিক্রম হয়নি৷ খালেদ মাহমুদ সুজনের চেয়ে খুব বেশি উপযুক্ত লোকতো এই দায়িত্ব পালনে এখন আর নেই৷ কিন্তু অনেক কাজ একাই করেন বলে তিনি কোনো কাজই এখন ঠিকমতো করতে পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে৷ আর এর জেরে বয়স ভিত্তিক দলের পারফরমেন্সও নিম্নগামী হতে শুরু করেছে৷

ফলাফল? টানা একবছর চেষ্টা করেও টিটোয়েন্টি দলে একটা ওপেনিং জুটি পাওয়া যায়নি৷ ওপেনারের সন্ধানে সামনে না তাকিয়ে হাঁটতে হয়েছে পেছনে৷ ঘরোয়া ক্রিকেট সহ প্রায় কোনো পর্যায়েই পারফর্ম না করা সাব্বির রহমানকে দলে ফেরাতে হয়েছে৷ টানা কয়েক ম্যাচের ব্যর্থতায় তাকে বাদ দিয়ে এখন ফেরানো হয়েছে সৌম্য সরকারকে৷ এবং তিনিও অনেকদিন কোথাও কোনো পারফর্ম করেননি৷ কেবল মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও পেছনেই হাঁটছে বাংলাদেশের ক্রিকেট৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য