1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিন-চারটা ম্যাচ জিতে চমক দিতে পারে বাংলাদেশ: আফতাব আহমেদ

নোমান মোহাম্মদ ঢাকা
২১ অক্টোবর ২০২২

আফতাব আহমেদ৷ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশের একমাত্র জয়ের অন্যতম নায়ক৷ ২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর সময় ক্রিজে ছিলেন ৪৯ বলে ৬২ রানে অপরাজিত ইনিংসে৷

https://p.dw.com/p/4IVi0
২০১৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে উপস্থিত দর্শক
ছবি: Getty Images

এরপর দেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এগিয়েছে কতোটা? কেন এগোয়নি? এবারের  বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নিয়ে প্রত্যাশা কী? বেশি ভরসা করছেন কোন তিন ক্রিকেটারের উপর? এসব কিছু নিয়ে ডয়েচে ভেলের মুখোমুখি আফতাব আহমেদ৷

ডয়েচে ভেলে : এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কেমন করবে বলে মনে হয়?

আফতাব আহমেদ : দর্শক হিসেবে আশা করছি ভালো করবে৷ কিন্তু পরিস্থিতি কঠিন৷ বিশ্বকাপ শুরুর আগে নামিবিয়ার মতো দলকে আমরা ‘ছোট’ দল হিসেবে দেখেছিলাম৷ তবে  বিশ্বকাপে ওরা নিজেদের প্রমাণ করেছে৷ এখন তাই কোনো দলকেই ছোট বলা যাবে না৷ এসব দলের সঙ্গে খুব সহজেই যে জিততে পারব, সে সুযোগ নেই৷ সামনে তাই বাংলাদেশকে খুব কঠিন সময়৷ আর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাওয়ার কথা, সেটিও হয়নি৷ আগের সিরিজগুলো ভালো হয়নি৷ প্রতি ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছেও আমরা হেরেছি৷ সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য একটা ম্যাচ জেতা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ তাহলে হয়তো সব কিছু বদলে যাবে৷

প্রশ্ন : গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় যে অবস্থা ছিল বাংলাদেশের, সেটিরও কি খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে?

আফতাব : দেখুন, সব কিছুরই একটা পরিকল্পনা থাকতে হয়৷ যেমন ২০২৪ বিশ্বকাপের পরিকল্পনা এখন থেকেই করতে হবে৷ ২০/২৫/৩০ জনের একটা স্কোয়াড তৈরি করে তাদের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে৷ যাই হোক না কেন, ওদের নিয়েই দল করতে হবে৷ এ বিশ্বকাপে আমরা সেটি করতে পারিনি৷ সৌম্যকে হুট করে নিয়ে এসেছি৷ সাব্বিরের বিশ্বকাপে যাওয়ার কথা, দুম করে বাদ দিয়েছি৷ এখনও দলের দুই ওপেনার সেট করতে পরিনি৷ এটা লিগের কোনো খেলা না; বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলা৷ ২০২২ সালে যে বিশ্বকাপ খেলব, সেটি তো অনেক থেকেই জানা৷ কিন্তু সে অনুযায়ী প্রস্তুতিটা আমরা নিতে পারিনি৷

‘বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাওয়ার কথা, সেটি হয়নি’

প্রশ্ন : ২০২১, ২০২২  বিশ্বকাপ থেকে যদি একেবারে প্রথম টি-টোয়েন্টি  যাই৷ ২০০৭ সালে সেখানে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পেয়েছিলাম৷ এরপর আর কখনও মূল পর্বে কোনো জয় পাইনি৷ তাহলে এই ১৫ বছরে আমাদের টি-টোয়েন্টি কতটা এগিয়েছে বলে আপনার মনে হয়?

আফতাব : আপনি নিজেই বলে দিয়েছেন, বড় আসরে আমরা একটা মাত্র ম্যাচ জিতেছি৷ তাহলে আমাদের যে প্রসেসে যাওয়ার কথা, সে প্রসেসে হয়তো-বা যেতে পারিনি৷ আর টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ জিততে হলে বিপিএল ভালো করতে হবে৷ আইপিএলে দেখবেন, ভারতের ক্রিকেটারেরা বেশিরভাগ সময় ম্যাচ জেতায়৷ ওদের উপরই দলগুলো নির্ভর করে৷ কিন্তু আমাদের বিপিএলে এখনও বিদেশিদের উপর নির্ভর করা হয়৷ বিপিএলটা তাই এমনভাবে করা উচিত, যেন দেশি ক্রিকেটাররা গুরুত্ব পায়৷ ওরা যেন চ্যালেঞ্জ নিতে শুরু করে৷ আরেকটা জিনিস আমি মনে করি, আমাদের ক্রিকেটারদের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলার সুযোগ দেয়া উচিত৷ 

প্রশ্ন : ২০০৬-০৭ সালের দিকে যখন আমরা টি-টোয়েন্টি খেলা শুরু করি, তখন কি ভেবেছিলেন যে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশকে এমন ভুগতে হবে? নাকি ভেবেছিলেন এই খেলাটা রপ্ত করা তুলনামূলক সহজ হবে?

আফতাব : ওই সময় আমি, আশরাফুল, সাকিব, তামিমরা ভালোভাবে টি-টোয়েন্টি খেলা শুরু করেছিলাম৷ ২০০৭  বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও শুরুটা ভালো হয়েছিল৷ ২/৩ ওভারে ৩৪/৩৫ রান তুলে ফেলেছিলাম৷ ওই টুর্নামেন্ট আমরা হয়তো আর ম্যাচ জিতিনি (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের পর)৷ তবে টুকটাক অনেক ভালো জিনিস ছিল৷ আমাদের বিপিএল শুরু হয়েছে ২০১২ সালে৷ এরপর তো টি-টোয়েন্টিতে এমন স্ট্রাগল করার কথা না৷ বিপিএল শুরুর সময় শুধু আইপিএল ছিল আর বিগ ব্যাশ ছিল৷ কিন্তু সিপিএল কিংবা এমন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলো ছিল না৷ সে হিসেব করলে, আমাদের বিপিএল এত আগে শুরুর পর তো টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাগল করার কথা না৷

প্রশ্ন : এবারের টি-টোয়েন্টি  বিশ্বকাপের কিছু দিন আগে বাংলাদেশের কোচ পরিবর্তন হয়েছে৷ অধিনায়ক বদল হয়েছে৷ এটা কি  বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য আদর্শ বলে মনে করেন?

আফতাব : অবশ্যই না৷ আমি তো বললামই যে, আমি এই জিনিসটাই বুঝতে পারছি না৷ কারও পক্ষে কিংবা বিপক্ষে বলছি না৷ একটা জাতীয় দল কোচকে সময় দেয়া উচিত৷ তিনি এসে যদি খারাপও করেন, তাহলেও তাকে দুটো বছর সময় দেয়া দরকার৷ কারণ তাকে অনেক বুঝে-শুনে আনা হয়৷ একটা নাম থেকে একজনকে আনা হয় না৷ ৫/৭/১০টা নাম থেকে একজনকে বেছে নেয়া হয়৷ আর একজন কোচ কিন্তু জাদুকর না যে, এসেই সব কিছু বদলে দেবেন৷ ক্রিকেট সংস্কৃতি বোঝারও ব্যাপার আছে৷ দুদিন আগে কোচ এসে ভালো করা তাই অসম্ভব৷

প্রশ্ন : এই টি-টোয়েন্টি  বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ভালো করতে হলে কোন তিন ক্রিকেটারের কাছ থেকে আপনি সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স প্রত্যাশা করছেন?

আফতাব : প্রথমত চাই, দুই ওপেনার ঠিক হোক৷ এ জায়গাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ ইনিংসের শুরু ভালো না হলে বাংলাদেশ দলের ওই সামর্থ্য নেই যে, মাঝের ওভারগুলোতে চার-ছয় মেরে আমরা খুব ভালো জায়গায় যাব৷ তো আমাদের ওপেনারদের কেন এত নাড়ানাড়ি করছে, জানি না৷ আমি চাই, লিটন ওপেন করুক৷ ও পাঁচ-ছয় ওভারে দলের রান ৫৫/৬০-এ নিয়ে যাক, যেন পরে খেলাটা সহজ হয়৷ আমি চাই, লিটন ভালো খেলুক৷ মিডল অর্ডারে সাকিব গুরুত্বপূর্ণ৷ ফিনিশার অবশ্য খুঁজে পাইনি৷ এটাও খুব জরুরি৷

প্রশ্ন : বোলিংয়ে?

আফতাব : মুস্তাফিজ হয়তো ছন্দে নেই৷ তবে বড় খেলোয়াড়েরা তো বড় আসরের জন্যই৷ আমি নিশ্চিত যে, মুস্তাফিজ ভালোভাবে ফিরবে৷ এবং মুস্তাফিজের যে অভিজ্ঞতা, আইপিএলের মতো বড় আসরে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে৷ ওর ফর্মে ফেরাটা বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ৷

প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন৷ বাংলাদেশ সুপার টুয়েলভসে যে পাঁচটি ম্যাচ খেলবে, তার মধ্যে কয়টি ম্যাচ জিতবে মনে করছেন? আপনার প্রত্যাশা কী?

আফতাব : শোনেন, আমার প্রত্যাশা একটাই৷ বাংলাদেশের একটা ম্যাচ জেতা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এত খারাপ খেলেছে ওরা, ওদের আর খারাপ খেলার কিছু নেই৷ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে৷ একটা ম্যাচ জিতলে, এমনও হতে পারে যে, তিন/চারটা ম্যাচ জিতে আমাদের চমক দিতে পারে৷ আমি আশায় আছি, বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ জিতবে৷ এমনভাবে জিতবে যেন, ওই ধারাবাহিকতায় পরের ম্যাচগুলোও জিততে পারে৷