1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দক্ষিণপন্থীরা নেটওয়ার্ক তৈরি করে হামলা চালায়

১৭ ডিসেম্বর ২০২০

অনলাইন নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে দক্ষিণপন্থীদের। বিভিন্ন হামলার ঘটনায় বার বার সামনে আসছে সেই নেটওয়ার্ক।

https://p.dw.com/p/3mq7p
ছবি: Imago Images/M. Müller

২০১৯ সালের ৩ অগাস্ট টেক্সাসের এলপাসোয় এক অতি দক্ষিণপন্থী চরমপন্থী ২৩ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিল। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে তার আগে একটি ইস্তাহার প্রকাশ করেছিল সে। সেখানে শরণার্থীদের নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছিল ওই চরমপন্থী।

ওই একই দিনে পূর্ব জার্মানির ২৭ বছরের এক ব্যক্তি একটি অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মে সাইন ইন করে। মূলত গেমিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয় ওই অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি। কিন্তু ২৭ বছরের যুবক ওই প্ল্যাটফর্মই ব্যবহার করেছিল হত্যার লাইভ দেখানোর জন্য। হেলমেটে ক্যামেরা লাগিয়ে একটি ইহুদি সিনাগগে ৫২ জনকে হত্যার চেষ্টা করেছিল সে।

এলপাসোর ওই চরমপন্থীর মতোই জার্মান যুবকও একটি ইস্তাহার প্রকাশ করেছিল। সেখানে বর্ণবাদী কথা লেখা ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই যুবক ইহুদি হত্যায় সফল হয়নি। সিনাগগের বাইরের দরজায় তালা লাগানো ছিল। হতাশ হয়ে দুই অইহুদিকে গুলি করে হত্যা করেছিল ওই যুবক।

বর্ণবাদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক

বিশ্বের দুই প্রান্তের দুই চরমপন্থী বর্ণবাদী একে অপরকে চিনত না। তাদের মধ্যে কথা হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণও মেলেনি। কিন্তু তারা একই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছিল। বিশ্ব জুড়ে এমন বহু বর্ণবাদী আছে। যারা এই ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করে। নিজেদের মতবাদ প্রকাশ করে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ওই দুই ব্যক্তিই ওই বছরেরই মার্চ মাসে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করেছিল অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। যে ঘটনায় বন্দুকধারী মসজিদে ঢুকে ৫১ জনকে হত্যা করেছিল। গোটা ঘটনার লাইভ স্ট্রিমিংও করেছিল সে। বস্তুত, এলপাসো এবং জার্মানির ঘটনার মধ্যবর্তী সময়ে আরো দুইটি হামলার ঘটনা ঘটে। একটি অ্যামেরিকায় এবং অন্যটি নরওয়েতে। দুই ঘটনায় আরো ১০ জনের মৃত্যু হয়।

পূর্ব জার্মানির ঘটনা ফের ফিরে এসেছে গত ফেব্রুয়ারিতে। পশ্চিম জার্মানির একটি হুকা বারে বন্দুকধারী আক্রমণ চালিয়েছিল। তাতে ১০ জনের মৃত্যু হয়। সেখানেও অভিবাসীদের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছিল।

নিউজিল্যান্ড এবং জার্মানির যোগাযোগ

তালিয়া ফেল্ডম্যান কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর মতে ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার সঙ্গে জার্মানির সিনাগগে হামলার ঘটনার যোগাযোগ আছে। বস্তুত, ওই সিনাগগে ওই দিন তালিয়া ছিলেন। ফেল্ডম্যান ওই দিনের অন্য আক্রান্তদের সঙ্গে নিয়ে একটি অনলাইন প্রজেক্ট শুরু করেছেন। তাতে যোগ দিয়েছে অ্যান্টি রেসিজম সংস্থা এনএসইউ ওয়াচ। ওই অনলাইন প্রজেক্টে একটি টাইম ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি হামলার ঘটনা যখন ঘটছে, তখন পৃথিবীর অন্য প্রান্তে আরেকটি হামলার প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে।

ফেল্ডম্যানদের অনলাইন প্রজেক্টটির নাম গ্লোবাল হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট টেরর। এখানে যোগ দিয়ে গবেষকরা একুশ শতকে কোথায় কী ভাবে বর্ণবাদী হামলা হচ্ছে, তা নিয়ে কাজ করতে পারবেন। বুঝতে পারবেন, বিশ্ব জুড়ে কী ভাবে বর্ণবাদী ইন্টারনেট কমিউনিটি তৈরি হয়েছে। যারা একই রকম মতবাদে বিশ্বাস করে এবং ইন্টারনেটের কমন প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করে।

বর্ণবাদীরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিকে ব্যবহার করে নিজেদের মতামত সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। নিজেদের প্রচারের জন্য। বর্ণবাদীদের নিজেদের ইস্তাহার আছে, প্রতীক আছে। হাতে বন্দুক নিয়ে প্রতীক নিয়ে তারা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ছবি শেয়ার করে। অনলাইন গেমের মতো তারা হত্যাকাণ্ডের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে এবং তা প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করে। নিজের সাফল্য এবং ব্যর্থতার কাহিনিও প্রচার করে।

এ ভাবেই তৈরি হয় হত্যাকাণ্ডের একটি ফর্মুলা। যে কারণে ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার সঙ্গে জার্মান সিনাগগের ঘটনার এত মিল। একই ফর্মুলা কপি করা হয়েছিল সেখানে। এবং এ ভাবেই সফল হামলা গোটা বিশ্বে কপি হতে থাকে। সকলেই একই ভাবে হামলার ছক কষে। গোটা বিষয়টি এ ভাবেই ডিডাব্লিউকে ব্যাখ্যা করেছেন ফেল্ডম্যান।

সিনাগগে আক্রমণকারী বিচার প্রক্রিয়ায় বিচারককে জানিয়েছিলেন হামলার সময় লাইভ স্ট্রিম করাটা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। কারণ, তার ওই ভিডিও অন্যদের একই কাজে উৎসাহিত করতো। ঠিক যে ভাবে ক্রাইস্টচার্চের ঘটনা তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। শুধু তাই নয়, কেন অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মটি সে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের জন্য বেছে নিয়েছিল ক্রাইস্টচার্চের অপরাধীর মতোই, তাও ব্যাখ্যা করেছে সে। জানিয়েছে, ফেসবুকে ওই লাইভ ভিডিও দেখালে দ্রুত কর্তৃপক্ষ তা অফলাইন করে দিত। গেমিং প্ল্যাটফর্মে অত তাড়াতাড়ি ভিডিও নামিয়ে দেওয়া হয় না।

টেলিগ্রাম, টুইচ, মেগুকা

সিনাগগ হামলার অন্যতম মামলাকারী ফেল্ডম্যান। ডিসেম্বরে আদালতে তাঁর চূড়ান্ত বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, কী ভাবে বিশ্ব জুড়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বর্ণবাদী চরমপন্থীরা নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, সে বিষয়ে জার্মান পুলিশ, আদালত সকলেই অন্ধকারে। টেলিগ্রাম, টুইচ, মেগুকার মতো কম প্রচারিত প্ল্যাটফর্মগুলি সম্পর্কে কারো কোনো ধারণাই নেই। সে কারণেই জার্মান আদালত ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার সঙ্গে সিনাগগ হামলার কোনো যোগ খুঁজে পায় না।

জার্মান টেলিভিশন চ্যানেল জেডডিএফ অনুসন্ধান করে দেখেছে, সিনাগগ হামলার পরে মেগুকায় গোটা ভিডিওটি আপলোড করেছিল হামলাকারী। জার্মান পুলিশের কয়েক সপ্তাহ লেগে গিয়েছিল ওই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কাছ থেকে তার খুঁটিনাটি জানতে। আইপি অ্যাড্রেস খুঁজে বার করতে। শুধু তাই নয়, কারা ওই ভিডিও কোথায় বসে দেখেছে, তা বার করতেও বহু সময় লেগেছিল পুলিশের।

আদালতে পুলিশ একাধিকবার জানিয়েছে, তাদের কাজ অপরাধীকে ধরা। অপরাধের ব্যাকগ্রাউন্ড খুঁজে বার করা তাদের কাজ নয়। তারা গবেষক নয়। ফেল্ডম্যানের প্রশ্ন, তা হলে সেটা খুঁজে বার করা কার কাজ?

সিনাগগ হামলার ঘটনার শুনানি হয়েছে ২৫ দিন। আগামী সোমবার তার রায় বেরনোর কথা। তার আগে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি তুলে ধরতে চাইছেন ফেল্ডম্যান।

নাইট বেন/এসজি