1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিভারত

তৃণমুল নেতাদের বাড়িতে অভিযান ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৩ জানুয়ারি ২০২৪

তৃণমূলের দুই সিনিয়র নেতার বাড়িতে ইডি অভিযান ঘিরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা৷ বাজেয়াপ্ত করা মোবাইল, ল্যাপটপ, নথিতে কি খোলসা হবে পুর নিয়োগ দুর্নীতির রহস্য?

https://p.dw.com/p/4bCdr
কলকাতা পুলিশ৷
কলকাতা পুলিশ৷ ফাইল ফটো৷ ছবি: Satyajit Shaw/DW

শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ব্যবসায়ী অয়ন শীলকে৷ তার কাছ থেকে পাওয়া নথি থেকে সামনে আসে পুর নিয়োগ দুর্নীতি৷ প্রায় ৭০টি পুরসভায় বেআইনি নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ৷ সেই সূত্রে শুক্রবার কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় কেন্দ্রীয় সংস্থা৷

অভিযানে প্রশ্ন মন্ত্রীর

শুক্রবার ভোর সাড়ে ছটা থেকে তল্লাশি চলে রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুর বাড়িতে৷ দক্ষিণ দমদম পুরসভায় নিয়োগের তদন্তে এই অভিযান৷ ১৪ ঘণ্টা তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর ইডি মন্ত্রীর মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করেছে৷

রাতে সুজিত বলেন, ‘‘প্রতিহিংসায় বিজেপি এসব করছে৷ কারো কাছ থেকে এক পয়সা নিয়েছি, প্রমাণ করতে পারলে পদত্যাগ করে দেব৷ আমার পরিবারের কেউ যদি যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পায়, সেটা কি দোষের!’’

কেন্দ্রীয় সংস্থার অভিযান শুরুর পর তৃণমূল নেতৃত্বকে কটাক্ষ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ তিনি বলেন, ‘‘ব্যাগ গুছিয়ে রাখুন৷ শীতের জিনিস সঙ্গে নেবেন৷’’

শনিবার সকালে আগের কর্মসূচি অনুযায়ী গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে রওনা দেন সুজিত৷ শ্লেষের সুরে তিনি বলেন, ‘‘গঙ্গাসাগরে খুব ঠান্ডা৷ শীতের জামাকাপড় নিয়েছি৷’’

শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মন্ত্রী৷ তার ভাষায়, ‘‘কে তোয়ালে মুড়ে টাকা নিয়েছে, সবাই দেখেছে৷ সে আমাদের চোর বলছে৷ আমিও ওর সম্পর্কে সব জানি৷ কীভাবে ওর পরিবারের সাম্রাজ্য তৈরি হল? সব বলতে পারি৷’’

রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘শোনা যায় উনি এগরোল বিক্রি করতেন, তা হলে এতো প্রতিপত্তি হল কী করে৷ দুর্নীতি না থাকলে হয়?’’ বামেরাও প্রশ্ন তুলেছে, ২০১১ সালের পর থেকে সুজিত বসুর সম্পত্তি এতো বাড়ল কী করে!

অনিয়মে যুক্ত বিধায়ক?

তৃণমূলের প্রবীণ নেতা তাপস রায় দীর্ঘদিনের বিধায়ক৷ তার বৌবাজারের বাড়িতে শুক্রবার হানা দেয় ইডি৷ তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চলে৷ বরাহনগর পুরসভার নিয়োগের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করেন তদন্তকারীরা৷ মোবাইল ছাড়াও নথি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি৷

ইডির অভিযানের পর তাপস বলেন, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদ করে এসেছি৷ দলের বাইরে ও ভেতরে৷ তাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না৷’’

তাপস রায়ের উদাহরণকে প্রমাণ হিসেবে ধরলে চলবে না: শুভময় মৈত্র

স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা হিসেবে পরিচিত তাপস৷ ইডি হানায় তিনি বিস্মিত৷ বলেন, ‘‘বাম আমলে কত বছর রাজনীতি করেছি৷ আন্দোলন করেছি৷ সেই সময় পুলিশ বাড়িতে আসেনি৷ আমার পরিবারের জন্য খারাপ লাগছে৷’’

তাপসের বাড়িতে অভিযান তার বিরোধী শিবিরের নেতাদেরও অবাক করেছে৷ তৃণমূলের কট্টর সমালোচক, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘তাপস রায়কে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি৷ তিনি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন বলে আমার মনে হয় না৷’’

তাপস রায়কে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দিচ্ছে বামেদের একাংশ৷ তবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দুর্নীতি এতটাই মাত্রাছাড়া যে সবাই সন্দেহের আওতায় চলে আসছেন৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে যে এমনটা হবে, তা কি ভাবা গিয়েছিল?’’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র বলেন, ‘‘সমাজবিজ্ঞান অঙ্কের নিয়মে চলে না৷ ব্যক্তি বা সমষ্টির মত হতেই পারে যে, তাপস রায় দুর্নীতিগ্রস্ত নন৷ তিনি দীর্ঘ সময় অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে রাজনীতি করেছেন৷ কিন্তু এই উদাহরণকে প্রমাণ হিসেবে ধরলে চলবে না৷’’

উত্তর দমদম পুরসভার তৃণমূলের সাবেক উপ পুরপ্রধান ও বর্তমান কাউন্সিলর সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতেও গতকাল ইডি হানা দেয়৷ তদন্তকারী সংস্থা তারও মোবাইল ও নথি বাজেয়াপ্ত করেছে৷ এই নেতাও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন৷

প্রতিহিংসা বনাম ন্যায়বিচার

তৃণমূল নেতৃত্ব বারবরই বলেন, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে বিজেপি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে মাঠে নামিয়েছে৷ তাপসের বাড়িতে অভিযান সেই প্রশ্নকে আরো জোরালো করল কি?

তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেনের বক্তব্য, ‘‘হঠাৎ লোকসভা নির্বাচনের আগে খুবই তৎপর হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ বিজেপি এই রাজ্য থেকে বেশি আসনে জিততে চায়৷ জনতার ভোট পাবে না বলে তৃণমূলের সংগঠনকে দুর্বল করতে চাইছে৷’’

বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘আদালতের নির্দেশে বিভিন্ন দুর্নীতি মামলার তদন্ত চলছে৷ আদালত তদন্তের জন্য সময়সীমা বেধে দিচ্ছে৷ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে৷ সেই অনুযায়ী তারা তদন্ত করবে৷’’

শুভময় বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ভয়ংকর বেশি৷ তাই বলে এই দলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত নন৷ যে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে দলের বিরুদ্ধে, সরকার এ নিয়ে তদন্ত করতে পারত৷ কিন্তু তারা সেটা করেনি৷ তদন্তভার কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে গিয়েছে৷ তাই তাপস রায়ের স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে সামনে রেখে অন্য সবাই স্বচ্ছ, এটা বলা যাবে না৷ কারা দুর্নীতি করতে পারেন, সেই ধারণা জনমানসে আছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য