1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিভারত

পশ্চিমবঙ্গ: নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে সময় বেধে দিল উচ্চ আদালত

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১১ নভেম্বর ২০২৩

স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির সব মামলার তদন্ত শেষের সময় বেধে দিল পশ্চিমবঙ্গের সুপ্রিম কোর্ট৷ সুবিচারের জন্য অপেক্ষা কি এবার শেষ হবে চাকরিপ্রার্থীদের?

https://p.dw.com/p/4YhNk
Indien - Calcutta / Kolkata High Court
ছবি: DW/P. Tewari

নিয়োগ দুর্নীতির খবর সামনে আসার পর বছর পেরিয়ে গিয়েছে৷ সাবেক শিক্ষামন্ত্রীসহ তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তারা মাসের পর মাস জেলবন্দি৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত যেন শেষই হচ্ছে না! এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ আশা জাগিয়েছে৷

আদালতের সময়সীমা

প্রাথমিক, উচ্চপ্রাথমিক, নবম-দশম শ্রেণি, গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি-সহ নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একগুচ্ছ মামলা চলছে আদালতে৷ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ বহু মাস ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন৷ কিন্তু মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না৷

এই অবস্থার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার কড়া নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চের নির্দেশ, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত সিবিআইকে দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে৷

এই দুর্নীতি সংক্রান্ত ২১টি মামলা কলকাতা হাইকোর্টে ফেরত পাঠিয়েছে শীর্ষ আদালত৷ মামলার নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে হাইকোর্টকে৷ আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই মামলাগুলির নিষ্পত্তি করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত৷

চাকরি বাতিলে স্থগিতাদেশ

কলকাতা হাইকোর্ট বিভিন্ন নিয়োগ মামলায় অনেকের চাকরি বাতিল করেছিল৷ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় নয়শ শিক্ষকের চাকরির পরীক্ষার উত্তরপত্র প্রকাশেরও নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট৷

একইসঙ্গে নবম ও দশম শ্রেণি এবং গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারীর চাকরি বাতিল করেছিল হাইকোর্ট৷

এসব নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ কাজ শুরু না করা পর্যন্ত আপাতত চাকরি বাতিলে স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে৷

আদালতের অসন্তোষ

তদন্ত ও মামলার নিষ্পত্তির নিয়ে অসন্তুষ্ট শীর্ষ আদালত৷ এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে জামিন পেলেন নিয়োগ দুর্নীতির ‘মিডলম্যান' প্রসন্নকুমার রায়৷ তিনি জেলবন্দি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ৷ এই প্রথম নিয়োগ দুর্নীতিতে বড় মাপের কোনো অভিযুক্ত জামিন পেলেন৷

সিবিআইয়ের দাবি, রংয়ের মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করা প্রসন্ন এখন বিপুল সম্পত্তির মালিক৷ চাকরি বিক্রির টাকা তার মাধ্যমেই শীর্ষ মহলে পৌঁছাত বলে অভিযোগ৷

বেআইনিভাবে নিয়োগ পেয়ে যারা স্কুলে পড়াচ্ছেন, তারা কী শেখাচ্ছেন তা ভেবে দেখার: বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য

এই ‘উপর মহলকে' ধরে সিবিআইয়ের নথিতে ১৭ জন অভিযুক্তের কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু তার মধ্যে এখনো কেন মাত্র নয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা নিয়ে বেঞ্চ উষ্মা প্রকাশ করেছে৷ শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি সি টি রবি কুমারের বেঞ্চ বলেছে, বাকিরা কেন এখনো মুক্ত? প্রশ্ন তুলেছে, কেন রাঘববোয়ালদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না?

রাজ্যের ভূমিকা

আদালতের রোষে পড়া কেন্দ্রীয় সংস্থা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট দিয়েছে৷ কিন্তু আদালত এখনো তা গ্রহণ করেনি, যেহেতু রাজ্য সরকারের অনুমতি না মেলায় তাদের অধীনে থাকা অভিযুক্ত আধিকারিকদের বিচারের আওতায় আনা যায়নি৷

রাজ্য নিরপেক্ষ তদন্ত ও দ্রুত বিচারের পক্ষে সওয়াল করলেও, কেন প্রয়োজনীয় অনুমতি দেয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ একইভাবে অনুমতি পাওয়ার জন্য সিবিআই কি যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছে, এ নিয়েও সন্দিহান চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷

তৃণমূল নেতা ও আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বারবার বলেছি, তদন্ত দ্রুত শেষ হোক৷ আদালত সময়সীমা বেধে দিয়ে ভালো করেছে৷ কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে সকলেই সহযোগিতা করছে৷’’

বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘আমরাও বলছি মাথাদের কেন ধরা হচ্ছে না? শুধু চুনোপুঁটিদের ধরলে বিচার সঠিক হবে না৷ সিবিআইয়ের উপর অনেক মামলার চাপ আছে ঠিকই, কিন্তু তদন্ত দ্রুত শেষ করা দরকার৷’’

নিয়োগের কী হবে?

দোষীদের বিচার ও শাস্তি হলেই আন্দোলনকারীরা নিয়োগ পেয়ে যাবেন, বিষয়টা এমন নয়৷ টাকার বিনিময়ে যারা চাকরি পেয়েছেন, তাদের নিয়োগ বাতিলের প্রশ্নটিও এর সঙ্গে জড়িত৷

প্রায় হাজার দিন গান্ধীমূর্তির পাদদেশ একটানা অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা৷ এই অবস্থানে অংশ নেয়া আবু নাসের ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালত সময় বেধে দেয়ায় স্বস্তি পেয়েছি, কিন্তু তাতে আমাদের তেমন লাভ নেই৷ হাইকোর্ট যে রায় দেবে, তার বিরুদ্ধে আবার সুপ্রিম কোর্টে মামলা হবে৷ আমরা যারা বঞ্চিত হয়ে রাস্তায় পড়ে আছি, তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও আদালত সময়সীমা নির্ধারণ করে দিক৷’’

গোড়া থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে থাকা আইনজীবী ও সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও বঞ্চিতদের নিয়োগেই জোর দিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বেআইনিভাবে নিয়োগ পেয়ে যারা স্কুলে পড়াচ্ছেন, তারা কী শেখাচ্ছেন তা ভেবে দেখার৷ এই নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের  নিষ্পত্তি তাড়াতাড়ি হলে শূন্যপদ তৈরি হবে৷ তাতে যোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগ পাবেন৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান