1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডিজিটালাইজেশনের দৈনতা

এম আবুল কালাম আজাদ
এম আবুল কালাম আজাদ
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সঠিক পরকিল্পনা, সমন্বয় স্বচ্ছতা আর জবাদিহিতা না থাকলে ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো স্মার্ট বাংলাদেশ নামের নতুন রূপকল্পও ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা যাবে না, হয়ত হবে অর্থের অপচয় ও দুর্নীতি৷

https://p.dw.com/p/4Nwqh
ঢাকায় রিকশায় বসে মোবাইলে ভিডিও গেমস খেলছে এক শিশু৷
সঠিক পরকিল্পনা না থাকলে ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো স্মার্ট বাংলাদেশ নামের নতুন রূপকল্পও ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা যাবে না৷ছবি: Syed Mahamudur Rahman/NurPhoto/picture alliance

ডিজিটালাইজেশন সবকিছুকে হাতের নাগালে আনে, দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই সহজে, স্বয়ংক্রিয় উপায়ে করা যায়৷ সেবা পেতে অফিসে যাওয়া এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা লাগে না৷ মানে হলো, আপনি যেখানে আছেন, সেখানে বসেই আপনার চাহিদা মেটাতে বা কাজটি সুন্দরভাবে সম্পাদন করতে পারেন৷ ফলে, আপনার সময় বাঁচাবে, আবার অর্থের অপচয়ও হবে না৷

কিন্তু আমরা কি সর্বত্র সেটা করতে পারছি? উত্তর হচ্ছে- না৷ দেড় দশকে মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক প্রসারের ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে৷ প্রযুক্তির প্রসারের ফলে অনেক নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে৷ মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের কারণে লেনদেন সহজ হয়েছে৷ আপনি ঘরে বসে খাবার অর্ডার করেও খেতে পারছেন৷ আপনাকে ব্যাংকে বা ক্যাফেতে যেতে হচ্ছে না৷ এটা হচ্ছে ডিজিটালাইজেশনের আশীর্বাদ

তবে এর বিপরীত চিত্রও আছে৷ যেমন, পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র- এই দুটি খাতে হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেখানে ডিজিটালাইজেশন করা হলেও সেবা ডিজিটাল হয়নি৷ ধরুন, আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে কোনো সমস্যার সমাধান করতে চান, তাহলে আপনি কী করবেন? ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে তা করবেন৷ কিন্তু সেটা সম্ভব হবে না৷ তাই আপনাকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে, বিড়ম্বনা সহ্য করে সেবাটি নিতে হবে৷

আরেকটি উদাহরণ দেয়া যাক৷ ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে সড়কে টোল আদায়ের কাজটি স্বয়ংক্রিয় করা, যাতে যানবাহনকে থামতে না হয়৷ ২০২২ সালের শেষে এসে দেখা গেল, একটি সড়কেও সেটা করা সম্ভব হয়নি৷ আবার ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে দুর্নীতি কমানো, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি কম৷ অন্যদিকে ডিজিটালের ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের বৈষম্য বেশ প্রকট৷ করোনাকালে শহরের শিশুরা ঠিকই অনলাইনে ক্লাস করেছে, কিন্তু গ্রামের শিশুরা বঞ্চিত হয়েছে৷

২০২১ সালের মধ্যে সব সরকারি সেবা যেকোনো স্থান থেকে সহজে, স্বচ্ছভাবে, কম খরচে ও কম সময়ে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পাওয়া যাবে৷ কিন্তু সেবা কম্পিউটারভিত্তিক হয়েছে, ডিজিটাল হয়নি৷ যেমন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে মানুষকে কয়েকবার বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়৷ আর এনআইডি থাকা সত্ত্বেও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে নতুন করে আঙুলের ছাপ দিতে হয়৷ 

এমন উদাহরণের শেষ নেই৷

অবশ্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদসহ সরকারের অনেকেই দাবি করেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনে সরকার শতভাগ সফল৷ সরকারি সেবাগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে৷ তারা হয়ত অনলাইনে একটি ফর্ম পূরণকেই ডিজিটালাইশন মনে করেন!

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের সব অফিস ও দফতর ‘ডিজিটাল’ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে৷ ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে এক ‘অশুভ’ প্রতিযোগিতায় নামে সবাই৷ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে গ্রহণ করে প্রকল্প ও কর্মসূচি৷ টাকা খরচের প্রতিযোগিতায় নামে মন্ত্রণালয় ও দফতরসমূহ৷ প্রযুক্তি ব্যবহারের নামে অর্থ কিভাবে অপচয় করতে হয় তার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেট ইমিগ্রেশন৷ গত বছর উদ্বোধনের পরই সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়য়৷ কারণ, ম্যানুয়েল পদ্ধতির চেয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাসপোর্ট ও ভিসা পরীক্ষা আরো সময়সাপেক্ষ৷ ফলে উদ্যোগটি অর্থহীন হয়ে পড়ে৷

আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, যশোরে নির্মিত শত কোটি টাকার শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্ক৷ এখন তা পরিণত হয়েছে রিসোর্ট ও কমিউনিটি সেন্টারে৷

এম আবুল কালাম আজাদ, ডয়চে ভেলে
এম আবুল কালাম আজাদ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

একটি দেশ ডিজিটাল হলে সেই দেশ ও তার নাগরিকের সকল ধরনের ডাটা ও তথ্য পদ্ধতিগতভাবে তৈরি করার কথা৷ অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, বাজেট বরাদ্দ, আয়-ব্যয়ের হিসাব সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করা হয়৷ এটা ডিজিটালাইজেশনের প্রাথমিক ধাপ৷ অথচ আমরা এটা করতে ব্যর্থ হয়েছি৷

এর অন্যতম কারণ হলো এলোমেলো ডিজিটালাইজেশন৷ অনেক প্রকল্প বা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে দেশবাসীকে দেখানো ও রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য, সেগুলো মানুষের কাজে আসুক বা না আসুক৷ মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর বেশি মনোযোগ ছিল হার্ডওয়্যার ক্রয়ের দিকে, দৃশ্যমান কিছু করে দেখানোতে৷ আবার এক মন্ত্রণালয় কী করছে তার সাথে অন্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় ছিল না৷ এছাড়াও মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদেরও এ বিষয়ে ছিল না পরিষ্কার ধারণা৷

এমন অপরিকল্পিত, বিচ্ছিন্ন ও নিয়ন্ত্রণহীন ডিজিটালাইজেশন অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগও সৃষ্টি করে৷ যে যেভাবে পেরেছে উদ্যোগ নিয়েছে, অর্থ খরচ করেছে৷ এর অনেক কিছু ছিল শুভঙ্করের ফাঁকি৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছিল না কোনো জবাদিহিতা৷

এমন এক অবস্থায় স্মার্ট বাংলাদেশে নতুন একটি রূপকল্পের যাত্রা শুরু হয়েছে৷ আবারও নেয়া হবে অনেক প্রকল্প ও কর্মসূচি, বিদেশ থেকে কেনা হবে প্রচুর হার্ডওয়্যার৷ কিন্তু সঠিক পরকিল্পনা, সমন্বয় স্বচ্ছতা আর জবাদিহিতা না থাকলে নতুন এই রূপকল্প ঠিকমতো বাস্তবায়িত হবে না, হবে অনেক অর্থের অপচয় ও দুর্নীতি৷