1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডা. মুরাদ হাসানের দেশত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১০ ডিসেম্বর ২০২১

এক চিত্রনায়িকাকে ফোনে ধর্ষণের হুমকি এবং তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে বর্ণবাদী মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারানো ডা. মুরাদ নির্বিঘ্নে দেশ ছেড়েছেন৷

https://p.dw.com/p/446Kp
Bangladeshi State Minister Dr Murad Hasan.
ছবি: bdnews24.com

সরকার বলছে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকায় দেশের বাইরে যেতে কেনো বাধা নেই। কিন্তু আইনজীবীরা বলছেন, সরকার চাইলে তাকে দেশের বাইরে যেতে প্রশাসনিকভাবে বাধা দিতে পারতো৷

ডা. মুরাদ হাসানের অডিও প্রকাশ হওয়ার পর তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে মুরাদ হাসান গত ৭ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন৷ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের নির্দেশ দেয়ার পর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি৷ তবে তিনি মাঝেমধ্যে ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন৷ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার পর তিনি এমিরেটস-এর একটি ফ্লাইটে ক্যানাডার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন৷

মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলেও এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি৷ ঢাকার শাহবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলার আবেদন করলেও তা এখনো রোকর্ড করা হয়নি৷

অন্যদিকে বিএনপি মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সারা দেশে মামলা করার ঘোষণা দিলেও এখনো তারা কোনো মামলা করেনি৷ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘আমরা মামলার জন্য আমাদের আইনজীবীদের সাথে কথা বলছি৷ তারা মতামত দিলেই মামলা করবো।’’

‘সরকার তাকে বিদেশ যেতে দিয়ে অপরাধীর পৃষ্ঠপোষকতা করেছে’

তবে ডা. মুরাদ দেশ ছাড়ায় শুধু সরকারকেই দুষছেন তিনি, ‘‘সরকার একজন অপরাধীকে দেশের বাইরে যেতে সহায়তা করেছে৷ কারণ, তার বিরুদ্ধে অনৈতিকতা, অশ্লীলতা ও বিকৃত রুচির মানসিকতার অভিযোগ আছে৷ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগের আবেদন আছে৷ তাই সরকার তাকে বিদেশ যেতে দিয়ে অপরাধীর পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। আর এখানে স্বজনপ্রীতিও স্পষ্ট৷’’

তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘আমার জানা মতে তার বিরুদ্ধে তো কোনো মামলা নেই৷ কোনো ওয়ারেন্ট বা বিধিনিষেধ নেই৷ সেক্ষেত্রে তো তিনি দেশের বাইরে যেতে পারেন৷ তিনি তো আগেও দেশের বাইরে ছিলেন৷”

তার বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ আছে, সেই অভিযোগের কারণে তাকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছে, সরকার চাইলে কি তার বিদেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিতে পারতো? এর জবাবে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘‘তার আপত্তিকর কথা-বার্তার কারণে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু তার বিরুদ্ধে এমন তো অভিযোগ নাই যে সে রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি করে বা রাষ্ট্রের কোনো সম্পদ বা অর্থ আত্মসাৎ করে পালাচ্ছে৷ তার চারিত্রিক অবক্ষয় ছিল, তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷’’

তিনি জানান, এরইমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে৷ আওয়ামী লীগের পরবর্তী কার্য নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এটা নিয়ে আলোচনা হবে৷

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘‘এখানে দুইটি দিক আছে৷ যেহেতু তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই এবং বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই তাকে পুলিশ দেশের বাইরে যেতে দিয়েছে৷ যদি নিষেধাজ্ঞা থাকতো, তাহলে তো যেতে দিতো না৷ বিমানবন্দরে তথ্য থাকতো, আটকে দেয়া হতো৷ নিষেধাজ্ঞা যে নেই তিনি সেটা জেনেই বিমান বন্দরে গিয়েছেন৷ এটা তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন৷’’

তার কথা, ‘‘সংবিধানে নাগরিকদের মুক্ত চলাফেরার অধিকার দেয়া আছে৷ কিন্তু যেহেতু তিনি ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন, বর্ণবাদী কথা বলেছেন, তাই সরকার চাইলে তার বিদেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা করতে পারতো৷ আর দুর্নীতির মামলা হলে জামিনে থাকলেও বিদেশে যেতে আদালতের অনুমতি লাগতো৷’’

তিনি বলেন, ‘‘সরকার এক্ষেত্রে বাধা দেয়নি৷ কিন্তু যদি বিরোধী রাজনীতির কেউ হতো তাহলে হয়ত সরকার তার গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে বিমানবন্দরে তথ্য দিয়ে রাখতো৷ বিদেশে যেতে পারতেন না৷’’

‘তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা, ওয়ারেন্ট নেই, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারেন’

নারী নেত্রী এবং মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘‘মামলা হোক বা না হোক সরকারের দায়িত্ব হলো এই ধরনের ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা, গ্রেপ্তার করা৷ সেটা না করে তাকে বিদেশে যেতে দেয়া হয়েছে৷ আমি মনে করি, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো এখন তিনি যেখানেই থাকুন না কেন সেখান থেকে নিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি করা৷’’

তার কথা, ‘‘এই ধরনের জঘন্য কাজ যারা করেন, নারীকে অবমাননা করেন, ধর্ষণের হুমকি দেন, তাদের রাষ্ট্রেরই উচিত আইনের আওতায় আনা৷’’

আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, মুরাদ হাসানকে যে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে তা কার্য নির্বাহী কমিটির অনুমোদনের পর কার্যকর হবে৷ মন্ত্রিত্ব গেলেও তিনি এখনো সংসদ সদস্য আছেন৷ সেটা থাকবে কিনা তা আরো পরের বিষয়৷ কারণ, দল চুড়ান্তভাবে বহিষ্কারের পর সে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন৷ সংবিধানে বলা হয়েছে, কোনো সংসদ সদস্য দল থেকে পদত্যাগ করলে বা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে৷ বহিষ্কার করা হলে কী হবে তা সংবিধানে বলা নেই৷ ফলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি থাকবে না তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না৷ আর আদালতে যদি নৈতিক স্খলন প্রমাণিত হয় তাহলে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য