1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বাণিজ্যবাংলাদেশ

‘ডলারের দাম বাড়ার কারণে পণ্যের দাম বাড়বে, মূল্যস্ফীতিও হবে’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ মে ২০২৪

ডলারের মূল্য এবং ব্যাংকে সুদের হার বৃদ্ধির কেমন প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে? ডয়চে ভেলের সঙ্গে এ নিয়েই কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর৷

https://p.dw.com/p/4g0V0
ড. রাশেদ আল মাহমুদ
ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর মনে করেন সামনের দিনে ঋণ করেই বাংলাদেশকে ঋণের ব্যয় মেটাতে হতে পারেছবি: DW

ডয়চে ভেলে: ডলারের বিনিময় হার এখন  ‘ক্রলিং পেগ' পদ্ধতিতে হচ্ছে৷ ডলারের দাম বেড়ে হয়েছে ১১৭ টাকা৷ এটা অর্থনীতির কতটা উপকারে আসবে?

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: আমাদের আসলে সংকটের গোড়ায় যেতে হবে৷ ডলার নিয়ে কেন এই সংকট, তা বুঝতে হবে৷ ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৬০.৬৮ বিলিয়ন ডলার৷ তখন আমাদের উদ্বৃত্ত ছিল ৯.২৭ বিলিয়ন ডলার৷ কিন্তু পরের অর্থ বছরে আমাদের আমদানি ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়৷ ২০২১-২২ অর্থ বছরে আমদানি বাবদ ব্যয় দেখানো হলো ৮২.৫০ বিলিয়ন ডলার৷ অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি করা হয়েছে৷ বাংলাদেশে এমন কী ঘটেছে যে এক বছরে আমদানির উল্লম্ফন ঘটলো? পরের অর্থবছরে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে যে পরিমাণ রপ্তানির কথা বলা হয়েছে সেই পরিমাণ অর্থ আসেনি৷ ১২ বিলিয়ন ডলারের গরমিল পাওয়া গেছে৷ একইভাবে চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাস- জুলাই থেকে ডিসেম্বরে ২৭.৫৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি  হয়েছে, কিন্তু এই ছয় মাসে রপ্তানি খাতে এসেছে ১৮.৯৬ বিলিয়ন ডলার৷ ৮.৫৮ বিলিয়ন ডলার আসেনি৷ তাহলে আমদানির নামে ডলার চলে যাচ্ছে৷ আর রপ্তানির নামেও ডলার আসছে না, বাইরে থেকে যাচ্ছে৷ এর তো ফরেনসিক তদন্ত হওয়া দরকার কারা এর সঙ্গে যুক্ত, কারা ডলার বাইরে পাচার করছে অথবা রেখে দিচ্ছে৷

তাহলে ডলারের দাম বাড়ালে কী সমস্যার সমাধান হবে?

ডলারের সরবরাহ তো বাড়ছে না, আগে ডলারের সরবরাহ বাড়তে হবে৷ কারা আমদানি-রপ্তানির নামে ডলার বাইরে পাঠাচ্ছে, সেটা তো চিহ্নিত করতে হবে৷ তাদের তৎপরতা বন্ধ করে আগে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হবে৷

যত প্রবাসী কর্মী আছেন সেই পরিমাণ রেমিট্যান্সও তো আসছে না৷ এর কারণ কী?

বাংলাদেশে বড় রকমের একটি হুন্ডির বাজার সক্রিয় আছে৷ পূর্বে ও পশ্চিমে আমাদের প্রবাসী যারা আছেন, তারা তো বাড়িতে ডলার পাঠাবেন না৷ তারা পাঠাবেন টাকা৷ ওই হুন্ডি চক্র ব্যাংকের চেয়ে বেশি দামে তাদের কাছ থেকে ডলার কিনে নেয়৷ ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার আসে না৷ এই চক্র তো অজানা নয়, তাদেরকে তো ধরা হচ্ছে না৷ বাণিজ্যের নামে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার চলে যাচ্ছে বাইরে৷ আবার হুন্ডির কারণেও আমাদের ডলার আসছে না৷ ফলে ডলারে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে৷ এটা আগে স্বাভাবিক করতে হবে৷ তা না করে বিনিময় হার নিয়ে কাজ করে কোনো লাভ নাই৷

‘বাংলাদেশের মৌলিক সমস্যা হলো আয় বাড়ছে না দায় বাড়ছে’

তাহলে ডলারের দাম বাড়িয়ে কী হবে?

যদি বাণিজ্যের নামে এই ডলার বাইরে পাঠানো ও সেখানে রেখে দেয়া, হুন্ডি এসবের যদি ফরেনসিক করা হতো, জায়গাগুলো যদি বন্ধ করা যেতো, তাহলে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখা যেতো৷ ডলারের দাম বাড়িয়ে  সমাধান হবে বলে মনে হয় না৷

এর ফলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়তে পারে?

প্রথমত, ডলারের দাম বাড়ার কারণে বাইরে থেকে যে পণ্য আমদানি করা হয় তার দাম বাড়বে৷ ফলে মূল্যস্ফীতি হবে৷ আবার এখানে সিন্ডিকেট আছে, তারা এটা দেখে দেশীয় পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেবে৷

সুদের হার বাড়িয়ে কী লাভ হবে?

কোনো লাভ আমি দেখছি না৷ এরই মধ্যে সুদের হার বেড়ে ৯ থেকে ১৪ শতাংশ হয়েছে৷ আসলে এই নয়-ছয় তুলে দিয়ে বা ক্রলিং পেগ করে কোনো লাভ হবে না৷ মূল্যস্ফীতি ঠেকানো যাবে না৷ ব্যাংকিং খাতে সুশাসন লাগবে৷ ডলারের কারসাজি বন্ধ করতে হবে৷ তাহলে অর্থনীতি সঠিক পথে আসবে৷

নতুন কোনো সংকট তৈরি হতে পারে?

মূল্যস্ফীতি হবে, মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাবে, ফলে দারিদ্র্য বাড়বে৷

এই অবস্থায় আমাদের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির কী হবে? ঋণ তো ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে৷ সুদ আসল পরিশোধের চাপ বাড়ছে৷

গত প্রায় ১৫ বছরে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৩২২ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে৷ আবার এখন আমরা যে ঋণ করছি তার ৪৬ শতাংশ ঋণ আবার পরিশোধে ব্যয় করছি৷ এখন বাংলাদেশের মৌলিক সমস্যা হলো আয় বাড়ছে না দায় বাড়ছে৷ সাধারণ মানুষও এই সমস্যায় আছে৷ গত জুলাই থেকে মার্চ মাসে বাংলাদেশ ঋণ পেয়েছে ৫.৬৩ বিলিয়ন ডলার৷ আর এই সময়ে ঋণের সুদ ও আসল শোধ করতে হয়েছে ২.৫৮ বিলিয়ন ডলার, প্রায় অর্ধেক৷ এই চাপ আরো বাড়তে থাকবে৷ তখন দেখা যাবে যা ঋণ পাচ্ছি তা সবই আবার ঋণ পরিশোধে ব্যয় করতে হবে৷ এর সমাধান হলো আয় বাড়াতে হবে৷ বাংলাদেশের মানুষের নাকি আয় বেড়েছে৷ তাহলে আয়কর বাড়ছে না কেন? এনবিআর আয়কর বেশি আদায় করতে পারছে না কেন? সমস্যাটা কোথায়?

রিজার্ভ তো কমছেই৷ এখন ১৩ বিলিয়ন ডলার৷ এর সমাধান কী?

আমাদের এখন বিদেশি ঋণ নেয়া কমাতে হবে৷ অপ্রয়োজনীয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে ঋণ নেয়া যাবে না৷ অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে হবে, রপ্তানি বাড়াতে হবে৷ ডলারের প্রবাহ বাড়াতে হবে৷ আমদানি রপ্তানির নামে ডলার পাচার, হুন্ডি বন্ধ করতে পারলে ডলারের প্রবাহ বাড়বে৷ রেমিট্যান্স বেশি আসবে৷ আর করের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে৷ এরসঙ্গে বাড়াতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি৷ তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে৷

বাংলাদেশ চীন থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ইউয়ান ঋণ নেয়ার প্রক্রিয়া করছে৷ এতে ডলারের ওপর চাপ কমবে কী না? চীন থেকে বাংলাদেশ এখন বেশি আমদানি করে৷ চীনের সঙ্গে বিনিময় হবে ইউয়ানে৷

এটা তো এখন একদম প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, কোনো কিছু এখনো হয়নি৷ এটা নিয়ে এখনই মন্তব্য করার সময় আসেনি৷ তারা বলছে নয়-ছয় সুদের হার তুলে দিলে, ডলার বাজারের কাছে ছেড়ে দিলে ডলার স্থিতিশীল হবে৷ কিন্তু আমি বলছি প্রকৃত ইস্যু হলে ২০ বিলিয়ন ডলারের কোনো খবর নাই৷ ১২ বিলিয়ন ডলারের কোনো খবর নাই৷ ছয় মাসে আরো ৯ বিলিয়ন ডলারের কোনো খবর নাই৷ এগুলো উদ্ধার করলে ডলার সংকট থাকবে না৷