জার্মান নির্বাচন: অভিবাসন বিষয়ে যেই প্রতিশ্রুতি এসপিডির
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫জার্মান রাজনীতিতে মধ্য বামপন্থি দল হিসেবে পরিচিত এসপিডি বা সোশ্যাল ডেক্র্যাটস৷ মূলত কর্মজীবী শ্রেণী এবং উদার জার্মানরাই এ দলটির অনুসারী৷ ২০১৯ সালের নির্বাচনে পর গ্রিন পার্টি এবং ফ্রি লিবারেল বা এফডিপিকে সাথে নিয়ে জোট সরকার গঠন করে এসপিডি৷ রষ্ট্রপরিচালনার তিন বছরের মাথায় জোট ভেঙে যাওয়ার প্রেক্ষিতে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে হত যাচ্ছে মধ্যবর্তী নির্বাচন৷
জার্মানিতে নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে এসপিডি সরকারের নীতি ব্যপক সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ বিরোধীদের সমালোচনার মুখে আসছে নির্বাচনকে সামনে রেখে অভিবাসন বিষয়ে নিজেদের নেওয়া কিছু নীতি সংশোধনের কথা বলছে এসপিডি৷ দলটির রাজনৈতিক ইশতেহার বিশ্লেষণ করে এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে৷
অভিবাসন নিয়ে ভাবনা
নির্বাচনকে সামনে রেখে এসপিডির মোটো হলো, ‘আপনার জন্য আরো বেশি কিছু৷ জার্মানির কল্যাণ৷' ৬৮ পাতার নির্বাচনী ইশতেহারে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেদের অবস্থান কী হতে পারে তার বিস্তারিত তুলে ধরেছে দলটি৷
অভিবাসন নিয়ে বলতে গিয়ে শুরুতেই দলটি গত কয়েক বছরে জার্মানি কী অর্জন করেছে তার ফিরিস্তি তুলে ধরেছে৷ সেইসাথে দেশের নিরাপত্তার গুরুত্বের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে দলটি৷
ইশতেহারে বলা হয়, ‘‘আমরা সফলতার সাথেই অনিয়মতে পথে অভিবাসন কমিয়ে এনেছি – এবং একইসাথে সেই ব্যক্তিদের স্বাগত জানানো অব্যহত রেখেছি যারা জার্মানিতে কাজ করতে চায়৷৷ নতুন নাগরিত্ব আইনের মাধ্যমে আমরা সব মানুষের আমাদের সাথে সকল সুবিধা নিয়ে নাগরিক হওয়া সম্ভব করেছি৷''
ইশতেহারে অভিবাসন এবং জার্মান সমাজে একীভূতকরণের বিষয়ে উদার মনে হলেও দলটি সেইসব ব্যক্তিদের যারা ‘সমাজের জন্য ক্ষতিকর‘ তাদের প্রতি কঠোর বার্তাও দিতে চেয়েছে৷
নিরাপত্তায় গুরুত্ব
নিরাপত্তার বিষয়ে দলটি ইশতেহারে জানায়, তাদের লক্ষ্য হলো দেশের ভেতর ও বাহিরের নিরাপত্তাজনিত হুমকি মোকাবিলা করা৷ সেইসাথে উন্মুক্ত সমাজব্যবস্থার বিরোধীদেরও বিপক্ষে তারা৷ বলা হয়,গণতন্ত্রের জন্য হুমকিকে সমানভাবে প্রতিহত করা হবে৷
‘‘আমরা বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য, চরম ডানপন্থি, অ্যান্টি-সেমিটিজম, ইসলামিজম এবং মানবতাবিরোধী সকল গোষ্ঠীকে প্রতিহত করতে চাই৷ এটি করতে গিয়ে একটি শক্তিশাল নাগরিক সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় সকল গণতন্ত্রী এবং সংস্থার সাথে যোগ দিতে চাই৷''
এসপিডি জানায়, চরমপন্থা রুখতে দলটি প্রথমত সুরক্ষামূলক পদক্ষেপের দিকে নজর দেবে যেন চরমপন্থা এবং গণতন্ত্রবিরোধী প্রবণতাকে ঠেকানো যায় বিশেষ করে ইসলামিজম এবং অন্যান্য ডান ঘরাণার চরমপন্থা৷
নিয়মিত অভিবাবসন ও কর্মী
এসপিডির ইশতেহার বলছে, ‘‘আমরা অভিবাসীদের দেশ- এই বাস্তবতায় জার্মানি দীর্ঘ সময় ধরে উপকৃত হয়ে আসছে৷ আমরা মনুষকে সম্মান করি, তারা যেখান থেকেই আসুন না কেন৷'' ইশতেহারে আরো বলা হয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো, বিদেশি ডিগ্রির স্বীকৃতি প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়ে দলটির নজর রয়েছে৷ উল্লেখ্য, দক্ষকর্মীদের জার্মানিতে আসতে উৎসাহিত করতে গত বছর দলটির উদ্যোগে বিদায়ী জোট সরকার স্কিলড মাইগ্রেশন আইন চালু করেছিল৷
দলটি বলছে, জার্মানি সমাজে একীভত হওয়ার পথ সুগম করে এবং এই খাতে অর্থায়ন করে নিয়মিত অভিবাসনের পথ প্রশস্ত করতে চায় তারা৷ যদিও কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের এই বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে৷
সেইসাথে শরণার্থীদেরকে একীভূতকরণের মাধ্যমে জার্মান শ্রমবাজারে নিযুক্ত করার পরিকল্পনা আছে এসপিডির৷
অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকানো
এসপিডি বলছে, মানবপাচার রোধের অংশ হিসেবে তারা অনিয়মিত অভিবাসনে কৌশল গ্রহণ করতে চায়৷ এরজন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে মিলে কাজ করার উপর গুরুত্ব দিতে চায় দলটি৷
মানবপাচারকারীদের উপর কঠোর হওয়া এবং তাদেরকে প্রত্যাবাসন করার মধ্য দিয়ে এবিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চায় দলটিা৷
সেইসাথে যেই দেশগুলোতে থেকে অনিয়মিত অভিবাসনপ্রত্যাশীরা আসছেন সেই দেশগুলোর সাথে উন্নয়ন সহযোগিতা বাড়ানো হলে তা অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে সহযোগিতা করবে বলে মনে করছে এসপিডি৷
‘‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় নিমজ্জিত দেশগুলোকে জার্মানি সহায়তা করুক আমরা এমনটা চাই, যেন সেখানে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটানো যায় এবং সেই সাথে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা ও চাকুরির সুযোগ তৈরি করা যায়৷''
বিদেশীদের জন্য ভালো শিক্ষাব্যবস্থা
ইশতেহারে জার্মানিতে অভিবাসী সমাজের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরির কথা বলা হয়৷ এই শিক্ষাব্যবস্থা এমনভাবে প্রণয়ন করা থাকবে যেন ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসা শিশুরা নার্সারি এবং স্কুলে সফলভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে৷
তাছাড়া বৈচিত্র আনতে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চয় দলটি৷ এরমধ্যে রয়েছে কারিকুলাম, টেক্সটবুক এবং শিক্ষকদের মাঝে বৈচিত্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো৷
পারিবারিক পুনর্মিলন
পারিবারিক পুনর্মিলনের বিষয়ে অন্য অনেক রাজনৈতিক দল ভিন্ন কথা এমনকি স্বীকৃত আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য এমন সুযোগ বন্ধ করার কথা বললেও, এসপিডি বলছে, তারা এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনতে চায় না৷
‘‘আশ্রয়ের প্রয়োজন ব্যক্তিদের পারিবারিক পুনর্মিলনের সুযোগের বিষয়টি আমরা চালিয়ে যেতে চাই৷ কারণ এটি হচ্ছে সমাজে একীভূত হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক৷’’
তবে এ বিষয়ক বিদ্যমান কর্মসূচি কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে তার বিস্তারিত জানানো হয়নি৷
প্রত্যাবাসন এবং তৃতীয় দেশে আশ্রয়ের আবেদন
ইশতেহারে প্রত্যাবাসন বিষয়ে দলটি বলছে, তারা আশ্রয়আবেদন বাতিল হওয়া প্রার্থীদের দেশে ফেরত পাঠাতে চায়৷ তবে এই ফেরত পাঠানো হবে নিয়মিতভাবে এবং মানবিক প্রক্রিয়ায়৷
‘‘তারা মানুষ, আর তাই আমরা চাই এক্ষেত্রে স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন হোক৷ এটি না হলে আমরা দ্রুত ও নিয়মিত প্রত্যাবাসনের পথ বেছে নেব, বিশেষ করে অপরাধীদের বেলায়৷''
এদিকে তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয়আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে দলটি৷
যতটা সম্ভব সীমান্ত উন্মুক্ত
এসপিডির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে ২০২৪ সালে সীমান্তে অস্থায়ী নজরদারি আরোপ করা হলেও ইশতেহারে দলটি বলছে, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি ইইউ অঞ্চলের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচারের বিরোধী৷ তবে অস্থায়ী নজরদারির বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম হিসেবে দেখতে হবে বলে মত তাদের৷
এদিকে সীমান্তে গণহারে ফেরত পাঠাতে অন্য রাজনৈতিক দলের যেমন সিডিইউ/সিএসইউ এবং এএফডি প্রস্তাবের বিষয়টিকে ইউরোপিয়ান একতার বিরোধী বলেও মনে করেছে এসপিডি৷
এর পরিবর্তে পরিস্থিতি নিয়স্ত্রণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমান্তে নজর দিতে চায় তারা৷
ইশতেহারে বলা হয়, এটি করতে গিয়ে, সকল মুহূর্তে আইনের শাসন এবং মানবিক দিক নিশ্চিত করতে হবে৷
জের্টান জেন্ডারসন/আরআর