1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান নির্বাচন: অভিবাসন বিষয়ে সবুজ দলের পরিকল্পনা

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জার্মানিতে ২৩ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করছে বিভিন্ন দল৷ অভিবাসন বিষয়ে কী থাকছে তাদের ইশতেহারে?

https://p.dw.com/p/4qN5c
রবার্ট হাবেক
গ্রিন পার্টির নেতা রবার্ট হাবেক ছবি: Markus Schreiber/AP Photo/picture alliance

এই বিষয়ে আগের প্রতিবেদনগুলোতে আমরা মধ্য ডানপন্থি দল সিডিইউ এবং কট্টর ডানপন্থি এএফডির প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি৷ এই পর্বে থাকছে অভিবাসন বিষয়ে জার্মানির পরিবেশবাদী রাজনৈতিক দল সবুজ দলের ইশতেহারের বিশ্লেষণ৷

পরিবেশবাদী এবং মানবাধিকার বিষয়ে সোচ্চার- এভাবেই পরিচিত জার্মানির গ্রিন পার্টি বা সবুজ দল৷ দলটির ভোটব্যাংক মূলত শহরের শিক্ষিত জনগণ, বিশেষ করে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তারা৷ 

অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে বিভিন্ন সময়ে কিংসমেকার হিসেবে আভির্ভূত হয়েছে সবুজ দল৷ অর্থাৎ জোট তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রেখে সরকার গঠনে দলটি অতীতে বেশ কয়েকবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷ গত নির্বাচনেও দলটির একই ভূমিকা পালন করেছিল৷ এসপিডির নেতৃত্বে জোট গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসে গ্রিন পার্টি৷ যদিও মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগেই ভেঙে পড়ে জোট৷ যার ফলশ্রুতিতে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷ 

ভোটের আগে করা জনমত জরিপে দেখা গেছে ১৪ ভাগ সমর্থন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দলটি৷ তবে জরিপে প্রথম স্থানে থাকা সিডিইউ/সিএসইউর সাথে গ্রিন পার্টির রাজনৈতিক মতাদর্শে খুব একটা মিল নেই৷ সে কারণে এবারও গ্রিন পার্টিকে কিংসমেকারের ভূমিকায় দেখা যাবে কি না সে বিষয়টি পরিষ্কার নয়৷

‘সবুজ নীতির’ প্রতিফলন

নির্বাচন সামনে রেখে সবুজ দল তাদের ইশতেহারের টাইটেল দিয়েছে সুজামেন ভাখসেন৷ জার্মান ভাষার এই শব্দটির অর্থ হলো ‘একসাথে এগিয়ে যাওয়া’৷ 

তিনটি অধ্যায়ের সমন্বয়ে তৈরি করা ইশতেহারের প্রথম অধ্যায়ে পরিবেশ এবং অর্থনীতি বিষয়ে নিজেদের পরিকল্পনা ও ইচ্ছার কথা জানায় দলটি৷ দ্বিতীয় অধ্যায়ে সামাজিক ইস্যু এবং তৃতীয় অধ্যায়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতির বিষয়ে আলোচনা করা হয়৷

শরণার্থী এবং শ্রম অভিবাসনের পার্থক্য

ইশতেহারে সবুজ দল স্বীকার করে নিয়েছে যে. মানুষের জার্মানিতে আসার ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে৷ সে কারণে বিভিন্ন মানুষকে আইনের মধ্যে থেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে দেখা উচিত৷

সবুজ দল মনে করে, আশ্রয় আবেদনকারী এবং শ্রম অভিবাসন, এই দুইয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, কারণ এর পেছনের কারণ ভিন্ন ভিন্ন৷ শ্রম অভিবাসন হয়ে থাকে শ্রমিকের ঘাটতির কারণে আর আশ্রয় আবেদনের বিষয়টির সাথে জড়িত থাকে মানবিক কারণ৷ ‘‘আমরা মানুষের আশ্রয় চাওয়ার মৌলিক অধিকারের পক্ষে এবং আন্তর্জাতিক আইনে যেমন জেনেভা রিফিউজি কনভেনশন, সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন এবং ইউরোপিয়ান কনভেশনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলার পক্ষে,’’ ইশতেহারে বলেছে সবুজ দল৷

তবে অভিবাসনের কারণ যা-ই হোক না কেন, দলটি অভিবাসন নীতিতে একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেছে৷ 

বলা হয়, ‘‘একীভূতকরণের চালিকাশক্তি হচ্ছে ভাষা শেখা এবং কাজে যোগদান করা৷ কারণ এর মাধ্যমে মানুষ যোগাযোগ করতে পারে এবং একসাথে কিছু করতে পারে, আমাদের সমাজ এগিয়ে যায়৷’’ 

নিয়মিত অভিবাসনের পথ শক্তিশালী করা

ইশতেহারে জার্মানির শ্রমঘাটতি মেটাতে যেই মাধ্যমগুলো রয়েছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে৷ 

যেমন, বাসায় থাকা বাবা-মায়েদের জন্য খণ্ডকালীন চাকুরি আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা, অবসরে যাওয়ার বয়স সীমা বাড়ানো যেন চাইলে কেউ দীর্ঘ বছর পর্যন্ত কর্মে নিয়োজিত থাকতে পারেন৷ 

টেলিভিশন বিতর্কে জার্মানির দুই চ্যান্সেলর প্রার্থী

ইশতেহারে বলা হয়, জার্মানিকে অবশ্যই আকর্ষণীয়, উন্মুক্ত এবং সারা বিশ্বের যোগ্যতাসম্পন্ন শ্রমিকদের জন্য স্বাগত জানানোর মতো হতে হবে৷ 

আশ্রয়প্রার্থীদের কাজের সুযোগ

সবুজ দল বলছে, তারা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সরাসরি কাজে যোগদানের পথ উন্মুক্ত রাখতে চায়৷

বর্তমানে আশ্রয় আবেদন চলাকালীন সময়ে প্রার্থীরা কাজ করার অনুমতি পান না৷ তাদের আবেদন গ্রহণ করা হলেও কাজের সুযোগের বিষয়টি নির্ভর করে তাদেরকে কোন শ্রেণির সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে তার উপর৷ 

এই বিষয়টির পরিবর্তন চায় গ্রিন পার্টি৷ দলটি বলছে, ‘‘শরণার্থীদের কাজে যোগদানের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷ এটি এই কারণে যে, তারা শ্রমবাজারে প্রবেশের মাধমে আমাদের সমাজে দ্রুত একীভূত হওয়ার সুযোগ পায়৷’’ 
 
নাগরিকত্ব আইন

জার্মানির বিদায়ী জোট সরকারের অংশীজন হিসেবে সবুজ দল সরকারের নতুন নাগরিকত্ব আইনের সমর্থক ছিল৷ নতুন আইনে বিদেশিদের জার্মানির নাগরিকত্ব পাওয়া আগের চেয়ে সহজ হয়ে উঠেছিল৷ তবে ওই সংশোধনীতে কিছু সীমাবদ্ধতাও ছিল৷ আর সে বিষয়টি নিয়ে আরো কাজ করতে চায় গ্রিন পার্টি৷ 
 
যদিও এই বিষয়ে অন্য দুই রাজনৈতিক দল সিডিইউ/সিএসইউ এবং কট্টর ডানপন্থি দল এএফডির সাথে দ্বিমত রয়ছে গ্রিন পার্টির৷ এমনসব দ্বিমতের কারণে হয়তো সরকারের জোটে গ্রিন পার্টির অবস্থান নাও থাকতে পারে৷ 

স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়া ও প্রত্যাবাসন

ইশতেহারে বলা হয়, জার্মানিতে যারা আসছেন তাদের সবাই-ই থাকতে পারবেন না৷ আশ্রয় পাওয়ার বা থাকার অনুমতির অধিকার না থাকা ব্যক্তিদেরকে অবশ্যই জার্মানি ত্যাগ করতে হবে৷

তবে গ্রিন পার্টি বলছে, এমন বাস্তবতায় তারা স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিতে চায়৷ 

একক ইউরোপীয় অভিবাসন নীতি

ইশতেহারে দলটি বলছে, অভিবাসন বিষয়ে ইউরোপের লক্ষ্য শুধুমাত্র সমন্বিতভাবেই পূরণ করা যেতে পারে৷ 

এরজন্য দলটি একটি সাধারণ ইউরোপিয়ান মাইগ্রেশন পলিসির বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করছে৷ এটি অভিবাসন বিষয়ে ২০২৫-২০২৬ সালে জোটের দেশগুলোতে আরোপিত হওয়া ইইউ প্যাক্টের মতো করে হতে পারে৷ 

একই সাথে ইইউর বহিঃসীমান্তে আইনের শাসনে উন্নয়ন চায় দলটি৷ সেইসাথে সবাইকে সীমান্তে থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়ে দ্বিমত তাদের৷ তাছাড়া যারা অনিয়মের সাথে জড়িত ইশতাহের তাদেরকে বিচারের কথাও বলা হয়েছে৷ 

তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয় আবেদন যাচাইবাছাইয়ের ধারণার বিরুদ্ধে অবস্থান দলটির৷ 

জের্টান জেন্ডারসন/আরআর