1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মিষ্টি’ অবস্থায় আছে বাংলাদেশ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩০ জুলাই ২০১৮

বাংলাদেশের মোট জনসংখার ৬৮ শতাংশ মানুষের বয়স ১৫ থেকে ৫৯-এর মধ্যে৷ জনমিতির পরিভাষায় এরা হলো ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট’ জনগোষ্ঠী৷ তার মানে হলো, বাংলাদেশে এখন নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর চেয়ে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বেশি৷

https://p.dw.com/p/32FDF
ছবি: bdnews24.com

এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টকে সঠিকভাবে ব্যবহারের মধ্যেই বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন নির্ভর করছে৷ সঠিকভাবে ব্যবহারের মানে হলো, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে তুলে কাজে লাগানো৷ এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষা সংস্কার ও বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মস্থান৷

একটি জাতি এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড-এর সুযোগ একবারই পায়৷ আর তার সময়কাল হয় ৩৫ থেকে ৪০ বছর৷ এরপর আবার নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ বয়স্ক লোকের সংখ্যা যখন বাড়তে থাকে তখন তাদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয়ে একটি দেশের খরচ বেড়ে যায়৷

কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেশি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক এবং জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ অধাপক ড. নূর-উন নবী চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে জনসংখ্যাকে আমাদের দেশে সমস্যা মনে করা হতো৷ এর কারণ হলো জনসংখ্যার যে বিন্যাস তাতে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী বেশি ছিল৷ আমরা যদি ১৯৭৪ সালের আদমশুমারি দেখি তাহলে দেখতে পাব যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল আড়াই পার্সেন্ট (২.৪৮%)৷ ১৯৭০ সালে ছিল তিন পার্সেন্ট৷ ১৯৭৪ সালে মোট জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশ ছিল ১৫ বছরের কম বয়সি৷ আর ৬০ বছরের উপরে ছিল পাঁচ শতাংশ৷ তাই দু'টি মিলিয়ে ৫৩ শতাংশ মানুষ ছিল পুরোপুরি নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী৷ বাকি যে ৪৭ পার্সেন্ট তার অর্ধেক নারী৷ ঐ সময়ে বাংলাদেশে নারীরা ঘর থেকে বের হতোনা৷ তখন কর্মজীবী নারীর সংখ্যা শতকরা ১-২ ভাগের বেশি ছিলনা৷ তার মানে হচ্ছে, রাফলি শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ এই পুরো জনগোষ্ঠীকে কাঁধে করে টেনে নিয়ে গেছে৷ তাই তখন এই জনসংখ্যাকে বোঝা মনে হয়েছে৷ আসলেও বোঝা ছিল৷ কিন্তু এখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে৷ মৃত্যুহার কমেছে৷ গড় আয়ু বেড়েছে৷ পুরুষ ৭১ বছর এবং নারী গড়ে ৭৩ বছর বাঁচে৷'' 

‘‘মেয়েরাও ঘরের বাইরে বের হয়েছে’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন যেটা হয়েছে, কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে৷ জনসংখ্যার একটা সুবাতাস বইছে৷ এখন ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সের জনগোষ্ঠী, যাদের অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় ধরা হয়, তারা মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ৬৮ ভাগ৷ ফলে এই ৬৮ ভাগ হল প্রোডিউসার৷ আর বাকি ৩২ ভাগ হলো কনজিউমার৷ আগে যেটা ছিল মোট জনগোষ্ঠীর ৫৩ ভাগ৷ ফলে এখন আমাদের জনগোষ্ঠী অনেক বেশি কর্মক্ষম৷ এর সঙ্গে মেয়েরাও ঘরের বাইরে বের হয়েছে৷ তারা কাজ করছে৷ এটা জনসংখ্যার একটা ‘মিষ্টি' অবস্থা, যাকে বলা হয় ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড৷ এটা একটা জাতির জীবনে একবারই আসে এবং কমবেশি ১৫ থেকে ৩৫ বছর স্থায়ী হয়৷ ২০১২ সালে আমরা এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড জোনে প্রবেশ করেছি৷''

সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিবছর নতুন করে ২২ লাখ কর্মক্ষম লোক চাকরি বা কাজের বাজারে প্রবেশ করে৷ কিন্তু কাজ পায় মাত্র সাত লাখ কর্মক্ষম মানুষ৷ দুই তৃতীয়াংশ কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ পায় না৷ আর সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি৷

ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ‘ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট' বা ইআইইউ-র প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা চাকরি প্রার্থীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থাকছেন অথবা তাদের চাহিদামত কাজ পাচ্ছেন না৷

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ে বাংলাদেশের শতকরা ৪৭ ভাগ স্নাতকই বেকার৷ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করছেন কমবেশি সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী৷ তাঁদের মধ্যে ৯২ হাজার ৭৪৭ জন স্নাতক পাস, এক লাখ ২৮ হাজার ৪৮১ জন স্নাতক সম্মান এবং ২১ হাজার ৩৮০ জন কারিগরি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন৷ এছাড়া এক লাখ ১৯ হাজার ৮৯৪ জন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, দুই হাজার ৩৮৫ জন স্নাতকোত্তর কারিগরি এবং এক হাজার ৭৬৩ জন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন৷ অন্যদিকে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট অর্জন করেন দুই হাজার ৩৩৫ জন৷

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে শ্রমশক্তির পরিমাণ পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ৷

আর আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা, আইএলও-র তথ্য মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি৷ বেকারত্বের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে দু-এক বছরের মধ্যে মোট বেকারের সংখ্যা ছয় কোটিতে দাঁড়াবে৷ বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম৷

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারত্বের হার প্রায় পাঁচ ভাগ৷ তবে এই হার নারী ও তরুণদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি৷ তরুণীদের বেকারত্বের হার ৯.৫ ভাগ৷ বিশ্বব্যাংকের এই হিসাব বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে নেয়া৷ তাই বিশ্বব্যাংক মনে করে বেকারত্বের প্রকৃত হার ১৪.২ শতাংশ হবে৷

বাংলাদেশে এখনো কৃষিখাতেই সবচেয়ে বেশি লোক কাজ করেন৷ এখনো বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪৮ ভাগ কৃষি খাতে, ৩৭ ভাগ সেবা খাতে এবং শিল্পখাতে আছে ১৫ ভাগ৷

‘মিষ্টি' সময়ের সুফল ঘরে তুলতে...

অধ্যাপক নূর উন নবী বলেন, ‘‘এখন আমরা যদি রিইনভেস্ট করতে না পারি তাহলে আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পরিস্থিতির সুবিধা নিতে পারবনা৷ আমরা ডিভিডেন্ড ঘরে তুলতে পারবনা৷ তাই এই জনগোষ্ঠীকে দক্ষ ও যোগ্য করে তুলে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে আমাদের জাতীয় আয়ে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে৷ এই প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে আমরা বিদেশে পাঠিয়েও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারব৷ বিদেশে আমাদের যে এক কোটির মতো লোক আছেন তাঁরা বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠান৷ কিন্তু এর মধ্যে একটা শুভঙ্করের ফাঁকি আছে৷ এর বিপরীতে ভারত আমাদের দেশ থেকে বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স নিয়ে যাচ্ছে৷ আরো অনেক দেশও রেমিটেন্স নেয় বাংলাদেশ থেকে৷ ফলে আমরা যে পরিমাণ রেমিটেন্স আনি, তা আবার দিয়ে দিতে হয়৷ আমরা আমাদের বিভিন্ন খাতে যেসব প্রশিক্ষিত লোক বাইরে থেকে আনি, তাদের যদি না আনতে হতো, এখানেই যদি দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা যেত, তাহলে প্রকৃত অর্থেই আমাদের রেমিটেন্স আসত এবং সাশ্রয় হতো৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা সাধারণভাবে ১৫ থেকে ৩৫ বছর স্থায়ী হলেও আমাদের দেশে আরো কম হওয়ার আশঙ্কা করি৷ কারণ ২০৪৭ সাল থেকে আমাদের দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে৷ তাই তার আগেই আমাদের রিইনভেস্ট করে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড-এর সুফল ঘরে তুলতে হবে৷ ২০৪৭ সালের পরে এই বয়স্ক মানুষের স্বাস্থ্য সেবার পিছনে আমাদের অনেক ব্যয় করতে হবে৷ তাই তার আগেই আমাদের সুফল ঘরে তুলতে হবে৷'' 

অধ্যাপক নূর উন নবী বলেন, ‘‘আমরা স্বপ্ন দেখছি ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হব৷ এখন আমার মাথাপিছু আয় ১,৭২৫ ডলার, উন্নত দেশ হতে হলে ১৭,৫০০ ডলার মাথাপিছু আয় হতে হবে৷ তাই আমরা যদি সঠিক সময়ে রিইনভেস্ট না করতে পারি তাহলে মাথাপিছু আয় ঐ পর্যায়ে নেয়া সম্ভব নয়৷''

১৯৭০-এর দশকেও জাতীয় আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ আসত কৃষি থেকে৷ সে সময় প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মসংস্থান ছিল কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ ৮০-র দশক পর্যন্ত দেশটির অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক৷ অথচ গত বছরের হিসাব মতে, জিডিপিতে খাদ্যশস্য ও শাকসবজির হিস্যা ৯ শতাংশ এবং কৃষি, বনজ ও মৎস্য খাত মিলিয়ে এ হিস্যা ছিল ১২ শতাংশ৷ অথচ গত চার দশকে কৃষি উৎপাদন অনেক বেড়েছে, কিন্তু আনুপাতিক হারে এর চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে অকৃষি খাতের বিভিন্নমুখী তৎপরতা৷ সে কারণে জাতীয় আয়ে কৃষির অনুপাত অনেক কমে গেছে৷

১৯৩০-এর দশকে এ ভূখন্ডে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৮ হেক্টর৷ ১৯৬০-র দশকে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ১ দশমিক ৭ হেক্টরে দাঁড়ায়৷ ১৯৮৩-৮৪ সালে পরিচালিত কৃষি শুমারি অনুযায়ী মাথাপছিু জমির পরিমাণ ছিল শূন্য দশমিক ৯ হেক্টর৷ আর ১৯৯৬ সালের কৃষি শুমারিতে মাথাপছিু জমির পরিমাণ কমে শূন্য দশমিক ৬৮ হেক্টরে দাঁড়ায়৷

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার একর বা ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর৷ মোট জনসংখ্যা আনুমানিক ১৮ কোটি হিসেবে, মাথাপিছু আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ৪৪ হেক্টরে৷ ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা কারণে প্রতিবছর দেশের প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে৷ অর্থাৎ প্রতিবছরই এদেশ থেকে ১ শতাংশ হারে কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে৷ প্রতিদিন কমছে প্রায় ২১৯ হেক্টর আবাদি জমি, তারপরও দেশের ৪০ ভাগ মানুষ এখনো কৃষির ওপর নির্ভরশীল৷

‘‘বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড-এ আছে’’

দেশের জনসংখ্যা বেড়ে ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত হয়েছে৷ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, বাংলাদেশিদের গড় আয়ু বেড়ে এখন ৭২ বছরে দাঁড়িয়েছে৷ এক বছর আগে যা ছিল ৭১ দশমিক ৬ বছর৷ এক বছরের ব্যবধানে গড় আয়ু বেড়েছে ৪ মাস ২৪ দিন৷ বিবিএস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, দেশে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১০ লাখ এবং নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার৷

২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৫২ ডলার, যা আগের অর্থবছরে ছিল এক হাজার ৬১০ ডলার৷ এতে আগের বছরের চেয়ে আয় বেড়েছে ১৪২ ডলার৷

‘শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক পথে নেই'

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড-এ আছে৷ অর্থাৎ নির্ভরশীল মানুষের তুলনায় কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেশি৷ যারা কর্মক্ষমের মধ্যেও কর্মক্ষম ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সের জনগোষ্ঠী, এখন তাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪০ ভাগ৷'' 

তিনি বলেন, ‘‘এই যে কর্মক্ষম জনবল তাদের আমরা কতটা কাজে লাগাতে পারব তার উপরে নির্ভর করে এই জনগোষ্ঠী আমাদের ডিভিডেন্ড না ডিজাস্টার৷ আমরা যদি তাদের কাজে লাগাতে পারি তাহলে তারা ডিভিডেন্ট৷ আর এই কাজে লাগানোর মানে হলো কর্মসংস্থান তৈরি করা৷ আর আমরা এটা স্বীকার করবো যে, এই বিপুল পরিমাণ তরুণ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান বাংলাদেশে এখনো সৃষ্টি হয়নি৷ প্রতিবছর ২০ লক্ষ লোক কর্মসংস্থানের জন্য তৈরি হয়৷ তাদের মধ্যে সরকারি, বেসরকারি সব মিলিয়ে ১৩ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সম্ভব হয়৷ বাকিরা অনানুষ্ঠানিক বা ইনফরমাল সেক্টরে যুক্ত হন৷ তাই এটা পরিষ্কার, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে এটাকে সৌভাগ্যে পরিণত করতে যা করা প্রয়োজন তা আমরা করতে পারিনি৷''

তাঁর মতে, ‘‘আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে সৌভাগ্যে পরিণত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা৷ আমাদের অর্থনীতি যেদিকে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা সেদিকে যাচ্ছে না৷ আমাদের দরকার চামড়া, প্লাস্টিক, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ এরকম আরো অনেক খাতে কাজ করতে পারে এরকম দক্ষ জনবল৷ কিন্তু আমরা বিপুল সংখ্যায় বিবিএ, এমবিএ তৈরি করছি৷ প্রশাসনে লোক দরকার, কিন্তু বেশি দরকার আমাদের শিল্প এবং সেবাখাতে দক্ষ লোক৷ আমি দক্ষ জনশক্তি শুধু দেশেই নয়, বিদেশে পাঠাতে পারব৷''

অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘এই যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড, এটা কিন্তু ২০৪০ সালের পর আর থাকবেনা৷ তাই এই সুবিধাটা আমাদের কাজে লাগানোর এখনই সময়৷ কারণ ২০৪০ সালের পর বাংলাদেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে৷ যারা তরুণদের ওপর নির্ভরশীল হবেন৷ তাই এখনই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে৷ চাকরির ক্ষেত্রে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সংস্কার এনে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে কাজে লাগাতে হবে৷''

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করি বাংলাদেশ যে পর্যায়ে আছে তাতে জিডিপির ৩৫ ভাগ বিনিয়োগ হওয়া প্রয়োজন৷ কিন্তু এখন বিনিয়োগ হচ্ছে জিডিপির ৩০-৩১ ভাগ৷ বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হলে সুযোগ সুবিধা দেয়া প্রয়োজন, ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশ অনেক বিনিয়োগবান্ধব হওয়া প্রয়োজন৷ আমরা ডেভেলেপিং কান্ট্রি হতে যাচ্ছি৷ এখন অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়৷ বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন একটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে৷ আর ডেভেলপিং কান্ট্রি হওয়ার কারণে আমরা এখন আগের মতো কম সুদে লোন পাবনা৷ তাহলে কি আমরা পিছিয়ে যাব? সেটাতো হতে পারেনা৷ তাই আমাদের বিনিয়োগকে আকর্ষণ করতেই হবে৷ যদি বিনিয়োগ না আসে তাহলে কর্মসংস্থানের জায়গা সৃষ্টি হবেনা৷''

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘‘জনসংখ্যা বেশি থাকার একটা সুবিধা আছে৷ আমরা যে-কোনো জিনিস বিদেশে বিক্রি না করে দেশেই বিক্রি করতে পারি৷ কারণ দেশেই একটা বিশাল বাজার৷ এত মানুষ এদেশে৷ আমরা একটা ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি করলে অনেক মানুষ তা ব্যবহার করেন৷ তাদের কাছ থেকে অনেক টোল আদায় হতে পারে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমিতো মনে করি আমরা জনসংখ্যার ডেনসিটি ডিভিডেন্ড-এ আছি৷ এই জনশক্ষিকে দক্ষ করতে পারলে আমাদের শিল্পায়ন সহজ হবে, সরকারি আয় আড়বে৷ সরকার ট্যাক্সও বেশি পাবে৷''

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান