জনসংখ্যা বাড়াতে উৎসাহ দান
৩০ জুলাই ২০১৮দেশটির নাম ডেনমার্ক৷ ইউরোপের এই দেশটির এক পর্যটন সংস্থা ২০১৪ সালে হঠাৎ করে ‘ডু ইট ফর মম' শীর্ষক এক প্রচারণা শুরু করে৷ উদ্দেশ্য, ডেনিশদেরকে গ্রীষ্মে সমুদ্রতটে ছুটি কাটাতে পাঠানো৷ পানির ধারে ছুটিতে গেলে নাকি মানুষের মনে যৌনাকাঙ্খা বাড়ে৷ আর সেই আকাঙ্খা বাড়লে দেশটির যে বড় উপকার হয়!
‘ডু ইট ফর মম' প্রচারণার পরিধি বাড়াতে ‘ডু ইট ফর ডেনমার্ক', এমনকি ‘স্ক্রু ফর ডেনমার্ক' নামেও প্রচারণা চালানো হয়েছে৷ এ সংক্রান্ত দু'টি ভিডিও বিজ্ঞাপন ভাইরাল হয়ে যায়, যেগুলোতে ডেনমার্কের জনসংখ্যা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য এবং যৌনমিলনের নানা সুফল বেশ রসালোভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে৷ আর প্রচারণা শুরুর মাস দশেকের মাথায় নাকি ফলও পেতে শুরু করেছে দেশটি৷
দেশবাসীকে যৌনমিলনে উৎসাহী করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ডেনমার্কের জনসংখ্যা বাড়ানো৷ কয়েক বছর আগে দেশটিতে জন্মহার এতই কমে গিয়েছিল যে, বছরে তা ষাট হাজারেও পৌঁছাচ্ছিল না৷ অথচ ‘ডু ইট ফর মম' প্রচারণা শুরুর পর দেখা গেল আগের বছরের গ্রীষ্মের তুলনায় সন্তান জন্মের হার বেড়ে গেছে প্রায় ১৪ শতাংশ!
এই প্রচারণার মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাশাপাশি তাদের দেখভালের জন্য দাদি-নানিরা কতটা মুখিয়ে আছেন, তা দেখানো হয়েছে৷ এমনকি তিন বছর পর্যন্ত শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী বিনামূল্যে প্রদান আর শিশুবান্ধব ছুটি কাটানোর অফারও দেয়া হয়েছে সন্তান ধারণে সক্ষমদের সন্তান নিতে উৎসাহী করতে৷
বলতে কি, ইউরোপের অনেক দেশেই সন্তান জন্মহার কমে যাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে৷ তাই তারা ডেনমার্কের মতো রসালো বিজ্ঞাপন দিয়ে না হলেও নানাভাবে শিশু জন্মের হার বাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ জার্মানির কথাই ধরুন৷ দেশটিতে জন্মহার ক্রমশ কমে যাওয়ায় গত বেশ কয়েক বছর ধরে উদ্বেগ বেড়ে চলছিল৷ ফলে রাজনীতিবিদদের উপর চাপ বাড়ছিল৷
জার্মান সরকার গত কয়েক বছরে তাই সন্তান জন্মদানের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে৷ সন্তান জন্মের পর এক বছর পর্যন্ত (ক্ষেত্র বিশেষে আরো দু'মাস বাড়ানো যায়) মা বা বাবাকে তাঁদের বেতনের দুই-তৃতীয়াংশ প্রদানসহ ছুটি প্রদানের নিয়ম করা হয়েছে৷ পাশাপাশি সন্তান লালন-পালনে যাতে অভিভাবকের উপর বেশি চাপ না পড়ে এ জন্য জার্মানিতে জন্ম নেয়া প্রতিটি শিশুর জন্য এক বছর বয়স থেকে কিন্ডারগার্টেনে একটি করে আসন নিশ্চিত করছে সরকার৷ যেসব সন্তানের বাবা-মা উভয়েই চাকুরিজীবী, তাঁদের জন্য এটা এক বড় সুবিধা৷
শুধু তাই নয়, সন্তানের জন্য ১৮ বছর বয়স অবধি সরকারি একটি মাসিক ভাতাও প্রদান করা হয়৷ আর কারো যদি একাধিক সন্তান থাকে, যাদের কিন্ডারগার্টেনে যেতে হবে, সেক্ষেত্রে অনেক রাজ্যে দ্বিতীয় সন্তানের জন্য কিন্ডারগার্টেনে কোনো ফি নেয়া হয় না৷ আর সন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বাৎসরিক করেও কিছুটা ছাড় পান অভিভাবকরা৷ নাগরিকদের জন্য ঘোষিত সরকারি সামাজিক সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেও সন্তানসহ দম্পতিরা অগ্রাধিকার পান৷
এতসব উদ্যোগের ফলও পাচ্ছে জার্মানি৷ ১৯৭৩ সালের পর গত বছর জার্মানিতে সর্বোচ্চ জন্মহার ছিল৷ ২০১৭ সালে জার্মানিতে প্রায় আট লাখ সন্তান জন্ম নেয়, আগের বছরের তুলনায় যা সাত শতাংশ বেশি৷ সরকারি সুযোগ-সুবিধার বাইরে জার্মানিতে রেকর্ড সংখ্যক শরণার্থীর প্রবেশও এই বৃদ্ধিতে কিছুটা ভূমিকা রেখেছে৷
তবে মোদ্দা কথা হচ্ছে, সরকার চাইলে সন্তান জন্মহারের বৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব৷ আর ইউরোপের সেটা প্রয়োজন৷ কিন্তু যেসব দেশে সন্তানের জন্মহার কমানো প্রয়োজন, সেসব দেশেও একইভাবে সরকারের সক্রিয় উদ্যোগ প্রয়োজন৷ সেটা করা গেলে, জনসংখ্যায় সামঞ্জস্য আনা সহজেই সম্ভব৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷