1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্রলীগের ভয়ে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পরীক্ষার হলে যখন-তখন ছাত্রলীগের প্রবেশ,পরীক্ষার্থীদের নকল সরবরাহ ছাড়াও নানা বিশৃঙ্খলা-অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ইনস্টিটিউটটির শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে৷

https://p.dw.com/p/4NRsr
(ফাইল ছবি)ছবি: bdnews24.com

ছাত্রলীগের ভয়ে শিক্ষকেরাও তটস্থ থাকেন৷ প্রতিবাদ করলে শিক্ষকদের ছাত্রলীগের রোষানলে পড়তে হয়৷ দীর্ঘদিন ধরে ইনস্টিটিউটে এই ধারা চলে আসছে৷ ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের কমিটি আছে৷ আবার তারাই ইনস্টিটিউটে দুই বছর মেয়াদি ছাত্র সংসদের কমিটি বানায়৷ এই দুই কমিটির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে ছাত্রলীগ৷

এখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী-অনুসারীদের দাপটে ইনস্টিটিউটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ৷ ইনস্টিটিউটের পরীক্ষার হলে ছাত্রলীগের নানা অনিয়মের বিষয়ে ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না৷

ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের কর্তৃত্ব চলছে এক দশকের বেশি সময় ধরে৷ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাদের বেশির ভাগই ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম মহিউদ্দিনের অনুসারী৷ তিনিই মূলত এখানকার রাজনীতি ও কমিটি নিয়ন্ত্রণ করেন৷

ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আশপাশের দোকান থেকে চাঁদাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে৷ তাদের দাপট এতটাই যে কেউ কোনো অপরাধ করলেও সচরাচর শাস্তি হয় না৷

সবশেষ গত বুধবার ইনস্টিটিউটের চতুর্থ পর্বের পরীক্ষা চলাকালে নকল করতে বাধা দেওয়ায় প্রকাশ সিকদার নামের এক শিক্ষককে হুমকি দেন ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) শাহদাত হোসেনসহ কয়েকজন৷ শাহদাত ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেল থেকে জিএস হন৷

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, তিন ছাত্রকে নকল করতে না দেওয়ায় তাঁরা এক ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষার খাতা দিয়ে চলে যান৷ কিছুক্ষণ পর তারা জিএস শাহদাতকে সঙ্গে নিয়ে এসে উত্তরপত্র ফেরত চান৷ পরীক্ষার আবদার করেন৷ এ সময় শাহদাতের সঙ্গে ছিলেন ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু কাউছার ও কর্মী সাদমান সাকিব৷ তাঁদের অন্যায় আবদারের মুখে তিন ছাত্রকে পরীক্ষার উত্তরপত্র ফেরত দিতে বাধ্য হন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহীদুল ইসলাম৷

শিক্ষক প্রকাশ সিকদার ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে বলেন, ইনস্টিটিউটে কতিপয় শিক্ষার্থী আছেন, যারা পরীক্ষার হলে কোনো নিয়মকানুন মানতে চান না৷ গত বুধবার তিন শিক্ষার্থী প্রথমে পরীক্ষার হলে তাদের জন্য নির্ধারিত আসন থেকে উঠে যান৷ তারা তাঁদের পছন্দমতো আসনে গিয়ে বসে পড়েন৷ এতে বাধা দেওয়া হয়৷ পরে তারা খাতা দেখাদেখি শুরু করেন৷ বাধা দিলে তারা খাতা দিয়ে চলে যান৷ কিছুক্ষণ পর তারা ছাত্র সংসদের নেতাদের নিয়ে এসে তাঁকে হুমকি দেন৷ তারপর কর্তৃপক্ষ তাদের পুনরায় পরীক্ষার অনুমতি দেয়৷ এ ঘটনায় ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ স্বপন নাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷

ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরীক্ষা চলাকালে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী-অনুসারী, এমনকি তাদের আশ্রয়প্রশ্রয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দমতো আসনে বসে পরীক্ষা দিতে চান৷ ইনস্টিটিউটের আসন পরিকল্পনা তারা মানতে চান না৷ তারা মুঠোফোন নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেন৷ পরীক্ষায় নকল করেন৷

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা দেওয়ার সময় মুঠোফোন নিয়ে নেতারা পরীক্ষার হলে ঢোকেন৷ অনুসারীদের পরীক্ষার সময় নেতারা হলে বারান্দায় ঘোরাফেরা করেন৷ পরীক্ষার কক্ষে নেতারা প্রবেশ করে তাদের অনুসারীদের পরীক্ষার খোঁজখবর নেন৷ কখনো তারা পরীক্ষার কক্ষে অনুসারীদের মুঠোফোন দিয়ে যান৷ হোয়াটসঅ্যাপে নকল পাঠানোরও অভিযোগ রয়েছে৷

নাম প্রকাশ না করে ইনস্টিটিউটের দুই সাধারণ শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষায় পাস করার জন্য কিছু শিক্ষার্থী প্রকাশ্যে অসদুপায় অবলম্বন করেন৷ নির্বিঘ্নে নকল করতে তারা ছাত্রলীগের প্রভাব কাজে লাগান৷ তাঁরা ছাত্রলীগের নেতাদের গুণগান করেন৷ এই শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য নেতারা পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ করেন৷ নকল করতে তাদের হাতে মুঠোফোন দিয়ে যান৷

মাস ছয়েক আগে পরীক্ষার কক্ষে ছাত্রলীগ কর্মী সাদমানের কাছ থেকে মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছিল৷ সে সময় আরও কয়েক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকেও ছয়টি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছিল৷ কিন্তু তাদের কারও বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ৷ এমন ঘটনার নজির আরও আছে বলে জানান ইনস্টিটিউটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷

জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরীক্ষার সময় হলের প্রধান ফটকে আমরা পাহারা বসিয়ে মোবাইল তল্লাশি করি৷ তারপরও মাঝেমধ্যে দু-একজন মোবাইল নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকে পড়েন৷ তাঁদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা হয়তো থাকতে পারে৷ তবে পরীক্ষার্থীদের বাইরে অন্য শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের ঘটনা সাধারণত ঘটে না৷ তবে গত বুধবার তা ঘটে৷ এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷'

১ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার সময় পছন্দের আসনে বসতে এক শিক্ষার্থীকে বাধা দিয়েছিলেন শিক্ষক সুপ্তিকণা দেবী৷ পরে বাসায় যাওয়ার সময় তাকে পাথর ছুড়ে মারা হয়৷ পাথর নিক্ষেপকারী ইনস্টিটিউটের পাশের একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী৷ তিনি ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের আশ্রয়প্রশ্রয়ে চলেন৷

বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের ছাত্র সংসদের জিএস শাহদাত বলেন, ‘আমরা সাধারণত পরীক্ষার সময় হলে যাই না৷ গত বুধবারও হলে ঢুকিনি৷ হলের দরজায় ছিলাম৷ শিক্ষক প্রকাশ সিকদারের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়৷ কারণ, তিনি ছাত্রলীগের ছেলেদের পরীক্ষায় বাধা দিচ্ছিলেন৷'

এক প্রশ্নের জবাবে শাহদাত বলেন, ‘শিক্ষকেরা কেন আমাদের ভয়ে থাকবেন? পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে শিক্ষকেরা তল্লাশি করে শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন নিয়ে নেন৷ আমরা কীভাবে পরীক্ষার হলে মুঠোফোন সরবরাহ করব?'

জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, সেগুলো ঠিক নয়৷ মাঝেমধ্যে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে৷ বুধবারের ঘটনাটাও তেমন৷ ছাত্ররা যদি অনিয়ম করেন, তাহলে তা শিক্ষকেরা সমাধান করবেন৷'

গত বুধবারের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা নেওয়া হয়৷ এ সময় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে চার পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়৷ এ ঘটনাকে বিরল বলছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (শিক্ষা ও রেকর্ডরুম) মিলটন বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে৷ এ ঘটনাগুলো যাতে না ঘটে, সে জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে৷'

এনএস/কে এম (প্রথম আলো) 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য