1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গরুর হাটও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দখলে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ জুলাই ২০২২

কোরবানির ঈদের পশুর হাট ঢাকার বাইরে আগে শুরু হলেও ঢাকায় শুরু হয়েছে আজ (বুধবার) থেকে। ঢাকার ২১টি হাটই এ আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে। তাদের বাইরে কেউ হাটের ইজারা পায়নি।

https://p.dw.com/p/4DlED
Bangladesh | Qurbani-Viehmarkt in Gabtoli, Dhaka
ফাইল ফটোছবি: Sazzad Hossain

হাটের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে  প্রশ্ন উঠেছে। পথে পথে গরুর ট্রাকে চাঁদাবাজিও চলছে। গরুবোঝাই ট্রলারে ডাকতির ঘটনাও ঘটেছে। ঢাকায় নির্ধারিত হাট ২১টি হলেও বিভিন্ন পাড়ায় মহল্লায় হাট বসাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। তারা নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা করছেন না। আর সারাদেশে সরকার নির্ধারিত গরুর হাটের সংখ্যা চার হাজার ৪০৭টি। কিন্তু বাস্তবে এই হাটের সংখ্যা দুইগুণের বেশি হবে।

হাটের কর্তৃত্ব আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের:

এবার ঢাকার পশুর হাট স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সিন্ডিকেট করে ইজারা নিয়েছে। ঢাকার বাইরেও একই চিত্র।

ঢাকার উত্তরা ১৭ নাম্বার সেক্টরের হাটের ইজারা পেয়েছেন তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক নূর হোসেন। ভাটারা হাটের ইজারা পেয়েছেন থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. সুরুজ্জামান। বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং হাটের ইজারা পেয়েছেন মিজানুর রহমান ধনু। তিনি ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মোহাম্মদপুর বছিলার ইজারা পেয়েছে মেসার্স শাহীন ইন্টারন্যাশনাল। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আমজাদ হোসেন দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য।

উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট হাটের ইজারা পেয়েছেন এ এস এম এন্টার প্রাইজের মালিক মো. আব্দুল লতিফ। তিনি শাহজাহানপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। হাজারীবাগ হাটের ইজারা পেয়েছেন রোড ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি অহিদুর রহমান ওয়াকিব।

মো. আব্দুল লতিফ

পোস্তগোলা শ্মশানঘাট হাটের ইজারা পেয়েছেন ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মঈন উদ্দিন চিশতী। মেরাদিয়া বাজার ইজারা পেয়েছেন মো. আওরঙ্গজেব টিটু। তিনি ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক। কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন হাটের ইজারা পেয়েছেন খান ট্রেডার্সের মালিক গোলাম কিবরিয়া রাজা খান। তিনি ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

মাত্র একটি হাট পেয়েছে আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টির লোকজন। আর সবই আওয়ামী লীগের।

ওই হাটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ইজারা নেয়া হয়েছে সিন্ডিকেট করে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সিন্ডিকেট করে দরপত্র দাখিল করেছেন। তাদের বাইরে কেউ দরপত্র দাখিল করতে পারেনি। ফলে তারাই দর নিয়ন্ত্রণ করে যেকানো একজনের নামে হাট ইজারা নিয়ে সবাই মিলে ব্যবসা করছে।

"ইজারারা আবেদনে আওয়ামী লীগ পরিচয় লেখা নাই”:

উত্তর শাহজাহানপুর হাটের ইজরাদার  ও শাহজাহানপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল লতিফ  দাবি করেন,"আরো অনেকে ইজারার আবেদন করেছিলো তবে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আমার প্রতিষ্ঠান পেয়েছে।”

সিন্ডিকেটের প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন,"সিন্ডিকেট কী? এখানকার আওয়ামী লীগ, মহিলা লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সবাই মিলেমিশে আমরা ইজারা নিয়েছি। আমার প্রতিষ্ঠানের নামে ইজারা নেয়া হলেও  আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করছি। এটাকে আপনি সিন্ডিকেট বলেন, মিলেমিশে বলেন যা খুশি বলতে পারেন।”

অন্য দলের লোকজন ইজারা পেয়েছেন কী না জানতে চাইলে বলেন,"না অন্য দলের লোকজন পায় না। তাদের চান্স নেই।”

আর ধোলাইখাল হাটের ইজারাদার ও ৪৪ নাম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন,"আমার নামেই ইজারা পেয়েছি তবে আমরা সবাই ভাগ করে নিয়েছি। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলের কেউ বাদ যায়নি।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন,"অন্য দলের লোকজনও টেন্ডারে অংশ নিয়েছিলো। তারা পায়নি। আমরা সর্বোচ্চ দর দিয়েছি তাই আমরা পেয়েছি।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন দাবি করেন," ইজারার আবেদনে তো তো আওয়ামী লীগ লেখা নাই। আমরা দলীয় পরিচয় দেখে ইজারা দেইনি। যারা আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতাদের আমরা ইজারা দিয়েছি। আর এবার আমাদের ইজারা থেকে আয় হয়েছে গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। আমরা আয়ের দিকে নজর দিয়েছি।”

পথে পথে চাঁদা:

এবার চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশু বেশি। সরকারি হিসেব বলছে দেশে এবার কোরবানির জন্য ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার গরু-ছাগলের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু প্রস্তুত আছে এক কোটি ২৫ লাখ ২৪ হজার। তাই দাম সহনীয় থাকার আশা করা হলেও তা হয়তো থাকবে না। কারণ পথে পথে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। সিরাজগঞ্জ থেকে নয়টি গরু নিয়ে ঢাকার তেজগাঁও পশুর হাটে এসেছেন মোহাম্মদ আকাশ বেপারি। তিনি বলেন,"ট্রাকে করে ঢাকায় গরু আনতে পথে মোট ছয় জায়গার চাঁদা দিতে হয়েছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। যারা চাঁদা নিয়েছে তারা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা বলে দাবি করেছেন। তারা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন।  আর হাটের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনাও ভাল না। আমরা আতঙ্কে আছি।”

তিনি নয়টি গরু ২৫ লাখ টাকায় বিক্রির আশা করছেন। প্রতিবছরই তিনি কোরবানির পশুর হাটে গরু নিয়ে আসেন।

কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে ঢাকার কমলাপুর হাটে আসা আরিফুর রহমানও একই ধরনের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন,"হাটে কেউ এখনো চাঁদা না নিলেও আমাদের পথে পথে চাঁদা দিয়ে আসতে হয়েছে।”

নৌপথে যে গরু আসছে সেই গরুর বেপারিরা রয়েছেন সবচেয়ে বেশি নিরপত্তা ঝুঁকিতে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেঘনা নদীর বরিশালের মুলাদি উপজেলার লালবয়া এলাকার নদীতে ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে। ডাকাত দল বেপারিদের ট্রলারে হানা দিয়ে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা লক্ষীপুরে কোরবানির পশু বিক্রি করে বরিশালে মেহেন্দিগঞ্জে ফিরছিলেন।

এদিকে করোনায় পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হলেও কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য