1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বাংলার বস’ বিক্রিতে সিন্ডিকেট বাধা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ জুলাই ২০২০

শুধু ঢাকা কেন, এবার সারাদেশেই কোরবানির পশুর হাটে আলোচিত ‘বাংলার বস’ ও ‘বাংলার সম্রাট’৷ বাংলার বস গত বছর দেশের সবচেয়ে বড় ষাড়ের স্বীকৃতি পেয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে৷

https://p.dw.com/p/3g7xp
শুধু ঢাকা কেন, এবার সারাদেশেই কোরবানির পশুর হাটে আলোচিত ‘বাংলার বস’ ও ‘বাংলার সম্রাট’৷ বাংলার বস গত বছর দেশের সবচেয়ে বড় ষাড়ের স্বীকৃতি পেয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে৷
‘বাংলার বস’ ও ‘বাংলার সম্রাটের’ সঙ্গে মালিক আজমত আলীছবি: Sazzad Hossain

গরু দুটিকে তোলা হয়েছে ঢাকার গাবতলি গুরুর হাটে৷ মালিক আজমত আলি গায়েনের অভিযোগ সিন্ডিকেট করে তার গরু বিক্রি করতে দেয়া হচ্ছে না৷ তাই অর্ধেক দাম পেলেও বিক্রি করে দেবেন৷ কিন্তু তাও পাচ্ছেন না৷

বাংলার বসের দাম হেঁকেছেন তিনি ৩০ লাখ টাকা৷ গরুটিতে ৩৭ মণ মাংস আছে বলে দাবি তার৷ আর বাংলার সম্রাটের দাম চান ২৫ লাখ টাকা, মাংস হবে ৩৫ মণ৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্ধেক দামেও ক্রেতা পাচ্ছেন না৷ আজমত আলি এখন দুইটি গরু ২৫ লাখ টাকায়ই ছেড়ে দিতে চান৷ তাতে তার সাত-আট লাখ টাকা লোকসান হলেও তিনি আর গরু নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে চান না৷

৩৫ বছরের আজমত আলি ঢাকায় রিকশা চালাতেন৷ ২০০৯ সালে কিছু টাকা জমিয়ে গ্রামের বাড়ি যশোরের মনিরামপুরে চলে যান তিনি৷ তারপর সমিতি ও কিছু ব্যবসা করে টাকা জমান৷ গড়ে তোলেন দুধের গাইয়ের খামার৷ পাশাপাশি কোরবানিতে বিক্রির জন্য ষাড় পালন শুরু করেন৷

এবার যে দুইটি গরু ঢাকার গাবতলির হাটে তিনি নিয়ে এসেছেন তা ফ্রিজিয়ান জাতের৷ বাংলার বসকে এক বছরের কিছু সময় আগে ১৬ লাখ টাকায় কেনেন তিনি৷ আর সম্রাটকে কেনেন আরো আগে৷ গাবতলির হাটের মূল ফটকের কাছেই দুইটি গরু তিনি রেখেছেন পাঁচদিন আগে৷ এজন্য তাকে দিতে হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা৷ দুইটি গরুর পিছনে এখন পর্যন্ত তার ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে৷ গত বছর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দেশের সবচেয়ে বড় ষাড়ের স্বীকৃতি দেয় বসকে৷ আজমত আলিকে দেয় পুরস্কার৷ তারাই তখন ষাড়টির নাম দেয় ‘বাংলার বস’৷

আজমত আলি

‘বাংলার বসকে’ ঠেকাতে সিন্ডিকেট?
আজমত আলির অভিযোগ, ‘‘এমনিতেই এবার ক্রেতাদের আগ্রহ কম৷ তার ওপর ঢাকার খামারিরা সিন্ডিকেট করে আমার গরুর ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে৷ তাদের লোকজন চারপাশে ঘিরে থাকে৷ তারা বলে দেয় গরু বিক্রি হবে না৷ কেউ যদি তাদের উপেক্ষা করে দাম জানতে আসে, আমি দাম চাইলে সিন্ডিকেটের লোকজন বলে এর অর্ধেক দামে এরচেয়ে বড় গরু আমরা দেব৷ ক্রেতার মন ভেঙে যায়৷ ফিরে যান৷’’

ইজারাদার ও পুলিশের কাছে অভিযোগও করেছেন তিনি৷ কিন্তু তাতেও কাজ হয় না৷ তারা যখন আসে সিন্ডিকেটের লোকজন সরে যায়৷ আজমত আলি বলেন, ‘‘সবাই ছবি তোলে, সেলফি তোলে আমার গরুর সঙ্গে , কিন্তু কেউ কেনে না৷ বিভিন্ন অনলাইনও আমার সাথে কথা না বলেই আমার গরুর ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে৷’’

ঢাকার বাইরে থেকে আসা আরো কয়েকজন গরুর ব্যাপারি সিন্ডিকেটের অভিযোগ করেন৷ ঢাকার খামারিরা সিন্ডিকেট করে বাইরের গরু বিক্রিতে কৌশলে বাধা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন অনেকে৷ তবে ক্রেতা মনে করেন, এবার বড় এবং বেশি দামের গরুর চাহিদা কম৷ অনেকে কোরবানি দিচ্ছেন না৷ কেউ কেউ কোরবানি দিলেও উৎসব নেই করোনার কারণে৷

ক্রেতা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘গতবারের চেয়ে এবার আমাদের বাজেট অনেক কম৷ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে৷’’

গাবতলি গুরুর হাটের ম্যানেজার মো. সানোয়ার হোসেন অবশ্য দাবি করেন, সিন্ডিকেট করে গরু বিক্রিতে বাধা দেয়ার কোনো অভিযোগ তারা এখনো পাননি৷ তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের জানার বাইরে কেউ এরকম কিছু করে থাকলে তো আমাদের কিছু করার নাই৷’’

গরু কম, ক্রেতাও কম
গরুর ব্যাপারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার ঢাকায় গরু এসেছে গতবারের অর্ধেক৷ আর ভারতীয় গরুও হাটে নেই৷ কড়াকড়ির পরও অল্প কিছু গরু চোরাচালানির মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসলে তা ঢাকা পর্যন্ত আসেনি৷

ঢাকায় এবার মোট ১৯টি গরুর হাট বসেছে৷ এরমধ্যে দক্ষিণ সিটিতে ১২টি এবং উত্তরে ৯টি৷ গরুর ব্যাপারি লালন মিয়া জানান, গতবারের তুলনায় এবার ৫০ ভাগ গরু কম এসেছে৷ তার সঙ্গে অনেক ব্যাপারি এবার আর গরু নিয়ে আসেননি৷ যারা এসেছেন তারাও আতঙ্কে আছেন সব গরু বিক্রি করতে পারবেন কিনা৷ আর দামও ক্রেতারা অনেক কম বলছেন৷

হাটগুলোতে মোবাইল কোর্ট আছে৷ কিন্তু তারপরও সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো বালাই নেই৷ আর এটা মানা সম্ভব নয় বলেও জানান কয়েকজন৷ ইজাদারদের পক্ষ থেকে হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা দেখা যায়নি৷ কিছু বেসরকারি সংগঠন পশুর হাটে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করেছে৷ তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাইকে ঘোষণা চলছে৷আর গরুর হাটে বয়স্ক ও শিশুদের যেতে নিরুৎসাহিত করা হলেও তারা যাচ্ছেন৷

তবে কোনো কোনো ইজারাদার দাবি করেন তারা হাসিল কাউন্টারে ফ্রি মাস্ক ও স্যানিটাইজারারের ব্যবস্থা করেছেন৷ আবার কেউ বলছেন এটা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব৷