1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খুলেছে অধিকাংশ কারখানা, বাড়তি নিরাপত্তার দাবি মালিকদের

শহীদুল ইসলাম ঢাকা
৪ নভেম্বর ২০২৩

মজুরির বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে বন্ধ হওয়া পাঁচ শতাধিক পোশাক কারখানার বেশিরভাগই শনিবার উৎপাদন কাজ শুরু করেছে৷

https://p.dw.com/p/4YOsR
Bangladesch Textilfabrik in Dhaka | Arbeiterinnen
ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত পোশাক শ্রমিকেরা৷ ফাইল ফটো৷ ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Hasan

সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার পর শনিবার সকাল থেকে এসব কারখানা খুলে দেওয়া হয়৷ তবে কয়েকটি কারখানা খোলার পর সেখানে শ্রমিকরা গেলেও কাজে যোগ দেননি বলে জানা গেছে৷ আর শ্রমিক অসন্তোষের মুখে বন্ধ হওয়া ৪১টি কারখানা নানা কারণে খুলতে পারেননি মালিকেরা৷

এদিকে শনিবারও আশুলিয়া এবং গাজীপুরে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকেরা৷ পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হয়েছে৷

কারখানা চালুর বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বেশিরভাগ কারখানা খুলেছে৷ ৪১টি কারখানা খুলেনি৷ আশুলিয়ায় ৩৭টি, মাওনা এলাকায় তিনটি এবং মিরপুরে একটি কারখানা বন্ধ আছে৷''

তিনি জানান, গত কয়েক দিনে পাঁচ শতাধিক কারখানা বন্ধ করা হয়েছিল৷

নিরাপত্তার বিষয়ে ফারুক হাসান বলেন, ‘‘শ্রমিক-মালিক-কারখানা সবকিছুরই নিরাপত্তা দরকার৷ আমি মনে করি নিরাপত্তাব্যবস্থা যতটুকু নেওয়া হয়েছে আমরা এই মুহূর্তে নিরাপত্তা বোধ করছি৷ কিন্তু আমরা মনে করি আরও নিরাপত্তা দরকার, কারণ মালিকদের মধ্যে টেনশন রয়েছে৷’’

মজুরির বাড়ানোর বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা চাই যত তাড়াতাড়ি হোক মজুরিটা নির্ধারণ হয়ে যাক৷ সবাই মিলেই মজুরি নির্ধারণ করা হবে৷ মজুরি বোর্ড যে প্রস্তাব করবে সরকার চাইলে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে৷’’

সরকার যে মজুরি নির্ধারণ করে দেবে আমরা মেনে নেব: ফারুক হাসান

তিনি বলেন, ‘‘সরকার যে মজুরি নির্ধারণ করে দেবে আমরা কারখানার মালিকদের পক্ষ থেকে বলেছি সেটাই আমরা মেনে নেব এবং ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হবে৷’’

‘‘এখন তো যে কোনো জায়গায় অনেক সুবিধাবাদি আছে, পলিটিক্যাল আছে, লোকাল আছে, সবাই তার সুবিধাটা নিতে চায়৷ আমার মনে হয় সবাই জানে কারা কীভাবে আন্দোলন করছে৷ আমাদের উদ্দেশ্য হলে ফ্যাক্টরি চালু রাখা, খোলা রাখা, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা৷ আমার নজর হল শ্রমিকদের মজুরি ভালো করে বাড়ানো, তারা যেন খুশি থাকে এবং সন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করেন৷’’

আশুলিয়া এবং গাজীপুরে বিক্ষোভ

এদিকে বেতন বাড়ানোর দাবিতে শনিবার গাজীপুর সদরের গড়াগড়িয়া মাস্টারবাড়ির নতুন বাজার এলাকার বিক্ষোভ করেছেন এস এম নিট গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা৷ এসময় পুলিশের তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় শ্রমিকদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে শিল্প পুলিশের এএসপি এবং একজন পরিদর্শক আহত হয়েছেন বরে জানা গেছে৷

এছাড়া শনিবার সকালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার আবদুল্লাহপুর-বাইপাল সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন শ্রমিকেরা৷ পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং জলকামান দিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়৷ এই ঘটনায় কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন৷

গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসপি মোহাম্মদ সারোয়ার আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, শনিবার গাজীপুরের একটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন৷ সড়ক অবরোধের শিল্প পুলিশের  তাদের  করতে দেয়নি৷ গত কয়েকদিনের থেকে পরিস্থিতি ভালো আছে৷ আমরা শ্রমিকদের বার্তা দিচ্ছি যে, সরকার তাদের দাবি বিবেচনা করছে৷ এই কাজে আমরা ফেডারেশনের নেতাদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছি৷

আর আশুলিয়া শিল্প পুলিশের এসপি মো. শাখাওয়াত হোসেন মাঠে ঝামেলার মধ্যে আছেন জানিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেননি৷

পোশাক শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ঠিক করতে গত এপ্রিলে নিম্নতম মজুর বোর্ড গঠন করে সরকার৷ এরপর মজুরি নির্ধারণে এই বোর্ড কাজ শুরু করে৷ গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেন৷ আর মালিকপক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়৷

এরপর নূন্যতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকেরা৷ পরে তা আশুলিয়া, সাভার ও ঢাকার মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ে৷ অনেক জায়গায় শ্রমিকেরা ভাংচুর শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে পর্যায়ক্রমে পাঁচ শতাধিক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়৷

দেশে তৈরি পোশাক-সংশ্লিষ্ট কলকারখানা রয়েছে ৯ হাজার ১৭৭টি৷ এসব কারখানায় ৪৩ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন৷ তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদরে ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ, সিডিপি৷

রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর পর কেমন আছেন আহত শ্রমিকেরা?

নাশকতা করলে ব্যবস্থা: র‌্যাব

শ্রমিক আন্দোলন পুঁজি করে কোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা করে পোশাক খাতকে নষ্ট করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে র‌্যাব৷

শনিবার র‌্যাব-৪ সিপিসি-২ এর কার্যালয়ে পোশাক শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা রোধে পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শন, র‌্যাবের কার্যক্রম পর্যালচনা ও মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন৷

তিনি বলেন, ‘‘যারা গার্মেন্টস শিল্পকে নিয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করছে তাদের অনেককে আমরা আইডেন্টিফাই করতে পেরেছি৷ তাদের বেশ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে৷ ভবিষ্যতে যারা এই শিল্প নিয়ে অরাজকতার চেষ্টা করবে, পেছন থেকে হোক বা মাঠ থেকে হোক তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে৷

‘‘যেখানে যেখানে গার্মেন্টস বেশি রয়েছে সেই স্থানগুলোতে আমাদের র‌্যাবের টহল বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ পুলিশ এবং বিজিবির সঙ্গে আমরা যৌথ পেট্রোল করছি৷ যেকোনো ধরনের নাশকতা এবং সহিংসতা রোধে আমাদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে৷’’

 খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘‘যারা নাশকতা, সহিংসতার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দুষ্কৃতিকারীরা চোরাগুপ্ত হামলা থেকে সহিংসতা করছে৷ তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান রয়েছে৷’’

শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য: শাহজাহান খান

পোশাক শ্রমিকরা যাতে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী সেই ব্যবস্থা করে দিতে পারেন বলে আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান জানিয়েছেন৷

কিছু লোক একটি আন্দোলনকে হঠকারী রূপ দেয় নিজের স্বার্থে বা রাজনৈতিক স্বার্থে: শাজাহান খান

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য শাজাহান খান ডয়চে ভেলেকে জানান, গ্রহণযোগ্য মজুরি সবাই চায়৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে সব মজুরি বোর্ডেই শ্রমিকদের জন্য গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে৷ শ্রমিকদের জন্য ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টেরও ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার সুযোগ হয়ত প্রধানমন্ত্রী করে দেবেন, এ বিষয়ে উনার চিন্তা আছে৷

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে বোর্ড পাঁচটি সভা করেছে জানিয়ে শাজাহান বলেন, ‘‘৭ নভেম্বর আরেকটি সভায় মজুরি চূড়ান্ত হওয়ার কথা৷ এখন এই আন্দোলন করা অযৌক্তিক, এটা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে৷ শ্রমিকদের আহ্বান করব বিভ্রান্ত না হয়ে প্রকৃত বিষয়টি জানুন- এখনো মজুরি নির্ধারণ হয়নি৷ আগামী ৭ নভেম্বর বা এ মাসের মধ্যে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হবে৷ ১ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর করা হবে৷''

শাজাহান বলেন, ‘‘কিছু লোক একটি আন্দোলনকে হঠকারী রূপ দেয় নিজের স্বার্থে বা রাজনৈতিক স্বার্থে৷ এর পেছনে বিএনপি-জামায়াতের হস্তক্ষেপ আছে৷ কারণ নূন্যতম মজুরি বোর্ড যতবার হয়েছে বিএনপি কোনো সময় নূন্যতম মজুরির দাবি করেনি, এবার তারা সেই দাবি করেছে৷ আমি মনে করি এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে৷''

নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করার পরেও শ্রমিকদের আন্দোলন না-ও থামতে পারে বলে মনে করেন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান৷

কারণ হিসেবে তিনি বলেন ‘‘কিছু লোক আছে উস্কায়৷ তবে গ্রহণযোগ্য মজুরি ঘোষণা করা হলে সবাই পরবর্তীতে তা মেনে নেয়৷ তারপরেও অনেকে সেটা নিয়ে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য