1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করাচির কিশোরীদের মনে আশার আলো

২৭ মার্চ ২০২০

দক্ষিণ এশিয়ার অনেক প্রান্তে আজও নারীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অংশ নিতে বিস্তর বেগ পেতে হয়৷ পাকিস্তানের করাচি শহরে এক অভিনব উদ্যোগের মাধ্যমে কিশোরীদের মনে আত্মবিশ্বাস জাগানোর চেষ্টা চলছে৷

https://p.dw.com/p/3a6wy
ছবি: Getty Images/AFP/R. Tabassum

করাচি শহরে মেয়েরা খোলা আকাশের নীচে সাইকেল চালাচ্ছে৷ প্রত্যেক রবিবার সকালে ‘লিয়ারি গার্লস ক্যাফে'-র মেয়েরা দল বেঁধে লিয়ারি এলাকায় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে৷ ১৩ বছর বয়সি উরুজ ইসমার কাছে সাইকেল চালানো শুধু ক্রীড়া বা শখ নয়, এর মাধ্যমে সে মুক্তির স্বাদ পায়৷ উরুজ বলে, ‘‘সাইকেল চালানো আমার শখ, কারণ সাইকেল চালানো শিখলে আমি একাই স্কুলে যেতে পারবো৷ এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো৷''

ইসমা স্থানীয় সমাজে মেয়েদের সাইকেল চালানোর বিষয়ে সমালোচনা সম্পর্কে সচেতন৷ তবে তার মতে, এমন কার্যকলাপের ফলে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে৷ তারা এখন নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে৷ উরুজ ইসমা বলে, ‘‘সাইকেল নিয়ে বেরোলে ছেলেরা আমাদের নিয়ে কটু মন্তব্য করে৷ তারা বলে, মেয়ে হিসেবে আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত৷ বাসায় থেকে সংসার সামলানো তোমাদের কাজ৷ কিন্তু আমাদের মনে নিষ্ঠা রয়েছে৷ জানি কীভাবে নিজেদের রক্ষা করতে হয়৷ আমরাও এখন নিন্দুকদের কিছু কথা শুনিয়ে দিতে পারি৷''

করাচির আত্মবিশ্বাসী কিশোরীরা

গত কয়েক বছরে লিয়ারি এলাকা অশান্ত পরিবেশ ও অপরাধী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের কারণে কুখ্যাত হয়ে উঠেছিল৷ এমন উত্তেজনাময় পরিস্থিতি সেখানে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে৷ বিশেষ কিছু পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ও তরুণ প্রজন্মকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখাতে ‘লিয়ারি গার্লস ক্যাফে' চালু করা হয়েছিল৷ স্বাধীন জীবনযাত্রার লক্ষ্যে সেখানে নানা বয়সের নারীদের জন্য বেশ কিছু প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়৷

সাইকেল চালানো সংক্রান্ত ওয়ার্কশপের ক্লাসে মেয়েদের সাইকেলের টায়ার মেরামতির কাজও শেখানো হয়৷ সাইক্লিং কোচ হিসেবে জুলেখা দাউদ মনে করে, ‘‘কোনো মেয়ে সকালে সাইকেল চালানোর সময় টায়ার পাংচার হয়ে গেলে মিস্ত্রী খুঁজে পাওয়া কঠিন কাজ৷ সঙ্গে কিছু যন্ত্রপাতি রাখলে ভালো৷ তাই আমরা তাদের মেরামতির কাজ শেখাই, যাতে অন্যদের উপর নির্ভর করতে না হয়৷''

সন্ধ্যায় এলাকার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে মেয়েদের বক্সিং শেখানো হয়৷ হিফজা বক্সিং করতে খুব ভালবাসে: সে পেশাদারী বক্সার হতে চায়৷ সে বলে, ‘‘বক্সিং করার সময় আমাকে মনোযোগ দিতে হয়৷ প্রতিপক্ষকে কোন দিক দিয়ে আক্রমণ করবো, তা ভাবতে হয়৷ সুযোগ পেলে তার চোখে ধুলা দিয়ে পাশ থেকে ঘুষি মারি৷''

ক্লাস সেভেনের ছাত্রী হিফজার তিন বোন আছে৷ তবে তার বাবা-মা সন্তান হিসেবে ছেলে চেয়েছিলেন৷ হয়তো সে কারণেই তাঁরা তাকে ছেলের মতো করে মানুষ করছেন৷ হিফজা মনে করে, ছেলেরা বক্সিং করতে পারলে মেয়েরাও তা অবশ্যই পারে৷ সে বলে, ‘‘আমার বাবা ছেলে চেয়েছিলেন৷ আমাদের সমাজে মেয়ে হলে লোকজন মসকরা করে৷ কিন্তু আমার বাবা সবসময়ে বলেন, আমার মেয়েরাই আমার ছেলে৷''

করাচি শহরের এই অনুন্নত এলাকায় লিয়ারি গার্লস ক্যাফে মেয়েদের জন্য আশার আলো নিয়ে আসছে৷ এমন উদ্যোগ ভবিষ্যতে তাদের জীবনে আত্মবিশ্বাস ভরিয়ে দিতে পারে৷

ইরফান আফতাব/এসবি