এ বার মার্কিন কনসুলেট বন্ধ করল চীন
২৭ জুলাই ২০২০ইটের বদলে পাটকেল। গত সপ্তাহে হিউস্টনে চীনের কনসুলেট বন্ধ করে দিয়েছিল অ্যামেরিকা। এ বার তার জবাব দিল চীন। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে ছাংদুতে মার্কিন কনসুলেট বন্ধ করে দিয়ে বার করে দেওয়া হলো সমস্ত কর্মীকে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর ফলে চীন এবং অ্যামেরিকার মধ্যে চলতি বিতর্ক আরও এক ধাপ বাড়লো।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, সোমবার সকালে কনসুলেটের বাইরে লরি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কনসুলেটের কর্মীরা তাতে বাক্স বাক্স ফাইল এবং আবর্জনা ভর্তি বাক্স তুলে দেন। এর পর একটি বাসে করে তাঁরাও চলে যান। গোটা এলাকা পুলিশ ঘিরে রেখেছিল। পথচারীদের এলাকায় দাঁড়াতে দেওয়াও হচ্ছিল না। তবে তারই মধ্যে কেউ কেউ কনসুলেটের বাইরে চীনের পতাকা ওড়াতে থাকেন। কনসুলেটকে সাক্ষী রেখে অনেকে সেলফিও তোলেন।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ছাংদুর মার্কিন কনসুলেট একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর ছিল। তিব্বতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো এই কনসুলেট। পাশাপাশি গোটা দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী দফতর ছিল এই কনসুলেটটি। এর পর চীনে আর মাত্র চারটি মার্কিন কনসুলেট থাকল। আর বেজিংয়ে রয়েছে মার্কিন দূতাবাস।
গত সপ্তাহেই হিউস্টনে ঠিক এই একই কায়দায় চীনের কনসুলেট বন্ধ করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন সচিব মাইক পম্পেও অভিযোগ করেছিলেন, কনসুলেটে বসে অ্যামেরিকা থেকে তথ্য চুরি করছে চীন। সে কারণেই তাদের ওই কনসুলেট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে মার্কিন প্রশাসন। বেজিং এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। বলা হয়েছিল, গোটা বিশ্বের কাছে চীনের বিরুদ্ধে কুৎসা করছে অ্যামেরিকা। চীন এর জবাব দেবে। বস্তুত, গত শুক্রবারই হিউস্টন থেকে চীনের কনসুলেট কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। ৭২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, শুক্রবার মার্কিন অফিশিয়ালরা ওই কনসুলেটের দরজা জোর করে খুলে ভিতরে ঢুকে পড়েন। তার পরই চীনা কর্মীদের সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
শুধু তাই নয়, এরই মধ্যে তিনজন চীনা নাগরিককে মার্কিন আধিকারিকরা গ্রেফতারও করেছেন। অভিযোগ, তাঁরা চীনা সেনা। পরিচয় গোপন করে তাঁরা অ্যামেরিকায় ছিলেন এবং তথ্য চুরি করছিলেন। আরও এক চীনা নাগরিককে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। ওই ব্যক্তি একটি চীনা কনসুলেটে আশ্রয় নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কিছু দিন আগে এক সিঙ্গাপুরের নাগরিক মার্কিন আদালতে জানিয়েছেন, তিনি চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন।
করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর পর থেকেই চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে একাধিক সেনেটর এবং সচিব করোনা সংক্রমণের জন্য চীনকে দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, উহানের একটি পরীক্ষাগার থেকে করোনা ছড়িয়েছে। চীন চাইলে তা আটকাতে পারতো। ট্রাম্প বলেছিলেন, তাঁর কাছে এ বিষয়ে প্রমাণ আছে। এর পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের হয়ে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অর্থ দেওয়া বন্ধ করেছেন। অন্য দিকে, হংকং নিয়ে চীনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকেও ভালো চোখে দেখেনি ট্রাম্প প্রশাসন। প্রকাশ্যেই তার বিরোধিতা করেছে। লাদাখে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাতেও ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছেন ট্রাম্প।
এই পরিস্থিতিতে কনসুলেট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা গোটা বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, একুশ শতকে যুদ্ধের প্রকৃতি বদলে গিয়েছে। অ্যামেরিকা এবং চীন দুই দেশের হাতেই এখন পরমাণু শক্তি আছে। ফলে সরাসরি সংঘাতে কেউ যেতে চাইবে না। কিন্তু যে ভাবে করোনা-কালে দুই দেশ একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা একপ্রকার যুদ্ধেরই নামান্তর। এই সংঘাত আরও বৃদ্ধি পাবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এএফপি)