1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বিচার ব্যবস্থাভারত

ইডিকে ভর্ৎসনা বিচারপতির, দিদি-মোদী জোট নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্ন

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে তদন্তরত কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ইডি-কে তীব্র ভর্ৎসনা বিচারপতি অমৃতা সিনহার।

https://p.dw.com/p/4WoqK
কলকাতা হাইকোর্ট।
নিয়োগ-দুর্নীতি মামলা নিয়ে ইডিকে তীব্র ভর্ৎসনা বিচারপতি অমৃতা সিনহার। ছবি: Subrata Goswami/DW

ইডি-র তদন্তের ধারা, তাদের কার্যকলাপ, তাদের প্রাথমিকতা, তাদের তথ্য না দেয়া নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। বস্তুত বিচারপতির প্রশ্নবানে খেই হারিয়ে ফেলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিক ও আইনজীবীরা। বিচারপতি সিনহা সোজাসুজি বলেন, ''আপনারা ঠিকভাবে কাজ করছেন না। আমি জানি না, এর কারণটা কী?''

বিচারপতি বলেন, ''আপনারা যে নথি দয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাত্র তিনটি  বিমা আছে। তার কি কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই?  তিনি তো সাংসদ। তার বেতন তো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে? সেসব বিবরণ নেই কেন?

তখন ইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই বিবরণ অভিযুক্তর তরফে দেয়া হয়েছে। বিচারপতি বলেন, ''আপনারা কি পোস্ট অফিস? কেউ কিছু দিল, আপনারা সেটা কোর্টে দিয়ে দেবেন? আপনারা কেন তথ্য দেননি? আমি তো শকড। শুধু তিনটি বিমার কথা। আপনারা কি আদালতের কাছ থেকে তথ্য গোপন করতে চাইছেন?''

অভিষেকের সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়েও ইডি সেভাবে কোনো তথ্যই দেয়নি বলে জানিয়েছেন বিচারপতি সিনহা। তিনি জানতে চান, ''কেন এই সংস্থার সব ডিরেক্টরকে জেরা করা হয়নি। ওদের কারখানায় কী হত?''

বিচারপতি বলেছেন, ''আপনারা যে গতিতে চলছেন, তাতে তদন্ত কোনোদিন শেষ হবে না। আপনারা দেশের সেরা তদন্তকারী। কিন্তু আপনারা যেভাবে চলছেন, যে গতিতে চলছেন, যে নথিপত্র দিচ্ছেন, তাতে আমার মনে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।''

বিটারপতি সিনহার প্রশ্ন, ''আপনারা কী চান? তদন্ত সময়ে হোক, নাকি এরকমভাবে দেরি করতে করতে সব সূত্র হারিয়ে যাবে, সেটা চান? আপনারা কি প্রশিক্ষিত?  তদন্ত করার প্রশিক্ষণ পেয়েছেন?''  

বিচারপতি জানিয়েছেন, ''আপনারা নিজে থেকে কিছু করছেন না। আদালতের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছেন। আদালতের কাজ তদন্ত করা নয়। আদালত দেখছে, সবকিছু আইন মেনে হচ্ছে কি না। বিচারপতি বলেন, ইডি রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে কোনো তথ্য নেই। বলা হচ্ছে, ফ্ল্যাট আছে, জমি আছে। তার কোনো বিস্তারিত বিবরণ নেই।''

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে তার প্রশ্ন, একজন ডিরেক্টরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। বাকিদের কেন করা হলো না? তাদের একটা কারখানা আছে, সেটা নিয়েও বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই।

এভাবেই বিচারপতি ইডি-র তদন্ত নিয়ে চূড়ান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বিচারপতির এই পর্যবেক্ষণের পর রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ''ইডির উপরে যে কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপি-র কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই তা প্রমাণ হলো। এটাও সত্যি বন্দ্যোপাধ্য়ায় পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে আদালত শেষ দেখতে চায়। ইডি আধিকারিকদের উচিত, সময়ে তদন্তের কাজ শেষ করা।'' তবে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ থেকে কী করে বোঝা গেল,  ইডি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তার কোনো ব্যাখ্যা শুভেন্দু দেননি।

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ''ইডি তার তালিকায় কী রাখবে বা রাখবে না, তাদের বিষয়। অভিষেকের হলফনামায় সব সম্পত্তির বিবরণ আছে। ইডি কোনটা দিয়েছে, কোনটা দেয়নি সেটা তাদের ব্যাপার।। বিচারপতি অভিষেকের নাম করে জিজ্ঞাসা করছেন, ইডি জবাব দিচ্ছে, এই চিত্রনাট্যটা করে অভিষেককে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে।''

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ''একজন সাংসদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে না, সেটা যদি ইডি বলে, তাহলে তাদের আমি ইডিয়ট বলতে বেশি পছন্দ করব।''

সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী  এরপর আবার তৃণমূল-বিজেপি আঁতাতের প্রসঙ্গ আবার তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ''আমরা যখন দিদি-মোদী সেটিংয়ের কথা বলতাম, তখন অনেকে বিশ্বাস করতেন না। এখন বুঝুন।''

সিপিএম সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এবিপি আনন্দকে বলেছেন, ''বিচারব্যবস্থার স্বাধীন পদক্ষেপে ওরা আতঙ্কিত। মোদী-মমতার গভীর আঁতাত আছে। ইডির মতো সংস্থাকে দখল করে নিয়েছে ওরা। ওরা ভাবতে পারেনি স্বাধীন বিবেকবান বিচারপতিরা এরকম পদক্ষেপ নেবেন।''

'রাজনৈতিক তদন্ত'

ইডি নিয়ে বিচারপতির পর্যবেক্ষণের পর তদন্ত নিয়েও নানান প্রশ্ন উঠেছে। সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''এই সব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক তদন্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রয়োজনে যখন নড়াচড়া করা দরকার তখন তদন্ত গতি পায়, আবার যখন ঢিলে দেয়ার দরকার হয়, তখন তা থেমে থাকে।''

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলেছেন, ''সারদার তদন্ত তো নয় বছর ধরে চলছে।''

আশিসের বক্তব্য, ''সারদাতে এত কিছু বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানানো হলো, তার থেকে ক্ষতিপূরণ কতটা দেয়া হয়েছে? এই সব তদন্ত চলতেই থাকলে মানুষ একসময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।''

প্রশ্ন হলো, বিচারপতির এই ক়ড়া মনোভাবের পর তদন্তে কি গতি আসবে? তদন্ত কি দ্রুত শেষ হবে?

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এবিপি আনন্দ)