1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আন্দোলনে উত্তপ্ত ঢাকা, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

৪ আগস্ট ২০২৪

এক দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৷ সোমবার ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে৷ রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ছয়জনের মৃত্যুর হয়েছে।

https://p.dw.com/p/4j5lV
সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত ঢাকা
সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ শুরু রোববারেছবি: Abdul Goni/AFP

আগামীকাল ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৷ সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে এজন্য ঢাকায় আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা৷ রোববার এক বিবৃতিতে তারা এই তথ্য জানিয়েছে৷ শুরুতে মঙ্গলবার এই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিলেও পরে সমন্বয়কদের একজন আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জরুরি সিদ্ধান্তে তারা কর্মসূচিটি ৬ আগস্টের পরিবর্তে ৫ আগস্ট নিয়ে এসেছেন৷ বিবৃতিতে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘‘বিশেষ করে আশেপাশের জেলাগুলো থেকে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিয়ে সবাই ঢাকায় আসবেন এবং যারা পারবেন আজই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান৷ ঢাকায় এসে মুক্তিকামী ছাত্র জনতা রাজপথগুলোতে অবস্থান নিন৷’’

এর আগে এক বিবৃতিতে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘যদি ইন্টারনেট ক্র্যাকডাউন হয়, আমাদেরকে গুম, গ্রেপ্তার, খুনও করা হয়, যদি ঘোষণা করার কেউ নাও থাকে একদফা দাবিতে সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাই রাজপথ দখলে রাখবেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন৷''

সব এলাকায়, পাড়ায়, গ্রামে, উপজেলা, জেলায় ছাত্রদের নেতৃত্বে 'সংগ্রাম কমিটি' গঠনের আহ্বানও জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

রোববার ঢাকায় যা ঘটেছে

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং দুইজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। ষাটোর্ধ্ব এই প্রকৌশলী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। 

রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনকারীদের উপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ একাধিক মানুষ হামলায় আহত হয়েছেন। রাজধানীর একাধিক স্থানে সংঘর্ষ, বিক্ষোভ, অশান্তির ঘটনা ঘটেছে।

শাহবাগ এলাকার হামলায় আহতরা বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক জানান, আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান বিক্ষোভ করছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে বাংলামোটর-ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ের দিকে অবস্থান নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা৷ তারা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। সেই সময় গুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল বলে দ্য ডেইলি স্টার উল্লেখ করেছে।

আহতদের মধ্যে অন্তত ছয়জন বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা করতে যান। গুলিবিদ্ধ আহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে দ্য ডেইলি স্টার। তার নাম ইয়াসিন নূর। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের গাড়িচালক।

রোববার শাহবাগে অবস্থানরতদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলেরনেতাকর্মীও ছিলেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হন শ্রমিকরা। সহিংসতা এড়াতে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেওয়ার সময় প্রধান গেট থেকে বিক্ষোভকারীরা তিনজনের মরদেহ ছিনিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত মিছিল করে গেছে। রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিহত তিনজনের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভকারীরা শহীদ মিনারে যান। সেখান থেকে একজনের মরদেহ নিয়ে শাহবাগে মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা।

এ সময় আন্দোলনকারীরা হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দিতে থাকেন। শাহবাগ থানাকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন আন্দোলনকারীরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, স্থানীয় সময় বেলা তিনটা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ, শনির আখড়া, নয়াবাজার, ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, পল্টন, প্রেসক্লাব এবং মুন্সীগঞ্জ থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ১১১ জনকে এখানে আনা হয়েছিলো। এর মধ্যে ৩৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

দুপুরের দিকে উত্তরার আজমপুরে বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ২২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন৷

উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নয় জন ও ক্রিসেন্ট হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ১৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। আওয়ামী লীগের ক্যাম্পে ভাঙচুর চালানো হয়৷ একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।

ঢাকায় ছাত্র জনতার সরকারবিরোধী প্রতিবাদ
ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছেছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। সংঘর্ষের জেরে হাউস বিল্ডিং থেকে জসীমউদ্দিন পর্যন্ত ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক দখল করেন প্রতিবাদীরা। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে৷

রোববার, ঢাকার সিএমএম কোর্টের সামনে পুলিশের গাড়িতে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেন।

পরিবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আসাদুজ্জামানের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। রোববার স্থানীয় সময় বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেই সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা গিয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে মুখর ঢাকার রাজপথ
পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জরুরি সিদ্ধান্তে তারা কর্মসূচিটি ৬ আগস্টের পরিবর্তে ৫ আগস্ট নিয়ে এসেছেন বৈষম্যবিরোধাী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সায়েন্স ল্যাব হয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। আশপাশের এলাকায় পুলিশের অবস্থান দেখা যায়নি। ওই এলাকার সড়ক বিভাজক ভাঙচুরের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।

ঢাকার বাংলামোটরে আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শাহবাগ ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেওয়ার পর কারওয়ান বাজার থেকে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল সেদিকে যায়। তারপর বাংলামোটরে সংঘর্ষ শুরু হয়।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রোববার থেকেই রাজপথে অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ৷ পুরো আগস্ট মাস জুড়ে রাজপথে অবস্থান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

শাহবাগে জমায়েত প্রতিবাদীদের
রোববার সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান বিক্ষোভ করছিলেন। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

আরকেসি/এফএস (দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো)