1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বিচার ব্যবস্থাভারত

অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন ছয় চিকিৎসক

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৬ অক্টোবর ২০২৪

জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশনের একদিন পার হলেও এখনও মেলেনি কোনো সমাধান৷ রাজ্যের জবাব পাওয়ার অপেক্ষায় আন্দোলনকারীরা৷ কুলতলির আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা৷

https://p.dw.com/p/4lSo7
ভারতের কলকাতায় ১০ দফা দাবিতে অনশনে ৬ চিকিৎসক৷
১০ দফা দাবি সামনে রেখে নতুন করে আন্দোলনে কলকাতার জুনিয়র চিকিৎসকেরা। ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলে শনিবার রাত সাড়ে আটটায় অনশন শুরু করেন ছয় চিকিৎসক৷ ছবি: Subrata Goswami/DW

উৎসবের ঠিক আগের প্রহরে অর্থাৎ রোববারও সেই অনশন চলেছে৷

অনশনে ছয়

আর জি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে প্রথম দফায় ৪২ দিন আন্দোলন করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা৷ তারা কাজে যোগ দিলেও একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসক নিগ্রহ ফের তাদের আন্দোলনে ফিরিয়ে এনেছে৷ কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলেও এখন তারা অনশনে৷

শনিবার থেকে অনশনে বসেছেন ছয় চিকিৎসক৷ তারা হলেন: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, স্নিগ্ধা হাজরা, তনয়া পাঁজা, এসএসকেএমের অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা এবং এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের পুলস্ত্য আচার্য। একটি বোর্ডে লেখা আছে কত ঘন্টা ধরে অনশন চলছে। অন্য একটি বোর্ডে অনশনকারীদের নামের পাশে তাদের রক্তচাপ সহ অন্যান্য তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে।

ধর্মতলার এই অবস্থানে অনশনকারীদের পাশে রয়েছেন অন্যান্য জুনিয়র চিকিৎসকেরাও। দিনভর মঞ্চে আনাগোনা রয়েছে সিনিয়র চিকিৎসক ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের। ন্যাশনাল মেডিক্যালের সিনিয়র চিকিৎসকেরা এদিন এসে জুনিয়রদের হাতে চেক তুলে দেন৷ সিনিয়র চিকিৎসকেরা ধর্মতলায় রিলে অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তবে আর জি করের কোনো চিকিৎসক কেন অনশনে নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷

অবস্থান চললেও সেখানে কোনো শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি৷ আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুলিশকে জানালেও বায়ো টয়লেট পাওয়া যায়নি। পুলিশের মোবাইল ভ্যান ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে না। চিকিৎসকেরা নিজেরাই বায়ো টয়লেট তৈরি করে নেন৷ সাহায্য করেন রোগী পরিবারের এক সদস্য। তিনি শৌচালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে আসেন। আন্দোলনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এদিন মঞ্চের দুপাশে দুটি সিসিটিভি বসানো হয়৷

চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, "কোনো নাটকীয় মুহূর্তের অপেক্ষায় না থেকে সরকারের উচিত গঠনমূলক আলোচনা করে স্থায়ী সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া৷ আবার কিছুদিন পর দুই ঘণ্টার বৈঠক হবে, সইসাবুদ হবে, আবার বিরোধ দেখা যাবে। এভাবে রাজ্যের ১১ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করা যাবে না৷''

সরকারের উচিত আলোচনা করে স্থায়ী সমাধান করা: কুণাল সরকার

কুলতলির আন্দোলনে সমর্থন

জুনিয়র চিকিৎসকরা কুলতলি গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। শনিবার এক কন্যাশিশুর ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে উত্তাল হয়ে ওঠে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চতুর্থ শ্রেণীর ওই ছাত্রী নিখোঁজ থাকলেও ডায়েরি নিতে চাইনি তারা। এর প্রতিবাদে রবিবারও রাস্তায় নেমেছেন গ্রামবাসী।

এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসকদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রোববার কুলতলি যায়। চিকিৎসক আন্দোলনের অন্যতম মুখ অনিকেত মাহাতো ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমাদের প্রতিনিধিরা নির্যাতিতার পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন। আমরা সব অন্যায়ের সঠিক বিচারের পক্ষে। সমাজ থেকে ধর্ষণের মতো অবক্ষয়কে দূর করা যাবে না, কিন্তু আমাদের আন্দোলন যে চেতনার জাগরণ ঘটিয়েছে তা সমাজের সুরক্ষা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।"

আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কুলতলির ক্ষেত্রে যাতে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য কলকাতা হাইকোর্ট কল্যাণী এইমসে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সোমবার বেলা বারোটার মধ্যে কলকাতার কাঁটাপুকুর মর্গ থেকে নাবালিকার দেহ নিয়ে যেতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কল্যাণীর হাসপাতালে।

এদিন পকসো ধারায় মামলা রুজু করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। নিহতের পরিবার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

পুলিশের পাশে মমতা

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও রাজ্য সরকার তা খারিজ করছে। আর জি কর থেকে কুলতলি, একই প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের কাজের প্রশংসা করেছেন আরো একবার।

রবিবার আলিপুর বডিগার্ড লাইনে দুর্গাপুজোর সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "হাজারটা কাজের মধ্যে একটু ভুল ত্রুটি হয়ে গেলে অযাচিতভাবে, অজানা ভাবে, সেটা নিয়ে অনেক কথা বলে, কুৎসা করে। একটা কিছু ভুল হলে…কাজ করতে গেলে আমাদের কি ভুল ত্রুটি হয় না? দু-একটা ঘটনা হয়ে গেলে বাংলায় চিৎকার চেঁচামেচি বেশি হয়… সেটা করা উচিত, অন্য জায়গায় কিছু হলে মুখে লিউকোপ্লাস্ট দিয়ে থাকলে চলবে না।"

মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর ডিডাব্লিউকে বলেন, "পুলিশ কমিশনার বলেছেন পুজোর মধ্যে কোনো প্রতিবাদ করা যাবে না। এই উস্কানি যদি পুলিশের সর্বোচ্চ মহল থেকে দেয়া হয়, সেটা নীচের মহল অবধি পৌঁছে গেছে৷ ফলে পুলিশ শাসক দলের জন্য অতিসক্রিয়তা আর সাধারণ মানুষের জন্য চরম নিষ্ক্রিয়তা দেখায়। দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন না হলে এসব পাল্টানো যাবে না।"

অনশনে কলকাতায় ছয় চিকিৎসক৷
জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশনের একদিন পার হলেও এখনও মেলেনি কোনো সমাধান৷ রাজ্যের জবাব পাওয়ার অপেক্ষায় আন্দোলনকারীরা৷ ছবি: Subrata Goswami/DW

পুলিশের নানা কাজ সম্পর্কে সার্টিফিকেট দেন মুখ্যমন্ত্রী। চিকিৎসক সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি তথা ছয়টি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের অন্যতম কর্তা কৌশিক চাকী ডিডাব্লিউকে বলেন, "যদি পুলিশই সবকিছু করে, তাহলে সবকিছু নিয়ে পুলিশের কাছে যাওয়া উচিত। কোনোদিন বলতে পারেন, অসুস্থ হলে পুলিশের কাছেই যাওয়া উচিত। যে পরিস্থিতিতে ডাক্তাররা কাজে ফিরেও আবার অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছে, সেখানে কিছু হলে দায় সরকারের।"

শাসক শিবিরের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশে করা মন্তব্য শোনা যাচ্ছে। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, "কেন কর্মবিরতি চালানোর সময় হাজিরা খাতায় সই করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা, কেন মাসের ৩২ হাজার টাকা স্টাইপেন্ড নিয়েছেন? এটা জনগণের সঙ্গে তঞ্চকতা।"

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ সমাজমাধ্যমে চিকিৎসকদের নিশানা করেছেন। তার বক্তব্য, অনশনের ফলে চিকিৎসকরা যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তার জন্য দায়ী থাকবে প্ররোচকেরা। এর পাল্টা জুনিয়র চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ বলেন, "কে প্ররোচনা দিয়েছে, কে পিছনে রয়েছে, এ নিয়ে গবেষণা করার বদলে যদি সরকার আমাদের দাবি নিয়ে একটু ভাবে, তাহলে সমস্যার সমাধান হয়।"

উৎসব দিনের ধরনা

নিহত চিকিৎসকের বাবা ও মা পুজোর চারটে দিন ধরনা অবস্থান করবেন। সোদপুরে তাদের বাড়ির কাছেই তৈরি হয়েছে মঞ্চ। সেখানে দুর্গাষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত অবস্থান করবেন তারা। সবাইকে সেখানে যোগ দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন তারা।

মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চেয়ে উৎসবের আবহে বার্তা দিয়েছেন এই অভিভাবকরা। তাদের আর্তি, উৎসবের সময়ও যেন সাধারণ মানুষ বিচারের প্রার্থনা করেন। সমাজের অসুরকে বিনাশ করতে এগিয়ে আসেন।

নিহত চিকিৎসকের বাবা-মায়ের এই আবেদন অডিও বার্তা রূপে মন্ডপে মন্ডপে প্রচারের আবেদন জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের সংগঠনের পক্ষে ডা. পুণ্যব্রত গুণ কলকাতার ১০০টি পুজোর উদ্যোক্তাকে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করেছেন যাতে অভিভাবকদের বার্তা প্রচার করা হয়। চিকিৎসকরা চাইছেন মন্ডপেও থাকুক প্রতিবাদের ছোঁয়া। এজন্য দ্রোহ মঞ্চ তৈরির আবেদন জানিয়েছেন তারা।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান