1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হঠাৎ ধরনাস্থলে মমতা, বৈঠকের সিদ্ধান্ত

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আচমকাই জুনিয়র চিকিৎসকদের ধরনাস্থলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবস্থানকারী চিকিৎসকদের উদ্দেশে বার্তা দেন তিনি। আন্দোলনকারীদের ইচ্ছেয় তাদের সঙ্গে শনিবারই বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য।

https://p.dw.com/p/4kd28
কলকাতায় আরজি কর কাণ্ডে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই হাজির হয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতেছবি: Satyajit Shaw/DW

৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার পর থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা চললেও সমাধান সূত্র বের হয়নি। এমনকি দুই তরফের বৈঠক শেষ মুহূর্তে ভেস্তে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই চিকিৎসকদের কাছে এলেন।

ধরনা স্থলে মমতা

পাঁচদিন ধরে সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। নিম্নচাপের জেরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলা সত্ত্বেও তারা অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। শনিবার দুপুরে হঠাৎই তাদের অবস্থানে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে বিচারের দাবিতে জোরালো স্লোগান তোলেন আন্দোলনকারীরা। স্লোগান থামলে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দেন জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশে। বলেন, ‘‘যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করব। আমি একা সরকার চালাই না। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি সকলের সঙ্গে আমি আপনাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করব। যদি কেউ দোষী হন, শাস্তি পাবেন।"

চিকিৎসক পড়ুয়ার খুনের ঘটনার পাশাপাশি হাসপাতালের দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এ বিষয়ে মমতা বলেন, "সিবিআইকে অনুরোধ করব, দ্রুত তদন্ত শেষ করুন। দোষীদের ফাঁসি হোক। কেউ দোষী থাকলে আমি নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব। এটুকু বলতেই আমি এসেছি।''

গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি হয়, প্রধান বিচারপতি সময় বেঁধে দেন মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে আন্দোলনকারীদের কাজে যোগ দিতে হবে নইলে ব্যবস্থা নিতে পারবে রাজ্য সরকার। এ প্রসঙ্গে মমতা বলেন বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা চলছে। কোনো পদক্ষেপ আপনাদের বিরুদ্ধে করা হবে না। এখন আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এখানে আসিনি। আন্দোলনের সমব্যথী হিসাবে এসেছি। আপনাদের বড় দিদি হয়ে এসেছি। আমাকে সময় দিন।''

কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে অনড় আন্দোলনকারীরা। স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের বিরুদ্ধেও তাদের ক্ষোভ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি সত্যি কেউ দোষী হয়, তারা শাস্তি পাবে। কেউ আমার বন্ধু বা শত্রু নয়। যাঁদের আমার বন্ধু বলছেন, আমি তাদের চিনিই না। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁরা এসেছেন। আমি সাধ্যমতো পদক্ষেপের চেষ্টা করব।''

সমিতি ভাঙার সিদ্ধান্ত

হাসপাতাল ঘিরে যেসব অনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছে, তাতে আন্দোলনকারীদের নিশানায় রয়েছেন রোগী কল্যাণ সমিতির কর্তারা। শাসক দলের মদতে এই সমিতি নানা অনাচারে যুক্ত বলে অভিযোগ।

জুনিয়র চিকিৎসকদের সামনে মমতার ঘোষণা, "সব হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি নতুন করে তৈরি করা হবে। তাতে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, পুলিশ সকলের প্রতিনিধি থাকবে। আরজি করের রোগী কল্যাণ সমিতি আমি ভেঙে দিলাম। নতুন করে তা তৈরি করা হবে।''

মুখ্যমন্ত্রীর আগমনকে সদর্থক বলে মনে করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাদের অন্যতম নেতা অনিকেত মাহাতো বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী অভিভাবকের মতো আমাদের কাছে এসেছন। কিন্তু ৩৪ দিন পর কেন এলেন? আমাদের পাঁচ দফা দাবির ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অবিলম্বে আলোচনায় বসতে চাই।"

নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর আন্দোলনকারীরা বৈঠকের ইচ্ছে প্রকাশ করেন রাজ্যের কাছে। তাতে সাড়া দিয়ে এদিন সন্ধ্যা ছটায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদের বৈঠকের সময় স্থির হয়।

গত বৃহস্পতিবার নবান্নে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনা ভেস্তে গিয়েছিল। ৩২ জন জুনিয়র চিকিৎসক নবান্নের দোরগোড়ায় পৌঁছলেও বৈঠক হয়নি। আন্দোলনকারীরা বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং করার দাবি তুললেও রাজ্য তা মানেনি।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সভাপতি কৌশিক চাকী ডিডাব্লিউকে বলেন, "জুনিয়র চিকিৎসকরা যে দৃঢ়তার সঙ্গে আন্দোলন করছেন, সেজন্য মুখ্যমন্ত্রী তাদের কাছে এসেছন। তবে তিনি স্বগতোক্তির ঢঙে কয়েকটা কথা বলেছেন। আন্দোলনকারীদের পাঁচ দফা দাবি সম্পর্কে কিছু বলেননি।"

অল ইন্ডিয়া জয়েন্ট অ্যাকশন ফোরামের সর্বভারতীয় সমন্বয়ক প্রাজ্ঞ অনির্বাণ বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, যদি কেউ দোষী থাকে। এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত হয়নি। যদির কোন অবকাশ নেই। অবশ্যই দোষীরা আছে এবং তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে।"

সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক সজল বিশ্বাস ডিডাব্লিউকে বলেন, "সমিতি ভাঙলেও ঘুঘুর বাসা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। রোগী কল্যাণ সমিতির পরিবর্তে অধ্যক্ষ থাকলেও একই দুর্নীতি হবে। বরং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সংগঠনগুলির প্রতিনিধি রাখতে হবে কমিটিতে। ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।"

ধৃত বাম নেতা

জুনিয়র চিকিৎসকদের ধরনা চলাকালীন সেখানে হামলার চক্রান্ত করা হয়েছিল। একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে এনে শুক্রবার এমনই অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এই সংক্রান্ত অভিযোগে সেদিনই গ্রেপ্তার করা হয় সঞ্জীব দাসকে। শনিবার পুলিশ গ্রেপ্তার করল বাম যুব নেতা কলতান দাশগুপ্তকে।

কুণালের অভিযোগ, "বৃহস্পতিবার জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের প্রক্রিয়া চলার সময় দু'-তিনটে শিবির হামলা করার ছক কষেছিল।” ফোনের কল রেকর্ডিংয়ে কাদের গলা শোনা গিয়েছে, সে সম্পর্কে ইঙ্গিতপূর্ণ দাবি করেন তিনি।

একজনকে ‘স' এবং অপরজনকে ‘ক' বলে সম্মোধন করেছিলেন কুণাল। তার দাবি, একজন বাম যুব সংগঠন ও অপরজন অতি বাম যুব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সঞ্জীব ধরা পড়েছিলেন আগেই, অন্যজনকে তা নিয়ে জল্পনা চলছিল।

চক্রান্তের অভিযোগ

নাটকীয়ভাবে এদিন পাকড়াও করা হয় কলতানকে। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার লালবাজারের কাছে রাত জাগেন বাম কর্মীরা। সেখানেই ছিলেন ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান। শনিবার ভোরে তিনি যখন বাড়ি ফিরছেন, সেই সময় তার গাড়ি ঘিরে ধরে তাকে আটক করে পুলিশ। পরে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযোগ খারিজ করে ধৃত কলতান বলেন, "গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। মূল আন্দোলন থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।" সিপিএম সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, "পুলিশের উচিত সবার আগে কুণাল ঘোষকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা। বামপন্থীদের হেনস্থা করতে কাঁচা চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন তিনি।"

সমাজমাধ্যমে পাল্টা বামেদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন কুণাল। তার প্রশ্ন, "অডিওর একটি কণ্ঠ কি কলতান দাশগুপ্তের নয়?" বিধাননগর পুলিশের দাবি, টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস করে অডিও ক্লিপের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এটা দুই ধৃতের মধ্যে কথোপকথন।

ক্লিপের সত্যতা বা যুব নেতার কণ্ঠস্বর নিয়ে সরাসরি জবাব দেননি সিপিএম নেতারা। সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, "এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে গভীর চক্রান্ত করেছে সরকার। সিবিআই তদন্ত করে দেখুক।"