1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলা লোকগান

আশীষ চক্রবর্ত্তী১০ জানুয়ারি ২০১৩

বাংলা লোকগানের অবিস্মরণীয় এক নাম আব্বাস উদ্দিন আহমেদ৷ ক’দিন আগে পালিত হলো তাঁর ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী৷ এ উপলক্ষ্যে যেন পুনর্জন্ম হলো তাঁর৷ বাজারে এলো ৩০টি গান নিয়ে জোড়া সিডির অ্যালবাম ‘স্মরণীয় বরণীয়’৷

https://p.dw.com/p/17Gv7
ছবি: DW

জন্ম ১৯০১ সালের ২৭শে অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে৷ আইনজীবীর ছেলে আব্বাস উদ্দিন আহমেদ সংগীত জীবনে প্রায় সব ধরনের গান গাইলেও প্রথমে নজর কেড়েছিলেন রংপুর ও কুচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া, ক্ষীরোল চটকা গেয়ে৷ পরে জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া, পালা গানও গেয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যান৷ তাঁর প্রথম রেকর্ডে ছিল ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই' এবং ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে..'৷ ‘ও আমার দরদি আগে জানলে', ‘ওকি ও বন্ধু কাজল ভ্রোমরা রে', ‘মাঝি বাইয়া যাও রে', ‘সোনা বন্ধুরে কোন দোষেতে যাইবা ছাড়িয়া', ‘আমার হার কালা করলাম রে', ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে', ‘নদীর কুল নাই কিনার নাই রে', ‘আমায় এতরাতে কেনে ডাক দিলি', ‘আমায় ভাসাইলি রে আমায় ডুবাইলি রে', ‘থাকতে পারঘাটাতে তুমি পারের নাইয়া'-র মতো আব্বাস উদ্দিনের অনেক গানই তখন সবার মুখে মুখে ফিরতো৷

এখনো কি তাঁর গানগুলো আমরা শুনিনা? নিশ্চয়ই শুনি, নানা জনের কণ্ঠে, নানাভাবে শুনি৷ তেমন করে শোনা যায় না শুধু আব্বাস উদ্দিনের নাম৷ তবে তাঁর ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে দুই বাংলাই যেন নড়েচড়ে বসেছে৷ বাজারে এসেছে আব্বাস উদ্দিনের ৩০টি গান নিয়ে জোড়া সিডির অ্যালবাম ‘স্মরণীয় বরণীয়'৷ প্রকাশক কান্ট্রি মিউজিক৷ আব্বাস উদ্দিনের ছেলে, লোকগীতি শিল্পী এবং গবেষক মুস্তাফা জামান আব্বাসী টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে খুশির খবরটা জানানোর সময়, এতদিন পর এমন উদ্যোগের বিশেষ কারণটাও বললেন৷ জানালেন, এতদিন গানগুলো পাইরেসি করে অনেক অসাধু প্রতিষ্ঠানই বাজারজাত করেছে, গানগুলোর শ্রবণমান ভালো ছিল না, তাই শ্রোতাদের কাছে আব্বাস উদ্দিনের গানকে যতটা সম্ভব সুখশ্রাব্য করে ফিরিয়ে আনার ভাবনা থেকেই এবারের এই উদ্যোগ৷

Herasha Khatim Sarinda
আব্বাস উদ্দিনের গান আজও দুই বাংলায় গাওয়া হয়ছবি: DW/Sirsho Bandopadhyay

জোড়া সিডিতেই শেষ নয় আব্বাস উদ্দিনকে শ্রদ্ধা জানানো৷ দু'বাংলা এবার তাঁকে এমনভাবে স্মরণ করেছে এবং করছে যেন ৫৩ বছর পর পুনর্জন্ম হলো তাঁর৷ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির কাজী নজরুল ইসলাম-আব্বাস উদ্দিন আহমেদ রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক মুস্তাফা জামান আব্বাসী জানালেন আরো কিছু তথ্য৷ এ বছর নজরুলকে নিয়ে একটা বই প্রকাশিত হয়েছে, আগামী বছর আসছে আব্বাস উদ্দিনের বই৷

তার আগে অবশ্য দু'জনকে নিয়ে অন্যরকম এক আয়োজনও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি সেরে ফেলেছে বলে জানালেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী৷ বললেন, ‘‘আগামী বছর বের হবে আব্বাস উদ্দিনকে নিয়ে বই ‘আব্বাস উদ্দিন: ম্যান অ্যান্ড পোয়েট'৷ এছাড়া আব্বাস উদ্দিন এবং নজরুলের ১৪০টি ছবি সংগ্রহ করেছি আমি৷ এসব ছবি নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে৷''

বাংলা লোকসংগীতের প্রবাদপ্রতীম শিল্পীকে নিয়ে মাত্র একটি বই? না, বিস্মিত বা হতাশ হবার কিছু নেই৷ আব্বাস উদ্দিনের ছেলেই সগর্বে দিয়েছেন সব মিলিয়ে চোদ্দটি বই প্রকাশের খবর: ‘‘আমার আব্বার ১৪টি বই বেরিয়েছে৷ আটটা বেরিয়েছে ঢাকায় এবং ছয়টা বই কলকাতায়৷''

ব্রিটিশ শাসনের শেষ লগ্ন পর্যন্ত অবিভক্ত ভারতবর্ষেরই শিল্পী ছিলেন আব্বাস উদ্দিন আহমেদ৷ দেশভাগের ৬৫ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪১ বছর পর তাঁর সুরের রাজ্য কতটা বিস্তৃত? আব্বাস উদ্দিনের গান কি শুধু বাংলাদেশের? ভাষা এবং সংস্কৃতির মিল, জন্মভূমি – এসব কি তুচ্ছ? কারো যদি এমন মনে হয়েও থাকে, মুস্তাফা জামান আব্বাসীর কথা শুনলে তাঁর ভুল ভাঙবে৷ তিনি জানিয়েছেন, এবার আব্বাস উদ্দিনকে তাঁর জন্মভূমিই বেশি বড় আঙ্গিকে স্মরণ করেছে: ‘‘গত ২৮শে ডিসেম্বর কুচবিহারে দু'দিনব্যাপী আমার বাবা এবং নায়েব আলী টিপুর স্মরণোৎসব হয়েছে৷ সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ এছাড়া ৩০শে ডিসেম্বর মালদহ স্টেডিয়ামে খুব বিরাট করে আব্বাস উদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য