1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মধ্যরাত পর্যন্ত বৈঠকের পরেও মিলল না সমাধানসূত্র

১০ অক্টোবর ২০২৪

অনশন উঠছে না জুনিয়র চিকিৎসকদের। মধ্যরাত পর্যন্ত মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক হয় আন্দোলনকারীদের। কিন্তু সমাধানসূত্র মেলেনি।

https://p.dw.com/p/4lbSp
আমরণ অনশন চলছে
ধর্মতলায় আমরণ অনশনে জুনিয়র ডাক্তররাছবি: Subrata Goswami/DW

একের পর এক নাটকীয় ঘটনার সাক্ষী থাকল ষষ্ঠীর কলকাতা। বুধবার দুপুরে আন্দোলনকারীদের মিছিল আটকালো পুলিশ। প্যান্ডেলে উঠল 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' স্লোগান। যার পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিধারা সম্মিলনীর মণ্ডপ থেকে আন্দোলনকারীদের আটক করল পুলিশ। তার প্রতিবাদে ঘেরাও করা হলো লালবাজার। অন্যদিকে, আন্দোলনকারীদের হঠাৎই ইমেল করে বৈঠকে ডাকলেন মুখ্যসচিব। মধ্যরাত পর্যন্ত বৈঠক হলো স্বাস্থ্যভবনে কিন্তু সমাধানসূত্র মিলল না। চুম্বকে এই হলো ষষ্ঠীর কলকাতার ছবি।

বুধবার সন্ধে সাড়ে ছটা নাগাদ মুখ্যসচিব ইমেল করে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে আহ্বান জানান। স্বাস্থ্যভবনে পৌনে আটার সময় তাদের বৈঠকে ডাকা হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ধর্মতলায় অনশন মঞ্চে পৌঁছান অপর্না সেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে যান রাজ্যপাল। নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর রাত সাড়ে আটটা নাগাদ স্বাস্থ্যভবনে রওনা হন জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দল। স্বাস্থ্যভবনে বৈঠক শুরু হয় রাত পৌনে দশটায়।

এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, স্বাস্থ্যসচিব। এছাড়াও বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের এই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। রাত পৌনে দশটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বৈঠক। বৈঠক শেষে সরকারের তরফে বলা হয়, ইতিবাচক বৈঠক হয়েছে। মুখ্যসচিবের বক্তব্য, ''আমরা ওদের কাজের অগ্রগতির কথা জানিয়েছি। অনশন প্রত্যাহার করার আর্জি জানিয়েছি।'' জুনিয়র ডাক্তাররা সাংবাদিক বৈঠক করেন রাত তিনটে নাগাদ। সেখানে তারা জানান, বৈঠক থেকে কোনো সমাধানসূত্র উঠে আসেনি। তাদের অভিযোগ, এর আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যসচিব ঠিক যা যা কথা বলেছিলেন, এদিনও ডাক্তারদের সেই কথাগুলিই বলেছেন তিনি। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজ্য কী কী কাজ শেষ করবে।

জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম নেতা দেবাশিস হালদারের অভিযোগ, রাজ্য যে কাজগুলি করার কথা বলছে, তা ভিত্তিহীন। তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে রাজ্যের ওই কাজগুলি করার কথা ছিল। এবিষয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা রাজ্যকে ইমেল করেছিলেন। কিন্তু রাজ্য তার কোনো জবাব দেয়নি। যে প্রক্রিয়ায় রাজ্য কাজ করছে, তা সন্তোষজনক নয় বলেই মনে করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।

শুধু তা-ই নয়, এদিন আবার রাজ্যজুড়ে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের প্রতিনিধিরা এবিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করতে পারেনি বলেই অভিযোগ ডাক্তার প্রতিনিধিদের। দেবাশিসের কথায়, ''ওরা আমাদের বিভিন্ন কমিটিতে যোগ দেওয়ার কথা বলছেন। ঠিক যেভাবে সন্দীপ ঘোষদের নিয়োগ করা হয়েছিল। ওরা কী করে জানছেন যে আমরাও এক একজন সন্দীপ ঘোষ বা বীরুপাক্ষ নই! কেন নির্বাচনের মাধ্যমে এই নিয়োগ হবে না?''

জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, এদিনের বৈঠকে একটি বিষয়ই বার বার বলার চেষ্টা করেছেন রাজ্যের প্রতিনিধিরা। যা হওয়ার পুজোর পরে হবে। তার আগে অনশন তুলে নেওয়া হোক। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা স্পষ্ট জানিয়েছেন, আপাতত অনশন উঠবে না। বস্তুত, বৃহস্পতিবার সপ্তমীর দিন পঞ্চম দিনে পড়ল নয় জুনিয়র চিকিৎসকের আমরণ অনশন। এর মধ্যে সাতজন কলকাতায় এবং দু'জন উত্তরবঙ্গে অনশন করছেন।

গণ ইস্তফা অব্যাহত

মঙ্গলবার আরজি করে মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকেরা গণ ইস্তফার পথে হেঁটেছিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে এবং বুধবার দিনভর বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকেরা গণ ইস্তফা দিয়েছেন। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ আছে। সব মিলিয়ে দুশ জনেরও বেশি চিকিৎসক এখনো পর্যন্ত গণ ইস্তফা দিয়েছেন। তারা সকলেই মিছিল করে ধর্মতলায় অনশনমঞ্চে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা সময় বেঁধে দিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সুরাহা না হলে তারাও গণ ইস্তফা দেবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে বেসরকারি হাসপাতাল কলকাতা অ্যাপোলোর কনসালটেন্ট চিকিৎসকেরাও কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। চিঠিতে তারা লিখেছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমার্জেন্সি চিকিৎসা এবং গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন ছাড়া আর কোনো কাজ করবেন না তারা।

পুজো প্যান্ডেলে বিক্ষোভ, আটক

এদিকে এদিন গোটা শহরজুড়ে একের পর এক মিছিল হয়েছে। সর্বত্রই পুলিশ মিছিল আটকানোর চেষ্টা করেছে। আন্দোলনকারীরা একটি মিনিডোরে করে অভয়া পরিক্রমা শুরু করেছিলেন। চাদনি চকের কাছে পুলিশ সেই মিনিডোরের চাবি কেড়ে নেয়। এরপর আন্দোলনকারীরা মিছিল করে পরিক্রমা করতে গেলেও তাদের বাধা দেওয়া হয়।

লালবাজার ঘেরাও
লালবাজার ঘেরাও করেছেন আন্দোলনকারীরাছবি: Subrata Goswami/DW

অন্যদিকে একদল ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলে গিয়ে জাস্টিসের স্লোগান দেন। ম্যাডক্স স্কোয়্যারে কোনো সমস্যা না হলেও ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজো প্যান্ডেলের বাইরে আচমকাই তাদের পুলিশ ধরপাকড় শুরু করে। সব মিলিয়ে ২৯ জনকে আটক করে লাবাজার নিয়ে যাওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ধর্মতলা থেকে আন্দোলনকারীরা লালবাজারের সামনে পৌঁছে যান। মধ্যরাত পর্যন্ত লালবাজারের সামনে দু'টি রাস্তা অবরুদ্ধ করে তারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশের সঙ্গে আলোচনায় বসে। মাঝ রাতেই অধিকাংশ আন্দোলনকারীকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে নয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের আদালতে পেশ করা হবে। আন্দোলনকারীরা এই রিপোর্ট লেখার সময়েও লাবাজারের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন। 'সহযোদ্ধা'দের না ছাড়া পর্যন্ত তারা অবস্থান তুলবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের অসুবিধা না করে বৃহস্পতিবার, সপ্তমীতেও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। তবে জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাদের যে সহযোদ্ধারা অনশন করছেন, তাদের শরীর ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই তারা অনশন বন্ধ করতে রাজি হচ্ছেন না।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)