1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লির কোরবানির হাটে একজন করিম মিঞা

২৩ জুন ২০২৩

বকরি ঈদ ঘিরে ক্রমশ জমে উঠছে দিল্লির পশুবাজার। কেমন সেই বাজার? কত দামে বিক্রি হচ্ছে পশু?

https://p.dw.com/p/4Szuh
Indien Eid Markt in Neu Delhi
ফাইল ফটো৷ছবি: Rouf Fida/DW

করিম মিঞা এসেছেন উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর থেকে। বছরের এই একটা সময় দিল্লিতে আসেন তিনি হপ্তাখানেকের জন্য। জামা মসজিদের পিছনে বাড়ির উপর বাড়ি উঠে থাকা এঁদো গলির ভিতর এক চিলতে ঘর ভাড়া নিয়ে তারা চারজন আছেন। সারা বছর ছাগল আর গরুর দুধ বিক্রি করে সংসার চলে তার। গোটা বছর তিনি চেয়ে থাকেন এই সময়টার দিকে। খান বিশেক ছাগল ভালো দামে বিক্রি হয়ে গেলে, গোটা বছরটা একটু সুখে কাটবে তার।

বাখরি ঈদ মানে পশুর বাজার। উত্তর ভারতে মূলত ছাগল এবং মহিষ। পূর্ব ভারতে গরু, দুম্বাও বিক্রি হয় প্রচুর। সময় সময় জানোয়ারের দাম পনের-বিশ লাখ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। করিম মিঞা দিল্লির জামা মসজিদের পিছনের পশু বাজারে পসার জমিয়েছেন। কিন্তু তার মন পড়ে আছে বাটলা হাউসে। দিনকয়েক আগে খবর পেয়েছেন, বাটলা হাউসের বাজার জমেছে বেশি। এখনো পর্যন্ত আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত ছাগলের দাম উঠেছে। আড়াই লাখের ছাগল দেখতে রীতিমতো ভিড় জমে গেছিল বাটলা হাউসের সুতলি গলিতে।

করিম মিঞাঁর ছাগল বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। দিল্লিতে এটাই ছাগলের গড় দাম। তবে ঈদ যত এগোবে, ছাগলের দামও বাড়তে থাকবে। ৩০ হাজার পর্যন্ত দাম তোলার ইচ্ছে আছে করিম মিঞার। ভালো ছাগল এখনো বাজারে নামাননি তিনি।

দিল্লিতে ছাগলের বাজার যতটা বড়, মহিষের বাজার ততটা নয়। ১৪ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে একটি মহিষ। এই দাম বড়জোর ২৫ হাজার পর্যন্ত যাবে বলে মনে করছেন মহিষ বিক্রেতারা। যাদের হাতে খুব বেশি টাকা নেই, তারাই মহিষের দিকে ঝোঁকেন। একটি মহিষ সাতজন মিলে কেনা যায়। ফলে টাকা ভাগাভাগি হয়ে যায়। কেউ কেউ আবার জাকাত দেওয়ার জন্য মহিষ কেনেন। জাভেদ আখতার তেমনই মানুষ। যমুনা পারের বাজারে আলাপ এই ক্রেতার সঙ্গে। ছাগল আরো কদিন পর কিনবেন তিনি। আপাতত মহিষ কিনতে এসেছেন। মহিষের মাংস বিলিয়ে দেওয়া হবে দরিদ্রসেবায়। আর বাড়ির জন্য নেবেন ছাগল। বছর সাতেক আগে পুরনো দিল্লির বাজার থেকে উট কিনেছিলেন জাভেদ। ওই একবারই। এবারও পুরনো দিল্লির বাজারে দু-একটি উট এসেছে। জাভেদ উট কিনেছিলেন ৩৫ হাজার টাকায়। এবারের উট বিক্রেতারা এখনো দাম ধরেননি। বাজার আরেকটু জমলে উটের দাম জানাবেন তারা। তবে ৫০ হাজারের নিচে নয়।

ইসলামিক স্কলার এবং জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতারুল ওয়েসির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, দিল্লিতে যে চার পাঁচটি পশুর বাজার বসে, তার মোট বাণিজ্যমূল্য কত হবে? পশুবাজার নিয়ে একসময় দীর্ঘ কাজ করেছেন আখতারুল সাহেব। হেসে বললেন, ''দিল্লির মান্ডিগুলিতে প্রতিদিন কত টাকার কেনা-বেচা হয়, তার নির্দিষ্ট হিসেব আছে। কিন্তু ঈদের বাজারের বাণিজ্য মাপা সম্ভব নয়।'' এর সবচেয়ে বড় কারণ, দিল্লিতে পশু বাজার যারা চালান, তারা অধিকাংশই আসেন বাইরে থেকে। রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার। এদের অনেকেই সরাসরি পশু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নন। সারা বছর একাজ তারা করেন না। কেবলমাত্র ইদের সময়েই তারা গবাদি পশু নিয়ে দিল্লির পশু বাজারে চলে আসেন বিক্রি করতে। ইদের পশু বাজার এতটাই অগোছালো যে এক কথায় মোট বাণিজ্যমূল্য বলা প্রায় অসম্ভব। তবু যদি একটি অগোছালো হিসেবও করা যায়, তাহলে দেখা যাবে সব মিলিয়ে দুশ থেকে আড়াইশ কোটি টাকার বিক্রিবাটা হয় শুধু ঈদের পশুবাজারে।

Syamantak Ghosh
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলে৷ছবি: privat

করমি মিঞার লক্ষ্য ঈদের বাজার থেকে অন্তত লাখ তিনেক টাকা তুলে নেওয়া। এই টাকাতেই নতুন পশু কিনবেন তিনি। আবার এক বছর ধরে ২০-২২টা ছাগল তৈরি করবেন পরের বছরের বাজারে নিয়ে আসার জন্য। করিম মিঞার মতো এমন হাজার হাজার বিক্রেতার দেখা মিলবে দিল্লির পশু বাজারে। বছরে এই একবারই যারা পশু বেচেন।

এই ঈদে বাজার জমে ছোট-বড় স্লটার হাউসগুলোরও। এমনিতে বড় পশু বাইরে বলি দেওয়া নিষিদ্ধ। নির্দিষ্ট জায়গাতেই কোরবানি হওয়ার কথা। পুরনো দিল্লি, জামিয়া, বাটরা হাউস, যমুনা পারের মতো জায়গায় দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার লেগে গেছে। বড় পশুর কোরবানি করার জন্য দুই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ছোট পশু হলে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। বছরের একটা বড় টাকা এই সময়ে কামিয়ে নেয় স্লটার হাউসগুলো। কিন্তু তাতেও কি দিল্লির রাস্তা রক্তমুক্ত থাকে?

জাভেদ বলছিলেন, কোনো কোনো সময় বাখরি ঈদের পর দিনদুয়েক রাস্তায় বের হওয়া যায় না। এতটাই রক্তাক্ত থাকে গলিপথ। আখতারুল সাহেবও একই কথা বলছিলেন। দুজনেই আঙুল তুলছেন পুরসভার দিকে। পশু যাতে নির্দিষ্ট জায়গাতেই কোরবানি হয়, তা দেখার দায়িত্ব পুরসভার। রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজও তাদের। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায়, তারা ঠিকমতো কাজ করছে না। ফলে কোরবানির পর কয়েকদিন পর্যন্ত রাস্তায় হাঁটাচলা মুশকিল হয়ে যায়।

এবছর দিল্লি পুরসভা অবশ্য বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, কোন কোন জায়গায় কোরবানি দেওয়া যাবে। জাভেদের বক্তব্য, যারা কোরবানি দিচ্ছেন, তাদেরকেও একটু সতর্ক হতে হবে। অনেক সময়েই দেখা যায়, বড় জানোয়ার নিয়ে যমুনা পারে ফাঁকা জায়গা চলে যান অনেকে। সেখানে নিজেরাই কোরবানির ব্যবস্থা করেন। এই অভ্যাসগুলি বন্ধ হওয়া জরুরি।

সব মিলিয়ে জমে উঠেছে রাজধানীর ঈদের বাজার। তবে কলকাতার পশুবাজার দিল্লির চেয়ে আকারে এবং পরিমাণে অনেকটাই বড়।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান