1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জিনিসের দাম কমে না কি, বাড়ে, বেড়েই চলে

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড়
১০ মার্চ ২০২৩

সব অঙ্ক, তথ্য, তত্ত্ব ডাহা ফেল৷ কোনো নিয়ম-কানুনের ধার ধারে না জিনিসের দাম, যা কেবল বেড়েই চলে৷

https://p.dw.com/p/4OU9P
কলকাতার একটি বাজার৷
সপ্তাহখানেক আগে যে পাতিলেবুর দাম ছিল আড়াইশো গ্রাম ২০ থেকে ২৫ টাকা, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়৷ ছবি: Satyajit Shaw/DW

জিনিসের দাম বাড়ে কেন-কথাটা শুনলেই মনে হয়, এর মধ্যে একটা বড় ভ্রান্তি আছে৷  জিনিসের দাম তো কখনো কমে না৷ শুধু বাড়ে৷ বেড়েই যায়৷ তাই প্রতি মাসে, প্রতি সপ্তাহে বা অনেক সময় প্রতিদিনই এই বিষয়ে গবেষণাপত্র  নামিয়ে ফেলা যায়৷ তাই যা কখনো কমে না, তাকে নিয়ে 'বাড়ে কেন' বলাটা তো ভুল৷ আরো বাড়ে কেন, আরো আরো বাড়ে কেন, এরকম প্রশ্ন বরং সঙ্গত৷

এরকম কত বিষয়ই আছে৷ যেমন ভারতে সরকারের ঘোষিত নীতি হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দরের ওঠাপড়া অনুযায়ী দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ে বা কমে৷ কিন্তু আন্তর্জার্তিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম যাই হোক না কেন, দেশে পেট্রোল, ডিজেলের দাম কমে না৷ শুধুই বাড়ে৷ খুব বেশি প্রশ্ন করলে সরকার জানায়, কল্যাণমূলক কাজটা তো করতে হবে! তার জন্য টাকাটা আসবে কোথা থেকে? সঙ্গত প্রশ্ন৷ সেক্ষেত্রে শুধু একটাই আবেদন, দয়া করে নীতিটা বদলান৷ ঘোষণা করে দিন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যাই হোক না কেন, দেশে তেলের দাম কমবে না, বরং বাড়বে৷ তা হলেই তো ল্যাঠা চুকে গেল৷

যারা অর্থনীতি পড়েন, চর্চা করেন, তারা নানারকম ব্যাখ্যা দেন, দিতেই থাকেন৷ চাহিদা-যোগানের কাহিনি শোনান৷ কিন্তু আমরা যারা নেহাতই সাধারণ মানুষ, তাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা বলে, দাম শুধু বাড়ে৷ ভালো বৃষ্টি হলে বাড়ে, না হলেও বাড়ে৷ ইউক্রেনে যুদ্ধ হলে বাড়ে, না হলেও বাড়ে৷ ভোট আসলে বাড়ে, না আসলেও বাড়ে৷ এককথায় জিনিসের দাম বাড়ে ,বেড়েই যায়৷ খরা, বন্যা, বিপর্যয়, চাহিদা, যোগান এ সব কিছু থাকলেও বাড়ে, না থাকলেও বাড়ে৷

এখন তো আবার ওই অর্থনীতিবিদরা দাম বাড়ার আরেকটা কারণের কথা জানাচ্ছেন৷ সেটা হলো, টাকার দাম পড়ে গেছে৷ ফলে জিনিস আমদানি করার খরচ অনেক বেড়ে গেছে৷ জিনিসপত্রের দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে, মানুষ আর সঞ্চয় করতে পারছে না৷ ফলে তারা তারা জিনিস কেনা কমিয়ে দিয়েছে, তার প্রভাব গিয়ে পড়েছে উৎপাদনক্ষেত্রে৷ আর রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির উপর এতটাই চাপ যে, যেসব দেশে কখনো জিনিসের দাম বাড়ত না, সেখানেও তা হুহু করে বাড়ছে৷ সুপারমার্কেটে জিনিসের আকাল দেখা যাচ্ছে৷

আসলে আমরা, মানে যারা অর্থনীতি তেমন জানি-বুঝি না, অন্য বিষয় নিয়ে পড়াশুনো করেছি, তাদের খুবই মুশকিল৷ আসলে আমরা একটা কথা বুঝতে পারি, যুদ্ধ যখন ছিল না, তখন কোভিড ছিল. কোভিড যখন ছিল না, তখন মন্দা ছিল, মন্দা যখন ছিল না, তখন ওই খরা, বন্যা, ভূমিকম্প, মেঘভাঙা বৃষ্টি ছিল৷ সবচেয়ে বড় কথা, ব্যবসায়ীরা ছিল, দালালেরা ছিল, ভোটের চাঁদা ছিল, সিন্ডিকেট ছিল, তোলাবাজি ছিল, দাদাগিরি ছিল, অসাধু মানুষরা ছিল, কৃষক ও ক্রেতাদের ঠকানোর ভরপুর ব্যবস্থা ছিল, তাহলে জিনিসের দাম কমবে কী করে? দাম বাড়বে, বাড়বে, বাড়বেই৷

সংখ্যাতত্ত্ব বলছে, ভারতে মানুষের সঞ্চয় এখন গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম৷ রিপোর্ট বলছে, দুই বছর আগেও যে সঞ্চয় ছিল জিডিপি-র ২১ শতাংশ, এক বছর আগেও যা ছিল ১২ শতাংশ, এখন তা দাঁড়িয়েছে চার শতাংশ মাত্র৷ মানুষ সঞ্চয়টা করবে কী করে! পরিস্থিতি সামলাতে রিজার্ভ ব্যাংক রেপো রেট বাড়াচ্ছে৷ তাতে ঋণে সুদের হার বাড়ছে৷ এখন তো সেই চার্বাকদের মতো ঋণ করে ঘি খাওয়ার দিন৷ চার্বাকদের দর্শন বলে, যতদিন বাঁচ, সুখে বাঁচ৷ ঋণ করে হলেও ঘি খাও৷ কারণ, কাল কী হবে কেউ জানে না৷ চার্বাকদের নাম শুনুক না শুনুক, বাঙালি তথা ভারতীয়রা ঋণ করে বাড়ি, গাড়ি, ল্যাপটপ, মোবাইল, ফ্রিজ থেকে সব জিনিসই কিনে ফেলছে৷ সুদের হার বেড়ে যাওয়া মানে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে৷ তার উপর বাজারে আগুন৷ কয়েকমাস আগে যে সর্ষের তেলের দাম ছিল ১২০ টাকা লিটার, আজ তা ১৫০-এর কমে পাবেন না৷ যে চাল গতমাসেও ৯০ টাকা কিলোগ্রাম ছিল, এমাসে দেখি ১০৫ টাকা কেজি৷ মুগ ডালের কেজিও ১৩০-৩৫ থেকে বেড়ে প্রায় ১৫০ ছুঁই ছুঁই৷ সপ্তাহখানেক আগে যে পাতিলেবুর দাম ছিল আড়াইশো গ্রাম ২০ থেকে ২৫ টাকা, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়৷ ডিমের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ৷ যে ফুলকপি এখন গরুতেও খায় না প্রায়, সেগুলিও ৪০ টাকা কেজি৷ খাসির মাংস তো কেজি-তে সাড়ে সাতশ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে৷ চারজনের পরিবার হলে দুবেলা খাসির মাংস খেতে হাজার টাকা খসে যাবে৷ ইউক্রেনের যুদ্ধ তো আমাদের কৃষি, মাংস, ডিম, দুধের উৎপাদনে প্রভাব ফেলেনি৷ তাহলে তা বাড়ে কেন?

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লি
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লিছবি: privat

কিন্তু মাইনে বাড়ে কি? চাকরি কি পাওয়া যায়? মাফ করবেন৷ ভুল বলেছিলাম৷ সবকিছু বাড়ে না৷ মাইনে বাড়ে না, চাকরির বাজার বাড়ে না, সৎ মানুষের সংখ্য়া বাড়ে না, মানুষের জীবনের দাম বাড়ে না৷  তাই তো, যোগ্যতামান পেরিয়েও চাকরি না পেয়ে দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তায় পড়ে থেকে আন্দোলন করতে হয় পশ্চিমবঙ্গের চাকরিপ্রার্থীদের৷ প্রাপ্য ডিএ পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন রাস্তায় বসে অনশন করতে হয় সরকারি কর্মীদের৷ তাও তো সরকারি কর্মীদের মাস গেলে মাইনে আছে৷ যারা একেবারে গরিব, তাদের সরকারি বিনা পয়সার রেশন আছে, ভাতা আছে৷ আর যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত তাদের হাহুতাশ ও হাহাকার আছে৷ তারা বহুদিন আগেই জেনে গেছে, জিনিসের দাম বাড়বে৷ কারণ থাকলেও বাড়বে, না থাকলেও বাড়বে৷ পন্ডিতরা সংখ্যাতত্ত্ব সামনে ফেলে কারণ ব্যাখ্যা করবেন৷ আর আমাদের মতো কলমচিদের এভাবেই মাঝেমধ্যে এসব নিয়ে লিখে যেতে হবে৷ আর যে পরিস্থিতিই থাক না কেন, নেপোরা ঠিক দই মেরে বেরিয়ে যাবে৷

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য