1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জামিয়ায় আবার গুলি, সংসদে প্রতিবাদ

৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আবার গুলি চলল জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায়৷ এ বারও বাইরে থেকে আসা সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়৷ তবে কেউ হতাহত হননি৷ এই গুলির প্রতিবাদে লোকসভায় সোচ্চার হন বিরোধী সাংসদরা৷

https://p.dw.com/p/3XBYF
ছবি: DW/AnsariA

রোববার গভীর রাতে আবার গুলি চলল জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায়৷ এই নিয়ে গত চারদিনে তিনবার গুলি চলল জামিয়া ও শাহিনবাগে৷ গুলি চালিয়ে প্রতিবাদ বন্ধ করার চেষ্টা হল৷ জামিয়া কোঅর্ডিনেশন কমিটির দাবি, লাল রঙের স্কুটিতে চড়ে দুই জন আসেন৷ তারা জামিয়ার গেটের কাছে গুলি চালান৷ তবে সেই গুলিতে কেউ মারা যাননি বা আহত হননি৷ পুলিশ জানিয়েছে, তারা পুরো এলাকা খুঁজেও গুলির খালি কার্তুজ পায়নি৷ তারা এখন সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে৷ তবে নির্বাচন কমিশন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে৷ তারা দক্ষিণ পূর্ব দিল্লির ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ বা ডিসিপি চিন্ময় বিসোয়ালকে সরিয়ে দিয়েছে৷

এই পরিস্থিতিতে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে জিততে মরিয়া বিজেপি নেতারা ক্রমশ আরও চড়া সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন৷ এর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর স্লোগান দিয়েছিলেন, 'দেশ কে গদ্দারো কো', সামনে বসা লোকেরা বলেছিলেন, 'গোলি মারো, গোলি মারো'৷ কাকতালীয় হলেও ঘটনা হল, এরপরই তিনবার গুলি চলল জামিয়া ও শাহিনবাগে৷ লোকসভার অধিবেশনের শুরুতেই এ দিন কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম, আরজেডি সহ বিরোধী সাংসদরা সোচ্চার হন৷ তাঁরা স্লোগান দিতে শুরু করেন, 'গুলি মারা বন্ধ কর'৷ বিরোধীরা সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন৷ গোলমালের মধ্যে লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরি বলেন, ''এ ভাবে গুলি চালিয়ে লোকের প্রতিবাদ বন্ধ করা যাবে না৷’’

এর মধ্যে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ রবিবার শাহিনবাগের কাছে জনসভায় বলেছেন, ''আপনাদের ঠিক করতে হবে, আপনারা উন্নয়ন চান না কি পাকিস্তানপন্থিদের শাসনে খুশি থাকতে চান৷ শাহিনবাগের প্রতিবাদ আসলে ৩৭০ ধারা বিলোপ, তিন তালাক নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে৷ কেজরিওযাল, রাহুল গান্ধী ও ইমরান খান একই ভাষায কথা বলছেন৷ পাকিস্তানের মন্ত্রীরা কেজরিওযালকে সমর্থন করছেন৷'' এভাবেই দিল্লির নির্বাচনে পাকিস্তানকে ঢোকানো হচ্ছে৷ কেজরিওয়ালের গায়ে পাকিস্তানি তকমা সেঁটে দেওয়ার কাজ চলছে৷ আপ নেতা অনুপ ঠাকুর ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''যেভাবে শাহিনবাগকে সামনে রেখে উত্তজক ভাষণ দেওয়া হচ্ছে, যে ভাষায় কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে, ভোটের লড়াইকে হিন্দু-মুসলিমে পরিণত করা হচ্ছে, তা অভাবনীয়৷ জামিয়ায় গুলি সেই উত্তজেনা ও বিভাজন বাড়ানোরই অঙ্গ৷ যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে এফআইআর করার দাবি করা হয়েছে৷''

উত্তজনার আঁচ দেশের অন্যত্রও পৌঁছচ্ছে৷ দুই দিন আগে বিহারের শেখপুরায় সরস্বতী মূর্তি বিসর্জনে গুলি চলেছে। স্থানীয় জেডিইউ নেতা অমিত কুমার বিশ্বাসের মাথায় গুলি লাগে। তিনি মারা যান৷ দুষ্কৃতীরা পাথরও ছোঁড়ে৷ তাতে অন্তত জনা কুড়ি লোক আহত হয়েছেন৷ এরপর জেডিইউ কর্মীরা পথ অবরোধ করেন৷  পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷

লখনউতে অখিল ভারতীয় বিশ্ব হিন্দু মহাসভার সভাপতি রঞ্জিত বচ্চনকে রবিবার গুলি করে হত্যা করা হয়েছে৷ তিনি বাড়ির বাইরে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। তখন এক দুষ্কৃতী এসে খুব কাছ থেকে গুলি চালায়৷ পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকারীর বিষয়ে কিছু জানাতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে৷ অভিযোগ উঠেছে, এই হত্যার পিছনে পারিবারিক ঝগড়া আছে৷ আবার সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, এটা জঙ্গিদের কাজ৷ 

এ ভাবে উত্তেজনা বাড়ার কারণ কী? প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্রর মতে ''এর পিছনে একটা হতাশা কাজ করছে বলে মনে হয়৷'' ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''বিভাজনের রাজনীতি লোকে যে পরিত্যাগ করছে, তার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফল, দেশজুড়ে গান্ধীবাদী পথে আন্দোলন, দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হারের সম্ভাবনা, সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ কাল বিজেপি নেতা অনন্ত হেগড়ে বলেছেন, গান্ধীজি স্বাধীনতা আন্দোলনের নামে নাটক করতেন৷ এ সবই সেই হতাশার প্রকাশ৷ গান্ধীজি যে এভাবে নতুন করে বেঁচে উঠবেন, তা ওরা ভাবেনি৷ তাই রোজ গান্ধীজিকে মারতে হচ্ছে৷ কংগ্রেস নেই, বিরোধী দল নেই, তাও রোজ গান্ধীজিকে আক্রমণ করার দরকার হচ্ছে৷ এখন দেশজুড়ে যে আন্দোলন হচ্ছে তা সত্যাগ্রহকে মনে করিয়ে দিচ্ছে৷ তাকে রুখতে এই চরম পথ নেওয়া হচ্ছে৷’’  

জিএইচ/কেএম (টিওআই, নিউজ১৮, দৈনিক ভাস্কর)