1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নেত্রীরা ক্ষমা চাওয়ার পরও উপাচার্য নিষ্ক্রিয়

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতনের শিকার ছাত্রী জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেত্রীরা তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন৷ অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের এখনো দেখা নেই৷ অথচ উপাচার্য দৃশ্যত এখনো নীরব৷

https://p.dw.com/p/4Ntx9
Islamic University, Bangladesh
ছবি: Ruhul Amin

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে৷ ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ করার ফলে খবরটি সংবাদমাধ্যমে আসে দুইদিন পর৷ সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজন ছাত্রলীগ নেত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হলো বুধবার, অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি৷ হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির উদ্যোগে তা সম্ভব হলো৷

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৫ ফেব্রুয়ারি দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে৷ ২২ ফেব্রুয়ারি তাদেরও প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা৷ কিন্তু তারা এখনো কোনো প্রতিবেদন দেননি৷

হলের গণরুমে প্রকাশ্যে ছাত্রী নির্যাতন করা হলেও প্রভোস্ট বা অন্য কোনো দায়িত্বশীল সেই রাতে এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ৷ পরের দিনও তাকে হল ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷

বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলতে পারে না: সোহান

১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকার্ট নির্দেশ দেয়ার পর আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷ হাইকোর্ট নির্যাতনকারী দুই ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তাবাসসুমকে হলের বাইরে থাকার নির্দেশ দেন৷ তার আগ পর্যন্ত তারা ক্যাম্পাসে থেকে উল্টো নির্যাতনের শিকার ছাত্রীকে ক্যাম্পাসে না আসার হুমকি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ নির্যাতিতা তখন ক্যাম্পাসেই আসতে পারেনি৷ তখন ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেছিলেন, " তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না৷ আমাদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷”

বুধবার হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিস্কার করেছে৷

ইসালামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ইমানুল সোহান বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় নিজেদের উদ্যোগে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়নি৷ তারা অপরাধীদের শাস্তির ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷ আমার ধারণা, ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ না হলে এবং হাইকোর্ট আদেশ না দিলে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হতো না৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের দুইটি তদন্ত কমিটি আসলে কোনো কাজ করছে বলে মনে হয় না৷”

তিনি বলেন, "ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেত্রী হওয়ায় তারা পার পেয়ে যেতো৷ এখন হয়তো বা আর পার পাবে না৷”

ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি ও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগও উঠেছে৷ কয়েকটি অডিও ভাইরাল হয়েছে৷ এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিতে বিবৃতিও দিয়েছেন৷

উপাচার্য অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন: রহমান

ইমানুল সোহান বলেন, "আমরাও দুর্নীতির তদন্ত চাই৷ একটা বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলতে পারে না৷” তিনি বলেন, "ভিসি কয়েকদিন ধরে অফিস করছেন না৷ তিনি তার বাসায় বসে ফাইলপত্র সই করছেন৷ জানতে পেরেছি বিকেলে (বৃহস্পতিবার) তিনি ঢাকা চলে গেছেন৷ আর প্রক্টর স্যারও ফোন ধরছেন না৷” এই প্রতিবেদকও ফোনে চেষ্টা করে তাদের পাননি৷

বিশ্বেবিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, "এখনকার উপাচার্য সব ক্ষেত্রেই অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতার পরিচয় দিচ্ছেন৷ একটার পর একটা অভিযোগ উঠছে তার বিরুদ্ধে৷ তার বিরুদ্ধে এখন নিয়োগে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেবেন৷”

তার কথা, "ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা হাইকোর্ট পর্যন্ত যাওয়ায় আমরা দুঃখিত এবং লজ্জিত৷ ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সময়মতো ব্যবস্থা নিতো তাহলে এরকম হতো না৷ তারা তা করেননি৷ হাইকোর্টের নির্দেশের পর এখন কিছু ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷” এ সময় তিনিও দাবি করেন, বর্তমান ভিসি বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছেন৷

আর আইন বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম মনে করেন, "বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই ছাত্রীর নিরাপত্তা দিতে এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করতে শুরুতে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি৷ তারা ব্যর্থ হয়েছে৷ এর দায় আমাদের সবার৷”

তিনি বলেন, "শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্টও তার দায়িত্ব পালন করেননি৷ তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন৷”

তার নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার নয়: আলম

তিনি আরো মনে করেন উপাচার্য অভিযুক্ত ছাত্রীদের বিষয়ে শুরুতে নিষ্ক্রিয় থেকে ঠিক করেননি, কারণ, "তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না এটা কোনো কথা নয়৷ প্রাথমিকভাবে তদন্তের স্বার্থেই কিছু ব্যবস্থা নেয়া যেতো৷ তখনই অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসের বাইরে পাঠানো এবং ছাত্রীটির নিরপত্তা নিশ্চিত করা যেতো৷”

নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী বুধবারই আবার বাড়িতে ফিরে গেছেন৷ বুহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন,"এখনো আমি বাড়িতে অবস্থান করছি৷ ওই আপুরা ক্যাম্পাসের বাইরে গেছেন কিনা আমার জানা নেই৷ তবে এ নিয়ে আমি আর বেশি কথা বলতে চাই না৷ যেহেতু এখন তদন্ত শুরু হয়েছে, তাই বিচার পাবো বলে আশা করছি৷ এখন আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে৷”

শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম মনে করেন সেই হলে এত বড় ঘটনা ঘটার পরও তার বিশেষ কিছু করার নেই, কারণ, ওই মেয়েটি হলের আবাসিক ছাত্রী নন৷ এই যুক্তিতে দায় এড়ানোর চেষ্টায় অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন , "ওই ছাত্রীটি আমার হলের আবাসিক ছাত্রী নয়, সে একজন ছাত্রীর অতিথি ছিল, তাই তার ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না৷ তার নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার নয়৷” যে হলের তিনি প্রভোস্ট, সেই হলের এত বড় একটি ঘটনার তদন্তে তিনি যে কমিটি গঠন করেছেন তারা কী করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন," তদন্ত চলছে৷ তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে কী হয়েছে৷ আর হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি কী করছে সেটা তাদের ব্যাপার৷ আমার জানা নেই৷”