1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার মোকাবিলায় ছুতমার্গ চলবে না

২১ এপ্রিল ২০২০

করোনা সংকটের মুখেও কড়া বিধিনিয়ম তুলে নেবার দাবি সম্পর্কে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ অথচ খোলামেলা আলোচনা ও তর্কবিতর্কের মাধ্যমেই এই সংগ্রামে ঐক্য বজায় রাখা সম্ভব৷

https://p.dw.com/p/3bDyC
ছবি: picture-alliance/AP/M. Schreiber

গোটা বিশ্বে করোনা সংকট সরকার ও প্রশাসনকে উভয় সংকটে ফেলছে৷ একদিকে সংক্রমণের হার কম রাখতে লকডাউন বা অন্য ধরনের কড়াকড়ির মাধ্যমে মানুষকে কার্যত গৃহবন্দি রাখতে হচ্ছে৷ অন্যদিকে এমন পরিস্থিতির কারণে বিপর্যস্ত অর্থনীতি আবার চালু করার জন্যও চাপ বাড়ছে৷ এই অবস্থায় লকডাউন তুলে নেবার দাবি জোরালো হয়ে উঠছে৷ বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা করোনা সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন৷ এ বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় লকডাউন তুলে নেবার পরিণতি সম্পর্কেও আগেভাগে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না৷

জার্মানিতেও কড়াকড়ি শিথিল করার পক্ষে ও বিপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে৷ সুইডেনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে ‘শিথিলপন্থি' শিবির বলছেন, মানুষের বিচারবুদ্ধির উপর ভরসা করে সব বাধা তুলে নেওয়া উচিত৷ সবাই সতর্ক হলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ অন্যদিকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপও চালু থাকবে৷ অর্থাৎ, ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হওয়া পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের সঙ্গে সহাবস্থান করেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে হবে৷

এমন ‘সাহসি' বা ‘বেপরোয়া’ প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত নন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ স্বভাবসিদ্ধ সংযম সরিয়ে রেখে গত সপ্তাহান্তে তিনি এমন আলোচনা সম্পর্কে চরম বিরক্তি প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর আশঙ্কা, যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে সংক্রমণের হার আবার বেড়ে যাবে৷ এমন ঝুঁকি নিতে তিনি নারাজ৷ পরোক্ষভাবে ম্যার্কেল ‘শিথিলপন্থি' শিবিরের আচরণ দায়িত্বজ্ঞানহীন হিসেবে তুলে ধরেছেন৷ তার বদলে তিনি ধীরে ধীরে বাধানিষেধ শিথিল করার পক্ষে৷ অর্থাৎ, নতুন করে বিপদ দেখা দিলে তিনি আবার পিছু হটার পথ খোলা রাখতে চাইছেন৷

চ্যান্সেলরের বক্তব্যের এমন সুর অনেকের কাছেই বাড়াবাড়ি বলে মনে হচ্ছে৷ খোলামেলা আলোচনার বদলে বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করলে আখেরে গণতন্ত্রের ক্ষতি হবে বলে মনে করছে সংবাদ মাধ্যমের একাংশ৷ এমনিতেই সরকারের বর্তমান পদক্ষেপের ফলে ব্যক্তির অধিকার খর্ব হচ্ছে, ফেডারেল জার্মানির ইতিহাসে যেমনটা এর আগে কখনো দেখা যায়নি৷ সে বিষয়ে তর্কবিতর্কের সুযোগও বন্ধ করার চেষ্টা করলে মানুষ প্রশাসনের উপর আস্থা হারাতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

করোনা-সংকট মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কতটা জরুরি, ম্যার্কেল নিজেই শুরু থেকে বার বার তা তুলে ধরেছেন৷ সহযোগিতার জন্য তিনি দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন৷ কোনো আলোচনা ছাড়াই উপর থেকে বিধিনিয়ম চাপিয়ে তা মেনে চলার হুমকি দিলে বাস্তবে কতটা সুফল পাওয়া যেতো, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ ‘শিথিলপন্থি’ শিবিরের দাবির মুখেও বিচক্ষণ এই নেতাকে ধৈর্য ধরে প্রয়োজনে বারবার কড়া বিধিনিয়মের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে বলতে হবে এবং যুক্তি দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে৷

Deutsche Welle Asien Bengali Sanjiv Burman
সঞ্জীব বর্মন, ডয়চে ভেলেছবি: DW

অন্যদিকে কড়াকড়ি তুলে নেওয়ার প্রবক্তাদেরও এমন বেপরোয়া মনোভাবের পরিণতি বোঝা দরকার৷ সুইডেন বা অন্য কোনো দেশের অভিজ্ঞতা যে জার্মানির ক্ষেত্রে হুবহু প্রয়োগ করা সম্ভব, এমনটা ধরে নেওয়া কঠিন৷ একইভাবে অন্য কোনো দেশ জার্মানির বিশেষ অবস্থা অনুকরণ করলে একই ফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম৷ গোটা বিশ্বে করোনা সংকটের মুখে সবাইকেই মানতে হবে যে, এমন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ সম্পর্কে মানুষের ধারণা ও জ্ঞান এখনো অত্যন্ত সীমিত৷ সংকীর্ণ মনোভাব ছেড়ে নিবিড় পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই শেষ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস কাবু করা সম্ভব হবে৷

এসবি/এসিবি