1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কঠোর সমালোচনার মুখে জার্মানির পররাষ্ট্রনীতি

১২ এপ্রিল ২০২২

রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর জার্মানির পররাষ্ট্রনীতি কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ পুরো একটি প্রজন্মের রাজনীতিবিদরা সমালোচিত হচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/49osm
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর জার্মানির পররাষ্ট্রনীতি কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে৷
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর জার্মানির পররাষ্ট্রনীতি কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ ছবি: Markus Schreiber/AP Photo/picture alliance

২০০৮ সালে ম্যার্কেল ও ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন৷ এটাকে রাশিয়া উসকানি হিসেবে দেখতে পারে, বলে মনে করেছিলেন তারা৷

ম্যার্কেল ও সার্কোজির এই সিদ্ধান্তকে সম্প্রতি ‘ভুল হিসাব' বলে আখ্যায়িত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি৷ তিনি বলেন, ঐ সিদ্ধান্তের কারণে ইউক্রেন ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধে জীবন বাঁচাতে লড়ছে'৷

কিয়েভের কাছে বুচা শহরে বেসামরিক নাগরিকদের মৃতদেহ আবিষ্কারের পর ম্যার্কেলকে সেটা নিজ চোখে দেখে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি৷

২০০৮ সালে ম্যার্কেল ও সার্কোজি ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার বিরোধিতা করলেও ঐ সময় ভবিষ্যতে ইউক্রেন ও জর্জিয়াকে সদস্য করতে একমত হয়েছিলেন ন্যাটো নেতৃবৃন্দ৷ যদিও এই কাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নির্ধারণ করা হয়নি৷

জার্মানিতে আশ্রয় নিচ্ছেন ইউক্রেনের শরণার্থীরা

২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রাইমিয়াদখলের পর ম্যার্কেলের সরকার ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠায়নি৷ অথচ একই সময়ে ইউক্রেনকে পাশ কাটিয়ে রাশিয়া থেকে গ্যাস আনতে বাল্টিক সাগরের নীচ দিয়ে পাইপলাইন বসানোর প্রকল্প অনুমোদন করেছিল জার্মানি, যেটা ‘নর্ড স্ট্রিম ২' নামে পরিচিত৷ এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বর্তমানে রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি করতে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ব্যবহার হওয়ায় ইউক্রেন যে টাকা পেত, সেটা ভবিষ্যতে পেতো না৷

নর্ড স্ট্রিম ২ প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে৷ তবে  ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জার্মানি  সেটা চালুর অনুমোদন স্থগিত রেখেছে৷

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সাবেক চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের নীরবতার সমালোচনা করেছিলেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাটেউশ মোরাভিয়েৎস্কি৷ তিনি বলেন, ‘‘মিসেস ম্যার্কেল, যুদ্ধ শুরুর পর আপনি কিছু বলেননি৷'' গত ১০, ১৫ বছরে জার্মানির নীতি বর্তমানের রাশিয়াকে শক্তি জুগিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷

ম্যার্কেলের পর চ্যান্সেলর হওয়া ওলাফ শলৎসও রাশিয়ার বিরুদ্ধে দিতে যাওয়া ইইউর কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপে বাধা দিয়েছেন বলে জানান পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী৷

জার্মানির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ারও সমলোচনার হাত থেকে রেহাই পাননি৷ ২০০৫ থেকে ২০০৯ এবং ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ এই সময় তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ করেছেন বার্লিনে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রি মেলনিক৷ তাই যুদ্ধ শুরুর পর স্টাইনমায়ারের উদ্যোগে আয়োজিত পিস কনসার্ট বর্জন করেছিলেন মেলনিক৷

এছাড়া জার্মানির দৈনিক টাগেসস্পিগেলে তিনি লিখেছেন, ‘‘সম্পর্কটা (রাশিয়ার সঙ্গে স্টাইনমায়ারের) অপরিহার্য ছিল, এমনকি পবিত্র, যা কিছুই ঘটুক না কেন৷'' ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত আরও লিখেছিলেন, ‘‘এমনকি উসকানি ছাড়া যু্দ্ধ শুরু করলেও এতে কোনো পার্থক্য হয়নি৷''

জার্মানির কোনো নেতা সম্পর্কে একজন রাষ্ট্রদূতের করা এটিই সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা৷ জার্মানির রেগেন্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্টেফান বিয়ারলিং ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুটিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জার্মানির প্রতিটি সরকার এই সংকেত দিয়েছে যে ইউক্রেনের ভাগ্যের চেয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ এটা ক্রেমলিনকে উৎসাহ জুগিয়েছে৷''

ভুল স্বীকার

স্টাইনমায়ার স্বীকার করেছেন যে, জার্মানির রাশিয়া নীতি ‘দুর্বল মূল্যায়ন' ছিল৷ এছাড়া ‘নর্ড স্ট্রিম ২' প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার কারণে জার্মানি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি৷ তবে পুটিন কী করবেন তা জানা অসম্ভব ছিল বলেও জানান জার্মান প্রেসিডেন্ট৷

এদিকে, ম্যার্কেল এক বিবৃতিতে ২০০৮ সালে ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পথ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল বলে জানান৷তবে জার্মানির সমালোচনা করলেও পুটিনের সঙ্গে আলোচনায়জার্মানির কূটনৈতিক ভূমিকা পালনের গুরুত্ব আছে বলে স্বীকার করেন জার্মানিতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত মেলনিক৷ তিনি বলেন, পুটিনের সঙ্গে আলোচনায় ‘‘আমাদের ওলাফ শলৎসের ব্যক্তিগত নেতৃত্ব প্রয়োজন৷'' জার্মানির নতুন পররাষ্ট্রনীতির জন্য এটি একটি লিটমাস টেস্ট হবে বলেও মন্তব্য করেন মেলনিক৷

ম্যার্কেলের সময় ফ্রান্স, জার্মানি, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শুরু হওয়া শান্তি উদ্যোগ ‘নরম্যাণ্ডি ফরম্যাট'-এর প্রতিও সমর্থন জানান ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত৷ তবে এই আলোচনায় ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত করতে চাইলেও জার্মানি ও ফ্রান্স এখনও তাতে রাজি হয়নি৷

ক্রিস্টোফ হাসেলবাখ/জেডএইচ