1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিভারত

ওএমআর শিট রহস্য: পর্ষদ সভাপতি কোর্টের নজরে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৯ অক্টোবর ২০২৩

আদালতের নির্দেশে তড়িঘড়ি সিবিআই প্রশ্নের মুখে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি। ওএমআর শিট-রহস্য কি দ্রুত ভেদ হতে চলেছে?

https://p.dw.com/p/4XkQ2
দুর্নীতির ফলে অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছে, যোগ্যরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বলে অভিয়োগ।
দুর্নীতির ফলে অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছে, যোগ্যরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বলে অভিয়োগ। ছবি: Subrata Goswami/DW

যোগ্য প্রার্থীদের সরিয়ে অযোগ্য প্রার্থীদের জায়গা করে দেয়াই ছিল লক্ষ্য। সে কারণেই প্রাথমিক স্কুলে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ও উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট বদলে দেয়া হয়েছে। এমনই অভিযোগে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।

দ্রুত হাজিরার নির্দেশ

ওএমআর শিট নষ্টের মামলায় বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করে সিবিআই। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, অদলবদল করা যায় এমন কপিকে কেন ডিজিটাল কপি বলে দাবি করছিল পর্ষদ? এই বিষয়ে প্রাথমিক পর্ষদের সভাপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি। 

বুধবারই সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সভাপতি গৌতম পালকে সিবিআইয়ের সামনে হাজির হতে নির্দেশ দেন বিচারপতি। পর্ষদের উপ-সচিব পার্থ কর্মকারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। আদালত এমনটাও বলে, তদন্তে অসহযোগিতা করলে পর্ষদ সভাপতিকে গ্রেপ্তার করা যাবে।

এই নির্দেশে নির্ধারিত সময়ের কিছুটা আগেই সিবিআই দপ্তর নিজাম প্যালেসে হাজির হন গৌতম ও পার্থ। এই দপ্তরে প্রবেশের সময় মুখ খোলেননি পর্ষদ সভাপতি। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত ১১টার কিছু আগে  নিজাম প্যালেস থেকে বেরোন গৌতম। বলেন, "মহামান্য কলতাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আমি হাজিরা দিয়েছি। তদন্তকারীরা যে প্রশ্ন করেছেন, তার উত্তর দিয়েছি।"

ওএমআর রহস্যে গ্রেপ্তারি

ওএমআর শিট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সম্প্রতি দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সিবিআই সূত্রে খবর, এসএন বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি নিয়োগ প্রক্রিয়ার উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং ওএমআর শিট প্রস্তুত করার দায়িত্বে ছিল। কৌশিক মাজি নামে এই সংস্থার এক কর্তা ও অন্যতম অংশীদার গ্রেপ্তার হয়েছেন।

গত সোমবার এই সংস্থারই কর্মী পার্থ সেনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সূত্রের খবর, ষাটোর্ধ্ব পার্থই দুর্নীতির ‘মূল চাবিকাঠি'। ২০১৭ সালে ৭৫২ জন অযোগ্য প্রার্থীর একটি তালিকা তৈরি হয়েছিল ওএমআর প্রস্তুতকারক সংস্থার অফিসে। পার্থই নাকি সেই তালিকা তৈরি করেছিলেন। সিবিআইয়ের দাবি, সেই ৭৫২ জনের ৩০০ জনের বেশি প্রার্থী পরে চাকরিও পেয়েছিলেন।

 

গৌতম পালের দায়িত্ব শুধু ওএমআর শিটে সীমাবদ্ধ নয় বলে মনে করেন বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা। তার বক্তব্য, "এই সভাপতির অধীনে যে টেট হয়, তাতে প্রশ্নে ভুল ছিল। এরপর সংশোধিত তালিকা এখনো প্রকাশিত হয়নি। আদালত যে তথ্য পর্ষদের কাছে চেয়েছে, সেসব তারা এখনো দেয়নি। যে নিয়োগ নিয়ে বিরোধ-বিতর্ক নেই, সেই পদ কেন এখনো শূন্য, এ সব প্রশ্নের জবাব সভাপতিকে দিতে হবে।"

তদন্ত ঘিরেও প্রশ্ন

এই মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মামলাকারীর দাবি, ওএমআর শিটের ‘ডিজিটাইজ়ড ডেটা'য় অনেক ভুল রয়েছে। আদালতে ওএমআর শিটের তথ্য হিসেব যে নথি পেশ করা হয়েছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও তদন্ত ঠিকঠাক হচ্ছে না বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে। আদালতের বুধবারের নির্দেশের পর বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, "বাংলার মানুষ চায় দ্রুততার সঙ্গে দুর্নীতির তদন্তের নিষ্পত্তি হোক। আদালতের তৎপরতা আমাদের কাছে অত্যন্ত খুশির। সঠিক বিচার হোক। মেধাসম্পন্নরা চাকরি পাক।”

বাম ও কংগ্রেস বারবার তদন্ত নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির আঁতাতের অভিযোগ তোলে প্রতি পদে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, "তদন্ত হোক, কিন্তু তার বিচার তো হতে হবে। যাদের চাকরি বিক্রি হল, তাদের চাকরি দিতে হবে। তারা কতদিন রাস্তায় থাকবেন।”

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, "যে দোষী, সে সাজা পাবে। এর সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই। আগের সভাপতির আমলে যে অনিয়ম হয়েছে, সে জন্য তার উত্তরসূরিকে জিজ্ঞাসাবাদ কতটা ঠিক হচ্ছে, তা তদন্তে বোঝা যাবে।"

আনন্দ হান্ডার মতে, "ব্যক্তি গৌতম পালকে কেউ প্রশ্ন করছে না, পর্ষদ সভাপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। উনি দায়িত্ব নিয়ে নিজের ভূমিকা পালন করছেন কি? না করলে প্রশ্নের মুখে পড়তেই হবে।"