1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এস আলম কি আইনের ঊর্ধ্বে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ আগস্ট ২০২৩

বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম(এস আলম) বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদন ছাড়াই সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

https://p.dw.com/p/4UoQp
এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম(এস আলম) বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদন ছাড়াই সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন
এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম(এস আলম) বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদন ছাড়াই সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেনছবি: Mortuza Rashed/DW

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা বাংলাদেশের আইনে অর্থ পাচার। এরজন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করা আইনের কাজ। তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত।

ইংরেজি দৈনিক "দ্য ডেইলি স্টারে” সাইফুল আলমের এই অনুমোদনহীন বিনিয়োগের প্রতিবেদনটি করেছেন ওই পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার জায়মা ইসলাম। তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান," ওপেন সোর্সেই তার ওই বিনিয়োগের ডকুমেন্ট আছে। আমরা সেই ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ ও ভেরিফাই করে সত্যতা নিশ্চিত করেছি। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে তিনি বাংলাদেশ থেকে অনুমোদন নিয়ে কোনে অর্থ সিঙ্গাপুরের নেননি।”

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এপর্যন্ত বৈধভাবে এক লাখ সাত হাজার মার্কিন ডলার পাঠিয়েছে সিঙ্গাপুরে। তার মধ্যে এস আলমের মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।

গত এক দশকে এস আলম সিঙ্গাপুরে অন্তত দুইটি হোটেল, একটি বাণিজ্যিক স্পেস ও আরো কিছু সম্পদ কিনে কাগজপত্র থেকে তার নাম সরিয়ে ফেলেছে।

এস আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভিনও এর সঙ্গে যুক্ত। তারা অফশোর কোম্পানির( কাগুজে কোম্পানি) মাধ্যমে এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে অর্থ নিয়েছেন। সিঙ্গাপুর ছাড়াও সাইপ্রাস এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে বিনিয়োগ করেছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার  কিনেছেন।

এস আলম আলমের এই অর্থপাচারের ব্যাপারে কথা বলেনিবাংলাদেশ ব্যাংক। আর এস আলমও কোনো বক্তব্য না দিয়ে উল্টো মামলার হুমকি দিয়েছেন বলে জানান, জায়মা ইসলাম।

তিনি বলেন," চার মাস ধরে এই প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে কাজ করতে হয়েছে।  এর তথ্য ভেরিফাই করার জন্য একটি টিম আমাকে সহায়তা করেছে।”

এস আলম গ্রুপের মালিকানায় বাংলাদেশে  অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও একাধিক ব্যাংক আছে। ইসলামী ব্যাংক তার একটি। ওই ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ একাই ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। গত ডিসেম্বরে এই তথ্য প্রকাশ হলে হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এর নথি চায় এবং দুদককে তদন্ত করতে বলে। এর আগে দুইটি ভুয়া কোম্পানি খুলে একই ব্যাংক থেকে দুই হাজার  ৪৬০ কোটি টাকা নেয়া হয় ঋণের নামে। আর আরো কয়েকটি ব্যাংক থেকে নেয়া হয়  প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে নেয়া হয় ৯ হাজার কোটি টাকা।

'বাংলাদেশের অনুমোদন নিয়ে কোনো অর্থ সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়নি'

পলিসি রিসার্চ  ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন," এস আলমের সিঙ্গাপুরের যে বিনিয়োগের অর্থ এটা পাচার ছাড়া আর কিছুই না। বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং আইনে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত। ” তবে তিনি বলেন,"এই মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং এই অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, দুদক ও সিআইডিসহ আরো আরো অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু কে ব্যবস্থা নেবে? তারা তো সবাই উপরের দিকে তাকিয়ে থাকেন।”

তিনি বলেন," গ্রুপটি ব্যাংক থেকে  ঋণের নামে লুটপাট করে টাকা নিয়ে যায়। সেই টাকা বিদেশে পাচার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এটা দেখার কেউ আছে বলে মনে হয়না।”

আর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.  ইফতেখারুজ্জামান বলেন," যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে তাতে পরিষ্কার যে সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগের অর্থ অনুমোদনহীন এবং মানি লন্ডারিং। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রথম ওই পরিমাণ অর্থতিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই নিয়েছেন। আর ওই অর্থের উৎস যদি তার বিদেশে কোনো ব্যবসা থেকে হয় তাও জানাতে হবে। তার কোনোটিই তিনি করেননি।”

মানি লন্ডারিং আইনে এটা শাস্তিযোগ্য: ড. আহসান এইচ মনসুর

তার কথায়," আর বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এটা এই প্রথম নয়। অনেক দিন ধরেই  এখান থেকে দেশের বাইরে অর্থ পাচার হচ্ছে। আর সেটা দিন দিন বাড়ছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনা। এর  একটি কারণ হতে পারে পাচার রোধ ও পাচারের পর যাদের ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব তারা হয়তো অদক্ষ। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যারা অর্থ পাচার করেন তারা  প্রভাবশালী। টাকা ছাড়াও তাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা আছে। ফলে তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন।”

 ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "কিন্তুবাংলাদেশের আইনে এটা প্রতিরোধএবং পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা আছে। সে সিঙ্গাপুরের টাকা পাচারে কথা বলা হচ্ছে সেখান থেকেও এর আগে বাংলাদেশ পাচারের টাকা ফেরত এনেছে। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা।''

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকেও এস আলমের সঙ্গেমোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ফোনে পাওয়া যায়নি।

'বাংলাদেশের আইনে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা যায়'

ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়। টাকার অঙ্কে তা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে অর্থ পাচার হয় তারমধ্যে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া,কেম্যান আইল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড।